মঙ্গলবার, ৩০ জুন, ২০১৫

প্রবারণা পূর্ণিমা রাতে


@ জাহিদুজ্জামান
// সামনের রডের ওপর একদিকে দুই পা দিয়ে বসানো হলো সাত বছরের ছেলে সুভেনিরকে। প্রথমবার এভাবে বসেই চেঁচিয়ে উঠলো। সাহস দিয়ে পড়ে যাবার ভয় দূর করা হলো। এতে কিছুটা স্থির হলেও সে জানালো তার পাদুকা পড়ে যেতে পারে এই দুঃচিন্তার কথা। পেছনের কেরিয়ারে বসেছে আমার স্ত্রী শারমিন। সেও বেশ ভয়ে আছে। এই সাইকেল চালিয়ে উঁচু সড়ক থেকে গ্রাম্য পাকা রাস্তায় নেমে গেলাম। আঁকাবাঁকা এই রাস্তার কোথাও কোন বৈদ্যুতিক বাতি নেই। দু-একটি বাড়ি থেকে বাল্ভের আলোকছটা এসে পড়ছে রাস্তায়। হালকা কুয়াশার আস্তরণে সে আলো টর্চের আলোর মতো মনে হচ্ছে। আর আকাশে জ্বলজ্বল করছিল পূর্ণিমার চাঁদ। আজ প্রবারণা পূর্ণিমা, তা হয়তো জানাই নেই এই গ্রামের কারও। গ্রামে হিন্দু সম্প্রদায়ের কোন মানুষের বাস না থাকায় প্রবারণার খবর না রাখাই স্বাভাবিক। উঁচু সড়কের ওপরের বিত্তিপাড়া বাজার থেকে নিচে নামলেই আমাদের গ্রাম সোনাইডাঙ্গা। স্বল্প প্রস্থের পাকা সড়ক ধরে এক কিলোমিটার মতো এগিয়ে গেলেই আমাদের বাড়ি। অনেক দিন পর বাইসাইকেলে, তারওপর স্ত্রী-সন্তানকে চড়িয়ে বেশ অস্বস্তিতেই ফেললো আমাকে। মাত্র এক কিলোমিটার রাস্তাই বেশ লম্বা মনে হতে লাগলো। সাইকেলটি আকারে কিছুটা ছোট ছিল। পাদানিতে রেখে ঘোরানোর সময় পা পুরোপুরি সোজা হচ্ছিল না। কিছুটা পথ যেতে না যেতেই পা লেগে আসছিল। তখন পা না চালিয়ে কিছুটা পথ জিরিয়ে নিতে হচ্ছিল। সাইকেল চলছে বাড়ির দিকে। ঈদে ছুটি না মেলায় একদিন পর রাতের বাসে রওয়ানা হই। হিসেবমতে চারটা থেকে সাড়ে চারটার দিকে বিত্তিপাড়া বাজারে পৌঁছানোর কথা। এসময় বাজারে অনেক ভ্যান-রিক্সা পাওয়া যায়। তারপরও পরিচিত ভ্যান-চালক কেরুকে চারটায় আসতে বলে রেখেছিলাম। কিন্তু রাস্তা ফাঁকা থাকায় বাস আড়াইটায় পৌঁছে গেল। তাই বাড়ি যেতে হচ্ছে বাইসাইকেলে। প্রথমের দিকে দু-একবার কাত হয়ে পড়ে যেতে গেলেও সামলে নিয়ে বেশ ভালই চালাচ্ছি সাইকেল। আকাশ পূর্ণিমার চাঁদের আলোয় ঝলমল করলেও রাস্তায় ছিল আলো-আঁধারি। সড়কের ধারের বড়-ছোট গাছ-পালা চাঁদ আড়াল করায় সৃষ্টি হচ্ছিল এই মোহনীয় পরিবেশ। গ্রামের এই পাকা রাস্তার সাথে আমাদের বাড়ি যুক্ত করেছে একশ গজের মতো দৈর্ঘের একটি কাঁচা রাস্তা। এই রাস্তায় নামতেই ঝাঁকিতে আমার স্ত্রীর এক পায়ের সেন্ডেল খুলে গেল। নেমে সেন্ডেল পায়ে দিয়ে আবার উঠে পড়লো কেরিয়ারে। মাত্র একশ গজের মতো অন্ধকারাচ্ছন্ন এই কাঁচা রাস্তা পেরুতে আমার বেশ বেগ পেতে হলো। পাশে অনেক গাছ-পালা ও বাঁশঝাড় থাকায় এই রাস্তাটুকুর প্রায় অংশেই পৌঁছাতে পারছে না চাঁদের আলো। বাড়িতে সবাই বেভোরে ঘুমোচ্ছিল। অনেক ডাকাডাকির পর উঠে এলো ছোট দুই ভাই। তাদের কাছ থেকে জানা গেল মা গেছে তার মা’র বাড়ি। সাথে আব্বাও। বয়সজনিত অসুস্থতায় নানীর মরণাপন্ন অবস্থা। মা নেই শুনেই মনটা খারাপ হয়ে গেল। স্ত্রী সন্তানদের বাড়িতে নামিয়ে দিয়ে সাইকেল নিয়ে আবার যাচ্ছি বিত্তিপাড়া বাজারের দিকে, ব্যাগেজ আনতে। ঠিক যেন ভ্যানচালকদের মতো খ্যাপ মারছি। তবে, এবার সাথে নিলাম ছোট ভাই ইমনকে। তার সাথেও একটি বাইসাইকেল। দুটো ব্যাগ রাখা আছে মামুনের হোটেলে। মামুন আমার চেয়ে বয়সে বড় হলেও বন্ধুর মতো। স্কুলে এক ক্লাস ওপরে পড়তো। সংসারের হাল ধরতে গিয়ে কলেজ জীবন পার করা হয়নি তার। বন্ধুদের মধ্যে সে খুবই সাংগঠনিক ও আন্তরিক। তাস ও কেরম বোর্ড খেলায় বেশ পারদর্শী। ছোট ভাইকে নিয়ে পাশাপাশি দুটো সাইকেলে এবার গ্রামের এই পথ সহজ মনে হতে লাগলো। সাইকেল চলছিলও চমৎকার। এখন মনে হচ্ছে সাইকেলটিতে তেল দিয়ে বেশ যত্নেই রাখা হয়। বাড়ি সংযুক্ত কাঁচা রাস্তা শেষে পাঁকা রাস্তায় উঠতেই দেখি একটি খালি ভ্যান। কাছে গিয়ে দেখি এই সেই ভ্যান চালক আমাদের আনতে যাবার কথা ছিল যার। সে আমাকে দেখে চমকে উঠলো। বললো -তোমাদেরই তো আনতে যাচ্ছি।
-বাস অনেক আগেই চলে এসেছে। চারটায় আসার কথা আড়াইটায় বাজারে নামিয়ে দিয়েছে। তোমাকে ফোন দিয়েছিলাম কিন্তু বন্ধ, তাই জানাতে পারেনি।
ভ্যান-চালক কেরু বললো মোবাইলের চার্জ শেষ হয়ে যাবার পর চার্জে লাগানো হয়েছে কিন্তু চালু করতে ভুলে গেছি। যাক কেরুকে আসতে বলে আমরা দুই ভাই সাইকেল চালিয়ে অনেকটা আগেই বাজারে পৌঁছে গেলাম। এবার খালি সাইকেল যেন মটরসাইকেলের মতো চলছিল। এই সাইকেলটিরও একটি ইতিহাস আছে। এটি উজানগ্রাম মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের অংকের শিক্ষক সিদ্দিক স্যারের। তিনি আমার প্রিয় শিক্ষক। ১৯৮৮ সাল থেকে যখন আমি স্যারকে দেখেছি তখন থেকেই তাকে সাইকেলে চলতে দেখেছি। তিনি হয়তো তারও অনেক আগে থেকেই সাইকেলে চড়েন। কুষ্টিয়া শহরে স্যারের বাস। ১৫ কিলোমিটার দূরের এই বিত্তিপাড়া বাজারে তিনি সাইকেল রেখে যান। ইংরেজরা এই বাজারের ওপর নীল কুঠি স্থাপন করে এলাকার কৃষকদের শোষণ করতো। সে থেকে এই বাজারকে কুঠি বাজার বলেও ডাকে এলাকার লোকজন। শহর থেকে বাসে এসে নেমে কুঠি বাজার থেকে সাইকেল চালিয়ে এক কিলোমিটার দূরের স্কুলে যাতায়াত করেন। ঈদের ছুটির মধ্যেও সাইকেলটি মামুনের হোটেলে রেখে গেছেন স্যার। স্কুল জীবনে স্যারকে দেখেছি বেশ গতিতে সাইকেল চালাতে। এ ব্যাপারে তিনি বলতেন, দ্রুত যদি নাই গেলাম তাহলে সাইকেল কেন? হেটে গেলেই তো পারি। স্যারের মতো বেশ গতিতে সাইকেল চালিয়ে আমিও দ্রুতই পৌঁছে গেলাম বাজারে। সেখানে তখনও ভ্যানের জন্য অপেক্ষা করছিল তুষার ও তার পরিবার। ঢাকা থেকে বাসে ওঠার কিছুক্ষণ পর আবিস্কার করি আমাদের সামনের সিটে বসে আছে তুষার। তুষার বাংলাদেশ প্রতিদিন-এ কাজ করে। আমার স্কুল-বন্ধু মশিউরের ছোট ভাই সে। তাকে আমি ছোট ভাই-এর মতোই দেখি। বাসের মধ্যে তুষারকে দেখে বেশ খুশি হয়েছি। ওকে বললাম, তোমার সাথে অনেক দিন দেখা হয়না। বাসের মধ্যে তোমাকে পেয়ে ভালই হলো। অনেক গল্প করা যাবে। তুষার যে লাইনের সিটে বসে আছে ওই লাইনের একজন যাত্রী বাস মিস করেছে। নিজের সিট ছেড়ে আমি ওই সিটে বসেই আসলাম। সারা পথ ওর সাথে ঢাকা-কুষ্টিয়ার অনেক গল্পই হলো। তুষারদের বাড়ি বাখইল গ্রামে। সেখানে যেতে তাকেও নামতে হয়েছে বিত্তিপাড়া বাজারে। আমরা যখন বাজারে এসে নামি তখন আড়াইটা বাজে। নেমেই দেখি সাইকেল নিয়ে ছুটে আসলো মামুন। বাজারে চুরি ডাকাতি ঠেকাতে পালাক্রমে পাহারা দেয় দোকান মালিকরা। এদিন ছিল মামুনের পালা। রাতে কোন বাস এসে থামলেই ছুটে যাচ্ছিল সে। পরিচিত কেউ এলো কি-না দেখার জন্য। তার কাছেই পাওয়া গিয়েছিল সিদ্দিক স্যারের সাইকেলটি। আমাদের জন্য হোটেল খুলে বসতে দিলো সে। রাতে বানানো গরম গরম মিষ্টি খেতে দিলো। মিষ্টি খাওয়াতে গিয়ে হঠাৎ দেখি সুভেনির নেই। দেখি বাইরে এসে আইপডে ঝলমলে পূর্ণিমার ছবি তুলছে সে। এদিক সেদিক লোকজন পাঠিয়ে অনেক খোঁজাখুজি করেও যখন কোন ভ্যান যোগাড় করা গেল না, তখন সেই বুদ্ধি দিলো সাইকেলে যা, একটা অ্যাডভেঞ্চারও হয়ে যাবে। আমিও রাজি। আমার কিন্তু বেশ মজাই লেগেছে। ভ্যান-চালক কেরু এসে পৌঁছালে তুষারদের তুলে দিয়ে ব্যাগেজ নিয়ে সিদ্দিক স্যারের সাইকেল চেপে আবার চলে গেলাম বাড়ি।

মানুষ করা দরকার

কী স্বভাবে হয় যে মানুষ?
জানো নাকি ও ভাই পুরুষ
মানুষে মানুষে মানুষের গুণ
ভালভাবে আজ প্রচারের দরকার। 

লোভ-লালসায় ভোলে যে সব
তারে কি মানুষ বলা যায়?
অর্থ চাই, সুখ চাই, কী করে পাই
মজা খুঁজি আমি ও ভাই, 
আমারে যে মানুষ করা দরকার। 
মানুষের গুণ প্রচারের দরকার। 

আমি মহান, আমি ভাল, আমি সবার সেরা
আমি ছাড়া মানুষ আছে কেবা?
এই ভাবনা ভাবে যেবা
তারে কি মানুষ বলা যায়?
নামানুষকে মানুষ করা দরকার। 
মানুষের গুণ প্রচারের দরকার।
-জাহিদুজ্জামান

সোমবার, ১৫ জুন, ২০১৫

আষাঢ়স্য

নয় শুধু প্রথম দিনের আষাঢ়
বর্ষার সব বৃষ্টি ছিল আমার

আষাঢ়

১. ওহে বারি, ঝরিছো যে ভারি
ভুললে নাকি এতো জৈ্যষ্ঠ
আষাঢ়ের ঢের দু'দিন দেরি


২.
ভিজতাম আমি ভিজে যেত মন
এখনো মন চায়, পারে না শরীর
হঠাৎ ভিজে গেলেও ভেজে না যেন

শনিবার, ১৯ জানুয়ারী, ২০১৩

সাংবাদিকতাকে পেশা হিসেবে নিন


তৃণমূলে অনেক প্রতিবন্ধকতা আছে, আছে অনেক সংকট তারপরও বলবো সাংবাদিকতাকে পেশা হিসেবে নিন। করবেন সাংবাদিকতা আর সংসার চালাবেন অন্য পন্থায় তাহলে কি এই পেশার মানোন্নয়ন হবে? কখনই না। সকল সংকটের মধ্যেও যারা সাংবাদিকতাকে পেশা হিসেবে নিয়েছে তাদের বেশিরভাগই সফল হয়েছে, এমনটিই দেখেছি আমি।
এই আলোচনার শুরুতে দুটি ঘটনার বর্ণনা দিয়ে শুরু করবো। কারো অনুভূতিতে আঘাত লাগতে পারে এই আশঙ্কায় চরিত্রগুলো স্পষ্ট করা না হলেও ঘটনার বর্ণনার মধ্য দিয়ে আলোচনার বিষয়ে সহজে প্রবেশ করা যাবে, এমনটিই ধারণা করছি।
এক.
মাসখানেক আগে গিয়েছিলাম মিডিয়া নিয়ে কাজ করে এমন একটি বেসরকারি সংস্থার মতবিনিময় সভায়। বিষয় ছিল স্থানীয় সরকার ও স্থানীয় সাংবাদিকতা। জনা বিশেক পত্রিকা, টিভি চ্যানেল ও ওয়েব পোর্টালের মফস্বল সম্পাদক/ন্যাশনাল ডেস্ক প্রধান ছিলেন সেখানে। আলোচনা শুরু হলো। সাংবাদিকতা মহান পেশা, এর মাধ্যমে তৃণমূলে ব্যাপক উন্নয়ন হচ্ছে। স্থানীয় সরকার ব্যবস্থা আরো শক্তিশালী হচ্ছে। তথ্য প্রবাহে গতি আসছে। এর জন্য জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের সাংবাদিক, সংবাদপত্র ও অন্যান্য মাধ্যমের (কমিউনিটি রেডিও) প্রসংসায় পঞ্চমুখ হলেন বক্তারা। খুবই ভাল লাগলো। মাত্রতো কটা বছর আগে এসেছি জেলা শহর থেকে, এখনো নিজেকে জেলা পর্যায়ের সাংবাদিকই মনে হয়। হঠাৎ একজন বক্তা বলে ফেললেন, জেলা পর্যায়ে এখনো এক/দুই জনের বেশি সাংবাদিক নেই যারা ইন্ট্রো (সংবাদের সূচনা) লিখতে পারে। বক্তব্যটি আসলো এনজিও সংস্থার এক কর্মকর্তার মুখ থেকে। সংস্থাটি দুই বছরেরও বেশি সময় ধরে স্থানীয় সরকার ব্যবস্থার উন্নয়নে সাংবাদিকদের ভূমিকা নিয়ে কাজ করছে। তারা বিভিন্ন সময়ে কয়েকটি জেলায় সাংবাদিকদের দীর্ঘ মেয়াদী প্রশিক্ষণও দিয়েছে। বিদেশী অর্থায়নে। এমন বক্তব্য শুনে মাথা গরম হয়ে গেল, যখন কথা বলার সময় পেলাম তখন এর প্রতিবাদ করলাম। একে একে দক্ষিণ ও উত্তরাঞ্চলের কয়েকটি জেলার নাম বলে সেসব জেলার পাঁচের অধিক সাংবাদিকের নাম বলে গেলাম। বললাম এরা রাজধানীতে কর্মরত সিনিয়র রিপোর্টারদের সমকক্ষ এবং পেশাদার। পূর্বের বক্তা ফ্লোর নিয়ে তার বক্তব্য প্রত্যাহার করে নিলেন এবং তথ্য অজানা থাকার কথা বলে ক্ষমা চেয়ে নিলেন। কিন্তু বিষয়টি এখানেই শেষ হয়ে যায় নি। সভায় অংশ নেয়া বেশ কজন মফস্বল সম্পাদক জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের সাংবাদিকদের তুমুল ভৎসনা করলেন। তাদের বক্তব্য হলো- যা চাওয়া হয় সেরকম নিউজ বেশিরভাগ প্রতিনিধিই দিতে পারেন না বা দেন না। একজন বা দুইজন নিউজ লেখেন-ছবি তোলেন, বাকীরা কপি করে পাঠিয়ে দেন যার যার সংবাদ মাধ্যমে। এমনকি বিশেষভাবে অ্যাসাইনমেন্ট দিয়েও সে নিউজ পাওয়া যায় না। ফোন করে সময়মতো পাওয়া যায় না। তারা অন্য কাজে ব্যস্ত থাকে। ইত্যাদি। আমার সঙ্গে কয়েকজন মফস্বল সম্পাদক/ ন্যাশনাল ডেস্ক ইনচার্জ এ মতের বিরোধীতা করলেন। এক পর্যায়ে স্থানীয় সরকারের বদলে স্থানীয় সাংবাদিকদের মান নিয়ে দুই পক্ষে বিভক্ত হয়ে আলোচনা চলতে থাকলো।
দুই.
মাস দুই আগে গিয়েছিলাম একটি টেলিভিশন চ্যানেলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষ্যে আয়োজিত একটি মতবিনিময় সভায়। আলোচনার বিষয়বস্তু ছিল কৃষিতে বাংলাদেশে অগ্রগতি। বিভিন্ন মিডিয়ার সাংবাদিক, সাবেক ও বর্তমান কৃষি কর্মকর্তা-বিশেষজ্ঞ উপস্থিত ছিলেন, ছিলেন একজন মন্ত্রীও। যেহেতু একটি টেলিভিশন চ্যানেলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে এই সভা, তাই আলোচনাতে বারবারই উঠে এলো কৃষিতে মিডিয়ার ভূমিকা। আর ঘুরেফিরে এলো যে বিশালতায় ছড়িয়ে আছে কৃষি সেই জেলা পর্যায়ের সাংবাদিকতার মান প্রসঙ্গ। যেমন আলোচনা হলো খাদ্য নিরাপত্তা বলতে জেলা পর্যায়ের বেশিরভাগ সাংবাদিকই মনে করেন খাদ্যের প্রাপ্যতা। কিন্তু এখানে যে পুষ্টি ও নিরাপদ খাবার একটি বড় বিষয় সেটি প্রতিবেদনে উঠে আসে না। আলোচনা হলো দু-একজন ছাড়া জেলা পর্যায়ের সাংবাদিকরা সংবাদের গভীরে যেতে পারেন না। এদের যেমন প্রশিক্ষণের অভাব রয়েছে তেমনি সংবাদ প্রচার বা প্রকাশের দায়িত্ব যাদের ওপর তারা এসব গ্রামগঞ্জের খবর বেশি গুরুত্ব দিতে চান না। তাই কৃষি বিষয়ে জেলা পর্যায় থেকে কাঙ্খিত সাংবাদিকতা হচ্ছে না।
আমার উপলব্ধি, জেলা পর্যায়ের সাংবাদিকতা অনেক এগিয়েছে। তবে কাঙ্খিত পেশাদারিত্ব এখনো আসেনি। ঘটনা এক. এ যেসব বন্ধু বলেছিলো বিশেষভাবে অ্যাসাইনমেন্ট দিয়েও জেলা পর্যায় থেকে কাঙ্খিত সংবাদ মিলছে না-তাদের বোঝাতে সক্ষম হয়েছিলাম যে সামান্যমত পারিশ্রমিক আর প্রশিক্ষণ দেয়া গেলে এ সমস্যার সমাধান করা সম্ভব। তাদের অনেকই আমার সঙ্গে একমত হয়েছিলেন। কারণ একটু খেয়াল করলেই দেখতে পাবেন, যেসব সংবাদ মাধ্যম তাদের প্রতিনিধিদের তুলনামূলক বেশি অর্থ প্রদান করে তারা ভালমানের সংবাদও পাচ্ছেন। আর তৃণমূলের যেসব সাংবাদিক অন্য কোন পেশার সাথে জড়িত না হয়ে সবসময় এই মহান পেশাকে আঁকড়ে আছেন তারা ওইসব প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি হিসেবে নিয়োগও পাচ্ছেন। অর্থাৎ উভয়পক্ষ পেশাদারিত্বের মনোভাব নিয়ে এগিয়ে আসলে তৃণমূলে সাংবাদিকতার বিকাশ ঘটবে, ঘটবে উন্নয়ন। যার সুফল পাবেন জনগন।
শুধু সাংবাদিকতাই নয় যে কোন পেশায় অভিজ্ঞতা ও দক্ষতাকে মূল্যায়ণ করা হয়। আর্থিক অসঙ্গতির কারণে জেলা পর্যায়ের বেশিরভাগ সাংবাদিকের বাধ্য হয়ে এর পাশাপাশি অন্য একটি পেশার সঙ্গে যুক্ত থাকতে দেখা যায়। এতে সাংবাদিকতায় তার খুব বেশি সময় দেয়া হয় না। অভিজ্ঞতা ও দক্ষতা অর্জন করাও হয় না। কিন্তু ঢাকার একজন সাংবাদিক সবসময় যখন এ নিয়েই কাজ করেন তখন তিনি দ্রুত অভিজ্ঞ হয়ে ওঠেন। জেলা পর্যায়ের সাংবাদিকদের জন্য পরামর্শ হলো প্রথমে কষ্ট হলেও এই পেশায় বেশি সময় দিতে হবে, পরিশ্রম করতে হবে, তাহলে অভিজ্ঞতা ও দক্ষতা অর্জন করতে পারবেন। পাবেন ভাল চাকরি।
ঘটনা দুই-এ দেখলাম কৃষি বিষয়ে জেলা পর্যায় থেকে ভালমানের প্রতিবেদন তৈরি হচ্ছে না। অথচ কৃষির প্রায় সবটুকু্ই রয়েছে ঢাকার বাইরে। আমার মনে হয় সংবাদ মাধ্যমগুলো সংবাদ প্রচার/প্রকাশের ক্ষেত্রে বৈষম্যমূলক আচরণ বন্ধ করলেই এ সমস্যার সমাধান সম্ভব। শুধু কৃষিতেই নয় সকল ক্ষেত্রেই দেখা যায়, আয়তনে বা জনসংখ্যার বিবেচনায় সারাদেশের তুলনায় ঢাকা খুবই ছোট হলে সংবাদমাধ্যমে এর কাভারেজ বেশি। দেশের অন্য অংশের সংবাদের গুরুত্ব যারা দিবেন তাদেরকে অবশ্যই প্রতিনিধিদের প্রশিক্ষণ দিয়ে যোগ্য করে গড়ে তুলতে হবে। তখনই পেশাদার সাংবাদিক তৈরি হবে জেলা পর্যায়ে।
সবশেষে ঢাকার বাইরে যারা সাংবাদিক নিয়োগ করেন, তাদের কাছে অনুরোধ থাকবে, আপনার সামর্থ অনুযায়ী প্রয়োজনে কম সংখ্যক সংবাদকর্মী রাখেন, তবে পেশাদারিত্ব বজায় রাখবেন। সাংবাদিকদের পেশাদার হিসেবে গড়ে তুলুন। সাংবাদিকদের বলবো অন্য কাজে সময় না দিয়ে পেশায় মনোযোগী হন। অভিজ্ঞতা ও দক্ষতা অর্জন করুন। অবশ্যই মর্যাদা পাবেন। 

রবিবার, ১৭ জুন, ২০১২

আষাঢ় >অসার


আষাঢ় >অসার

কার জন্য এ বৃষ্টি?

এসেছে আষাঢ় তাই
না কি কবির জন্য, সাহিত্যের

সরকারের, কমাবে বিদ্যুত-পানির সংকট
না কি জনগনের? জীবনে আসবে স্বস্তি

সংবাদ মাধ্যমের জন্য নতুন স্টোরি হচ্ছে 
না কি অলসের, নাক ডাকিয়ে ঘুম পাড়ার

বৃষ্টি কি গৃহিণীর, ভুনা খিচুড়ির জন্য 
না কি চাকরিজীবির ভোগান্তি বাড়াতে 

দু:চিন্তা যতো সড়ক ও বিদ্যুত বিভাগের
কৃষক বলছে সব অসার চিন্তা, লাভ শুধু ফসলের

রবিবার, ৮ মে, ২০১১

রবীন্দ্র জন্মদিন, শিলাইদহ কুঠিবাড়ি এবং আমি


বাঙ্গালীর সকল অস্তিত্বে মিশে আছেন রবীন্দ্রনাথ। পরিবর্তিত সময়েও জীবনের সকল আয়োজনে তার প্রয়োজন অবশ্যম্ভাবী, অনিবার্য। আমাদের আধুনিকতা, সভ্যতা সবক্ষেত্রে তার অবদান অনেক। আর বাংলা সাহিত্যে তিনি রবি, কিরণ ছড়িয়েছেন আজন্ম, এখনো। তার শতবর্ষ আগের চিন্তা চেতনা আজও ছন্দময়, বিশ্বয়কর। এই বিশ্বকবির আজ জন্মদিন। দেড়শ’ তম। কোনভাবেই এড়ানো সম্ভব নয় এই মহামানবেরে। তাইতো রবির উদয়ক্ষণে জাগরণ উঠিছে দুই বাংলায়। আজ যেন সব বাঙ্গালীর জন্মদিন, শ্রদ্ধা জানাই তোমায়।
সব বাঙ্গালী আজ উৎসবে মাতোয়ারা। এই দিনটি এলেই আমি ফিরে যাই শিলাইদহ কুঠিবাড়িতে। মনে পড়ে কুৎসিত সেই ঘটনার কথা। শিহরিত হই এখনও। ঘটনাপঞ্জি ২০০৬ সালের। তখন কাজ করতাম দৈনিক মানবজমিনে। কুষ্টিয়াস্থ স্টাফ রিপোর্টার। মানবজমিনের সাপ্তাহিক প্রকাশনা জনতার চোঁখ-এ ৭মে ছাপা হয় ‘তিন এমপি টেনশনে’ শিরোনামে একটি সংবাদ। সংবাদটিতে ছিল ক্ষমতাসীন বিএনপি দলীয় কুষ্টিয়ার তিন এমপি জনবিচ্ছিন্নতার কারণে সামনের (২০০৭ সালের) নির্বাচন নিয়ে রয়েছেন টেনশনে। এই তিনজনের একজন তৎকালীন জেলা বিএনপির সভাপতি শহীদুল ইসলাম। তিনিই কান্ডটি ঘটান। কেন এমন সংবাদ লেখা হলো কৈফিয়ত চেয়ে প্রকাশ্যে গালিগালাজ করেন। দেখে নেবার হুমকি দেন। রবীন্দ্র কুঠিবাড়িতে তখন চলছিল বিশ্বকবির জন্মদিনে রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠান। পাশে বসা দু’জন মন্ত্রী, অন্যান্য এমপি, শহীদুলের স্ত্রী। উপস্থিত হাজার হাজার রবীন্দ্র ভক্ত হতভম্ব। হতভম্ব আমিও। তিনি এমন আচরণ করতে পারেন, এটা অস্বাভাবিক নয়। স্বভাব ও ক্ষমতার মিশেলে এমন হতেই পারে। কিন্তু তিনিই যে এ অনুষ্ঠানের আয়োজক। তিনি অধ্যাপক! সংস্কৃতি বিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতিও তিনি। কবির স্মৃতিধন্য কুঠিবাড়িতে জন্ম জয়ন্তী উৎসবে তার এ আচরণ খুবই বেমানান দেখালো। সঙ্গে সঙ্গেই ছি ছি পড়ে গেল। সহকর্মি সাংবাদিকরা প্রতিবাদ জানালো। 
স্কুল জীবন থেকে সাইকেলে করে এই শিলাইদহে আসতাম। তারপর বেড়াতে, অন্যদের দেখাতে এবং পেশাগত কাজে কতবার এখানে এসেছি সে হিসেব করা কঠিন। বিশ্বকবির স্মৃতিধন্য এই কুঠিবাড়ি আমার কাছে তখন একেবারে অচেনা মনে হলো। এই ঘটনার পরও অনেকবার শিলাইদহ গেছি। ওই দুঃস্মৃতি ভেসে উঠেছে ছবির মতো। 
সেদিনের ওই ঘটনার রেশ ছিল আরো দীর্ঘ। ক্ষুব্ধ সংবাদকর্মিরা কুষ্টিয়া ফিরে প্রতিবাদ সভা করে। পরদিন ৯মে সমকাল, যুগান্তরসহ বিভিন্ন জাতীয় দৈনিক শহীদুলের এই অসভ্যতা নিয়ে রিপোর্ট প্রকাশিত হয়। ওই দিনই এমপি শহীদুল বাদী হয়ে তাকে অস্ত্র দেখিয়ে চাঁদাদাবির মিথ্যা মামলা করেন তিন সাংবাদিকের বিরুদ্ধে। আমি বাদে বাকী দু’আসামী মুন্সী তরিকুল ইসলাম(সমকাল) ও আল-মামুন সাগর(যুগান্তর)। তাদের অপরাধ হলো আমার পাশে দাড়ানো, এবং শহীদুলের অসভ্যতার প্রতিবাদ করা এবং পত্রিকায় নিউজ করে অসভ্যের মুখোশ খুলে দেয়া। মজার ব্যাপার হলো সাংবাদিকের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলার খবর পরদিনের খবরের পাতায় ছাপা হলে আরেকটি মামলা করা হয় আমাদের তিনজনের বিরুদ্ধে। পুলিশ পাঠানো হয় বাসায়। এরপর ঢাকায় পালানোর পথে আমাদের ধরতে পুলিশ ও ছাত্রদলের কর্মিদের দিয়ে প্রহরা বসানো হয় বিভিন্ন পয়েন্টে। মিঠু ভাই (মনজুর এহসান চৌধুরী, সম্পাদক, দৈনিক আন্দোলনের বাজার ও প্রতিনিধি, চ্যানেল আই) এর প্রাইভেট গাড়ীতে করে গ্রাম্য পথে ঢাকায় পৌছাই আমরা। হামলা ও মামলার হুমকিতে ক’দিনের মাথায়ই মিঠু ভাইও আমাদের সঙ্গী হন। বন্ধ করে দেয়া হয় তার পত্রিকা আন্দোলনের বাজার। বন্ধ ছিল ৪৪ দিন। 
বিভিন্ন পত্রিকা ও ইলেক্ট্রনিক্স মিডিয়ায় এই ঘটনার উপর সংবাদ প্রকাশিত হয়। জাতীয় প্রেসক্লাব ও ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন নানা প্রতিবাদ কর্মসূচী গ্রহন করে। সাংবাদিক নেতা ইকবাল সোবহান চৌধুরী, মঞ্জুরুল আহসান বুলবুল, শওকত মাহমুদসহ অন্যরা উদ্যোগ নিলেন কুষ্টিয়ায় গিয়ে সমাবেশ করে আমাদের রেখে আসবেন। আমরা আশার আলো দেখতে পেলাম। কিন্তু খবর পেলাম কুষ্টিয়ায় গেলে হাত পা ভেঙ্গে দেয়া হবে। সমাবেশেই হামলা করা হবে। খবরটি জানালাম ইকবাল ভাইকে। তিনি আমাদের উপর ক্ষেপে গেলেন। বললেন, আমি ভয় পাচ্ছি না। তোমাদের এতো ভয় কিসের। হামলা হলে আমার উপর হবে। আমরা সাহস পেলাম। নির্ধারিত দিন ২৯ মে আমরা কুষ্টিয়া পৌছালাম। আশপাশের বিভিন্ন জেলার সাংবাদিক নেতারা এসেছেন সমাবেশে। আয়োজন করা হয়েছে পাবলিক লাইব্রেরি মাঠে। ফরিদপুরের সাংবাদিক নেতা লায়েকুজ্জামানের বক্তব্যের পরই শুরু হলো হামলা। অদুরে জেলা বিএনপি অফিসের ভেতর থেকে বের হয়ে ছাত্রদল-যুবদলের ক্যাডাররা ইটপাটকেল নিক্ষেপ করতে করতে সমাবেশ স্থলে এসে মারপিট ভাঙচুর শুরু করলো। কপাল ফেটে রক্ত ঝরলো ইকবাল ভাই’র। আহত হলেন ২৩ জন সাংবাদিক। অনেকের মোবাইল, ক্যামেরা ও মোটর সাইকেল ভেঙ্গে ফেলা হলো। কিছুক্ষণ দাড়িয়ে দেখলো পুলিশ। পরে ঢাকা থেকে নির্দেশ পেয়ে পুলিশের আরেকটি দল গিয়ে আমাদের উদ্ধার করলো। কুষ্টিয়া হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে আমাদের নিয়েই ঢাকায় ফিরে আসলেন ইকবাল ভাই।
কুষ্টিয়ায় সাংবাদিক সমাবেশে ইকবাল ভাই’র উপর এই হামলার ঘটনায় দেশে বিদেশে প্রতিবাদের ঝড় উঠলো। আওয়ামী লীগের এমপি আব্দুর রাজ্জাক এই হামলার বিষয়টি সংসদে উত্থাপন করেন। এর প্রেক্ষিতে সংসদের বক্তব্য রাখেন হামলাকারি শহীদুল এমপি। তার সেই দম্ভের পক্ষে টেবিল চাপড়িয়ে সমর্থন করেন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াও। এই দৃশ্য দেখে আমাদের মনে হলো চারদলীয় জোট সরকারের আমলে আর বোধহয় কুষ্টিয়া ফেরা হবে না। আন্তর্জাতিক পর্যায়ে এই বিষয়টি নিয়ে সমালোচনার মুখে পড়ায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আমাদের নিরাপত্তা দিয়ে কুষ্টিয়া পাঠানোর উদ্যোগ নেয়। ২ মাস ৪দিন পর আমরা কুষ্টিয়া ফিরতে পেরেছিলাম। 
কৃতজ্ঞতা জানাই:
অধ্যক্ষ সোহরাব উদ্দিন, সেই সময়ের বিএনপি দলীয় কুষ্টিয়ার আরেক এমপি। তিনি অ্যামেরিকান দূতাবাসসহ আন্তর্জাতিক বিভিন্ন মাধ্যমকে আমাদের পক্ষে নানা তথ্য দিয়ে সহায়তা করেন। মাইনুল হক খান, উদ্যোগ নিয়ে বিসিডিজেসি থেকে অর্থ বরাদ্দ করে আমাদের ঢাকায় থাকার ব্যবস্থা করেছিলেন। ব্যারিষ্টার আমির উল ইসলাম, র‌্যারিষ্টার তানিয়া আমির ও সাংবাদিক আব্দুল হান্নান মামলা থেকে আমাদের জামিনের ব্যবস্থা করেছিলেন। সম্পাদক গোলাম সারোয়ার, মতিউর রহমান, সাংবাদিক কামরুল হাসান, হারুন অর রশিদ, সাইফুল ইসলাম তালুকদারসহ অন্যদের, যারা সংবাদপত্রে লেখনির ঝড় তোলেন। সংবাদিক রাহুল রাহা, যিনি আমাদের নিয়ে এটিএন বাংলায় সংবাদ তুলে ধরেন। জাতীয় প্রেসক্লাব, শহীদুলের ছবি টানিয়ে তাকে নিষিদ্ধ করেন। ইউরোপীয় তিন দেশ বিমানবন্দরে শহীদুলকে কালো তালিকাভুক্ত করে। অ্যামেরিকান এ্যামবেসি, আমেরিকান জার্নালিষ্ট, অ্যামনেস্টি ইন্টান্যাশানালসহ কয়েকশ আন্তর্জাতিক সংস্থা, যারা চাপ সৃষ্টি করেছিলেন আমাদের পক্ষে। আমার স্ত্রী শারমিন আক্তারকে, যিনি সেসমযে গর্ভবতী। এই পরিস্থিতির সঙ্গে সংগ্রাম করতে হয়েছে তাকেও। আর ধিক্কার জানাই সেসময়ে সমকালে, বর্তমানে কালের কণ্ঠে কর্মরত এক সাংবাদিককে, যিনি কুষ্টিয়া গিয়ে মাত্র ২০ হাজার টাকায় ম্যানেজ হয়ে আমাদের বিপক্ষে সংবাদ লিখেছিলেন।

জাহিদুজ্জামান, সাংবাদিক, চ্যানেল আই। 

রবিবার, ৯ জানুয়ারী, ২০১১

কি দোষ ছিল ফেলানীর?

কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী সীমান্তে পাখির মতো গুলি করে তাকে হত্যা করে বিএসএফ। সংবাদ মাধ্যমগুলোর খবরে জানা গেছে সীমান্ত পেরিয়ে বাবার সাথে দেশে ফেরার সময় এই কিশোরীর কাপড় আকটে যায় কাটা তারে। এরপর চিৎকার দিলে দূর থেকে গুলি করে হত্যা করে বিএসএফ। ৪ঘন্টা ঝুলে ছিল তার দেহ। অনেকক্ষণ হয়তো বেচেও ছিল। পেরিয়ে আসা বাবা নুরু মিয়া দূর থেকে দেখেছে নিজের মেয়ের এই করুণ পরিণতি। ধরলাম অবৈধভাবে সীমান্ত পাড়ি দিচ্ছিল তারা। এই অপরাধে কি তাকে গুলি করে হত্যা করতে হবে। বিএসএফকে ধিক্কার জানাবার ভাষা আমার জানা নেই। ফেলানী যদি আমার বোন হতো তাহলে কেমন লাগতো। উফ! ভাবতেও পারিনা। এরকম ভাবনা কি বিএসএফ বা ভারত সরকারের হয় না। না কি তারা বাংলাদেশীদের মানুষই মনে করে না। ১২ বছর বয়সী এই ফেলানীই নয় প্রায়ই সীমান্তে বিএসএফ বাংলাদেশী নাগকিকে গুলি করে হত্যা করে। অথচ প্রায়ই তারা ভাল ভাল কথা বলে বৈঠকে। সরকারি সিদ্ধান্তে যদি তারা এই হত্যাযজ্ঞ চালিয়ে থাকে তাহলে ভারত সরকারকে কোন অবস্থাতেই মানবিক বলা যেতে পারে না। আর যেসব বিএিসএফ সদস্য এ ঘৃণিত কাজ করে চলেছে তাদেরকে মানুষ বলা যায় না। এরা পশু। যুদ্ধক্ষেত্রে প্রতিপক্ষ হত্যা করার মধ্যে বীরত্ব আছে সৈনিকের। কিন্ত এই ধরনের হত্যাকান্ডকে কি বলবেন?

মঙ্গলবার, ২৩ নভেম্বর, ২০১০

কুষ্টিয়ায় নেশাদ্রব্য পান করে দুই ছাত্রের মৃত্যু

কুষ্টিয়ায় বিষাক্ত নেশাদ্রব্য পান করে খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (কুয়েট) এর দুই ছাত্র নিহত হয়েছে। হাসপাতাল ও পুলিশ সূত্রে এদের পরিচয় সংক্রান্ত অভিন্ন তথ্য পাওয়া গেছে। একজন আহসান উল্লাহ ভূইঞা মেহেদী কুয়েট শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি। অন্যজন মোহন কুয়েটের সিভিল বিভাগের শেষ বর্ষের ছাত্র। মেহেদী কিশোরগঞ্জ জেলার গাইটাল এলাকার আব্দুল্লাহ ভূইঞার ছেলে এবং মোহন খুলনার দৌলতপুর উপজেলার ফুলবাড়িয়া গেট এলাকার কলিম উদ্দিন সর্দারের ছেলে। 
২২ নভেম্বর দুপুরে তাদেরকে অসূস্থ অবস্থায় ভেড়ামারা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মোহনকে মৃত ঘোষনা করেন। গুরুতর অসুস্থ মেহেদীকে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। সেখানে অবস্থার অবনতি ঘটলে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়ার পথে তার মৃত্যু হয়। 
পুলিশ ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, কয়েকদিন আগে ছাত্রলীগ নেতা মেহেদী তার কয়েকজন বন্ধু অপর বন্ধু আতিকের বিয়ের দাওয়াতে কুষ্টিয়ার দৌলতপুর আসেন। পরে তারা ওঠেন ভেড়ামারা উপজেলা শহরের হোটেল পূর্বাশা’য়। সেখানেই তারা কোন নেশাদ্রব্য সম্ভবত বিষাক্ত সিইপট পান করে বলে জানান, ভেড়ামারা থানার এসআই ইকবাল। 
নিহতদের লাশ তাদের নিজ নিজ বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।

রবিবার, ১৪ নভেম্বর, ২০১০

এমপির বাড়িতে বোমা হামলার ঘটনায় মামলা, আটক-১০

কুষ্টিয়া-১ আসনের সরকারদলীয় এমপি আফাজ উদ্দিন আহমেদ’র বাড়ীতে আত্মঘাতী বোমা হামলাকারীর পরিচয় পাওয়া গেছে। সে এই হামলায় নিহত যুবলীগ কর্মি সিদ্দিকুর রহমানের চাচাতো ভাই। তার নাম আহাদুল ইসলাম (৪০), বাড়ি দৌলতপুর উপজেলার গোপীনাথপুর গ্রামে। এই বোমা হামলার ঘটনায় থানায় মামলা হয়েছে দু’টি। যুবলীগ নেতা জাহিদ হোসেন জাহিদসহ ১০জনকে আটক করেছে পুলিশ।
শনিবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে দৌলতপুরে এমপি আফাজ উদ্দিন আহমেদ’র বাড়িতে আত্মঘাতি বোমা হামলা চালায় দূর্বত্তরা। বিস্ফোরিত বোমায় সাংসদ আফাজ উদ্দিন আহমেদ অল্পের জন্য প্রাণে রক্ষা পেলেও নিহত হয়েছে হামলাকারিসহ মোট ৩ জন। নিহতরা হচ্ছেন তারাগুনিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আসমত আলী (৪৫), স্থানীয় যুবলীগ নেতা সিদ্দিকুর রহমান (৪০) ও তার চাচাতো ভাই হামলাকারি আহাদুল ইসলাম (৪০)। আহত হয়েছেন আরো তিনজন।
ঘটনার সময় বাড়ির ড্রইং রুমে স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা নেতৃবৃন্দ ও তারাগুনিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সাথে মতবিনিময় করছিলেন আফাজ উদ্দিন আহমেদ। সেখানে ৩ জন অপরিচিত ব্যক্তিও বসা ছিল। ব্যক্তিগত কাজে পাশের রুমে গিয়ে এমপি আফাজ উদ্দিন আবার ড্রয়িংরুমে ফিরে আসার সময়ই হঠাৎ করে বোমা বিস্ফোরণ ঘটে। এমপির পাশে বসা তারাগুনিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আসমত আলী ঘটনাস্থলেই নিহত হন। নিহত হয় সোফার ওপর বসা অজ্ঞাতনামা ব্যক্তি আহাদুল ইসলাম (পরে পরিচয় পাওয়া যায়), তার নিকট থেকেই বোমাটি বিস্ফোরিত হয়। গুরুতর আহত হন যুবলীগ নেতা সিদ্দিকুর রহমান ও তারাগুনিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক ওবায়দুল হক ওরফে হামজু। আশংকাজনক অবস্থায় তাদেরকে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে নেয়ার পথে মারা যান সিদ্দিকুর রহমান। এ ঘটনায় সাংসদ আফাজ উদ্দিনসহ বোমার স্প্রিন্টারে আহত হন অন্ততঃপক্ষে ৩জন।
এই হামলার প্রতিবাদে দৌলতপুর উপজেলা আওয়ামীলীগ অংগ ও সংগঠনের নেতাকর্মীরা বিক্ষোভ মিছিল করেছে।