সোমবার, ৩১ আগস্ট, ২০০৯

দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের চরমপন্থী সন্ত্রাসীদের দমনে পুলিশি অভিযান আরো জোরালো করা হচ্ছে: আইজিপি


দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের চরমপন্থী সন্ত্রাসীদের দমনে আরো জোরালো পুলিশি অভিযান চালানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সোমবার পুলিশ সদরদপ্তরে এক সভা শেষে পুলিশের মহাপরিদর্শক নূর মোহাম্মদ সাংবাদিকদের এ কথা বলেছেন। তিনি বলেন, দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে টেন্ডার নিয়েই বেশি ঝামেলা হচ্ছে। তাই চলমান টেন্ডার প্রক্রিয়া বাদ দিয়ে বিকল্প কিছু করা যায় কি না সে ব্যাপারে সরকারের নীতি নির্ধারণী পর্যায়ে পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। আইজিপি জানান, গত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে দেড়শ'র বেশি পুলিশ ক্যাম্প করা হয়েছিল। বর্তমানে ক্যাম্পের সংখ্যা কমিয়ে সেগুলোর জনবল বাড়ানো হচ্ছে। পাশাপাশি ওই এলাকার পুলিশ ক্যাম্পগুলোকে গাড়ি ও মোটরসাইকেল দেওয়াসহ আধুনিকায়ন করা হচ্ছে। বাড়ানো হচ্ছে গোয়েন্দা নজরদারিও। মহাসড়কে চাঁদাবাজির কিছু ঘটনার কথা স্বীকার করে সেগুলোকে বিচ্ছিন্ন ঘটনা' হিসেবে আখ্যায়িত করেন তিনি। আইজিপি বলেন, হাইওয়েতে পুলিশ, পরিবহন মালিক সংগঠন বা শ্রমিক সংগঠন যারাই চাঁদাবাজি করবে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে সিদ্ধান্ত হয়েছে। হাইওয়ের যে এলাকায় চাঁদাবাজির অভিযোগ পাওয়া যাবে সে এলাকার পুলিশ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় রাজনৈতিক চাঁদাবাজি ও টেন্ডারবাজি নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, অপরাধীকে অপরাধী হিসেবেই দেখা হচ্ছে। যে ধরনের চাঁদাবাজিই হোক তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পুলিশকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আসন্ন ঈদে রাজধানীসহ সারাদেশে প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিতে পুলিশ কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলেও তিনি জানান।
সভায় পুলিশের অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক নববিক্রম কিশোর ত্রিপুরা, র‌্যাবের মহা পরিচালক হাসান মাহমুদ খন্দকার, ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার একেএম শহীদুল হকসহ দেশের সব মহানগর পুলিশ কমিশনার উপস্থিত ছিলেন।

কামরুল ইসলাম সিদ্দিক-এর মৃত্যুবার্ষিকী আজ, অকৃতজ্ঞ কুষ্টিয়াবাসী গুনীর কদর করতে জানেনা


এলজিইডির প্রতিষ্ঠাতা অবসরপ্রাপ্ত সচিব কুষ্টিয়ার কৃতি সন্তান কামরুল ইসলাম সিদ্দীক এর প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী আজ। গতবছর ১ সেপ্টেম্বর রাতে নিউইয়ার্কে হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে তিনি ইন্তেকাল করেন। এলজিউিডির প্রধান প্রকৌশলী ও পিডিবির চেয়ারম্যান থাকাকালে তিনি কুষ্টিয়া অঞ্চলে গ্রামীণ অবকাঠামোগত ব্যাপক উন্নয়ন করেন। কুষ্টিয়ার উন্নয়নে সর্বত্র ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে তার হাতের ছোয়া। এছাড়াও কুষ্টিয়া অঞ্চলের বেকার যুবকদের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করে তিনি এ অঞ্চলের মানুষের ভালবাসা অর্জন করেন। আইটি সেক্টরেও তার ছিল অসামান্য অবদান। ই-বার্তা। কামরুল ইসলামের মৃত্যুর পর কুষ্টিয়াবাসী শোকে পাথর হয়ে যায়। সবসময় তিনি যেমন কুষ্টিয়াবাসীর সমব্যাথী ছিলেন তেমনি কুষ্টিয়াবাসীও বেদনাক্লিষ্ট হয়ে পড়ে তার মৃত্যুর খবরে। সর্বস্তরের মানুষের মাঝে শোকের ছায়া নেমে আসে। কুষ্টিয়ার মানুষ কখনই তার কাছ থেকে নিরাশ হয়নি। সেজন্যইতো মৃত্যুর খবর পেয়ে সেদিন অনেকেই কান্নায় ভেঙে পড়েন। সেদিন মনে হয়েছিল কুষ্টিয়াবাসী যেন এতিম হয়ে গেছে। যার অবদান ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে কুষ্টিয়ার আনাচে কানাচে। যার কলমের খোচায় যেখানে সেখানে সড়ক নির্মিত হয়েছে, বিদ্যুতের আলো পৌছে গেছে প্রত্যন্ত গ্রামে। অথচ মাত্র একবছরেই আমরা বেমালুম ভুলে গেলাম তাকে। আজ ১ সেপ্টেম্বর তার মৃত্যুবার্ষিকী কিন্তু শোকে কাতর সেই কুষ্টিয়াবাসী কোন অনুষ্ঠানের আয়োজন করেনি। কেউ আজ তার স্মৃতিচারন করবে না। অথচ তার বর্ণময় জীবন নিয়ে দিনের পর দিন আলোচনা করা যেত। বড়িয়া মসজিদে পরিবারের পক্ষ থেকে আজ দোয়া ও ইফতার মাহফিলের আয়োজন করা হয়েছে। আগামীকাল ২ সেপ্টেম্বর বিকেলে কুষ্টিয়া এলজিইডি চত্বরে কামরুল ইসলামের মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে আলোচনা, দোয়া ও ইফতার মাহফিলের আয়োজন করা হয়েছে। এলজিইডির কর্মকর্তা কর্মচারীরা এ আয়োজন করেছে। খবর ই-বার্তার। এ সামান্য আয়োজনটুকুও করতে পারতো কুষ্টিয়ার কোন সামাজিক, সাংস্কৃতিক বা নাগরিক সংগঠন।
জীবন বৃত্তান্ত ঃ কামরুল ইসলাম সিদ্দীক কুষ্টিয়া সদর উপজেলার বড়িয়া গ্রামে ১৯৪৫ সালের ২০ জানুয়ারী জন্ম গ্রহণ করেন। তার বাবার নাম আলহাজ্ব নুরুল ইসলাম সিদ্দীক ও মাতার নাম বেগম হামিদা সিদ্দীকি। কামরুল ইসলাম সিদ্দীক নিজে (মেজো) ও ছোট ভাই ব্যবসায়ী ফখরুল ইসলাম সিদ্দীক ছাড়া বাকিরা সবাই আমেরিকা প্রবাসী। কামরুল ইসলাম সিদ্দীক ১৯৬০ সালে কুষ্টিয়া মুসলিম হাইস্কুল থেকে এসএসসি ও ১৯৬২ সালে কুষ্টিয়া সরকারি কলেজ থেকে সাফল্যের সাথে এইচএসসি পাশ করেন। বুয়েট থেকে ১৯৬৬ সালে বিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর অর্জন করেন। এরপর যৌথ স্নাতক কর্মসূচীর অধীনে বুয়েট ও যুক্তরাষ্ট্রের শেফিল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৭৮ সালে আরবান ও রিওজিনাল প্লানিং বিষযের উপর উচ্চতর ডিগ্রী লাভ করেন। ১৯৭৯ সালে কুষ্টিয়া জেলা পরিষদে প্রকৌশলী হিসাবে তার চাকরী জীবন শুরু হয়। অত্যন্ত মেধাবী কামরুল ইসলাম অল্প সমযের মধ্যে প্রকৌশলী হিসাবে নিজের অবস্থান শক্ত করেন। দীর্ঘ চাকরী জীবনে কামরুল ইসলাম এলজিইডির প্রধান প্রকৌশলী, যমুনা সেতুর সচিব, গনপূর্তের সচিব, পিডিবির চেয়ারম্যানসহ সরকারী অনেক গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানের দ্বায়িত্ব পালন করেন। তিনি ছিলেন গ্লোবাল ওয়াটার পার্টনারশীপের এশিয়া অঞ্চলের চেয়ারম্যান।

রবিবার, ৩০ আগস্ট, ২০০৯

দক্ষিন-পশ্চিমের চরমপন্থীদের আত্মসমর্পণ করার আহবান জানালেন স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী

এতোদিন চরমপন্থিরা এমন মওকাই খুজছিলেন। ক্রসফায়ার আর এনকাউন্টারের ভয়ে তারা স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার আকাংখা জানিয়ে আসছিলো দীর্ঘদিন ধরে। তারা মিডিয়াম্যান ও রাজনীতিবিদদের নিকট স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার কথা বলে আসছে। অবশ্য এ জন্য তারা সাধারন ক্ষমার দাবিও জানাচ্ছে। দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের চরমপন্থীদের আত্মসমর্পণ করে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার আহ্বান জানিয়ে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শামসুল হক টুকু বলেছেন, আত্মসমর্পণ করলে তাদের স্বাগত জানানো হবে। তবে তাদের সাধারন ক্ষমার বিষয়টি স্পষ্ট করে কিছু না বলায় জটিলতা থেকেই গেল। এখন দেখার বিষয় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর এ আহবানে চরমপন্থিরা কেমন সাড়া দেয়। আর সরকারই তাদের প্রতি কতটুকু আন্তরিক হয়।
আজ রোববার স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শামসুল হক টুকু বলেন, আমি তাদের দ্রুত সাধারণ মানুষের সঙ্গে মিলে দেশের জন্য কাজ করার আহ্বান জানাই। পুরনো ঢাকার চকবাজার থানার উদ্বোধনকালে প্রতিমন্ত্রী এসব কথা বলেন।
শামসুল হক বলেন, দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের চরমপন্থী সন্ত্রাস অনেকদিন আগে থেকে উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া। আইন-শৃঙ্খলারক্ষাকারী বাহিনী ওই এলাকার সন্ত্রাস নিয়ন্ত্রণে কাজ করে যাচ্ছে। কেউ অপরাধ করলে তার বিরুদ্ধে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
আত্মসমর্পণ করলে চরমপন্থীদের সাধারণ ক্ষমা করা হবে কী না সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ওরা (সন্ত্রাসীরা) আত্মসমর্পণের প্রস্তাব দিলে আমরা ভেবে দেখবো সাধারণ ক্ষমা করা যায় কী না।
আওয়ামী লীগ সরকারের গত আমলে (১৯৯৬ থেকে ২০০১ সাল) একবার দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের চরমপন্থীদের অস্ত্র জমা দিয়ে আত্মসমর্পণের সুযোগ দেওয়া হয়েছিল। তখন তাদের সাধারণ ক্ষমাও ঘোষণা করা হয়েছিল।
বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড বন্ধ করতে আওয়ামী লীগের আশ্বাস বাস্তবায়নের বিষয়ে সাংবাদিকরা জানতে চাইলে শামসুল পাল্টা প্রশ্ন করেন, আপনাকে কোনও সাপ ফণা তুলে কাটতে উদ্যত হলে আপনি হাতের লাঠি ফেলে দিয়ে দৌঁড়ে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করবেন না, সাপকে আঘাত করবেন? বর্তমান সরকারের আমলে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড হচ্ছে না বলে দাবি করে তিনি বলেন, এটা আমাদের সংবিধানেও নেই।
দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের কুষ্টিয়া জেলাতেই গত পাঁচ দিনে কথিত বন্দুকযুদ্ধে চারজন নিহত হয়। মানবাধিকার সংগঠনগুলো এ ধরনের ঘটনাকে বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড বলে দাবি করে আসছে।
প্রতিমন্ত্রী পুলিশকে আরও দক্ষতা, নিষ্ঠা ও সততার সঙ্গে দায়িত্ব পালনের আহ্বান জানান। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে পুলিশের কাজে হস্তক্ষেপ করা হচ্ছে না।
চকবাজার থানার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন, আইন প্রতিমন্ত্রী কামরুল ইসলাম, স্থানীয় সাংসদ মোস্তফা জালাল মহিউদ্দীন, ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার একেএম শহীদুল হক প্রমুখ।

কুষ্টিয়ায় ধান ক্ষেত থেকে এক ভ্যানচালকের লাশ উদ্ধার

কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার কালিনাথপুরে এক ভ্যানচালককে শ্বাসরোধ করে হত্যা করেছে সন্ত্রাসীরা। রোববার সকালে মিরপুর থানা পুলিশ ওই গ্রামের একটি ধানক্ষেত থেকে তার লাশ উদ্ধার করেছে। মিরপুর থানার ওসি শেখ আনোয়ার হোসেন জানান, নিহত ব্যক্তির শরীরে কোথাও আঘাতের কোন চিহ্ন নেই।
নিহত ভ্যানচালকের নাম আব্দুর রহিম (৫০)। সে মিরপুর উপজেলাদক্ষিণ ছাতিয়ান গ্রামের মৃত বানাত আলীর ছেলে। পুলিশ বা নিহতের পরিবারের কেউ হত্যাকান্ডের কারণ জানাতে পারেনি।

শনিবার, ২৯ আগস্ট, ২০০৯

কুষ্টিয়ায় পুলিশ-র‌্যাবের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে গণবাহিনীর কমান্ডার বাউল মেম্বার নিহত


কুষ্টিয়া, ২৯ আগষ্ট ২০০৯
কুষ্টিয়ায় পুলিশ ও র‌্যাবের যৌথ টহল দলের সাথে বন্দুকযুদ্ধের সময় গণবাহিনীর শীর্ষ কমান্ডার বাউল জোয়ার্দ্দার ওরফে বাউল মেম্বার নিহত হয়েছে। আজ শনিবার ভোর ৪টার সময় ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় থানার বামনগ্রাম সংলগ্ন বিলের পাশে এ বন্দুকযুদ্ধের ঘটনা ঘটে।
কুষ্টিয়া পুলিশের এএসপি (হেডকোয়ার্টার) আলমগীর হোসেন জানান, পুলিশ ও র‌্যাবের একটি যৌথদল টহল দেবার সময় ভোর ৪টার দিকে বামনগ্রাম বিলের নিকটে কিছু লোকজন জড়ো হয়ে আলাপ করতে দেখে গাড়ী দাড় করায়। এসময় গাড়ীর আলো দেখে ছাত্রভঙ্গ হয়ে ওই লোকগুলো দৌড়ে পালানো শুরু করে। পুলিশ ও র‌্যাব ধাওয়া করলে তারা অবস্থান নিয়ে গুলিবর্ষণ শুরু করে। পুলিশ-র‌্যাব পাল্টা গুলি চালালে শুরু হয় বন্দুকযুদ্ধ। কিছুক্ষন বন্দুকযুদ্ধ চলার পর ওই বন্দুকধারীরা গুলি করতে করতে পালিয়ে যায়। পুলিশ এসময় সেখান থেকে বাউল মেম্বারের গুলিবিদ্ধ লাশ ও নয় রাউন্ড গুলিসহ একটি দেশী তৈরী আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করে। পুলিশ আরো জানায়, নিহত বাউল ঝাউদিয়া, মনোহরদিয়া ও উজানগ্রাম এলাকার ত্রাস ছিলো। তার বিরুদ্ধে ৩টি হত্যাসহ ডাকাতি ও অপহরনের ৬টি মামলা রয়েছে। সে জেলা পুলিশের তালিকাভুক্ত শীর্ষ সন্ত্রাসী।

শুক্রবার, ২৮ আগস্ট, ২০০৯

গুজব : মুকুল নিহত

গণমুক্তিফৌজের প্রধান কুষ্টিয়া অঞ্চলের শীর্ষ চরমপন্থি নেতা মুকুল ভারতে নিহত হয়েছে এমন গুজব ছড়িয়ে পড়ে শুক্রবার সকাল থেকেই। দিনভর এ আলোচনা ছিল কুষ্টিয়া অঞ্চলে মানুষের মুখে মুখে। প্রথমে শোনা যায়, ভারতে গ্রেফতার হওয়া গণবাহিনী নেতা ওবাইদুল ওরফে লাল ছাড়া পেয়ে উত্তর চব্বিশ পরগোনার বনগায়ে মুকুলকে গুলি করে হত্যা করেছে। এরপর শোনা যায় কলকাতার নিকটে বাগুই হাটি এলাকায় মুকুলকে গুলি করে প্রতিপক্ষরা। পরে তাকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে। দিনভর এসব আলোচনায় মুখর ছিল কুষ্টিয়ার আবাল বৃদ্ধ বনিতা। এসব খবরের সত্যতা যাচাই করতে সাংবাদিকদের মোবাইল সচল হয়ে ওঠে। প্রশাসনের কর্তাব্যাক্তি থেকে শুরু করে ভারতে বিভিন্ন মাধ্যমে যোগাযোগ শুরু করেন তারা। পুলিশ কর্তারা বলেন, আমরাও শুনেছি। কলকাতার সাংবাদিকদের নিকট যোগায়োগ করেও এ খবরের সত্যতা মেলেনি। তারা জানান, বাগুইহাটি এলাকায় এক বাংলাদেশীকে (পাসপোর্টে নাম কে এম আলম) শুক্রবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে লাল রঙের একটি মারুতি কারে করে তিনজন সন্ত্রাসী এসে গুলি করে কিন্তু গুলি লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়। পরে তাকে পুলিশ গ্রেফতার করে। কিন্তু তিনি মুকুল কিনা তা নিশ্চিত করতে পারেনি সেখানকার পুলিশ।
শেষ পর্যন্ত খবরের সত্যতা মেলে মুকুলের ফোনে। কুষ্টিয়ার দু’জন সাংবাদিককে ফোন করে মুকুল নিজেই তার বেচে থাকার কথা জানালে সব জল্পনার অবসান ঘটে। কেউ উদ্দ্যেশ্যমূলকভাবে তার মৃত্যুর খবর প্রচার করতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। দুদিন আগে গণবাহিনীর লালের গ্রেফতার ও ছাড়া পাবার এমনি গুজব রটে। এছাড়াও প্রতিদিনই কুষ্টিয়ায় গুজব রটে ওই ওমুক স্থানে লাশ পড়ে আছে, রটে ওই স্থানে ক্রসফায়ার হয়েছে। কুষ্টিয়া যেন রীতিমতো গুজবের শহরে পরিণত হয়েছে।

কুষ্টিয়ার আলামপুর থেকে তিনটি বিদেশী বন্দুকসহ দুইজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ


কুষ্টিয়া সদর উপজেলার আলামপুর ইউনিয়নের দরবেশপুর গ্রাম থেকে একটি দোনলা ও দুইটি একনলা বিদেশী বন্দুকসহ দুইজনকে গ্রেফতার করেছে সদর থানা পুলিশ। সদর থানার ওসি ফারুক হোসেন জানান, আজ শুক্রবার ভোর ৪টার দিকে পুলিশ গোপন সংবাদের ভিত্তিতে ওই গ্রামের শাকের আলীর ছেলে শরীফুলের বাড়িতে অভিযান চালায়। তার ঘর তল্লাশ করে বন্দুক তিনটি উদ্ধার করে। এসময় শরীফুল (২৫) ও তার সহযোগি একই গ্রামের জয়নাল শেখের ছেলে শামিদ শেখ (৩০)কে গ্রেফতার করে। পুলিশ জানায়, এরা চরমপন্থি সংগঠন ‘গণমুক্তিফৌজ’র নতুন ক্যাডার। তাদের নামে মামলা বা জিডি নেই।

গণবাহিনীর লাল ছাড়াও পেল!

কুষ্টিয়ায় মাথা কাটা আতঙ্কের মুল নায়ক জাসদ গণবাহিনীর ওবায়দুল ওরফে লাল ভারতের পশ্চিমবঙ্গে গ্রেফতারের মাত্র ২৪ ঘন্টার মাথায় ছাড়াও পেয়েছে। খবর বিভিন্ন সূত্রের। আগের দিন বুধবার তার গ্রেফতারের সংবাদ পাওয়া যায়। জানা গেছে, গত ২৬ আগষ্ট ভারতীয় সময় রাত ৮টার দিকে পশ্চিমবঙ্গের উত্তর চব্বিশ পরগনা জেলার বাগদা থানা পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে এসটিএফ কোলকাতা’র হেফাজতে রাখা হয়। সে সময় তার কাছে পাওয়া যায় ১টি আগ্নেয়াস্ত্র এবং মোবাইল ফোন। গতকাল বৃহস্পতিবার ভারতীয় সময় সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় ওবায়দুল ছাড়া পেয়েছেন এমন খবর পাওয়া গেছে। এ খবরের সত্যতা নিশ্চিত হতে পশ্চিমবঙ্গের উত্তর চব্বিশ পরগনা জেলার ভারতীয় টিভি চ্যানেল ইটিভি বাংলা’র প্রতিনিধি রাজশ্রী রায়’র সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি ওবায়দুলের ছাড়া পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেন। তিনি আরও জানান, শুধু ওবায়দুল নয় তার সাথে আরো দুজনকে আটক করেছিল সে দেশের পুলিশ। ওদিকে কলকাতার সাংস্কৃতিক খবরের সম্পাদক কাজল চক্রবর্তী এমন খবর শুনেননি বলে জানান। তিনি বলেন, এরকম প্রায়ই গুজব রটে বাংলাদেশের শীর্ষ সন্ত্রাসী ভারতে গ্রেফতার হয়েছে। পুলিশের নিকট খবর নিতে গেলে তার সত্যতা মেলে না। তিনি বলেছেন আন্তর্জাতিক রাজনীতির কারনেও পুলিশ অনেক সময় গ্রেফতার করলেও অস্বীকার করে থাকেন। তবে বাংলাদেশের কোন সরকারি সূত্র লাল’র গ্রেফতার বা ছাড়া পাবার বিষয়টি নিশ্চিত করতে পারেনি। সবাই বলছেন শুনেছি।

গণবাহিনীর লাল ভারতে গ্রেপ্তার!

কুষ্টিয়ায় সাম্প্রতিক খুনাখুনির মূল নায়ক গণবাহিনীর নেতা লালের ভারতে গ্রেপ্তারের খবর পাওয়া গেছে। জানা যায় গত ২৬শে আগস্ট ভারতীয় সময় রাত ৮টায় পশ্চিমবঙ্গের দক্ষিন চব্বিশ পরগনা জেলার বনগা মহাকুমার বাগদা থানা পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে। গ্রেপ্তারের সময় তার কাছে পাওয়া যায় ২ কেজি হেরোইন, ১টি আগ্নেয়াস্ত্র এবং চারটি মোবাইল ফোন। গত ১০ আগষ্ট তিনটি কাটা মাথা কুষ্টিয়া সড়ক ও জনপথ অফিসের গেটে রাখার ঘটনায় দেশজুড়ে আলোচনায় আসে লাল। ওই মাথা এবং ১৭ কিলোমিটার দুরে সোনাইডাঙ্গা গ্রামের মাঠের মধ্যে পাওয়া দেহর পাশে চিরকুটে লেকা ছিল জাসদ গণবাহিনী লাল। লালের পুরো নাম ওবাইদুল। তার বাড়ি সদর উপজেলার রনজিতপুর গ্রামে। কুষ্টিয়ার পুলিশ সুপার শাহাবুদ্দিন খান ঘটনা মুনেছেন বলে জানালেও কোন মিডিয়া এ খবরের সত্যতা নিশ্চিত করতে পারে নি।

বৃহস্পতিবার, ২৭ আগস্ট, ২০০৯

রাজবাড়ীতে আওয়ামী লীগ নেতাসহ ৩ জনকে গুলি করে হত্যা


রাজবাড়ী সদর উপজেলায় বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় সন্ত্রাসীদের গুলিতে ৩ জন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে দুইজন ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের নেতা। স্থানীয় উড়াকান্দা বাজারের এ ঘটনায় গুলিবিদ্ধ হয়েছেন দুজন। নিহতরা হলেন বরাট ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুস সালাম (৪৫), সহ-সভাপতি গোলাম মোহাম্মদ (৪০) এবং ইউনিয়ন পরিষদের দফাদার মো. সাঈদ (৫০)। গুলিবিদ্ধ ইউনিয়ন পরিষদ সচিব ফেরদৌস এবং বাচ্চু মোল্লা নামের অন্য একজনকে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

কুষ্টিয়ার হরিপুরে পুলিশ-র‌্যাবের ব্যাপক তল্লাশ, গ্রেফতার-২

কুষ্টিয়ার হরিপুর ইউনিয়নের শালদহ গ্রামে বুধবার রাতভর তল্লাশ করেছে শতাধিক পুলিশ ও র‌্যাবের বিশাল বাহিনী। ২৫ আগষ্ট পুলিশের সাথে বন্দুকযুদ্ধে নিহত ডাবলুর অস্ত্রভান্ডার ও সহযোগিদের গ্রেফতারের উদ্যোশ্যে এ সাড়াশি অভিযান পরিচালিত হয়। একযোগে এতো পুলিশ ফোর্স নিয়ে বিশেষ এ অভিযান নিকট অতীতে দেখা যায়নি। পুলিশ ও র‌্যাব সারারাত বাড়ি বাড়ি তল্লাশ করে। বিশেষ করে ইউপি চেয়ারম্যান মোস্তাক হোসেন মাসুদের বাড়িতেও ব্যাপক তল্লাশী করা হয়। অভিযোগ রয়েছে নিহত ডাবলু মাসুদ চেয়ারম্যানের অন্যতম কর্মি ছিল। তার অস্ত্র’র সন্ধান পাওয়া যেতে পারে এ আশায় চেয়ারম্যানের বাড়িতে ব্যাপক তল্লাশ করে। এলাকার অনেকেই মন্তব্য করেছেন, চেয়ারম্যানের নিকট যদি কিছু থেকে থাকে ডাবলু পুলিশের সাথে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হবার পরপরই তা সরিয়ে ফেলে। ভোররাত পর্যন্ত এ অভিযানে কোন অস্ত্র উদ্ধার হয়নি। গ্রেফতার হয়েছে দুজন। এরা হলেন, মাসুদ চেয়ারম্যানের আরেক ঘনিষ্ট বাউই ও জহুরুল। বাউই’র পিতার নাম ফেরত আলী ও জহুরুলের পিতার নাম পলান। নিহত ডাবলুর বড় কুটুম হওয়ায় জহুরুলকে আটক করা হয় পরে কোন অভিযোগ না পাওয়ায় তাকে ছেড়ে দেয়া হয়। তবে বাউই’র বিরুদ্ধে সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের অভিযোগ রয়েছে। একাধিক মামলাও রয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে পুলিশ যাবার খবর আগেই পৌছে যাওয়ায় অভিযানে বড় কোন সফলতা আসেনি। হরিপুর ইউনিয়নে অবস্থানকারি চরমপন্থি সন্ত্রাসীরা নদী ঘাটে সোর্স বসানো আছে। আইন পয়োগকারি সংস্থার লোক নদী পার হলেই খবর পৌছে যায়।

কুষ্টিয়া শহরে পুলিশ-সন্ত্রাসী বন্দুকযুদ্ধে দুই যুবক নিহত


কুষ্টিয়া শহরের পূর্বমজমপুর রেল লাইনের ধারে ডিবি ও সদর থানা পুলিশের টহল দলের সাথে সন্ত্রাসীদের বন্দুকযুদ্ধে সুমন (২৮) ও সোহেল (২৫) নামের দুই যুবক নিহত হয়েছে। বুধবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে কুষ্টিয়া শহরের পূর্বমজমপুর রেল লাইনের পাশে এ ঘটনা ঘটে। পুলিশ বলছে নিহত সুমন তালিকাভূক্ত উঠতি সন্ত্রাসী। আর সোহেল চিহ্নিত মাদক ব্যবাসায়ী ও ছিনতাইকারি।
পুলিশ জানিয়েছে, রাত সাড়ে ১০টার দিকে পূর্বমজমপুর এলাকার কাজিম মিস্ত্রির ছেলে সুমন ও একই এলাকার মজনুর ছেলে সোহেলসহ কয়েকজন রেল লাইনের পাশে বসে ছিল। সে সময় একদল সন্ত্রাসী এসে তাদের উদ্দেশ্য করে গুলিবর্ষন করে। এদিকে কুষ্টিয়া সদর থানা ও ডিবি পুলিশের টহল দল নিকটে থাকায় সেখানে পৌছালে সন্ত্রাসীরা তাদেরকেও লক্ষ্য করে গুলি বর্ষন করে। পুলিশ পাল্টা গুলি চালালে সন্ত্রাসীরা পিছু হটে। এরপর পুলিশ ঘটনাস্থলে নিহত সুমনের লাশ এবং গুরুতর আহত অবস্থায় সোহেলকে উদ্ধার করে। কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে নেয়া হলে চিকিৎসকরা তাকেও মৃত ঘোষনা করে। পরে পুলিশ ওই এলাকা তল্লাশী করে একটি এলজি ও ৫ রাউন্ড গুলি উদ্ধার করেছে।
এদিকে গতরাতে কুষ্টিয়ার একটি সংবাদপত্র অফিসে +৯১৯৭৩৩৮০৮৯১২ নাম্বার থেকে ফোন করে পূর্ব বাংলার কমিউনিষ্ট পার্টি এমএল এর জেলা কমান্ডার পরিচয়ে জনৈক মতিন এদের হত্যার দায়-দায়িত্ব স্বীকার করেন। তিনি বলেন, তাদের গেরিলা কমান্ডার রোকন ও মানিকের নেতৃত্বে সুমন ও সোহেলের মৃত্যুদন্ড কার্যকর করা হয়েছে। এলাকার মাদক ব্যবসা নিয়ন্ত্রণই ছিলো এদের অপরাধ।

মঙ্গলবার, ২৫ আগস্ট, ২০০৯

কুষ্টিয়ায় পুলিশের সাথে বন্দুকযুদ্ধে চরমপন্থি ডাবলু নিহত


কুষ্টিয়া শহর সংলগ্ন মহাশ্বশান এলাকায় পুলিশের সাথে বন্দুকযুদ্ধের সময় শাহীনুর রহমান ডাবলু (৩৮) নামের এক চরমপন্থি নিহত হয়েছে। পুলিশ জানায়, ডাবলু জাসদ গণবাহিনী (লাল) এর হরিপুর ইউনিটের সামরিক কমান্ডার। সোমবার রাতে তার নেতৃত্বে একদল ক্যাডার গড়াই নদী পেরিয়ে শহরে প্রবেশ করবে এমন তথ্যের ভিত্তিতে কুষ্টিয়া ডিবি ও সদর থানা পুলিশ মহাশ্বশান এলাকায় অবস্থান নেয়। রাত ৪টার দিকে ওই দলটি মহাশ্বশান এলাকা দিয়ে শহরে প্রবেশ করার সময় পুলিশ দেখে গুলিবর্ষণ শুরু করে। পুলিশও পাল্টা গুলি চালালে শুরু হয় বন্দুকযুদ্ধ। একপর্যায়ে চরমপন্থিরা পিছু হটলে পুলিশ ডাবলুর লাশ, একটি এলজি গান ও ১১ রাউন্ড বন্দুকের গুলি উদ্ধার করে।
স্থানীয়রা জানায়, নিহত ডাবলু সদর উপজেলার হরিপুর ইউনিয়নের শালদহ গ্রামের মৃত আকমল হোসেনের ছেলে। ডাবলু নদীতে ডাকাতি, চাঁদাবাজি, ট্রাক ডাকাতি, মোটরসাইকেল ছিনতাইসহ নানা অপকর্মের সাথে জড়িত ছিলো। ইউপি চেয়ারম্যান এম মোস্তাক হোসেন মাসুদের সাথে তার ঘনিষ্টতা ছিল বলে এলাকাবাসী জানায়। গত ২০ আগষ্ট কুষ্টিয়ায় আইজিপির সুধী সমাবেশে চেয়ারম্যান মাসুদ ঘোষনা দেন তার ইউনিয়নে কোন সন্ত্রাসী নেই। যে ইউনিয়নকে সন্ত্রাসীদের অভয়ারন্য বলা হয় সেখানকার চেয়ারম্যানের এ ঘোষনার পর হাস্যরসের সৃষ্টি হয়। চেয়ারম্যানের হয়ে রিলিফের চাল বিতরন, হুমকি প্রদান, অস্ত্র দেখিয়ে মহড়া দেয়া ছিল ডাবলুর কাজ। গত ইউপি নির্বাচনে চেয়ারম্যানের হয়ে ডাবলু সশস্ত্র অবস্থায় কাজ করেছে। অভিযোগ রয়েছে ডাবলুর সহযোগি হিসেবে কাজ করে ভোলা, ছোট মাসুদ ও মনির হোসেন মনুসহ বেশ কয়েকজন। এরা সবাই এলাকায় ওপেন ঘুরে বেড়ায়। বিভিন্ন এলাকার চরমপন্থি সন্ত্রাসীরা অপকর্ম করে এসে হরিপুরে আশ্রয় নেয়। এর অন্যতম কারণ হলো যেদিক দিয়েই হোক হরিপুরে পৌছাতে হলে পুলিশকে নদী পার হতে হবে। আর নদী পার হলেই মোবাইলে খবর চলে যেত ডাবলুর কাছে। যখন যে চরমপন্থী দলের সদস্যরা হরিপুরে অবস্থান নেয় ডাবলু তাদের লোক হয়ে যেত। এর আগে সে অন্য দল করলেও বেশ কিছুদিন হলো সে গণবাহিনীতে যোগ দেয়। আর এরপরই সে চেয়ারম্যানের আরো ঘনিষ্ট হয়ে পড়ে।
ডাবলু ৬মাস আগে একবার চুরিকরা নতুন পালসার মোটর সাইকেলসহ মিরপুর থানা পুলিশের নিকট ধরা পড়ে। তিনমাস হাজত বাস করে সে জামিনে মুক্ত হয়। পুলিশ জানায়, সম্প্রতি কুষ্টিয়া শহরের দুই যুবককে হত্যা করে পদ্মা নদীতে লাশ ফেলে রাখা হয়। এদের হরিপুর দিয়ে পাবনা পার করে দিয়েছিলেন এই ডাবলু। পুলিশ এ ঘটনার পর থেকে তাকে হন্যে হয়ে খুজছিল।

সোমবার, ২৪ আগস্ট, ২০০৯

কুষ্টিয়ার পোড়াদহে দুই পক্ষের সংঘর্ষে একজন নিহত, আহত দুই


কুষ্টিয়ার পোড়দহ এলাকার তেঘড়িয়া গ্রামে তুচ্ছ ঘটনায় দু পক্ষের সংঘর্ষে আব্দুল হান্নান মন্ডল (৫০) নামের এক কৃষক ফালাবিদ্ধ হয়ে নিহত হয়েছে। আহত হয়েছে আরো দুইজন। খবর ই-বার্তার। পুলিশ জানায়, সোমবার ইফতারের পরপর গরুতে ক্ষেত খাবার মতো তুচ্ছ ঘটনা নিয়ে ওই গ্রামের বিবদমান মন্ডল ও বিশ্বাস গ্র“পের মধ্যে ভয়াবহ সংঘর্ষ বাধে। বিশ্বাস গ্রুপের হাসানের গরু মন্ডল গ্রুপের একজনের জমির ক্ষেত খেলে দুই পক্ষ দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। এতে গুরুতর আহত তিনজনকে মিরপুর উপজেলা হাসপাতালে নিয়ে আসার পর ফালাবিদ্ধ হান্নান মন্ডল মারা যায়। আহত বাকী দুজন চিকিৎসাধীন আছেন।

মালয়েশিয়ায় নতুনভাবে পরিচিতি পাচ্ছে বাংলাদেশ


সনজয় চাকী : www.sanjoychaki.ucoz.com
বিমানের ছোট কাঁচের জালানায় চোখ রাখি। ককপিট থেকে উড়োজাহাজ দ্রুত গতিতে দৌড়াতে দৌড়াতে শূন্যে উঠে গেল। রাজধানীর ঢাকার আলো ঝলমল রাত ফিকে হতে থাকে। যতই উপরে উঠছি ততই নীচে আলোর রেখা ছোট হচ্ছে। একসময় বিন্দু হয়ে গেল সব আলো। ঘিরে ধরল অন্ধকার। বাইরে কিছুই দেখা যায় না।
দেশের সীমানা পেরিয়ে বিমান কুয়ালামপুরের দিকে। কানের পর্দায় প্রচন্ড প্রেসার নিয়ে ক্যামেরাম্যান মনুর সঙ্গে গল্প আর বেশী এগোতে চায় না। বিমান বালাদের দেয়া রাতের খাওয়া সেরে ঝিমুনীর চেষ্টা। ঘুম আসে না। স্মৃতির পাখীরা ডানা মেলে।
মন যায় ঢাকার বাসায়, কুমারখালীর বাড়িতে, স্মৃতির শহর কুষ্টিয়ায়। ৯৩ সালে বাড়ি থেকে কুষ্টিয়ায় এসেছিলাম। সাংবাদিকতার নানান ক্ষেত্র ঘুরে ১১ বছর পর চলে এলাম ঢাকায়। আর আজ মালয়েশিয়া যাচ্ছি। তবে কুষ্টিয়া বা ঢাকায় আসার মত এ যাওয়া নয়। কয়েকদিনের জন্য। সাতদিন পরই ফিরবো। তাই মালয়েশিয়ার এই যাত্রা আমার কাছে কুষ্টিয়ার সাংবাদিকদের উপজেলা শহরে যাওয়ার কথা মনে করিয়ে দেয়। কুষ্টিয়ায় থাকতে আমরা মাঝে মাঝে দৌলতপুর, মিরপুর, ভেড়ামারা বা কখনো খোকসা,কুমারখালী ও সদরের প্রত্যন্ত অঞ্চলে যেতাম দল বেঁধে। কখনো বিশেষ রিপোর্টের খোঁজে, কখনো বিশেষ কোন অনুষ্ঠানে। তবে প্রায় নিঃসঙ্গ এই মালয়েশিয়া যাত্রায় কুষ্টিয়ার সেই আনন্দময় ভ্রমণকে থেকে মিস করি।
এসব ভাবতে ভাবতে ভোর ৬টার দিকে আবারো বেল্ট বাধার তাগিদ দেয় বিমান বালারা। প্লেন একটু পরই ল্যান্ড করবে। বেল্ট বেঁধে কাঁচের জালানায় আবারো চোখ রাখি। সকালকে স্বাগত জানাতে প্রস্তুত প্রকৃতি। আহামরি কিছু চোখে পড়ে না। প্লেন থেকে নেমে মালয়েশিয়ার বিমান বন্দর পা রেখেই কিছুটা অবাক হই। একি মালয়েশিয়ার এয়ার পোর্টর্? না, ইউরোপের কোন এয়ার পোর্টে নানা দেশের মানুষের ভীড়। গতির সঙ্গে তাল দিয়ে বিদ্যুৎ চালিত ট্রেনে উঠি। বিশাল এয়াপোর্ট। ট্রেনে চড়ে যেতে হলো ইমিগ্রেশন ও কাষ্টমস বিভাগে। মালয়েশিয়া সেই কাজটি করেছে যাতে একজন বিদেশী সেদেশে গিয়ে এয়ারপোর্ট থেকেই ভালোলাগা শুরু হয়। পজিটিভ ধারণা হয় দেশটি সম্পর্কেও। সময় পেয়েই মোবাইলের সিম বদলাই। বাংলাদেশ থেকে নিয়ে যাওয়া মালয়েশিয়ার মোবাইলের সিম যুক্ত করি। একটু পরেই বেজে ওঠে ফোন। শংকর পোদ্দার জানান, তিনি আমাদের জন্য বাইরে অপেক্ষা করছেন।
এয়ারপোর্ট থেকে আমরা মূল রাজধানীর দিকে রওনা দিলাম। ঝকঝকে মসৃণ পথ। দুপাশের বেশিরভাগই ছোট-বড় পাহাড়্‌। মাঝে মাঝেই ছবির মত দৃশ্য। বিমানে সারারাত নির্ঘুম কাটালেও গাড়ীতে কোন ক্লান্তি নেই। নতুন দেশ। যা দেখছি ভালো লাগছে। একঘণ্টার মধ্যেই আমরা আমপাং-এ। উঠলাম পাঁচতারা হোটেলে। পরদিন দুপুরে গেলাম স্বপ্নের টুইন টাওয়ার দেখতে। নাইন ইলেভেনে আমেরিকার টুইন টাওয়ার ধ্বংসের পর মালয়েশিয়ার এই টুইন টাওয়ার সারাবিশ্বের পর্যটকদের অন্যতম আকর্ষণ। নানাদেশের পর্যটকদের কলরবে মুখরিত হয়ে আছে।
সেখান থেকে রাতে বাংলা খাবারের জন্য যেতে হলো কোটারায়া। বেশকয়েকটি দোকান আর ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে বাংলায় সাইনবোর্ড লেখা। সঙ্গে ছিলেন প্রবাসী ব্যবসায়ী মিলন। হোটেলে বসে শুধু বাংলায় কথাবার্তা শুনি। মিলন জানালো, কুয়ালামপুরের ব্যস্ত এলাকা কোটারিয়ার এই সড়ক এখন বাংলা এষ্টেট হিসেবে পরিচিত হয়ে উঠছে। পাশে রয়েছে চায়না এস্টেট। চীনা বংশোদ্ভূত মালয়েশিয়ানদের জায়গা। আর এ সড়কে বাঙালীরা বেশী বলেই অনেক বলতে শুরু করেছে বাংলা এস্টেট। ট্যাক্সি ড্রাইভারদের বাংলা এস্টেট বললে এয়ারপোর্ট থেকে সোজা নিয়ে আসে এখানে। বেশকয়েকটি হোটেল রেষ্টুরেন্টসহ এখানকার অধিকাংশ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশীদের মালিকানায়। প্রবাসী অনেক বাংলাদেশীদেরও প্রতিদিনের আড্ডাস্থল এই কোটারায়া।
এখানে বাংলাদেশের স্বাদের মাছ-ভাত খেতে খেতে শুনলাম মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশী কৃষি শ্রমিকরা সুনাম করেছে। দেখতে ইচ্ছে হলো। একদিন ভোরে রওনা। রাজধানী কুয়ালামপুর থেকে আড়াইশ’ কিলোমিটার দূরের পাহাড়ী জনপদ ক্যামেরুন হাইল্যাণ্ড। পথে মাইলের পর মাইল জুড়ে পাম বাগান। রাবার বাগান। তবে ক্যামেরুনে নেই। সেখানে চীনা কৃষকদের দিয়ে সিম চাষ করাচ্ছেন বিক্রমপুরের আওয়াল হোসেন রাজন। মালয়েশিয়ায় সিম চাষ হয়না। কারণ সিমের ক্রেতা নেই। রাজন সেই সিম মালয়েশিয়ান কর্মিদের দিয়ে প্রসেস করে রপ্তানী করেন ইউরোপের বাজারে। বিশেষত বৃটেনে। তার বার্ষিক টানওভার ৪ মিলিয়ন ডলার। তার সেলেঙ্গরের প্রসেসিং কারাখানায় কাজ করে মালয় মেয়েরা। তারাই ভালো সিম বাছাই করে প্যাকেট করে। এরপর শীততাপ নিয়ন্ত্রিত কন্ট্রেনারে পাঠানো হয় বিদেশে। গতরাতেই তার কারখানা দেখেছি। আজ পাহাড়ের ঢালে রাজনের সিম ক্ষেত দেখে গেলাম বাংলাদেশী কৃষকদের দেখতে।
রাতে বৃষ্টি হয়েছে। তাই আমরা তাপার পুরানো সড়ক দিয়ে আসিনি। বৃষ্টি হলে পাহাড়ী ওই পথ বিপদজনক হয়ে ওঠে। বেশী সময় লাগে। তাই নতুন প্রসস্থ সড়ক দিয়ে পাহাড় বেয়ে ক্যামেরুনের কেন্দ্রস্থলে এসেই এক সবজী দোকনে দুই বাংলাদেশীর দেখা পেলাম। তারা নিয়ে গেল বারেক মিয়ার কাছে। বাড়ি দাউদকান্দি। চীনা মালিকের অনুমতি নিয়ে তাকে সঙ্গে নিয়ে গেলাম সবজী বাগান দেখতে। পাহাড়ী শহরের মাঝে মূল রাস্তার পাশে দোকান। ঠিক তার পিছন দিকে টিলার মতো পাহাড়। বারেকের পিছে পিছে উঠে গেলাম উপরের সবজী বাগানে। গিয়ে তো অবাক। উপর থেকে শহরটা ছবির মতো দেখায়। বাজার, দোকানপাট। কিন্তু পুরো উপত্যকা জুড়েই বাগান আর বাগান। নানা রকমের সবজী, সবজীর চারা। পলিথিনের ঘর করে তার নীচে এসবের চাষ চলছে।
১২ বছর ধরে এখানে আছেন বারেক। বাগানের সঙ্গেই পাহাড়ী ঢালে তার থাকার জায়গা। একসঙ্গে তিন বাংলাদেশী থাকেন। নিজেরাই রান্না করেন। পঞ্চাশ ছুই ছুই বারেক জানালেন, এখানে বাংলাদেশের প্রায় সব সবজীই হয়। দেখি টমাটো ধরে আছে, আছে বরবটি, শশা। বাগান থেকে নীচের দোকানে নিয়ে কার্টুনে ভরে এসব সবজী বিক্রি করেন মালিকরা। বারেকের মতে, ক্যামেরুন হাইল্যাণ্ডের পাহাড়ে কৃষি জমিতে কাজ করছে প্রায় ৫০ হাজার বাংলাদেশী শ্রমিক। বছরের পর পর বছর ধরে তারা চীনা মালিকদের কৃষি খামারে সবজী চাষ করে চলেছেন। পাহাড়েও ফোটচ্ছেন বাহারী ফুল।
ক্যামেরুন হাইল্যাণ্ডে এসে মনে হলো যেন কোন চীনা উপত্যকায় আছি। পাহাড়ী এই জনপদের রাস্তা, দোকান-পাটে বেশিরভাগই চীনা চেহারার মানুষ। বাড়িগুলোও চাইনিজ মডেলের। উপত্যকা জুড়েই ফুল, ফল ও সবজী উৎপাদন। সবজীর চারাও। মালয়েশিয়ার সবজী চাহিদার সিংহভাগই পূরণ করে থাকে ক্যামেরুনের কৃষকরা। আর সেই কৃষকদের একটি বড় অংশ বাংলাদেশের কৃষি শ্রমিক। মাসে ১৪ থেকে ২০ হাজার টাকা বেতন পেয়ে অনেকেই আত্মীয়-স্বজন এনেছেন। রাজন আর শংকরের সঙ্গে আরো কয়েকটি কৃষিক্ষেতে গেলাম। তাদের একটিতে প্রায় একশ বাংলাদেশী কাজ করেন। ভারত ও নেপালের কিছু শ্রমিকও আছে। সেটারও মালিক চীনা। সাক্ষাতকাকার নিতে চাইলাম। কিছুতেই দেবেনা। বলল, আমার বোন দেবে। সে কোথায়? দোকানে। গেলাম, একের পর এক বোন বদলায়। আসে, হাসে, চলে যায়। ব্যাপার কি? শেষে ওই দোকনের বাংলাদেশী কর্মচারী রহস্য উদঘাটন করলো। ইংরেজি বলতে তাদের এত লজ্জা। পরে তাদের মহিলা ম্যানেজার মুখ খুললো। অবশ্য সেও চীনা। তবে ভালো ইংরেজি বলে।
ফেরার সময় পথে একের পর এক চা বাগান। শ্রীমঙ্গলে একরম বিশাল আয়তনের চা বাগান আমি দেখিনি। পাহাড়ের গায়ে আকাশের মতো সবুজের চাদর বিছিয়ে আছে চা বাগান। সেখানে ভারতীয় বংশোদ্ভুত মালয়েশিয়ানদের ব্যবসা। অসংখ্য পর্যটক। উঁচু পাহাড়ের গায়ে ইণ্ডিয়ান টির অফিস। পাশেই রেষ্টুরেণ্ট থেকে চা বাগান ছবির মতো। নামলাম। চা খেতে খেতে ১২ বছর ধরে মালয়েশিয়ায় থাকা রাজন জানালেন, ক্যামেরুনের বেশিরভাগ কৃষি কামারের মালিকই চীনা বংশোদ্ভুত মালয়েশিয়ানরা। কারণ আদি মালেশিয়ান বা মালয়রা কৃষিকাজের সঙ্গে তেমন জড়িত থাকতে চায় না। অথচ ব্যবসা বোঝে চীনা আর ভারতীয় বংশোদ্ভুত মালয়েশিয়ানরা। পরিশ্রমও করতে পারে তারা। তাদের কাছেই আধুনিক পদ্ধতির কৃষিকাজ শিখে পাহাড়ে সবজীচাষ করে প্রশংসা কুড়িয়েছেন এসব প্রবাসী বাংলাদেশী কৃষকরা। অনেক পুরানো শ্রমিক মালিকদের কাছ থেকে ক্ষেত ইজারাও নিচ্ছেন। চীনা মালিকদের জমি আর অর্থের সঙ্গে উৎপাদনে অংশ নিচ্ছেন তারা। বাংলাদেশী কৃষকরাও এখন মালয়েশিয়ার সবজী বিপ্লবের ভাগিদার।
বেশ কয়েকটি ছবি তুলে কখনো উপর দিকে আবার বখনো নীচের ঢালু পথ বেয়ে গাড়ী চললো কেএল এর দিকে। তখন পাহাড়ের বুকে পড়ন্ত বিকেলের আলো। বোধ হয় একটু আগে বৃষ্টি হয়েছে। সূর্য যেন বিদায়ের অপরুপ সাজে সেজেছে। সন্ধ্যা হয়ে আসছে। কিন্তু উপর থেকে নেমে আসা জলপ্রপাত দেখে আবারও থামতে হলো। জলপ্রপাতের শীতল রুপালী জলে পা ভিজিয়ে আবার সমতলের দিকে।
পরদিন বিকেলে নরসিংদীর বেলাবোর প্রবাসী ছাত্র তারেক নিয়ে গেল তার বাসায়। বেশ কয়েকজন বাংলাদেশী ছাত্র থাকে একসঙ্গে। ওরা জানালো, মালয়েশিয়ায় পড়তে যাওয়া অনেক বাংলাদেশী ছাত্রই পড়ালেখার পাশাপাশি পার্ট টাইম চাকরী করে খরচ যোগাচ্ছেন। তারেকের সঙ্গে মনো রেলে উঠে পূর্তজায়ার পথে নামলাম। প্রশাসনিক রাজধানী পূর্তজায়ার রাতের দৃশ্য দেখে আমপাং এ ফিরলাম। গল্পে গল্পে জানা গেল, আদি মালয় এবং চীনা ও ভারতীয় বংশোদ্ভূত মালয়েশিয়ানদের জন্য রয়েছে নিজেদের ভাষার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। ৪র্থ বৃহৎ জনগোষ্ঠি বাঙালী। এদের আলাদা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান না থাকায় বাংলাদেশীদের লেখাপড়া ইংলিশ মিডিয়ামে।
শাহ আলম হয়ে আরেকদিন গেলাম নিলাই শিল্প এলাকায়। সেখানে প্রায় ২০ হাজার বাংলাদেশী শ্রমিক। ওখানকার সবাই একনামে চেনে নড়াইলের শাহীন সরদারকে। ১২ বছর আগে এসেছিলেন শ্রমিক হয়ে। সে এখন আইজিসি নামের একটি মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানীর প্রোডাকশন ম্যানেজার। এলাকার কয়েকশ মানুষের চাকরি দিয়েছেন। মালয়েশিয়ায় এরকম কয়েক হাজার সফল বাংলাদেশী রয়েছেন। অনেকেই সেখানে বিয়ে করেছেন। বাড়ি-গাড়িও করেছেন। শাহীন গর্বের সঙ্গে জানালো, ক্লিনার থেকে তিনি ম্যানেজার।
ঝকঝকে সড়ক আর যানবাহনের এই গতির মতই এগিয়ে যাচ্ছে মালয়েশিয়ার অর্থনীতি। হরতাল ধর্মঘট নেই। বিনা মর্গেজে স্বল্পসুদের দীর্ঘমেয়াদী ঋণ নিয়ে.যে কেউ কিনতে পারে গাড়ী-বাড়ি। সবকিছুর জন্যই আছে ঋণ। সরকার ঋণকে উৎসাহিত করেৱ। মনে করে..ঋণী হলে শোধ দেবার জন্যই সে কাজ করতে বাধ্য হবে। মালয়েশিয়ানরা ঘরের রান্নার চেয়ে বাইরে খেতেই বেশী পছন্দ করে। রান্না করে সময় নষ্ট না করে সেই সময়ে কাজ করে বেশী টাকা আয় করে কম খরচে বাইরে খায় তারা। সাতদিনের সফর শেষে ফিরবার পালা।
২৫ নভেম্বর রাত সাড়ে ১০টায় আমাদের ফিরতি ফ্লাইট। সাড়ে ৮টার দিকে এয়ারপোর্টে পৌছে ইমিগ্রেশন-কাষ্টমস চেক করিয়ে লাগেজ দিয়ে ১০টার মধ্যে একবারে প্রস্তুত হয়ে গেলাম বিমানে ওঠার জন্য। সময় চলে যায়, কিন্তু বিমানে ওঠার জন্য ডাক পড়েনা। যাত্রীরা মুখ চাওয়া-চাওয়ি করছে। শেষমুহুত্যে ঘোষণা দিল বিমান ছাড়তে আধাঘণ্টা দেরি হবে। আধঘন্টা পর আবার ঘোষণা এখনো উড়োজাহাজটি প্রস্তুত হয়নি। আর একটু দেরি হবে। সময় যায়না, বাংলাদেশের ট্রেন বা বিমানের মতো এদের বিমানেরও কি টাইম ঠিক নেই! সাড়ে ১২টার দিকে চুড়ান্ত ঘোষণা, উড়োজাহাজটির যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে ফ্লাইটটি বাতিল করা হয়েছে, এই ফ্লাইট যাবে আগামীকাল দুপুর ২টায়। কি হবে এখন? যাদের সঙ্গে ছিলাম সবাইকে বিদায় দিয়েছি। তারপর মাঝরাত। ভাবতে ভাবতেই ব্যবস্থা। এয়ারলাইন্সের পক্ষ থেকে যাত্রীদের পাঁচতারা হোটেলে নিয়ে যাওয়া হবে এবং পরদিন সময়মতো আবার নিয়ে আসবে তারাই। রাত ২টায় ফিরলাম হোটেলে। সুসজ্জিত বিশাল স্যুট। বড় ড্রয়িং রুম, সোফা, বেড, রুম,দুরুমে দুটো টিভি, সামনে বারান্দা। বাথট্যাব, টয়লেটেও ফোনসেট।
রুমে ফিরেই ক্ষিধের কথা মনে হলো। এয়ারপোর্টে ঢুকেছি সন্ধ্যায়। তারপর যেভাবে সময় পার হয়েছে পেটের কথা মনেই হয়নি। আর আমরা জানতাম প্লেনে উঠেই খাব। সেজন্য চিন্তাও ছিলনা। কিন্তু রিসিপশনে খাবার কথা বলতেই জানানো হলো, এখন খাবার কোন ব্যবস্থা নেই। ডিনার টাইম শেষ হয়ে গেছে। সকালে ব্রেকফাষ্ট। ভাবলাম ঠিক আছে, বাইরে থেকে খেয়ে আসি। খোঁজ নিতেই জানলাম, আশপাশে কোন দোকান-পাট বা হোটেল কিছুই নেই। দশ/পনের মিনিট গাড়ী দূরত্বে হোটেল পাওয়া যাবে। মানে ১০/১৫ কিলোমিটার দূরে। ওকে,সেখানেই যাই। না খেয়ে তো আর রাত কাটানো যাবেনা। কিন্তু রিসিপশনের সুকণ্ঠি সর্বশেষ দুঃসংবাদটা দিল এবার। সরি স্যার, রাত আড়াইটা। এখন কোন গাড়ী নেই এখানে। যাবার কোন ব্যবস্থাও নেই! সকাল পর্যন্ত অপেক্ষা ছাড়া কোন উপায় নেই। আর ততক্ষণে আমাদের রুম বুঝিয়ে দিয়ে চলে গেছে মালয়েশিয়া এয়ারলাইন্সের কর্মকর্তারাও। তাহলে?
ফোন ছেড়ে এসে সোফায় বসে পড়লাম। কাছে কিছুই নেই। হাতে যে ছোট ব্যাগটি ছিল, তার মধ্যে মালয়েশিয়া থেকে কেনা কিছু খাবার জিনিস ছিল। কিন্তু ব্যাগ টানবো বলে সেটাও শেষ মুহূর্ত্যে লাগেজের সঙ্গে দিয়ে ফ্রি হয়ে গেছি। একটু বসে থেকে উঠলাম। রুমের ফিরিজে, সেলফে হাতরলাম। না খাবার মতো কিছু নেই। টেবিলে চোখ গেল। কফি আছে, থ্রি ইন ওয়ান। গুড়ো কফির সঙ্গে দুধ-চিনি মেশানো। আছে গরম পানি করে কফি বানানোর ব্যবস্থাও। শুধু আমাদের না, সব যাত্রীরই একই অবস্থা। পকেটে টাকা আছে, রাত কাটানোর জন্য পাঁচতারা হোটেলের স্যুটে আছি। কিন্তু পেটে খাবার নেই। অবশেষে কফি খেয়েই রাত কাটাতে হলো।
আর পরদিন দুপুর ২টার বিমান আর লেটে ছাড়েনি। বরং রাতের ক্ষতি অন্যভাবে পুষিয়ে দিয়েছিল মালয়েশিয়া এয়ার লাইন্স। বিমান লেট বাবদ তারা ১শ রিঙ্গিতের কুপন ধরিয়ে দিয়েছিল হাতে। বিমানের ভেতরের ওদের দোকান থেকে ১শ রিঙ্গিতের যা খুশি কিনতে পারেন। রাতের ওই ক্ষিধের কাছে ১শ রিঙ্গিত বা ২হাজার টাকার ক্ষতি পূরণ তেমন কিছু নয়। তবে ভালো লাগলো বিমান লেট করে ক্ষতি করার তাদের উপলব্ধিটা দেখে। আমরা কজন তা করি?

কুষ্টিয়া পুলিশে বদলি আতংক, এবার সদর সার্কেলের এএসপি


ই-বার্তা : কুষ্টিয়া পুলিশে চলছে বদলি আতংক। তিনজন এসআই, দুজন ওসির পর সর্বশেষ বদলি করা হয়েছে সদর সার্কেলের এএসপি কামরুল হাসানকে। রোববার বিকেলে আসা ফ্যাক্সবার্তায় সোমবারের মধ্যে তাকে পুলিশ হেডকোয়ার্টাসে রিপোর্ট করতে বলা হয়েছে। কুষ্টিয়ার আইন-শৃংখলার চরম অবনতির কারনে এসব বদলি করা হচ্ছে বলে ধারনা করা হচ্ছে। তবে বর্তমানে অতি স্পর্শকাতর এ জেলায় বদলিজনিত এসব শুন্য পদ সাথে সাথে পূরন না করায় পুলিশের কাজে স্থবিরতা আসতে পারে বলে অনেকেই আশংকা করেছেন। আবার বদলিজনিত আতংকে কাজে অনাগ্রহের আশংকাও করা হচ্ছে। খবর ই বার্তার। আমারও বদলি হতে পারে আজ-কালের মধ্যেই এমন ভেবে অফিসাররা মানসিক চাপে রয়েছেন। অথচ আইন-শৃংখলার চরম অবনতির পর এ জেলায় পুলিশের অপারেশন জোরদার করা হয়েছে। সন্ত্রাসীদের মোকাবেলা করার জন্য আরো দুইশত পুলিশ সদস্যর চাহিদার কথা জানানো হয়েছে। সেই সময়ে পুলিশের কমান্ডিং পর্যায়ে এ ধরনের শুন্যতা চলমান অপারেশনের সফলতা নিয়ে সংশয়ের মধ্যে ফেলে দিয়েছে। একজন পুলিশ ওফিসার নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেছেন, যেভাবে বদলি হচ্ছে সেভাবে পদ পূরন হচ্ছে না। বর্তমান সময়ে কুষ্টিয়ার জন্য একাজটি করা উচিত হচ্ছে না। একবারে বদলির চার্ট করে সেই স্থানে বিকল্প লোক সেট করে বদলি করলে কোন সমস্যা হতো না। কিন্তু এভাবে একদিকে আতংক অন্যদিকে সংকট সৃষ্টি হয়েছে।
গত মাসে খোকসা থানার ওসি শেখ আতিয়ার রহমানকে বদলি করা হয়। তার স্থানে বদলি হয়ে আসা খোকসা থানার ওসি বেলাল উদ্দিন আছেন তিনদিনের ছুটিতে। দায়িত্ব পালন করছেন এসআই রবিউল ইসলাম। ২০ আগষ্ট পুলিশ প্রধান নূর মোহাম্মদ যখন কুষ্টিয়ায় সুধী সমাবেশ করছিলেন তখন সদর থানার ওসি বাবুল উদ্দিনের স্ট্যান্ড রিলিজের অর্ডার আসে। ২০ তারিখেই দায়িত্ব হস্তান্তর করে তিনি চলে যান চট্রগ্রাম রেঞ্জে। তার স্থলে এখনো সদর থানায় কোন ওসি দেয়া হয়নি। কাজ চালাচ্ছেন এসআই জিয়া। সদর থানার সেকেন্ড ওফিসার মাহাবুবকে বাগেরহাট জেলায়, এস আই হোসাইনকে নড়াইল ও এসআই আজিজ পিপিএমকে এরমধ্যে ডিবি শাখা বদলি করা হয়েছে।
কুমারখালী ওসি খালেদ হোসেনও ২০ তারিখে দায়িত্ব হস্তান্তর করে চট্রগ্রাম রেঞ্জে বদলি হয়ে গেছেন। থানার সেকেন্ড অফিসার আতিকও ছুটি নিয়ে ট্রেনিং এ আছে। এসআই আব্দুল গফুর ওসির দায়িত্ব পালন করছেন।
ওদিকে দুই মাস আগে গত ২০ জুন ভেড়ামারা এএসপি প্রত্যুষ কুমারকে নোয়াখালী পুলিশ ট্রেণিং সেন্টার-এ বদলি করা হয়। এএসপি হেডকোয়ার্টার্স আলমগীর হোসেন সেপদে অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করছেন। জানা গেছে, ভেড়ামারা ও দৌলতপুর থানার সাবেক ওসি পদোন্নতিপ্রাপ্ত সিএ হালিমকে একমাস আগে ওই সার্কেলের দায়িত্ব হলেও তিনি এখনো যোগদান করেননি। নানা কারন দেখাচ্ছেন তিনি। তিনি এ এলাকার অস্থি-মজ্জ্বা চেনেন তো, তাই এই মুহুর্তে আসতে চাচ্ছেন না বলে অনেকেই মন্তব্য করেছেন। অত্যধিক সন্ত্রাস কবলিত এই জেলায় এখন তিন এএসপির স্থলে রয়েছেন মাত্র একজন। অনেকটা সবে ধন নীলমনি। তিনি হলেন আলমগীর হোসেন। ফাইল ওয়ার্ক, মামলার কাজ, তদন্ত রিপোর্ট দেখা, সন্ত্রাস দমন পরিকল্পনা সবই বর্তেছে তার উপর। সন্ত্রাসীদের মাথাচাড়া দিয়ে ওঠায় হিমশিম অবস্থা তার।
অথচ ২০ আগষ্ট আইজিপি(পুলিশ প্রধান) নূর মোহাম্মদ কুষ্টিয়ায় বলেছিলেন, অন্যান্য জেলার তুলনায় কুষ্টিয়ায় পুলিশের ফোর্স, গাড়ী, অস্ত্রসহ সকল সাপোর্ট তুলনামুলক বেশি দেয়া হবে। কিন্তু বেশিতো দুরের কথা শুন্যপদ পূরনই হচ্ছেনা এখন।
এসব ব্যাপারে কুষ্টিয়ার পুলিশ সুপার শাহাবুদ্দিন খান ই-বার্তাকে জানান, সদর থানায় প্রাপ্যতা অনুযায়ী এসআই ঠিকই আছে। তিনি বলেন, পুলিশের অভিযান জোরদার করা হয়েছে। নতুন নতুন প্লান চলছে। এজন্য অতিরিক্ত ২শ পুলিশ চাওয়া হয়েছে। দ্রুত পাবেন বলে আশাবাদী। এসআইদের তেমন শুন্যতা নেই। বদলি নিয়মিত ব্যপার। অচিরেই সকল পদ পূরন করা হবে বলে তিনি আশাবাদী। অপারেশন চলছে তবে সিনিয়র অফিসারের শুন্য পদগুলি পূরণ করা হলে তা আরো গতিশীল হবে। জনগনের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, আমাদের সক্ষমতা রয়েছে হতাশ হবার কিছু নেই।

রবিবার, ২৩ আগস্ট, ২০০৯

ব্র্যাক কিশোরী ক্লাবের র‌্যালী



ব্র্যাক কিশোর কিশোরী উন্নয়ন কর্মসূচীর আওতায় কিশোরী ক্লাবের উদ্যোগে ২০ আগষ্ট কুষ্টিয়া সদরের যুগিয়া গ্রামে বৃক্ষরোপন দিবস পালন করা হয়। এ উপলক্ষে র‌্যালী ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। র‌্যালিটি উদ্বোধন করেন, বারখাদা ইউনিয়নের ৫ নং ওয়ার্ড মেম্বার মো: মতিয়ার রহমান। র‌্যালী শেষে এলাকার সভানেত্রী কিশোরী ক্লাবের সামনে বৃক্ষরোপন করেন। পরে গাছ লাগানোর প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে আলোচনা করেন গ্রামের ডাক্তার মোজাম্মেল হোসেন, ব্র্যাক কর্মকর্তা ইকবাল আহমেদ ও এডিপি কর্মসূচীর এলাকা সমন্বয়কারি সন্ধ্যা রানী বিশ্বাস।

শনিবার, ২২ আগস্ট, ২০০৯

কুষ্টিয়ায় পুলিশের সাথে বন্দুকযুদ্ধে চরমপন্থি নেতা নাহারুল নিহত


কুষ্টিয়া, ২২ আগষ্ট ২০০৯
সন্ত্রাসীরা ১টি গুলি করলে পুলিশের ৫০টি গুলি করতে বাধা কোথায়-কুষ্টিয়ায় আইজিপির এ ঘোষনার একদিন পরই এ্যকশনে নেমেছে সেখানকার পুলিশ। দৌলতপুর উপজেলার জগন্নাথপুর মাঠে আজ শনিবার ভোররাতে পুলিশের সাথে বন্দুকযুদ্ধে পূর্ব বাংলার কমিউনিষ্ট পার্টি এমএল-জনযুদ্ধ’র আঞ্চলিক নেতা নাহারুল ইসলাম (৩৭) নিহত হয়েছে। পুলিশ জানায়, একদল চরমপন্থি গতরাতে জগন্নাথপুর মাঠে বৈঠক করছে এমন গোপন সংবাদের ভিত্তিতে দৌলতপুর থানা পুলিশ সেখানে অভিযান চালায়। পুলিশ দেখে চরমপন্থিরা গুলিবর্ষণ শুরু করে। পুলিশও গুলি শুরু করে। পুলিশের বক্তব্য, এ বন্দুকযুদ্ধ চলে আধাঘন্টা। এরপর চরমপন্থিরা পিছু হটলে পুলিশ সেখান থেকে নাহারুলের গুলিবিদ্ধ লাশ ও একটি এলজি, দু’টি তরবারী ও তিন রাউন্ড বন্দুকের গুলি উদ্ধার হয়।
পুলিশ বলছে, নাহারুলের বিরুদ্ধে ৬টি হত্যামামলা রয়েছে। সে ওই এলাকার ত্রাস ছিল।

শুক্রবার, ২১ আগস্ট, ২০০৯

সদর থানার ওসি বাবুল সরদার স্ট্যান্ড রিলিজ



আইন শৃঙখলার চরম অবনতির প্রেক্ষিতে কুষ্টিয়া সদর থানার ওসি বাবুল উদ্দিন সরদারকে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। বৃহস্পতিবার পুলিশের আইজি যখন কুষ্টিয়ায় মত বিনিময় সভা করছিলেন তখন পুলিশ হেডকোয়ার্টার থেকে সদর ওসির দায়িত্ব থেকে অব্যাহতির ফ্যাক্রবার্তা আসে। তাকে দ্রুত দায়িত্ব হস্তান্তর করতে বলা হয়েছে। ওসি বাবুল উদ্দিন সরদার বৃহস্পতিবারই এসআই জিয়ার নিকট দায়িত্ব হস্তান্তর করেছেন। খবর ই-বার্তা'র। তিনি বলেন, চট্রগ্রাম রেঞ্জে বদলি হয়ে যাচ্ছি। যতদিন ছিলাম কুষ্টিয়ার আনি শৃঙ্খলা বজায় রাখার চ্ষ্টো করেছি।

বৃহস্পতিবার, ২০ আগস্ট, ২০০৯

২১ আগষ্ট গ্রেনেড হামলায় নিহত মাহবুবকে নিয়ে গর্ব করা ছাড়া কিছুই অবশিষ্ট নেই পরিবারের



ই-বার্তা : ঢাকার বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে সেদিন চলছিল তৎকালীন বিরোধীদল আওয়ামীলীগের সন্ত্রাস বিরোধী জনসভা। আর সেখানেই মুড়ি মুড়কির মতো ফাটতে থাকে বোমা। কয়েক মুহুর্তের মধ্যেই সভাস্থল পরিনত হয় মৃত্যুপুরীতে। চারিদিকে ধোয়াটে অন্ধকার। নিশ্বাস বন্ধ হয়ে যাবার মতো বারুদের গন্ধ। ধুম ধাম বোমার আওয়াজ মিলিয়ে গেলেও হামলাকারীদের শেষ অস্ত্র বন্দুক আর রাইফেলের গর্জন চলছিল তখনও। এর মধ্যেই প্রাণপ্রিয় নেত্রীকে বুলেট থেকে আড়ালে রেখে এগিয়ে গেলেন মাহবুব। নেত্রীকে বুলেটপ্র“ফ মার্সিডিস বেঞ্চের ভেতর ঠেলে দিয়েই লুটিয়ে পড়লেন রাজপথে। যেন সব দায়িত্ব শেষ, তার প্রয়োজনও ফুরিয়ে গেছে। নেত্রীকে টার্গেট করে ছুটে আসা অসংখ্য বুলেটের একটি বিদ্ধ হয়ে তৎক্ষনাত নিভে যায় মাহবুবের জীবন প্রদীপ। যে বুলেটটি তাকে স্পর্শ না করলে কেড়ে নিতে পারতো শেখ হাসিনার জীবন।
পেশার জন্য জীবনবাজি রাখা গর্বিত ওই মাহবুবের বাড়ি কুষ্টিয়া জেলায়। সেখানকার খোকসা উপজেলার ফুলবাড়িয়া গ্রামে। মাহবুব একটি ইতিহাস, দায়িত্ববান, কর্তব্যপরায়ন ও সাহসীদের আদর্শ। মাহবুবের এ জীবনবাজিতে আজো গর্বিত ওই গ্রামবাসী। কিন্তু মাহবুবের এ বেদনাদায়ক অনুপস্থিতি তার পরিবারকে কঠিন বাস্তবতার মুখোমুখি দাড় করিয়েছে। ওই দরীদ্র পরিবারে ৫ বছরেও মাহবুবের অভাব পুরন হয়নি। আর কোনদিন তাদের সংসার থেকে এ অভাব যাবে না এ ব্যাপারে নিশ্চিত মাহবুবের হতভাগা পিতা হারুন অর রশীদ। তার পরিবারে একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি ছিলেন মাহবুব। পাঁচবছর অনেক লম্বা সময় হলেও মা হাসিনা বেগম যেমন আজো এক মুহুর্তের জন্যও মাহবুবকে ভুলতে পারছেন না, তেমনি কোনভাবেই কাটছেনা তাদের আর্থিক অনটন। মাহবুবকে নিয়ে গর্ব করা, অভাব অনটনের সাথে লড়াই করা আর কান্নায় গাল ভাসানো ছাড়া কিছুই অবশিষ্ট নেই তাদের। মাহবুবের মা বার্ধ্যক্যজনিত অসুস্থ। সারা দেহে তার ব্যাথা। গ্যাষ্ট্রিকের সমস্যাও প্রকট। সবসময় বিছানায় পড়ে কেদে সময় কাটান। নেত্রীর সুপারিশে ঢাকা নবীনগরের একটি গার্মেণ্টস্-এ মাহবুবের বড় ভাই শাজাহানের চাকরি হয়েছিল। কিন্তু কপাল পোড়া গার্মেন্টসটি বন্ধ হয়ে গেছে। তিনি এখন এলাকায় ভ্যান চালান। ছোট ভাই জাহাঙ্গীর আলম সংসারের প্রয়োজনে কখনও ভ্যান চালিয়েছেন, কখনও অন্যের দোকানে কাজ করেছেন। বর্তমানে সে অন্যের জমিতে কামলা খাটেন। সবচেয়ে ছোট ভাই ঢাকা গুলশানের একটি ইন্টারন্যাশনাল হোটেলে চাকরি পেয়েছিলেন। ওয়ান ইলেভেনের পর ওই হোটেলের মালিকের সাথে আওয়ামী লীগের দুরুত্ব সৃষ্টি হলে চাকরি চলে যায় তার। তারপর অন্যত্র চেষ্টা তদবির করে এলাকায় চলে আসেন তিনি। এখন তিনিও ভ্যান চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করেন।
মাহবুবের ৫ বোনের মধ্যে তিনজনের বিয়ে হয়ে গেছে। ছোট দুই বোন আবিদা সুলতানা বিউটি ও শিরিন আক্তার স্থানীয় ধোকড়াকোল কলেজ থেকে এইচএসসি পরীক্ষা দিয়ে ফেল করেছেন। তারা এখন ঢাকায় গার্মেন্টেস-এ চাকরির জন্য ঘুরছেন। তাদের লেখাপড়ার খরচের জন্য প্রতিমাসে বঙ্গবন্ধু স্মৃতি ট্রাষ্ট থেকে ১ হাজার করে টাকা দেয়া হতো। ওয়ান ইলেভেনের পর ওই ট্রাষ্টের ফান্ড ক্লোজ করা হলে টাকা দেয়া বন্ধ হয়ে যায়। আর চালু হয়নি তাদের জন্য ওই টাকা। টাকার অভাবে তাদের প্রায়ই কলেজ যাওয়া হতোনা। যে কারনে তাদের এই ফল বিপর্যয় বলে তার মায়ের দাবি। খবর ই-বার্তা’র।

অন্যদিকে মাহবুবের কথা মনে হলেই ফুপিয়ে কেঁদে ওঠেন স্ত্রী শামীমা আক্তার আসমা। আচমকা এক ঝড়ে ভেঙে গেছে তার সাজানো সুখের সংসার। দু’ছেলে আশিক আর রবিনের ভবিষ্যৎ ভাবনা আর চোখের জ্বলে দিন কাটে তার। মাহবুব মারা যাওয়ার পর দু’সন্তানকে নিয়ে আসমাকে ঢাকা ছাড়তে হয়েছে। ফিরে আসেন কুষ্টিয়ায়। শহরের কোর্টপাড়ার গোসালা রোডের ভাড়া করা বাসায় থাকেন। তার বড় ছেলে আশিকুজ্জামান আশিক এবার কুষ্টিয়া জিলা স্কুল থেকে এসএসসি পরীক্ষা দিয়ে ফেল করেছে। ছোট ছেলে আশরাফুল আনাম রবীন ওই স্কুলের সপ্তম শ্রেণীর ছাত্র। আসমা বলেন, ওদের শিক্ষা ব্যয় হিসেবে বঙ্গবন্ধু স্মৃতি ট্রাষ্ট থেকে প্রতিমাসে যে দু’হাজার করে টাকা দেয়া হতো শেখ হাসিনা গ্রেপ্তার হবার পর তা বন্ধ হয়ে যায়। তিনি গত সোমবার ঢাকায় গেছেন। শেখ হাসিনার সাথে দেখা করার ইচ্ছায়। ই বার্তাকে আসমা বলেন, ৯মাস টাকা বন্ধ থাকায় ছেলেদের লেখাপড়ার খরচ ঠিকমতো দিতে পারিনাই। মাসে দুইবার মাত্র মাছ খাওয়াতে পেরেছি বাচ্চাদের। এই সময়ে বোনের কাছ থেকে টাকা নিয়ে সংসার চালিয়েছি। ওই সময় কোন রাজনীতিবিদই খবর নিতে আসেনি। তিনি বলেন, পেনশনের সামন্য টাকা আর শেখ হাসিনার দেয়া ২লাখ টাকার ব্যাংক মুনাফা দিয়ে চলাই দায় হয়েছে।
আসমা চান খোকসা উপজেলা আওয়ামীলীগ মাহবুবের স্মরণে স্মৃতি ভাস্কর্য নির্মাণের যে প্রতিশ্র“তি দিয়েছিল তার বাস্তবায়ন হোক। তার দাবী ফুলবাড়ীয়া গ্রামে কবরস্থানে যেখানে মাহবুবকে দাফন করা হয়েছে সেখানে তার স্মৃতির জন্য কিছু একটা করা হোক। কবরের গায়ে লেখা উঠে গেছে।
এক মাহবুবের মৃত্যু বদলে দিয়েছে ওই পরিবারের ১৩ সদস্য’র জীবনচিত্র। দুমড়ে মুচড়ে গেছে এদের রঙিন স্বপ্ন। মাহবুবের বাবা ই বার্তাকে বলেন, বিভিন্ন হত্যাকান্ডের বিচার করতে এ সরকারের কার্যকরী উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে। এদের নিকট থেকে আমার ছেলে হত্যার বিচারের আশা করেছিলাম। কিন্তু কোন কিছুই তো হলো না। এখন আল্লাহর উপর ছেড়ে দিয়েছি। আর বিচার হয়েই বা আমার কি হবে। আমার যা হবার তা হয়ে গেছে-বলেই কেদে ফেলে অশীতিপর এই বৃদ্ধ। তিনি বলেন, কেউ আজ আমাদের খবর নেয়না। মৃত্যুদিবসে একটি মিলাদের আয়োজন করতেও তাকে অন্যদের দিকে হাত পাততে হচ্ছে। এবার উপজেলা যুবলীগ তার সাথে যৌথভাবে মিলাদ ও আলোচনা সভার আয়োজন করছে। তবে স্থানীয় জয়ন্তী হাজরা ইউনিয়ন পরিষদের উদ্যোগে এ উপলক্ষে নানা কর্মসূচী পালনের আয়োজন করা হয়। সে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি থাকার কথা ছিলো স্থানীয় এমপি সুলতানা তরুনের। কিন্তু সম্প্রতি কুষ্টিয়ার আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির চরম অবনতি ঘটলে নিরাপত্তাজনিত সবুজ সংকেত না পাওয়ায় সে কর্মসূচী বাতিল করা হয়েছে।
মাহবুবের বাবা বলেন, আশাই ছিলাম শেখ হাসিনা ক্ষমতায় বড় ধরনের কোন সহযোগিতা পাবো। এখনো ৮০ হাজার টাকা ঋণের বোঝা নিয়ে চলছে আমার সংসার। ঋনের কথা মনে হলে রাতেও ঘুম হয়না। আর্থিকভাবে অক্ষম হয়ে পড়া এ পরিবারটি হারিয়েছেন জীবিকার বড় সম্বলকে। শুধু তাই নয় এ অসহায় পরিবারের মানুষগুলোর দূর্ভাগ্য পিছু ছাড়েনি।
মাহবুবের বাবা হারুন মোল্লা (৬৮) এখন ছেলে হারানোর শোক আর বয়সের ভারে নেতিয়ে পড়েছেন। একটু এদিক সেদিক হাটাহাটি করেন আর মাহবুবের ঘরে গিয়ে বসে থাকেন। প্রায়ই অসুস্থ্য থাকেন, কিন্তু থাকেনা ঔষধ কেনার অর্থ। মাহবুবের মা হাসিনা বেগম অধিকাংশ সময় বিছানাতেই থাকেন। নিস্পলক চোঁখে চেয়ে থাকেন ঘরে টানানো বঙ্গবন্ধু আর মাহবুবের ফ্রেমে আটা ছবির দিকে। এদের ৫ ছেলে ৫ মেয়ের মধ্যে মাহবুব ছিলো দ্বিতীয়। ছোট বেলা থেকেই সে ছিলো নিরীহ ও শান্ত প্রকৃতির। সৎ ও সঞ্চয়ী ছিলো। মাহবুবের পিতা বলেন, কখনই সিগারেটেও টান দেয়নি ও। সংসারের জন্য সব সময় ভাবতো। তবে পড়াশুনায় খুব মনোযোগী ছিলো সে। গ্রামের স্কুলেই পঞ্চম শ্রেণীর পড়া শেষ করেন মাহবুব। এরপর ভর্তি হন পাশ্ববর্তি বাহাদুরপুর হাইস্কুলে। সেখান থেকে এসএসসি পাশ করার পর মাহবুবের মাথায় আসে দরিদ্র সংসারের চিন্তা। ওই চিন্তাতেই কলেজে পড়া হয়নি তার। মাহবুবের পিতা বলেন, ওর মাথায় একটা কিছু ঢুকলে আর সহজে বের হতো না। যাই করতো খুব মনোযোগ দিয়ে করতো। সংসারের চিন্তায় মাহবুব সে সময় ঝুঁকে পড়েন চাকরির দিকে। ১৯৮৬ সালে তিনি এক সেনা কর্মকর্তার বাড়িতে মাত্র ৬‘শ টাকা বেতনে চাকরি নেন। কয়েক মাস এখানে কাজ করার পর চেষ্টা করেন সেনাবাহিনীর সৈনিক পদে চাকরির জন্য। প্রথমবার ব্যর্থ হলেও দ্বিতীয় বার ১৯৮৭ সালে টিকে যান। চাকরিতে তিনি নিজেকে ড্রাইভার হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেন। সেনাবাহিনীর ৫১ বেঙ্গলে যোগ দিয়ে কৃতিত্বের স্বাক্ষর রাখার পুরস্কার হিসেবে সরকার ২০০০ সালে মাহবুব জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী বাহিনীতে সুযোগ পান। সেখানে ইরাক-কুয়েত অবজারভেশন (ইউনিকম) মিশনেও সে এক বছর নির্ভীক সেনা হিসেবে নিষ্ঠার সাথে দায়িত্ব পালন করেন। ২০০২ সালে ল্যান্স করর্পোরাল থাকা অবস্থায় চাকরী থেকে স্বেচ্ছায় অবসর নেন মাহবুব। চলে আসেন গ্রামে। সেখানে এসে জীর্ণ বাড়ীতে একটি টিনের ঘর তোলেন। উঠানে বসান বিশুদ্ধ খাবার পানির টিউবওয়েল। গ্রামে এসে ব্যবসা শুরু করেন মাহবুব। চেয়েছিলেন পরিবারের জন্য আরো কিছু করতে। কিন্তু নিষ্ঠুর নিয়তি আর কিছুই করতে দেয়নি তাকে। ব্যবসা করার সময় বিভিন্ন পর্যায়ে যোগাযোগ রাখতে থাকেন মাহবুব। বঙ্গবন্ধুভক্ত পরিবারের ছেলে মাহবুব ২০০২ সালেই যোগদেন বিরোধী দলীয় নেত্রী শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত দেহরক্ষী হিসেবে। এরপর থেকেই মাহবুবের ধ্যান-জ্ঞান হয়ে ওঠেন নেত্রী। নেত্রীকে তিনি আপা বলে ডাকতেন। ব্যবহার, আচার, ভদ্রতা আর অসম্ভব দায়িত্বশীলতার কারণে মাহবুব অন্যসব দেহরক্ষীদের চেয়ে আস্থাভাজন হয়ে পড়েন নেত্রীর। দায়িত্বকালে সে নেত্রীর খুব কাছাছাছি থাকতো। এ প্রসঙ্গে মাহবুবের মা হাসিনা বেগম ই বার্তাকে বলেন, একবার আম নিয়ে এসে মাহাবুব বলে, আপা আম দিয়েছে মা খাও। ও যতক্ষন বাড়ীতে থাকতো শুধুমাত্র আপার (শেখ হাসিনা) কথাই বলতো। বলতো নিজের জীবন দিয়ে হলেও দেখো নেত্রীকে রক্ষা করবো। আমার ছেলে জীবন দিয়ে ওর কথা রেখেছে।
স্ত্রী আসমা বলেন, ঢাকার বাসাতেও খুবই কম সময় থাকতো মাহবুব। খাওয়া হলেই ছুটতো সুধা সদনের দিকে। বলতো ওখানে গিয়েই বিশ্রাম করি। হাসিনা আপা ওকে একটি ঘড়ি দিয়েছিলেন। ক’দিন পরেই তা যতন করে তুলে রেখেছিল ও। গ্রেনেড হামলার দিন ঘড়িটি ওর হাতেই ছিল। কিন্তু পরে আর তা পাওয়া যায়নি। আসমা তার দু’পুত্র সন্তানকে নিয়ে এখন কুষ্টিয়া শহরের গোশালা সড়কের একটি ভাড়া বাসায় থাকেন। ২১শে আগষ্টের কথা বলতে গিয়ে তিনি বারবার কান্নায় ভেঙে পড়েন। বলেন, দুপুরে খাবার খেতে এসে ওইদিন খুব তাড়াহুড়ো করছিল ও। বলেছিল, আজ আপার একটা বড় প্রোগ্রাম আছে। এক্ষুনি যেতে হবে। খাবার খেয়ে দুইটার দিকে বাড়ী থেকে বের হয়। এর আগে বড় ছেলের স্কুলের পড়া দেখিয়ে দেয়। বলে রাতে ফিরে ধরবো। কিন্তু রাতে আর ফেরা হয়নি তার। আমি ওইদিন টিভির খবর দেখিনি। বিকেল সাড়ে ৫ টার দিকে জানতে পারলাম আপার অনুষ্ঠানে গ্রেনেড হামলা হয়েছে। অনেকেই মারা গেছে। খবর পেয়ে দু’ছেলেকে বাসায় রেখে রিক্সায় সুধা সদনে যাই। আসমা কাঁদতে কাঁদতে বলেন, এর আগে একদিন সুধা সদনের সামনে গন্ডগোল হয়েছিল। সেদিনও আমি রিক্সায় গিয়েছিলাম। খবর দিতেই একগাল হাসি নিয়ে বেরিয়ে এসে মাহবুব বলেছিল “পাগলী আমার কিছু হবে না আমি ঠিক আছি, তুমি বাসায় যাও”। এদিনও ভেবেছিলাম খবর দিলেই ও বেরিয়ে আসবে। কিন্তু সুধা সদনের সবাই আমার সাথে লুকোচুরি খেলতে থাকে। এদের আচরণ রহস্যময় মনে হয়। আমাকে ভেতরে নিয়ে যায়। শেখ হাসিনার পাশে গিয়ে বসি। উনি বলেন, মাহবুবের গুলি লেগেছে ওকে হাসপাতালের অপারেশন থিয়েটারে রাখা হয়েছে। আমি তখনি হাসপাতালে যেতে চাই। কান্নাকাটি শুরু করি। এরপর রাত ১০টার দিকে যখন জানতে পারলাম মাহবুব ঘটনাস্থলেই মারা গেছে তখন গাড়ীতে করে আমাকে বাসায় দিয়ে আসা হয়। বলতে বলতে আবার অঝোরে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন আসমা। বেশ কিছুক্ষণ পর কান্না থামিয়ে বলেন, ওকে আমি প্রায়ই বলতাম চাকরি ছেড়ে দাও। এটা ঝুঁকির চাকরি। ও তখন বলতো, মানুষ তো এক্সিডেন্ট করেও মারা যায়। আল্লাহ মৃত্যু রাখলে বাঁচাবে কে ? এসব বলে বোঝাতো। এখন এতিম হয়েছে মাহাবুবেব দু’ছেলে আশিক আর রবিন। ওদের নিয়ে আমি কি করবো। আসমা বলেন, শেখ হাসিনা তাকে যথেষ্ঠ সাহায্য-সহযোগিতা করছেন। মাহবুবের মৃত্যুর পর বঙ্গবন্ধু স্মৃতি ট্রাষ্ট থেকে নগদ ২ লাখ টাকা দিয়েছেন। প্রথম তিন মাসে মাহাবুবের বেতন পুরোটাই দিতো। আসমা বলেন, হাসিনা আপা কথা দিয়েছেন দু’ ছেলে লেখাপড়া শিখলে ভাল চাকরি দেবেন।
মাহবুবের বাবা হারুন মোল্লা বারবার রেগে যাচ্ছিলেন। বললেন আপনারা বারবার এসব লিখে কি করেন। এতে আপনাদেরই বা কি লাভ হয় আর আমারই বা কি হয়। তিনি বলেন, এ ছেলে ছিলো আমার গর্ব। মৃত্যুতেও ও আমাকে একদিকে গর্বিত করে গেছে অন্যদিকে ফকির করে গেছে।

অনিরাপদ যৌন নির্যাতনের শিকার হচ্ছে কুষ্টিয়ার চাতাল শ্রমিকরা

অহরহ যৌন নির্যাতনের শিকার হচ্ছে কুষ্টিয়ার অপ্রাতাষ্ঠিানিক নারী শ্রমিকরা। এর মধ্যে চাতালে যারা কাজ করে তাদের সংখ্যা বেশী। ধান চাতালে কাজ করা এসব্ নারী শ্রমিকদের এ নির্যাতন মেনে নিতে হয় মুখ বন্ধ করে। প্রতিবাদ করার কোন সুযোগ নেই। শ্রমিক হিসেবে মৌখিক নিয়োগপ্রাপ্ত এ নারী শ্রমিকরা চাকরী হারানোর ভয়ে কোন প্রতিবাদ করে না।
কুষ্টিয়া ধান চাতালের দেশের অন্যতম বড় মোকাম। এখানে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ধান-চাল ক্রয়-বিক্রয়ের জন্য নানা জাতের লোক আসে। বিশেষ করে ট্রাক চালক ও শ্রমিক এবং মহাজনী ফড়িয়ারা রাতে অবস্থান করে চাতালে। চাতালের নারী শ্রমিকদের অধিকাংশই বিধবা, স্বামী পরিত্যক্ত এবং একাকী বসবাস করে। এই সুযোগে তাদের উপর চড়াও হয় বাইরে থেকে আসা লোকজন। এরা অধিকাংশই অশিক্ষিত এবং যৌন সম্পর্কের বিষয়ে কোন শিক্ষা নেই। এরা অনিরাপদ যৌন নির্যাতনের শিকার হয়। ফলে যে কোন সময় বড় ধরনের যৌন রোগের শিকার হতে পারে তারা এ রকম আশংকা করছে অনেকে। খবর ই-বার্তার।
বৃহস্পতিবার এ্যাকশন ইন ডেভেলেপমেন্ট-এইড ও প্রভাতীর উদ্যোগে বোধোদয় কার্যালয়ে সমাজের পিছিয়ে পড়া অপ্রাতিষ্ঠানিক নারী শ্রমিকদের অধিকার প্রাতিষ্ঠানিকরণ প্রকল্পের নারী শ্রমিকদের বিভিন্ন বৈষম্যের চিত্রকে তুলে ধরার লক্ষ্যে মতবিনিময় সভায় এ তথ্য দেয়া হয়।

বিকেলে অনুষ্ঠিত এ সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন বোধদয়ের সভাপতি এ্যাডভোকেট লালিম হক। সভাপতিত্ব করেন এইডের সমন্বয়কারী আশাবুল হক। বক্তব্য রাখেন প্রশিক্ষন সমন্বয়কারী শফিক আকরাম, মমতাজ আলী, আহসান হাবীব, কামরুজ্জামান, উলফাত হোসেন, হাসানুজ্জামান প্রমুখ।

সন্ত্রাসীরা একটি গুলি করলে পুলিশ ৫০ টি করতে বাধা কোথায়-কুষ্টিয়ায় পুলিশ প্রধান



কুষ্টিয়ায় আইন-শৃংখলা বিষয়ক সুধী সমাবেশ ও মতবিনিময় সভায় মহা পুলিশ পরিদর্শক (আইজিপি) নুর মোহাম্মদ বলেছেন, আপনাদের ভয়-ভীতির কথা শুনে আমি হতাশ হচ্ছিনা বরং আরো সাহস পাচ্ছি। তিনি বলেন, সন্ত্রাসীরা একটি গুলি করলে পুলিশের ৫০টি গুলি করতে বাধা কোথায়। তিনি বলেন, এ অঞ্চলের আইন-শৃঙ্খলার যে অবনতি হয়েছে তা ফিরিয়ে আনতে পুলিশের যে পদক্ষেপ নেয়া প্রয়োজন তার সবই করা হবে। আইজিপি আরো বলেন, এখন থেকে কুষ্টিয়ায় পুলিশের গাড়ী, অস্ত্র, লোকবলসহ সকল প্রকার সাপোর্ট অন্যান্য জেলার তুলনায় বেশি দেয়া হবে। সন্ত্রাসী বা গডফাদার যেই হোক তাকে গ্রেফতার করতে কোন বাধা নেই। এর সাথে যদি সরকার দলের কেউ জড়িত থাকে তাকেও ধরতে বলেছেন প্রধানমন্ত্রী। তবে জনগনের সহায়তা ছাড়া পুলিশ কিছুই করতে পারবে না বলে তিনি মনে করেন। তিনি বলেন, জনগনের শক্তি সবচেয়ে বড় শক্তি। জনগন এক হলে সবই করা সম্ভব। খবর ই-বার্তা'র। তার সাথে এ সমাবেশে যোগ দেন র‌্যাবের মহাপরিচালক (ডিজি) হাসান মাহমুদ খন্দকার। তিনি বলেন, সামনের দিনে আর রং বা বর্ণ দেখে আইন প্রয়োগ করা হবে না। সরকারের শীর্ষ পর্যায় থেকে এমনটিই আমাদের বলা হয়েছে। তিনি বলেন, সন্ত্রাস দমনে আগামী দিনে কুষ্টিয়া পুলিশের সাথে র‌্যাব যৌথভাবে কাজ করবে। তিনি হুশিয়ার উচ্চারণ করে বলেন, এখন থেকে যে কোন কঠোর সিদ্ধান্ত দিতে কুষ্টিয়ার আইন প্রয়োগকারি সংস্থা কোন দ্বিধা করবে না। জনগনকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন আপনারা দিশেহারা হবেন না আগে যেভাবে সন্ত্রাসীদের দমন করা হয়েছে ভবিষ্যতেও সেভাবে দমন করা হবে। সন্ত্রাসীদের সাথে ফুটবল খেলার মতো অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, পুলিশ-র‌্যাব হলো গোল রক্ষক। আর জনগনকে বিভিন্ন অংশে কেই ফরোয়ার্ড কেউ উইং-এ খেলতে হবে। জনগণ ভালো না খেললে গোল পোষ্টের উপর চাপ আসবে। আর জনগণ ভাল খেললে প্রতিপক্ষ মিড লাইনের উপরে আসতে পারবে না।
কুষ্টিয়া পৌরসভা অডিটোরিয়ামে বেলা সাড়ে ১১টায় এ সূধী সমাবেশ ও মতবিনিময় সভা শুরু হয়। সভায় কুষ্টিয়ার বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা জনপ্রতিনিধি, কমিউনিটি পুলিশের নেতা, সুধী, সাংবাদিক ও দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমের শীর্ষ পুলিশ এবং র‌্যাব কর্মকর্তাবৃন্দ এ এলাকায় চরমপন্থী-সন্ত্রাস দমনে তাদের মতামত প্রকাশ করেন। জানান, আতংকের কথা, নানা সমস্যার কথা। সভায় পুলিশ ও র‌্যাবের শীর্ষ কর্মকর্তা ছাড়াও কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর ডক্টর এম. আলাউদ্দিন, কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসক আব্দুল মান্নান, কুষ্টিয়া পৌরসভা মেয়র আনোয়ার আলী প্রমূখ।
সম্প্রতি কুষ্টিয়ায় খুন-খারবি বেড়ে যাওয়ায় উদ্বিগ্ন হয়ে পুলিশ ও র‌্যাব প্রধান এ সফরে এসেছেন বলে সভায় জানানো হয়। উল্লেখ্য, গত ১১ দিনে কুষ্টিয়ায় ৯ জন খুন হয়েছে। এর মধ্যে ৪ জনের শরীর থেকে মাথা বিচ্ছিন্ন করা হয়।
সুধীবৃন্দ এ সভায় পুলিশের শক্তি বাড়ানো ও হোয়াইট কালার ক্রিমিনাল অর্থাৎ গডফাদারদের গ্রেফতারের তাগিদ দেন। ক্রসফায়ারের কথা তুলে ধরে অনেকেই বলেন, এর আগে যে বিশেষ ব্যবস্থায় সন্ত্রাস দমন করা সম্ভব হয়েছিল জোরে শোরে সেই ব্যবস্থায় ফিরে যাওয়া উচিত। কুষ্টিয়ায় আইন শৃঙ্খলার চরম অবনতি হলেও কমিউনিটি পুলিশিং ফোরামের নেতারা পুলিশের ও তাদের ভূয়সী প্রশংসা করে বক্তব্য রাখায় বিব্রতকর পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়।

পুলিশ ও র‌্যাবের প্রধান আজ কুষ্টিয়া আসছেন


আইন শৃংখলার চরম অবনতির প্রেক্ষিতে পুলিশের ইনস্পেক্টর জেনারেল (আইজি)নুর মোহাম্মদ ও র‌্যাবের মহাপরিচালক (ডিজি)হাসান মাহমুদ খন্দকার আজ কুষ্টিয়া আসছেন। তারা কুষ্টিয়া পৌরসভা অডিটোরিয়ামে সকাল সাড়ে ১০টায় এক সূধী সমাবেশ ও মতবিনিময় সভায় মিলিত হবেন। এছাড়াও তারা র‌্যাব ও পুলিশের শীর্ষ কর্মকর্তাদের সাথে পরবর্তি কর্মপরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা করবেন বলে জানা গেছে। সুধী সমাবেশে তারা সাধারন মানুষের সাথে খোলামেলা মতবিনিময় করবেন। কি করে আইন-শৃংখলার উন্নতি করা সম্ভব তা নিয়ে কথা বলবেন। সম্প্রতি কুষ্টিয়ায় খুন খারবি বেড়ে যাওয়ায় উদ্বিগ্ন হয়ে তারা এ সফরে আসছেন বলে সবার ধারনা। এ বৈঠক করে কতদুর আইন শৃংখলার উন্নতি করা সম্ভব তা নিয়ে সংশয় রয়েছে সাধারন মানুষের মনে। তারা মনে করেন, এর আগে যে বিশেষ ব্যবস্থায় সন্ত্রাস দমন করা সম্ভব হয়েছিল জোরে শোরে সেই ব্যবস্থায় ফিরে যাওয়া উচিত।

বুধবার, ১৯ আগস্ট, ২০০৯

সাংস্কৃতির রাজধানী থেকে লাশের নগরী

আবু বকর সিদ্দীক, সম্পাদক, দৈনিক সময়ের কাগজ

কুষ্টিয়া নিয়ে অনেক গর্ব। এ মাটির সন্তানদের আলাদা রকমের অহংকার। লালন, রবীন্দ্র, মীর মোশাররফ, কাঙাল হরিণাথ, বাঘা যতিন, কবি আজিজুর রহমানসহ হাজারো জ্ঞাণীর শিকড়-বাকড় এখানে। স্বাধীনতার প্রথম সূর্যদয়ের স্পর্শ নিয়ে আমরা বীরত্বের প্রমাণ দিয়েছি। পিতা ও পিতামহরা দেশপ্রেমের অগ্নিপুরুষ, আমরা গড়ার সৈনিক। দেশ ও বিশ্বজুড়ে কুষ্টিয়া কীর্তিমান উৎপাদনের, সম্মান অর্জনের শ্রেষ্ঠ ভূমি। এ মাটির গন্ধ শরীরে, আমারও গর্ব-অহংকার ---
প্রযুক্তির কল্যানে ফেসবুকের বন্ধুরা সচল। অধরা ইচ্ছেগুলো ভেসে আসে ইন্টারনেটে। ছোট হয়ে যায় পৃথিবী, হাতের মুঠোয় বন্ধুত্ব, সব খবর। কুষ্টিয়ার ঐতিহ্য নিয়ে তৈরী সাইটটি আমার ওয়েবে লিংক আছে। দেশের বাইরের বন্ধুরা ছবি দেখে, তথ্য জেনে প্রেমে পড়ে। সুযোগ পেলেই বাংলাদেশ, তারপর প্রিয় কুষ্টিয়ায় তাদের অহরহ আসার ইচ্ছে। কয়েকজন ঘুরেও গেছে। সময়ের কাগজের অনলাইন সংস্করণ থেকে এ সময়ের বিশ্রী খবরগুলো তারাও দেখেছে। পাতা জুড়ে কাটা মাথা, এখানে সেখানে এবড়ো থেবড়ো লাশ। পত্রিকার পাতায় রক্তের বমি, শুধু খুন আর খুন। এসবের মধ্যে আমাদের বসবাস, সাংবাদিকতা।
সুহৃদ বন্ধুরা উৎকন্ঠিত। ফেসবুক ও ইমেলে সতর্কবাণী। সাবধানে থেকো, নিজের প্রতি খেয়াল রেখ। বাবা মায়ের হাত ধরে এ মাটিতে হাটতে শিখেছি, প্রতিটি ইঞ্চিকণা মাটিতে আমার স্পর্শ। ভালোবাসার গভীরতা জেনেই তারা কুষ্টিয়াকে নিয়ে বিশেষ কিছু লেখেনি। কিন্তু বলতে ছাড়েনি আমার স্বদেশীরা। বাদ যায়নি কুষ্টিয়ার কয়েকজন কৃতি সন্তান। ঢাকায় তাদের বিলাসী জীবন। সামনে নিশ্চিত ভবিষ্যৎ। রাজধানীর আড্ডার আসর থেকে আমি কুষ্টিয়ায়- ব্যাঙ্গ করে তারা দেশপ্রেম নিয়েই থাকতে বলেছে। কমেন্টস লেখার সুযোগ থাকায় তারা সর্বোচ্চ আঘাত করতে ছাড়েনি। অশ্লীল, তীর্যক এসব মন্তব্য দেহজুড়ে কিলবিল করে। প্রিয়তমা কুষ্টিয়ার উঠানে লাশের গন্ধ, ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে কাটা মাথা।
অপু ভাই (কুষ্টিয়া জেলা ছাত্রদলের সাবেক সফল সভাপতি, বর্তমানে লেখালেখি ও আইন পেশার সঙ্গে ঘর সংসার)। সময়ের কাগজের এলোমেলো অফিসে সময় দেয়। রাত গভীর হলেও ব্যাচেলর অপু ভাই ওঠে না। কিছু একটা লেখার জন্য তাড়া দেয়। লেখার জন্য সামনে লাশ, পুলিশের দিনরাত টহল, মানুষের আতংক এসব ছাড়া আর কিছ্ইু দেখি না। ফেসবুকের বন্ধুদের উত্তর লিখতে ইচ্ছে করে না। মেইলগুলো ওপেন করি ভয় নিয়ে।
লিখতে পরিবেশ লাগে। লাগে সুস্থ চিন্তা করার সুযোগ। অফিসে ও বাসায় ঘিরে থাকে মোবাইল ফোনের যন্ত্রনা। ইদানিং সবগুলো খবরই খারাপ খবর। প্রতিনিধিরা সবার আগে জানিয়ে বাহবা পেতে চায়। চরমপন্থীদের ঘর গেরস্থের খবর ছাপছি। শ্রমজীবি-গণবাহিনী মুখোমুখি। হত্যা মিশনের পুরো বর্ণনা। স্বজনেরা এ লেখা ভালো চোখে দেখছে না। পাঠক পড়ে খুশী হচ্ছে, আমাদের নিরাপত্তা নিয়ে ভয় পাচ্ছে। কারণে-অকারণে খোঁজ নিচ্ছে। পরিচিতরা জানতে চাচ্ছে, আজ কি কোন মাথা পাওয়া গেছে? কয়টা ? কাল বিশেষ কি থাকছে?
সকাল-সন্ধ্যা এবং গভীর রাত জুড়ে স্বজনের আহাজারী। লাশ কাটা ঘরের দরজা খোলার অপেক্ষা। হাসপাতালে উৎসুক জনতার ছুটাছুটি। পুলিশের সাইরেন এবং মোবাইল ফোনে কাটা মাথার দেহ উদ্ধারের খবর। এসব নিয়ে ডুবে থাকা সময়ে কী লিখব তা ভেবে পাচ্ছি না। বুক ভরে শ্বাস নেবার জন্য গড়াই পাড়, খোলা মাঠ নিষিদ্ধ। সেখানে বাতাসে লাশের গন্ধ। সাংস্কৃতির রাজধানী কুষ্টিয়া এখন লাশের নগরী। টেবিল, চেয়ার আর গাছের সঙ্গে আমরাও অথর্ব, বাকহীন।

ঢাকার পথে পথে ট্রাকে চাঁদাবাজি

কুষ্টিয়া অঞ্চল থেকে রাজধানী ঢাকা যাবার পথে ট্রাক থামিয়ে চলছে চাঁদাবাজি। তবে এ চাঁদাবাজিতে কোন রাজনৈতিক দলের নেতা, কর্মি বা কোন চাঁদাবাজ বাহিনীর সদস্যরা জড়িত নয়। এসব চাঁদা তোলেন থানা ও হাইওয়ে পুলিশের সদস্যরা। পয়েন্টে পয়েন্টে চাঁদা দিতে দিতে ট্রাক ড্রাইভাররা চরম অতীষ্ট। কুষ্টিয়ার মজমপুর গেটে এক ড্রাইভারের কাছে চাঁদাবাজির কথা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ভাই বোধহয় সাংবাদিক। কি করবেন চাঁদাবাজির কথা শুনে। লিখবেন আর আমাদের চাঁদার পরিমান বেড়ে যাবে। তিনি কোন মতে তার নাম বা কোথায় কোথায় চাঁদা দেন তা বললেন না। কথা হয় ট্রাক ড্রাইভার সেলিম, হারুন ও ট্রাক মালিক মিজানুরের সাথে। তাদের দেয়া হিসেব মতে, কুষ্টিয়া থেকে রাজবাড়ী হয়ে ঢাকা যেতে ৫ পয়েন্টে পুলিশ বাহিনীর সদস্যরা চাঁদাবাজি করে থাকেন। আর সিরাজগঞ্জ অর্থাৎ যমুনা সেতু হয়ে গেলে চাঁদাবাজি হয় তিনটি পয়েন্টে। রাজবাড়ী দিয়ে যাবার পথে কুষ্টিয়ায় খোকসায় থানা পুলিশ ট্রাক দাড় করিয়ে ৫০টাকা থেকে ১০০টাকা চাঁদা তোলেন। এরপর রাজবাড়ীর গান্দিমারা পৌছালে সেখানে হাইওয়ে পুলিশের সদস্যরা অপেক্ষা করেন চাঁদার জন্য। গাড়ীর কত সমস্যা, রং ভাল না, ফিটনেস নেই, ড্রাইভারের জুতা পরা নেই। যদি এসব বলেও আটকানো না যায় তাহলে বলা হয় রিকুইজিশন করা হবে। এরপর ১০০ টাকা দিলেই সব ভাল। চলে যাওয়া যায় বিনা বাধায়। এরপর রাজবাড়ী মোড়ে থানা পুলিশের জন্য ৫০ টাকা নির্ধারিত। না দিলেই শুরু হয়ে যায় নানা বাহানা। গোয়ালন্দ ঘাটে গিয়ে মুধুমাত্র ৫৭০ টাকার ফেরী টিকিট দিয়ে আজ পর্যন্ত কোন ট্রাক পার হতে পারেনি। অতিরিক্ত ১০০/১৫০ টাকা না দিলে সারাজীবন লাইনে পড়ে থাকতে হবে ট্রাক নিয়ে। ঘাট পার হবার পরপরই রেডি হয়ে থাকে মানিকগঞ্জ পুলিশ। ১০০ টাকা না দিয়ে যাবার কোন উপায় নেই। আর যমুনা সেতু পার হয়ে ঢাকায় যাবার পথে কুষ্টিয়া পাবনার মাঝখানে লালন শাহ সেতু পেরুনোর পরই অপেক্ষায় থাকে পুলিশ। তাদের দিতে হয় ৫০ থেকে ১০০টাকা। এরপর বানিয়াপাড়া ও সিরাজগঞ্জ মোড়ে আরো ১০০টাকা করে দিতে হয়। আর ঢাকা শহরে প্রবেশের পর প্রতি ১০ কিলোমিটারের মধ্যে অন্তত একবার টাকা দিতে পুলিশকে।

কুষ্টিয়ায় এবার জামায়াত নেতাকে জবাই, ১০ দিনে ৭ খুন


এবার কুষ্টিয়ার জগতি সুগার মিলের পাশে রেল লাইনের উপর পাওয়া গেছে তৃণমূল পর্যায়ের এক জামায়াত নেতার গলা কাটা লাশ। গতকাল বুধবার সকালে পোড়াদহ জিআরপি পুলিশ লাশটি উদ্ধার করেছে। নিহতের নাম কদম আলী (৫৪)। মিরপুর উপজেলার কলাবাড়ি তার বাড়ি। জবাই করে হত্যা করা হলেও অন্যদের মতো কদম আলীর দেহ থেকে মাথা বিচ্ছিন্ন করা হয়নি। নিহতের পরিবারের সদস্যরা জানান, গতকাল সন্ধ্যায় কদম আলী বাড়ি থেকে বের হয়। তারপর অপহরন করে তাকে গলাকেটে হত্যার পর লাশ রেল লাইনের উপর ফেলে রেখে যায় সন্ত্রাসীরা। জমিজমা সংক্রান্ত বিরোধের জের ধরে তাকে হত্যা করা হতে পারে বলে তাদের ধারনা।
মিরপুর উপজেলা চেয়ারম্যান জামায়াত নেতা আব্দুল গফুর জানান, নিহত কদম আলী জামায়াতের কলাবাড়ি ইউনিট সভাপতি।
এ নিয়ে গত ১০ দিনে কুষ্টিয়ায় মোট ৭জনকে হত্যা করেছে চরমপন্থি সন্ত্রাসীরা। ১০ আগষ্ট শহরের সড়ক ও জনপথ অফিসের গেটে পাওয়া যায় তিন জনের কাটা মাথা। ওইদনই দুপুরে ১৭ কিলোমিটার দুরে সদর উপজেলার সোনাইডাঙ্গা মাঠের মধ্যে তাদের দেহ পাওয়া যায়। ১৫ আগষ্ট রাতে জেলার ভেড়ামারা উপজেলা শহরে সন্ত্রাসীদের এলাপাথারী গুলিবর্ষনে খুন হন কলেজ শিক্ষক বান্দা পাত্তা মোহন, গুলিবিদ্ধ হন উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক মেহেরুল আলমসহ আরো ৪জন। মেহেরুল এখন জীবনান্মৃত। ওইদনি দুপুরে ইসলামী ভিশ্ববিদ্যালয়ের একটি লেক থেকে অজ্ঞাত এক ব্যাক্তির গলাকাটা লাশ উদ্ধার হয়। ১৬ তারিখ সকালে কুষ্টিয়া-রাজবাড়ী মহাসড়কের পাশে চড়াইকোলে পাওয়া যায় খাইরুল নামের একজনের কাটা মাথা। পরদিন এর চার কিলোমিটার দুরে একটি ডোবা থেকে তার দেহ উদ্ধার করা হয়।

ইবিতে চাঁদা না পেয়ে প্রাণনাশের হুমকি : নিরাপত্তা চেয়ে আবেদন

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল ডইনিং ম্যানেজারের কাছে চাঁদা দাবি করে না পেয়ে হত্যার হুমকি দিয়েছে ছাত্রলীগ ইবি শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক শামসুজ্জামান তুহিনের ক্যাডার বাহিনী। এই অবিযোগ এনে ও জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিত আবেদন করেছেন ডাইনিং ম্যানেজার ফিরোজ।
লিখিত আবেদনে উল্লেখ করা হয়, গত মঙ্গলবার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল ডাইনিং ম্যানেজার ফিরোজের কাছে ইবি ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শামসুজ্জামান তুহিন বহিরাগত যুবক সাইদুল এর মাধ্যমে এক হাজার চাঁদা দাবি করে। ম্যানেজার চাঁদা দিতে অস্বীকার করলে তাকে অকথ্য ভাষায় গালি গালাজ করাসহ মারধোর করতে উদ্যত হয় ওই বহিরাগত যুবক। এতে ডাইনিং বয় ও ছাত্ররা তাকে উদ্ধার করতে এগিয়ে এলে ম্যানেজারকে প্রাণে মেরে ফেলার হুমকি দিয়ে পালিয়ে যায়। এঘটনার পর থেকে তাকে অব্যাহতভাবে মোবাইলফোনে হুমকি দিচ্ছে বলে লিখিত আবেদনে উল্লেখ করা হয়। অবশেষে গতকাল বুধবার জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে ডাইনিং ম্যানেজার ফিরোজ হল প্রভোস্ট বরাবর লিখিত আবেদন করেন। এ ঘটানার ব্যবস্থা নেয়ার জন্য প্রভোস্ট মাহবুবর রহমান প্রয়োজনীয় নেয়ার জন্য তাৎক্ষনিকভাবে প্রক্টর মাহবুবুল আরফিনের কাছে লিখিত দিয়েছেন বলে জানাগেছে। প্রক্টর অফিস এর সত্যতা স্বীকার করেছে। ছাত্রলীগ নেতা শামসুজ্জামান তহিন এ ঘটনার সাথে তার সম্পৃক্ততার কথা অস্বীকার করে বলেন, এসব আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচার।
এব্যাপারে হল প্রভোস্ট মাহবুবর রহমান ঘটনা স্বীকার করে বলেন, আমার পক্ষে নিরাপত্বা দেওয়া সম্ভব নয় বলেই আমি বিষয়টি প্রক্টরকে অবহিত করেছি।

Police, Rab chiefs hold meeting in Kushtia tomorrow :228 killed in southwestern districts since January

(A daily star news)
Amanur Aman, From Southwestern Region

Top bosses of different law enforcement agencies are set to hold a meeting
with the police officials of 10 southwestern districts in Kushtia tomorrow
amidst an alarming resurgence of so-called outlawed gangs.

Inspector General of Police and Director General of Rapid Action Battalion
(Rab) are scheduled to reach Kushtia tomorrow while the superintendents of
police (SPs) of these districts have been asked to be present also.

The districts are Kushtia, Meherpur, Chuadanga, Jhenidah, Magura, Jessore,
Narail, Khulna, Satkhira and Bagerhat since January this year. At least
228 people were killed in these districts since January this year.

Khulna Range Deputy Inspector General (DIG) of Police Sheikh Hemayat
Hossain confirmed about the schedule but declined to disclose any details
of the meeting's agenda to the press.

At least five out of 12 outlawed parties have backed to crime spree after
further regrouping under the command of 20 kingpins in southwestern region
in recent months, the DIG said. “We've put in our best efforts to root out
activities of these parties but it is not possible to do so overnight as
this menace is there for about 40 years.”

A special operation of police to nab all the listed criminals is on track,
he said.

Sources close to the outlawed party men and law enforcement agencies
pointed fingers at a group of political leaders who allegedly give
patronage to the outlawed cadres to get 'benefits' by using their
strength.

With the number of killings on the rise, the law and order situation in 10
southwestern districts is getting deteriorated--Kushtia being the worst
victim, sources said.

According to police records and press reports, at least 228 persons were
killed in the region in last seven and a half months. Of them, around 150
were killed, some of them brutally, by the outlawed party cadres.

In most of the cases, different factions of the outlawed parties almost
immediately claimed responsibility for such killings. Tenders of
construction work, establishing control over bus and ferry terminals,
roads and bazars and extracting illegal tolls are said to be the reasons
behind most of these killings.

The five outfits that become criminally active in recent months are Purbo
Banglar Communist Party (PBCP-ML), its two factions Janajuddho and Lal
Pataka, Gono Bahini and Gono Mukti Fouz.

Kushtia tops the list of killings with 63 murders followed by 46 in
Jhenidah, 41 in Jessore, 28 in Khulna, 16 in Chuadanga, 10 in Meherpur,
eight in Satkhira, seven in Bagerhat, five in Narail and four in Magura.

Rival party men killed at least 52 outlaws during the period. The deaths
included 15 businessmen who had refused to pay tolls. Those killed also
included at least 17 local politicians--four belonging to ruling Awami
League, eight to BNP and rest to other smaller parties.

The latest killing took place Saturday night when criminals sprayed
bullets on several ruling Awami League leaders and activists in Bheramara
upazila. College teacher Banda Fattah Mohon, also an activist of AL, was
killed in the incident and several others including Bheramara upazila AL
joint-secretary Meherul Alam were inured.

Besides, six severed heads, all claimed to have fallen prey to outlaws,
were found in Kushtia over the last two weeks sending a chill in the
region.

Earlier, several special drives were conducted in the southwestern region
to nab the outlaws but there has been no let up of their activities. At
least 10 special drives including Operation Clean Heart, Operation Spider
Web were launched in last several years. Incidents of 'crossfire' also
could not tame the outlaws in the long run. According to data of police
records and newspapers reports, a total of 566 crossfire deaths took place
in the region since June 2004.

আসন্ন রমজানে ভেজাল দ্রব্য বিক্রয় পরিহার ও দ্রব্যমূল্য স্থিতিশীল রাখতে কুষ্টিয়ায় ব্যবসায়ীদের সাথে প্রশাসনের মতবিনিময়



কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসক আব্দুল মান্নান বলেছেন, সরকারী সিদ্ধান্ত অনুযায়ী নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের ক্রয় মূল্য ও বিক্রয় মূল্যের তালিকা ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে প্রদর্শন করতে ব্যবসায়ীরা বাধ্য। পবিত্র রমজান মাসে অতিরিক্ত মুনাফা করা থেকে বিরত থাকতে হবে। দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির কারণ অনুসন্ধান করে মূল্য সহনীয় রাখতে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। আসন্ন রমজান উপলক্ষে ভেজাল দ্রব্য বিক্রয় পরিহার ও দ্রব্যমূল্য স্থিতিশীল রাখার সরকারী সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের উদ্দেশ্যে কুষ্টিয়ার ব্যবসায়ীদের সাথে প্রশাসনের মতবিনিময় সভায় তিনি এসব কথা বলেন। মঙ্গলবার বিকেল ৫টায় কুষ্টিয়া চেম্বার অব কমার্স এন্ড ই্ন্ডাষ্ট্রি ভবনে আয়োজিত এ মতবিনিময় সভায় আরো বক্তব্য রাখেন কুষ্টিয়া পুলিশ সুপার সাহাবুদ্দিন খান, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক আশোক কুমার দেবনাথ, এনডিসি জালাল সাইফুর রহমান, কুষ্টিয়া চেম্বারের সভাপতি আশরাফ উদ্দিন নজু ও এফবিসিসিআই’র পরিচালক বাবু বিজয় কুমার কেজরিওয়াল।
এতে কুষ্টিয়ার সর্বস্তরের ব্যবসায়ী ও বিভিন্ন ব্যবসায়ী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ আসন্ন রমাজানে দ্রব্যমূল্য সহনীয় রাখা, ব্যবসায়ীদের নিরাপত্তাসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে খোলা মেলা আলোচনা করেন।

মঙ্গলবার, ১৮ আগস্ট, ২০০৯

রাতে ইবির টিএসিতে চরমপন্থীদের বৈঠক : তোলপাড়

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় টিএসসি অফিসে গত সোমবার রাতে চরমপন্থী, ছাত্রলীগের সাবেক ক্যাডার বিশ্ববিদ্যালয় কর্মচারীরা গোপন মিটিং করেছে। খবর পেয়ে পুলিশ গভীর রাত পর্যন্ত টিএসসি ঘেরাও করে রাখলেও কর্তৃপক্ষের অনুমতি না পাওয়ায় কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি।
পুলিশ সূত্রে জানা যায়, গত সোমবার রাত ১০টার দিকে টিএসির কর্মচারি উকিল মোল্লা টিএসসি অফিসের কলাপসিবল গেটে ভেতর থেকে তালা দিয়ে অফিসে বিশ্ববিদ্যালয়ের এস্টেট অফিসে কর্মচারী শরীফুল, ইবি ছাত্রলীগের একজন সাবেক সেক্রেটারিসহ আরেক ছাত্রলীগ ক্যাডার ও স্থানীয় ১০/১২ জন চরমপন্থী বহিরাগত ক্যাডার নিয়ে গোপন বৈঠক করতে থাকে। খবর পেয়ে রাত ১২টার দিকে পুলিশ একটি দল টিএসসি অফিসের সামনে আসে। এসময় তারা তালাবদ্ধ কলাপসিবল গেটের ভিতরে ৩টি মটর সাইকেল দেখতে পায় এবং অফিসের ভিতরে মানুষের সামাগম বুঝতে পারে। পুলিশ এ সময় ভিতরে প্রবেশ করে তাদের গ্রেফতার করার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরের কাছে বার বার অনুমতি চান। প্রক্টর অনুমতি না দিয়ে কালক্ষেপন করতে থাকে। পুলিশ দফায় দফায় প্রক্টরের কাছে গ্রেফতারের অনুমতি চাইতে থাকে। রাত আড়াইটার দিকে প্রক্টর পুলিশকে নির্দেশ দেয় টিএসসি অফিসের বাইরে থেকে তালা মেরে দেয়ার জন্য। এ সময় পুলিশ চলে যায়।
রাত সাড়ে ৩টার দিকে আবরও ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় থানার ওসির নেতৃত্বে আবারও একদল পুলিশ টিএসসি অফিসের সামনে এসে অবস্থান নেয়। এসময় টিএসির কর্মচারি উকিল মোল্লা, এস্টেট অফিসের কর্মচারী শরীফুল, ইবি ছাত্রলীগের একজন সাবেক সেক্রেটারিসহ আরেক ছাত্রলীগ ক্যাডার বেরিয়ে আসে। তখনও পুলিশ গ্রেফতারের অনুমতি না পেয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের এস্টেট অফিসের সিকিউরিটি অফিসার হায়দার আলীর সাথে ইবি থানার ওসি কথা কাটাকাটি করে চলে যায়। পুলিশ চলে গেলে তারা পালিয়ে যায়।
ইবি থানার ওসি মতিয়ার রহমান বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় স্বায়ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠান। কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া আমারা কিছু করতে পারি না।’
ওদিকে প্রক্টর মাহবুবুল আরফিন উল্টো পুলিশকে দোষারোপ করে বলেন, ‘পুলিশকে যে কোনো ধরনের পদক্ষেপ নেয়ার নির্দেশ দিয়েছিলাম কিন্তু পুলিশ কোন পদক্ষেপ নেয়নি।’
ভিসি প্রফেসর ড. এম. আলাউদ্দিন বলেন, ‘টিএসসির পরিচালক অধ্যাপক ড. আ ন ম রেজাউল করিমের কাছে এ ব্যাপারে লিখিত জানতে চেয়েছি। লিখিত বক্তেব্যের ভিত্তিতে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’

মৃত্যুপুরী কুষ্টিয়া : লাশের লম্বা মিছিল

(১৮ আগষ্ট দৈনিক সমকাল পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদ)

সাজ্জাদ রানা, কুষ্টিয়া
'রাত নামার সঙ্গে সঙ্গে আতঙ্ক ভর করে। সকাল হলেই খবর আসে, আজ আবার মানুষের কাটা মুণ্ডু পাওয়া গেছে। সন্ধ্যার পর কোথাও আড্ডা জমে না। অন্ধকার নামলেই ঘরে ফেরার তাড়া। কোনোদিন ফিরতে দেরি হলে বাড়ির মানুষ অজানা আশঙ্কায় কাঠ হয়ে থাকে। এই এখন আমাদের কুষ্টিয়া। এই শহরে কীভাবে থাকি বলেন?'
'কেমন আছেন'_ সমকালের এ প্রশ্নটুকুর জবাবেই গড় গড় করে এতসব কথা বলে তবেই থামলেন কুষ্টিয়া আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী এক নেতা। নাম প্রকাশেও কুণ্ঠিত সরকারি দলের ওই নেতা জানালেন, পুরো শহরেই এখন বিরাজ করছে এক নজিরবিহীন নিরাপত্তাহীনতা।
গত এক সপ্তাহে ১০টি হত্যাকাণ্ড, এক মাসে ৫টি কাটা মুণ্ডু উদ্ধার, গ্রাম থেকে শুরু করে শহরতক গোপন সংগঠনগুলোর বেপরোয়া চাঁদাবাজির তথ্যই বলে দেয় আওয়ামী লীগ নেতার ওই আতঙ্ক কুষ্টিয়ার সব মানুষের মধ্যেই বিরাজমান। এক সময়ের সাংস্কৃতিক কেন্দ্র এখন দিনে দিনে হয়ে উঠছে ছিন্নমস্তক, আতঙ্ক আর মৃত্যুর শহর। চরমপন্থিদের পূর্ব বিরোধ, আধিপত্য বিস্তার, হাটঘাট নিয়ন্ত্রণ, টেন্ডারবাজিকে কেন্দ্র করে একের পর লাশ পড়ছে কুষ্টিয়ার মাটিতে।
মুখোমুখি সংগঠিত চরমপন্থিরা : গত কয়েক বছরে পুলিশ ও র‌্যাবের ক্রসফায়ারে জেলার ১৬৭ সন্ত্রাসী নিহত হওয়ার পর অনেকটা নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়ে চরমপন্থি সংগঠনগুলো। নিজের জীবন বাঁচাতে অনেকে গাঢাকা দেয় দেশ ও দেশের বাইরে। এলোমেলো হয়ে পড়ে দল। তবে এ সময় অনেক সন্ত্রাসী নিহত হলেও তাদের অস্ত্রভাণ্ডার রয়ে যায় সুরক্ষিত। সম্প্র্রতি আবার ফিরে আসছে চরমপন্থিরা। কুষ্টিয়ায় গণবাহিনী, বিপ্লবী কমিউনিস্ট পার্টি ও গণমুক্তিফৌজ আবার সক্রিয় হয়ে তাদের তৎপরতা বাড়িয়েছে। ইতিমধ্যে একের পর হত্যাকাণ্ড ঘটিয়ে সবাই জানান দিচ্ছে তাদের অবস্থান। দলে শূন্যতা পূরণ করতে নতুন নতুন ছেলেদের দলে টানা হচ্ছে। তাদের হাতে তুলে দেওয়া হচ্ছে ভারী অস্ত্র। মাসিক বেতন দিয়ে তাদের পোষা হচ্ছে বলে একটি গোয়েন্দা সংস্থা সূত্রে জানা গেছে। পূর্ব বিরোধ, আধিপত্য বিস্তার ও টেন্ডার নিয়ন্ত্রণকে কেন্দ্র করে চরমপন্থি সংগঠনগুলো এখন মুখোমুখি। প্রতিদিনই কুষ্টিয়া সদর, মিরপুর, ভেড়ামারা ও কুমারখালীর বিভিন্ন গ্রামে সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা ভারী অস্ত্র নিয়ে মহড়া দিচ্ছে। এমনকি কুষ্টিয়া শহরেও মহড়া দিচ্ছে তারা। মিরপুর উপজেলার আমলা, সদরপুরসহ আরও কয়েকটি এলাকায় প্রতি রাতে মহড়ার পাশাপাশি বোমার বিষ্ফোরণ ঘটাচ্ছে সন্ত্রাসীরা। গত এক মাসে ৩৫টি বোমার বিষ্ফোরণ ঘটানো হয়েছে বলে এলাকাবাসী ও পুলিশ জানিয়েছে।
চাঁদার টাকায় অস্ত্র : কুষ্টিয়ায় সাম্প্রতিক সময়ে চাঁদাবাজি বেড়েছে। মোবাইল ফোন ও চিরকুট পাঠিয়ে লোক মারফত এসব টাকা আদায় করা হচ্ছে। ঠিকাদার-ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে কলেজ শিক্ষকদের কাছ থেকেও চাঁদা আদায় চলছে। পুলিশের একটি সূত্র জানিয়েছে, নতুন অস্ত্র কেনা ও দলের ব্যয় মেটাতে চলছে এই জোর চাঁদা আদায়। গত এক সপ্তাহে কুষ্টিয়া শহরের দুই ব্যবসায়ীর কাছ থেকে ১০ লাখ টাকা চাঁদা নিয়েছে একটি চরমপন্থি সংগঠনের সদস্যরা। এছাড়া মিরপুর ও ভেড়ামারা থেকেও চাঁদা নেওয়া হয়েছে ৫ ব্যবসায়ী ও এক ঠিকাদারের কাছ থেকে। সম্প্রতি গোয়েন্দা পুলিশের একটি দল শহরে অভিযান চালিয়ে অত্যাধুনিক ৫টি অস্ত্র উদ্ধার করে। এসব অস্ত্র চাঁদার টাকা দিয়েই কেনা হয় বলে গোয়েন্দা সূত্র নিশ্চিত করেছে।
বেপরোয়া চাঁদাবাজির কারণে ঠিকাদার ও ব্যবসায়ীরা প্রাণের মায়ায় নিজের এলাকা ত্যাগ করে অন্যত্র আশ্রয় নিচ্ছেন। সমকালের অনুসন্ধানে এমন দু'জন ঠিকাদারের সন্ধান মিলেছে। নাম প্রকাশ না করার অনুরোধে তাদের একজন জানান, দুই দফায় দেড় লাখ টাকা চাঁদা দিয়েও পরের দফায় আবার 'চাঁদা নইলে প্রাণ' এমন হুমকিতে তিনি বাধ্য হয়েছেন এলাকা ছাড়তে। মিরপুর উপজেলার হালসা গ্রামের ঠিকাদার শেখ আহমেদ সম্প্রতি একই কারণে গ্রাম ছেড়েছেন। তিনি বলেন, 'চাঁদার টাকা দিতে না পারলে মৃত্যু নিশ্চিত। সে কারণেই এলাকা ছেড়েছি।'
বিদেশ থেকে ফিরছে সন্ত্রাসীরা : কুষ্টিয়ার মিরপুর এলাকার ৪ শীর্ষ চরমপস্থি গত কয়েক সপ্তাহ আগে এলাকায় ফিরেছে। মিরপুর থানা পুলিশের তালিকাভুক্ত এসব সন্ত্রাসী এলাকায় ফিরেই আবার শুরু করেছে নানা অপকর্ম। মিরপুর থানার একজন সহকারী পুলিশ পরিদর্শক নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, উপজেলার হালসার নগরবাঁকা গ্রামের জমির বাহিনীর প্রধান আমজান কুয়েত থেকে এলাকায় ফিরেছে। একাধিক মামলার আসামি কুর্শা ইউনিয়নের ইশালমারী গ্রামের সন্ত্রাসী জহুরুল সম্প্রতি এলাকায় ফিরে চাঁদাবাজি শুরু করেছে। দুবাই থেকে ফেরত আসা ইবি থানার পাটিকাবাড়ী ইউনিয়নের ডাবিরাভিটা গ্রামের সন্ত্রাসী নাসির পুলিশের হাতে গ্রেফতার হয়েছে। এছাড়া জেল থেকে বের হয়ে সিরাজ বাহিনীর দ্বিতীয় প্রধান মিরপুর উপজেলার আমবাড়িয়া গ্রামের হানা, ইখলাস, সিরাজের ছোট ভাই রেজাউলসহ আরও কয়েকজন জেল থেকে ছাড়া পেয়ে এখন তৎপর। মিরপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আনোয়ার হোসেনের কাছে জানতে চাইলে তিনি কেবল বলেন, 'পুলিশ তৎপর রয়েছে। দ্রুত এসব সন্ত্রাসীকে আটক করা হবে।'
রাজনীতিবিদরাও আতঙ্কিত : একের পর এক হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় জেলার সব রাজনৈতিক দলের নেতাদের মধ্যেও আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। গত মাসে কুমারখালী উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সম্পাদক কয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জামিল হোসেন বাচ্চুকে গুলি করে হত্যা করে সন্ত্রাসীরা। ১৫ আগস্ট রাতে ভেড়ামারা উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক মেহেরুল আলমকে গুলি করে হত্যার চেষ্টা করে সন্ত্রাসীরা। গুরুতর আহত মেহেরুল এ যাত্রায় রক্ষা পেয়েছেন। বিএনপির অনেক নেতার কাছেও চাঁদা চেয়ে হুমকি দিচ্ছে সন্ত্রাসীরা।
জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আজগর আলী বলেন, 'রাজনীতিবিদদের ওপর নানাভাবে আঘাত আসছে। বিএনপির কিছু লোকজন ও পুলিশের কতিপয় সদস্য আওয়ামী লীগ সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করতে নানা অপতৎপরতা চালাচ্ছে। এরাই চরমপন্থিদের সঙ্গে আঁতাত করে জেলায় হত্যাসহ নানা অপকর্মে মেতে উঠেছে।'
জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক মিনহাজুর রহমান আলো বলেন, 'চরমপন্থি অধ্যুষিত কুষ্টিয়ায় আবার ভীতি ছড়িয়ে পড়েছে। আমাদের দলের অনেক নেতাকেও হুমকি দেওয়া হচ্ছে।' তিনি অভিযোগ করেন, সরকারি দলের কয়েকজন নেতার প্রশ্রয়েই এমনটি ঘটছে।
অসহায় পুলিশ : সমকালের সঙ্গে আলাপকালে জেলার পুলিশ কর্মকর্তারা অকপটে স্বীকার করেছেন তাদের অসহায়ত্বের কথা। নাম প্রকাশ না করার শর্তে জেলার এক শীর্ষ পুলিশ কর্মকর্তা সমকালকে বলেন, 'আন্ডারগ্রাউন্ড সংগঠনের আধিপত্য রয়েছে এমন অন্য এলাকার সঙ্গে তুলনা করলে কুষ্টিয়ার বিষয়টি একেবারেই আলাদা। এখানে ওইসব দলের প্রতিটি সদস্যের সঙ্গে সব মহলের যোগাযোগ ভালো। এ কারণে অনেক সময় তথ্যও পাচার হয়ে যায়। এখানে ছোটখাটো অনেক ঘটনার সঙ্গে ওইসব দলের লোকজন যুক্ত থাকে। ফলে খুব ছোট ঘটনাও বড় হয়ে ওঠে।' তিনি স্বীকার করেন, এই জেলায় সন্ত্রাসীদের হালনাগাদ তথ্য না থাকার বিষয়টি তাদের ভোগাচ্ছে। কুষ্টিয়ার পুলিশ সুপার সাহাবুদ্দিন খান বিপিএম এ প্রসঙ্গে বলেন, 'বর্তমান পরিস্থিতি কিছুটা উদ্বেগজনক। তবে পুলিশ তৎপর রয়েছে। আগামী কয়েকদিনের মধ্যে বড় সফলতা আসতে পারে।'

সোমবার, ১৭ আগস্ট, ২০০৯

কলকাতায় বাংলাদেশী চরমপন্থী-সন্ত্রাসীদের আড্ডা নিউমার্কেটের আশপাশে : সন্ধ্যার পর তাদের আনাগোনা কস্তরী ও রাঁধুনি রেস্তোরাঁয়



মুন্সী তরিকুল ইসলাম
ভারতের পশ্চিমবঙ্গের কলকাতা নিউমার্কেটের আশপাশে এখনো পালিয়ে থাকা বাংলাদেশি চরমপন্থী-সন্ত্রাসীরা নিয়মিত আড্ডা জমাচ্ছে। আর সন্ধ্যার পর থেকে মারকুইস ষ্ট্রিটের কস্তরী রেষ্টুরেন্ট এবং ঠিক তার উল্টো দিকে মীর্জ্জা গালিব ষ্ট্রিটের রাঁধুনি রেষ্টুরেন্টে বাংলাদেশি তথা দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমের শীর্ষ চরমপন্থী-সন্ত্রাসীদের দেখা যায়। এই হোটেলগুলোতে বসেই তারা বাংলাদেশে ফোন করে নেটওয়ার্ক ঠিক রাখছে। করছে খুন-খারাবী, চাঁদাবাজি-টেন্ডারবাজি। রাঁধুনি রেষ্টুরেন্টের কর্মচারী রাজেশ দাস তো বলেই ফেললেন, ‘দাদা, তোমাদের দেশের অনেক সন্ত্রাসী আমাদের হোটেলে এসেও মাঝে মধ্যেই ঝামেলা বাধায়। অবশ্য আমরা হোটেলের শাটার বন্ধ করে পিটুনিও দিয়েছি।’ গত বছর বাংলাদেশি কয়েকজন চরমপন্থী-সন্ত্রাসী কলকাতায় গ্রেফতার হওয়ায় এই প্রবণতা বেশ কমেছে বলেও মন্তব্য রাজেশের। তবে কলকাতা পুলিশ এ ধরনের অভিযোগ অস্বীকার করেছে। মারকুইস ষ্ট্রিটের কাশ্মীরি শাল বিতানের স্বত্তাধিকারী মোহাম্মদ শাহ বললেন, এই এলাকাটা তো এক সময় বাংলাদেশি সন্ত্রাসীদের আড্ডাখানায় পরিণত হয়েছিল। এখন কিছুটা কম, তারপরও অনেক সন্ত্রাসী তার দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে আড্ডা দেয়। এরা যে বাংলাদেশি সন্ত্রাসী কীভাবে বুঝলেন, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে ফোনে যেসব কথা বলে তা শুনেই আমরা বুঝতে পারি, এরা বাংলাদেশ থেকে পালিয়ে এসেছে। কথা বলে মাস্তানি ভাষায়। টাকাও চায়। মাঝে মধ্যেই কলকাতা পুলিশ ও সিআইডি এসব এলাকায় অভিযান চালায় বলেও জানালেন মোহাম্মদ শাহ। নিউমার্কেটের দয়ারাম অ্যান্ড কোং নামের কাপড়ের দোকানের কর্মচারী সুরেশ শাহ জানালেন, বাংলাদেশের বেশ কয়েকজন সন্ত্রাসী তাদের দোকানের নিয়মিত কাষ্টমার। দোকানে বসেই তাদের সঙ্গে আলাপচারিতায় তিনি বুঝেছেন এরা বাংলাদেশি অপরাধী। কলকাতা নিউমার্কেটের খুব কাছেই এই মীর্জ্জা গালিব ষ্ট্রিট ও মারকুইস ষ্ট্রিট। বাংলাদেশি মানুষ কলকাতায় এলে সাধারণত এই এলাকায়ই ওঠেন। প্রতিনিয়ত এখানে কমবেশি বাংলাদেশিকে দেখা যায়। তাই এখানকার মানুষ বাংলাদেশিদের খুব ভালোভাবেই বোঝেন, চেনেন। তারা চেহারা দেখলেই বা কথা শুনলেই বুঝতে পারেন কে ভালো মানুষ আর কে বাংলাদেশ থেকে পালিয়ে আসা সন্ত্রাসী। বিভিন্ন সময় কলকাতায় যাওয়া বাংলাদেশ সিআইডিসহ আইন প্রয়োগকারী প্রতিনিধি দলের সদস্যরাও কলকাতা সিআইডি পুলিশকে এ ধরনের তথ্য দিয়েছেন। এমনকি বাংলাদেশের পুরস্কার ঘোষিত শীর্ষ সন্ত্রাসী সুব্রত বাইন (কলকাতার নাম ফতে আলী) এখন বালিগঞ্জে শোবিজের এক নামকরা নায়িকার সঙ্গে চুটিয়ে প্রেম করছে। ওই নায়িকার সঙ্গে তাকে মাঝে মধ্যেই দেখা যায় বলেও কলকাতা সাংবাদিকদের মধ্যে চাউর রয়েছে। এছাড়া ঢাকার মিরপুরের শাহাদত আর খোরশেদ, কুষ্টিয়ার আলোচিত অপরাধীদের অনেকেই তো এ সব এলাকাতেই অবস্থান করছে। কুষ্টিয়ার আলোচিত ভয়ংকর একটি চরমপন্থী সংগঠনের শীর্ষ এক নেতা গত বছর পশ্চিমবঙ্গে পুলিশের হাতে গ্রেফতার হয়। নাম বদল করে সে হয়ে যায় দেবা ঘোষ। সেখানকার রেশন কার্ডেও তার ছদ্মনাম থাকায় সেযাত্রায় গ্রেফতারের পর কিছুদিন হাজতবাস করলেও বাংলাদেশ থেকে বেশ কয়েকবার যোগাযোগ করে র‌্যাব তার হদিস মেলাতে পারেনি। এভাবে এদেশের অনেক শীর্ষ অপরাধী ভারতে আটক হলেও শুধুমাত্র নাম বদল এবং সেদেশের একটি বাম রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতাদের সাথে ঘনিষ্ট সম্পর্ক থাকায় বার বার ছাড়াও পেয়ে যাচ্ছে।
সেখানকার একজন সাংবাদিক এ প্রতিবেদককে জানালেন, তোমাদের দেশের কোনো রাজনৈতিক নেতা বা সন্ত্রাসী এখানে কাদের সঙ্গে আড্ডা দেয় তার খবর আমরা রাখি। ওই সাংবাদিকের মতে, কলকাতা পুলিশ এখন বাংলাদেশি সন্ত্রাসীদের গ্রেফতারে অভিযান চালানোয় কেউ কেউ কলকাতা ছেড়ে একটু দূরে অবস্থান নিয়েছে। কিন্তু তারপরও কলকাতায় তারা নিয়মিত আসা-যাওয়া করে। অবশ্য অনেকেই কলকাতা শহরে ঘাপটি মেরে অবস্থান করছে। গত বছর বাংলাদেশ থেকে যাওয়া প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৈঠকে কলকাতা সিআইডি অবশ্য এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছে। তারা দাবি করেছেন, কলকাতার যেখানেই বাংলাদেশি অপরাধীদের দেখা যায় সেখানেই অভিযান চালানো হচ্ছে। এভাবেই গ্রেফতার করা হয়েছে পুরস্কার ঘোষিত শীর্ষ সন্ত্রাসী খন্দকার তানভিরুল ইসলাম জয়, হারিস আহমেদ ওরফে হারেস এবং সানজিদুল ইসলাম ইমন ও ডাকাত শহীদ ওরফে কিলার শহীদকে। তবে কলকাতায় নয়, সুব্রত বাইন এখন দুবাইয়ে অবস্থান করছে এমন তথ্য রয়েছে কলকাতা পুলিশের কাছে। এখন আর কলকাতায় বাংলাদেশি সন্ত্রাসী খুব একটা নেই বলেও দাবি কলকাতা সিআইডির।
লেখক : সাংবাদিক

কুমারখালীতে কাটা মাথা পাবার একদিন পর দেহ উদ্ধার


কুমারখালীর কুষ্টিয়া-রাজবাড়ী সড়কের পাশে চড়াইকোল পশু হাটে যে কাটা মাথা পাওয়া গিয়েছিল তার দেহের সন্ধানও পাওয়া গেছে। গতকাল সোমবার বিকেলে মাথা উদ্ধারের স্থান থেকে ৪ কিলোমিটার দুরে কুমারখালী উপজেলার শিলাইদহ ইউনিয়নের বেলগাছী মাঠে একটি ধানের ক্ষেত থেকে মাথাছাড়া দেহটি উদ্ধার করেছে পুলিশ। স্থানীয় কৃষকরা দেহটি দেখতে পেয়ে পুলিশকে খবর দেয়। এদিকে নিহতের পরিবারের সদস্যরা তার পরিচয় নিশ্চিত করেছে। নিহতের নাম খাইরুল(৩০)। সে রাজবাড়ী জেলার পাংশা উপজেলার বাহাদুরপুর ইউনিয়নের মেঘনা গ্রামের দিদার আলীর ছেলে। বিভিন্ন পত্রিকা টিভি চ্যানেলে মাথা উদ্ধারের খবর পেয়ে নিহতের বোনজামাই রবিউল থানায় এসে ছবি দেখে খাইরুলের পরিচয় নিশ্চিত করেছে। পরে দেহ উদ্ধার হলে পোশাক দেখে তারা নিশ্চিত করে এটি খাইরুলের দেহ। পুলিশ দেহটি উদ্ধার করে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতাল মর্গে প্রেরণ করেছে। রোববার পরিচয় না পেয়ে কাটা মাথার ময়নাতদন্ত শেষে আঞ্জুমানের মাধ্যমে দাফন করা হয়েছে। নিহতের পরিবার পরিজনকে এখন মাথাবিহীন দেহ নিয়ে দাফন করতে হবে। নিহতের বোনজামাই রবিউল জানান, ৭দিন আগে খাইরুল বাড়ি থেকে পাবনার উদ্যেশ্যে বের হয়। দুইদিন আগে সে পাংশা আছে জানিয়ে ফোন করে বলে আধাঘন্টার মধ্যে বাড়ি আসছি। কিন্তু এরপর আর সে বাড়ি ফেরেনি। রবিউল বলেন, তার কুটুম একজন সাধারন মানের চামড়া ব্যবসায়ী। এলাকা থেকে গরু ছাগলের চামড়া কিনে সে কুষ্টিয়ার চামড়া মোকামে বিক্রি করতো। তাকে কেন এরকম নির্মম পরিনতির শিকার হতে হলো তা বুঝতে না পেরে হতবাক খাইরুলের পরিবার পরিজন।
রোববার সকালে পথ চলতি মানুষ কুমারখালীর কুষ্টিয়া-রাজবাড়ী সড়কের পাশে চড়াইকোল পশু হাটে দেহ থেকে বিচ্ছিন্ন একটি মাথা দেখে পুলিশকে খবর দেয়। কুমারখালী থানা পুলিশ ওইদিন সকাল সাড়ে ৯টার দিকে কাটামাথাটি উদ্ধার করে। মাথার পাশে একটি বাজার করা প্লাষ্টিক ব্যাগ ও একটি সাদা রঙের রক্তমাখা শার্ট পাওয়া যায়।
কুমারখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা খালেদ হোসেন বলেন, ধারণা করা হচ্ছে মাঠর মধ্যে হত্যা করে আতঙ্ক সৃষ্টির জন্য মাথিাটি একটি ব্যাগে করে ওইস্থানে রেখে গেছে কোন সন্ত্রাসী গ্র“প। এ ব্যাপারে তদন্ত চলছে। আগেভাগেই কিছু বলা যাচ্ছে না। তিনি বলেন, কাটা মাথার পাশে একটি চিরকুট পাওয়া যায়। যাতে লেখা ছিল ‘জাসদ লাল বাহিনী ০১১৯৯১৯১০৮৯’। কিন্তু ওই মোবাইল নাম্বারে ফোন করে বন্ধ পাওয়া গেছে।
এর আগে গত ১০ আগষ্ঠ কুষ্টিয়া সড়ক ও জনপথ অফিসের গেটে পাওয়া যায় তিনটি কাটা মাথা। পরে ১৭ কিলোমিটর দুরে সোনাইডাঙ্গা গ্রামের মাঠে মাথা তিনটির খন্ডিত দেহ পাওয়া যায়। গত ২৮জুন সকালে কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে পাওয়া যায় চরমপন্থি ক্যাডার লিটনের কাটা মাথা। শনিবার সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি লেকের ভেতর থেকে মাথা বিহিন অজ্ঞাত গলিত লাশ উদ্ধার করা হয়।

কুষ্টিয়া শহর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সম্মেলন



কুষ্টিয়া শহর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে সোমবার দুপুরে। কুষ্টিয়া ইসলামিয়া কলেজে শহর স্বেচ্ছাসেবক লীগের যুগ্ম আহবায়ক সাজ্জাদ হোসেন সবুজের সভাপতিত্বে এ সম্মেলন শুরু হয়। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক আজগর আলী। বিশেষ অতিথি ছিলেন জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি জুলফিকার আলী আরজু, কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা আব্দুল হাই, সদর থানা আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক হাজী সেলিনুর রহমান, আওয়ামী লীগ নেতা শেখ গিয়াস উদ্দিন মিন্টু, স্বেচ্ছাসেবক লীগ জেলা আহবায়ক আক্তারুজ্জামান লাবু। এতে বিপুল পরিমান ডেলিগেট অংশ নেয়। এ সম্মেলনে সদর আসনের এমপি জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি খ. রশীদুজ্জামান দুদু প্রধান অতিথি হিসেবে থাকার কথা থাকলেও তিনি আসেন নি। সম্মেলন শেষে নতুন কমিটি গঠন করা হলেও তা‌‍‍‌‌ ঘোষনা দেয়া হয়নি। পরে প্রেস বিজ্হপ্তির মাধ্যমে তা জানানো হবে বলে ঘোষনা দেয়া হয়।
নবগঠিত শহর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি মনোনীত হয়েছের সাজ্জাদ হোসেন সবুজ, সাধারন সম্পাদক হয়েছেন সোহেল পারভেজ রনি।

মানব পাচার প্রতিরোধে পালকের কর্মশালা



কুষ্টিয়া জেলা পরিষদ হলরুমে আজ সোমবার বেলা ১১টায় পালকের উদ্যোগে এক কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়েছে। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন জেলা প্রশাসক আব্দুল মান্নান। অধ্যক্ষ ফরিদা বানুর সভাপতিত্বে এতে আরো বক্তব্য রাখেন পালকের নির্বাহী পরিচালক এডভোকেট নার্গিস চৌধুরী, ব্যারিষ্টার রাগীব রউফ চৌধুরী, মহিলা বিষয়ক অধদিপ্তরের উপ পরিচালক মিসেস শওকত আরা, সমাজসেবা অধিদপ্তরের সাবেক উপ-পরিচালক নজরুল ইসলাম ও অধ্যাপক সুদিন লাহিড়ী। এতে বিভিন্ন এলাকার পাঁচ শতাধিক নারী পূরুষ উপস্থিত ছিলেন।

প্রতিমন্ত্রী : আগাম সংকেত


সনজয় চাকী : www.sanjoychaki.ucoz.com
তিনি তখন কক্সবাজারের পথে । এরইমধ্যে নতুন এক মন্ত্রী ও পাঁচ প্রতিমন্ত্রীর শপথ হয়ে গেল বঙ্গভবনে।পরপরই দপ্তর বন্টনের সময় জানা গেল, শুধু সম্প্রসারণ নয়...রদবদলও হচ্ছে মন্ত্রী পরিষদে । নতুন বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী হচ্ছেন অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল চাপাইনবাবগঞ্জের এমপি এনামুল হক। তাহলে শামসুল হক টুকু কি বাদ পড়লেন ? সঙ্গে সঙ্গে সম্প্রসারণের পুরো তালিকায় চোখ গেল...না তিনি আছেন। এবার স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্বে। সঙ্গে সঙ্গে যেন ধাক্কা খেলাম। ওহ, কি যে লস হলো। আহরে,গতকাল যদি তার ্ওই বক্তব্য দিয়ে অন্যভাবে নিউজটা করতাম...তাহলে পুরো কেডিট....। আসলে ৩১ ডিসেম্বর দায়িত্ব পাওয়ার একদিন আগেই জেলা প্রশাসক সম্মেলনে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীর মতই ভাষণ দিয়েছিলেন শামসুল হক টুকু । ওই সম্মেলনের শেষদিনে জেলা প্রশাসকদের সঙ্গে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি মন্ত্রণালয়েরও বৈঠক ছিল । বৈঠকে বিদ্যুৎ খাতের বিভিন্ন বিষয়ে নির্দেশনার চেয়ে আইন-শৃংখলার উন্নয়নের ওপর বেশী গুরত্ব দিয়ে বক্তব্য রেখেছিলেন টুকু। সচিবালয়ে মন্ত্রীপরিষদ সভাকক্ষের ভেতরে বৈঠক চলছে। আমরা বাইরে অপেক্ষায় । অন্য একটা অনুষ্ঠান থাকার ব্যস্ততার কথা বলে বৈঠক শেষের আগেই চলে গেলেন জ্বালানি উপদেষ্টা ড. তৌফিক ই ইলাহী চৌধুরী । একঘন্টার বৈঠক শেষে পৌনে দুটোর দিকে বেরিয়ে এলেন বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী । সাংবাদিকরা প্রশ্ন করার আগেই মুখ খুললেন তিনি। ক্যামেরার সামনে বলতে শুরু করলেন....‘‘উন্নয়নের পূর্বশর্ত হচ্ছে সোন্ত্রাস ও দুর্নীতিমুক্ত দেশ। আমি ডিসিদের উনুরোধ করেছি,আপনারা নিজ নিজ এলাকার সোন্ত্রাসী,চাঁদাবাজ,টেন্ডারবাজদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেবেন...দলমত নির্বিশেষে। সোন্ত্রাসীদের কোনো দল নেই........’’ তিনি বলে চললেন । বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রীর অনুরোধের ধরণ শুনে সাংবাদিকরা অবাক। একজন টিভি সাংবাদিক চাপা স্বরে টিপ্পনী কাটলেন,আমরা এখন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্য শুনছি। আমার মতো অন্যদেরও মনে মনে হাসি। কি যে বলে লোকটা ! তার ওই বক্তব্য শুনে জেলা প্রশাসকরাও হয়ত অবাক হয়েছিলেন...বিব্রত বোধ করেছিলেন অন্যসহকর্মি আর উপস্থিত সচিবরা । কারণ বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রীর মুখে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রীর নছিহত বেমানান। অনভিপ্রেতও । তিনি গ্যাস-বিদ্যুৎ-কয়লা নিয়ে কথা বলবেন.... যে আহবান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর করার কথা তিনি কেন সেই বক্তব্য দেবেন ? সাধারণত তেমনই তো রীতি। পরে আমার একটু খটকা লাগলো । তিনি কি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে যাচ্ছেন ? না এই বক্তব্য দিয়ে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর শূন্যপদে কৌশলে দরখাস্ত করছেন ? পরে ভাবলাম ওভাবে নিউজ না করলেও অন্যভাবে তার এই বেমানান বক্তব্য জাতিকে শুনিয়ে দেয়া যায়। আর যদি এমন হয় এই বক্তব্যের পর উনি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে যান তাহলে তো বাজিমাত। মনে হয়েছিল , বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রীর আইন শৃংখলার নির্দেশনা নিয়ে ভিন্ন এ্যাংগেলে নিউজ করি....নিজের দায়িত্ব না হলেও সরকারের একজন প্রতিমন্ত্রী ফিল করছেন...সন্ত্রাস চাঁদাবাজি,টেন্ডারবাজি বন্ধে সরকারের আরো কঠোর হওয়া দরকার। তবে শেষপর্যন্ত নিউজ করলাম...উপজেলা পর্যায়েও সন্ধ্যা ৮টায় দোকান বন্ধের সরকারি সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের নির্দেশনাকে হাইলইট করে । ক্যাসেটেই থাকলো সেই বক্তব্য। কোনো মিডিয়াই তার ওই বক্তব্য প্রচার বা প্রকাশ করেননি। অফিসও ভেবেছে আসলে বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী একটু ওরকমই । আর আইন শৃংখলার জন্য বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রীর আদেশ-অনুরোধকে পাত্তা দেবে কেনো ? কিন্তু পরদিনই তার বক্তব্যের মাজেজা বোঝা গেল । হয়ত তিনি গ্রীন সিগন্যাল পেয়েই ওই বক্তব্য দিয়েছিলেন। কারণ স্বরাষ্ট্র ম্ত্রণালয়ে দায়িত্ব পাওয়ার পর অন্তত একবছরের মধ্যে সারাদেশের জেলা প্রশাসকদের একসঙ্গে পাওয়ার আর সুযোগ থাকছেনা । তাই নতুন দায়িত্ব ঘোষণা না হলেও সুযোগটা হাতছাড়া করতে চাননি শামসুল হক টুকু। আর পরেরদিনই তার সেই বক্তব্যই জেলা প্রশাসকদের কাছে নির্দেশ হয়ে উঠে। একদিন আগেই ২৯ ডিসেম্বর শামসুল হক টুকু প্রধানমন্ত্রীর কাছে বিদ্যুৎখাতের মহাপরিকল্পনা পেশ করেছেন। সেই বিষয়ে একমাত্র আমিই তার ইন্টারভিউ নিয়ে রিপোর্ট করেছি। ইন্টারভিউ-এর অপর অংশ নিয়ে আরো একটা রিপোর্ট করতে চেয়েছিলাম । সে গুড়ে বালি। তিনি তো নতুন প্রতিমন্ত্রী... স্বরাষ্ট্রের । প্রতিক্রিয়া দরকার । ফোন দিলাম । ধরলেন না । পরে তার এক নিকট আত্মীয়ের মাধ্যমে অন্যভাবে ফোনে পেলাম । স্বাগত জানিয়ে বললাম,স্যার কাল তো আপনি ঠিকই বক্তব্য দিয়েছিলেন । আমরাই বুঝতে পারিনি। এখন আপনার ইন্টারভিউ নিতে চাই। হাসলেন, আমি তো ঢাকায় নেই । শিকলবাহা বিদ্যুৎ কেন্দ্র পরিদর্শন করলাম... কক্সবাজার যাব। তারপর ফেরার পথে রাউজান বিদ্যুৎ কেন্দ্র ...আরেকটি গ্যাসফিল্ড পরিদর্শন করে ফিরবো । বললাম,তাহলে ফোনে ইন্টারভিউ নিই। তিনি বললেন, আমি তো এখনো সরকারিভাবে কিছু জানিনা যে আমার দপ্তর বদল হয়েছে। এখন আপনাদের মুখে এইসব শুনছি..টেলিভিশনে দেখছি। আগাম সিগন্যালের বিষয়ও ধরা দিতে চাইলেন না । জোর দিয়ে বললাম,আমার হাতে শেখ হাসিনার সই করা মন্ত্রীসভার সম্প্রসারণসহ রদবদলের চিঠির ফটোকপি। আপনি হাণ্ডেট পারসেন্ট কনফার্ম স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী । সরলসোজা রাজনীতিক। বললেন,তাহলে আমার শপথ কখন? তা তো কিছুই জানিনে। বললাম,না না আপনার তো আর শপথ নিতে হবেনা, প্রতিমন্ত্রী হিসেবে আপনি তো একবার শপথ নিয়েছেনই । এখন শুধু বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয় থেকে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর অফিসে গিয়ে বসবেন। পুরোপুরি বিশ্বাস করলেন কিনা বোঝা গেলনা । বললেন,তাই নাকি। শেষ পর্যন্ত ফোনে নয় ... চট্টগ্রামেও নয়...কক্সবাজার থেকে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী হিসেবে তার প্রথম ভিডিও ইন্টারভিউ নিয়ে প্রচার করে চ্যানেল আই।
তবে বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয় থেকে আরো একজন প্রতিমন্ত্রীর সরে যাওয়ার এই সিগন্যালে আশংকা হয় । কারণ আগের গত ৭ বছরের শামসামলে বিদ্যুৎ এবং জ্বালানি মন্ত্রণালয় থেকে মোট ৮ জন দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিমন্ত্রী-উপদেষ্টা অসময়ে বিদায় নিয়েছেন । অপসারণ,পদত্যাগ বা অসময়ে সরকারের মেয়াদ শেষের কারণেও এই খাতে এই দুঃখজনক পরিণতি ঘটেছে । বার বার মন্ত্রী বদল বা যে কারণেই হোক গ্যাস-বিদ্যুতের দুরাবস্থার মাশুল দিতে হয়, দিতে হচ্ছে সাধারণ নাগরিকদেরও ।

মহানাম যজ্ঞের সংকীর্তন শিল্পীদের রাগমালা



- মীর জাহিদ
আমরা যখন আসরে সংগীত পরিবেশ করি তখন সামনে বসে থাকা ভক্ত শ্রোতাদেরকে ঈশ্বর মনে করি। কীর্ত্তন দলের শিল্পীদের মুখে এমন বক্তব্য শোনার পর থেকে তাদের প্রতি আমার বিশেষভাবে জানার আগ্রহ সৃষ্টি হয়। এযাবত যতগুলি কীর্ত্তন আসর শুনেছি ততই নতুনভাবে তাদের মধ্য থেকে গুনী শিল্পী আবিস্কার করেছি। বাংলাদেশে প্রায় সাতশত কীর্ত্তন দল নিয়মিত সারাদেশে বিভিন্ন মন্দিরে কীর্ত্তন গানের আসর করে থাকে। কুষ্টিয়া শহরের আশেপাশে প্রায় কুড়িটি মন্দিরে মহানামযজ্ঞ অনুষ্ঠান হয়ে থাকে আমি যে, একজন কীর্ত্তন গানের একনিষ্ঠশ্রোতা একথাটি বিভিন্ন মন্দিরের আয়োজকেরা খুব ভাল করে জানেন। কুষ্টিয়া থেকে ষোল কিলোমিটার দূরে শ্রী মাতৃমন্দিরের সভাপতি সাদা মনের মানুষ নামে খ্যাত সন্তোষ কুমার দে আমাকে নামযজ্ঞ শোনার জন্য আমন্ত্রণ জানালেন। কুষ্টিয়া মহাশ্মশান থেকে গোবিন্দ বাবু, নিলয় বাবু, টিংকু চক্রবর্তী ও আমি একত্রে দুই মটরসাইকেলে চেপে মিরপুরের মন্দিরে গিয়ে উপস্থিত হলাম। গ্রামীণ পরিবেশে ছোট্ট মেলা, মন্দিরের সামনেই প্যান্ডেল করে চলছে নামযজ্ঞ অনুষ্ঠান। আমি ঢাকার বাণিজ্য মেলা থেকে শুরু করে বৈশাখ মেলা একুশের মেলা, পৌরষ মেলা অনেক মেলাই দেখেছি কিন্তু গ্রামীণ পরিবেশে হাল্কা আঙ্গিকে আয়োজন করা মেলাটি আমার কাছে অপূর্ব লেগেছিল। স্বল্প পুঁজির বিক্রেতা বা দোকানীদের ঘরে কম দামের পশরা এবং গরীব ক্রেতাদের কেনা-বেচা আমার কাছে খুবই আকর্ষণীয় লাগছিল। সাথে ক্যামেরা নেওয়াতে বাড়তি সুবিধা হয়েছিল। বেশকিছু দলের আসর ও মেলার ছবি তুলে নিয়ে এসেছিলাম। আমরা কুষ্টিয়া মহাশ্মশান থেকে এসেছি এ কথাটি চারিদিকে খবর হয়ে যাওয়ার সাথে সাথে মাতৃমন্দিরের মাইকে আমাদের অভ্যর্থনা জানানোর জন্য কমিটির স্বেচ্ছাসেবকদের নির্দেশ দেওয়া হচ্ছিল। আমাদের জন্য আলাদাভাবে চেয়ারের ব্যবস্থা করে প্যান্ডেলের বিশেষ একটি কর্ণারে বসার জায়গা করে দেওয়া হল। তখন দুপুর বেলা আমি মনোযোগ দিয়ে গান শুনছিলাম, আসরে শ্রীদূর্গা সম্প্রদায়ের পরিবেশনায় রাগ মনোহরশই চলছিল। এরপর কাজলী রাগ নিয়ে নামলো ভক্ত হরিদাস সম্প্রদায়। দলের মালিক পঙ্কোজ বণিকের বাজানো খোল যেন কথা বলছিল। আমার দেখা এত অদ্ভুত ও অসম্ভব মেধা সম্পন্ন খোল বাদক কখনো সামনে পড়েনি। পরে জানতে পারলাম এই ব্যক্তিই সারা বাংলাদেশে কীর্ত্তনীয়াদের মধ্যে প্রবীণতম সেরা খোল বাদক। ভক্ত হরিদাস দলের মাষ্টার বিষ্ণু সরকার তার হারমনিয়াম ফিংগারিং ও সুর ললিত কারুকাজ আমার কাছে চমৎকার লেগেছিল। আর এই দলের বংশীবাদক সিলেটের তীর্থ চক্রবর্তী উচ্চাঙ্গ সংগীতের দীকপাল বললে ভুল হবে না। পরবর্তী যে ছয়দিন কুষ্টিয়া মহাশ্মশানে আসর করেছেন তিনি প্রতিদিনই আমাদের সাথে আমার বাসায় বসে ক্ল্যাসিকাল গানের ঘরোয়া জলসায় যথেষ্ট সময় দিয়েছেন। এদিকে গোবিন্দ বাবু ও নিলয় বাবু অন্য দলগুলোর সাথে প্রয়োজনীয় কথা সম্পন্ন করে ফেললেন। ফেরার সময় হলে গেল দুপুরের সেবা নিয়ে আমরা কুষ্টিয়া উদ্দেশ্যে রওনা হলাম। কুষ্টিয়া মহাশ্মশানে রাত ১২ টায় অধিবাস শেষ করে পরদিন ভোর থেকে ছয়দিনের নামযজ্ঞানুষ্ঠান শুরু হয়ে গেল। ভোর ৬টা থেকে সকাল ১০ পর্যন্ত নিরিবিলি পরিবেশে কীর্ত্তনীয়া দলের সুর যে কোন মানুষের অনুভূতিকে আলাদাভাবে আন্দোলিত করে থাকে। সেকারনে আমার সাথে কয়েকজন শ্রোতা শংকর বাগচী, ড. অরবিন্দ সাহা, মনোজ মজুমদার ও নারায়ণ সাহা মিলপাড়ার মধ্য দিয়ে মহাশ্মশানের উদ্দেশ্যে হেটে চলছিলাম। এমন সময় একটি বাসার জানালা দিয়ে হারমনিয়ামের সাথে একজনের দরাজ কন্ঠে ভৈরবী সুর ভেসে আসছিল। আমরা সবাই জানালার কাছে থমকে দাঁড়িয়ে গৃহের মধ্যে গুরু বাক্য শুনছিলাম। তিনি শিষ্যদের উদ্দেশ্যে বলছেন অষ্ট প্রহরের ৩৬ রাগিনী দিয়ে নিজের চোখের অশ্র“ না ঝরিয়ে সুরের সুধা দিয়ে ভক্তের চোখে জল আনাটাই একজন গুনী শিল্পীর কুশলতার পরিচয় মেলে আমার কৌতহল বেড়ে গেল, বোধহয় সংগীত জগতের যে সোনার খনীর সন্ধান করছিলাম তা আজ মিলে যেতে বসেছে। হারমনিয়ামের বিভিন্ন সুর আশেপাশের পরিবেশকে সুমধুর করে তুলছিল আমি তন্ময় হয়ে শুনছিলাম। অন্যেরা শ্মশানে চলে গেলেন, আমি আর শংকর বাগচী গুরু গৃহের প্রবেশ দ্বারে হাত জোড় করে অনুমতির অপেক্ষা করছিলাম। শিষ্যরা জায়গা করে দিল ঠিকই আমরা দুজনে দাঁড়িয়েই রইলাম। গুরু আমাদের দিকে দৃষ্টি পড়তেই ইশারায় বসতে বললেন। এরই মধ্যে আধাঘন্টা কাল আমাদের সাথে কোন কথা না বলে শিষ্যদের যা বোঝাচ্ছিলেন সেগুলো বিমুগ্ধ শ্রোতার মত আমরা সুর সাগরে অবগাহন করছিলাম। একজন শিষ্য পাশে বসে হারমনিয়াম বাজাচ্ছে তার কুশলতা গুরুকে সুর সৃষ্টি করতে সহায়তা করছে। সূর্যদ্বয়ের আগেই ললিত শেষ করে কোন কোন পর্দার সহযোগে ভোরের রাগ ভায়রো বা ভৈরবীতে প্রবেশ করতে হয় তা শেখাচ্ছিলেন। প্রতিটি কীর্ত্তনের আসর দুইঘন্টা করে অনুষ্ঠিত হয়। খেয়াল গানের শুরুতে যেমন আলাপ করা হয় তেমনি কীর্ত্তন প্রথম আধাঘন্টা সময় ধরে যে রাগ গাওয়া হবে তার আরোহন অবহরন ও পকড়, চলন দিয়ে বন্দনার মাধ্যমে ভাবের আবেশ সৃষ্টি করা হয়। নাম কে সুমধুর করে ভক্তদের মাদকতা আনতে হলে কোন কৌশলে মিশ্র পর্দা ব্যবহার করা যায় সেগুলি নিজে গেয়ে চমৎকার ভাবে দেখালেন। দরবারী কানাড়া ও শিবরঞ্জন গেয়ে গভীর রাত অণুভব করালেন। পরে মিয়াকিমল্লার গেয়ে বর্ষণমুখর রাত্রি অনুভব করিয়ে ঈশ্বর বন্দনা করলেন। সুর সাধনের এক ফাকে আমাদের উদ্দেশ্য করে জিজ্ঞসা করলেন দাদাদের পরিচয়? শংকর দা বিশেষভাবে আমাকে পরিচয় করিয়ে দিলেন। উনি একটু থমকে বললেন আপনি কি সেই ব্যক্তি গত বছর কীর্ত্তন শিল্পীদের নিয়ে সম্বর্ধনা ও সংগীত আসর করেছিলেন। হাত বাড়িয়ে আমাকে একবারে কাছে নিয়ে বসালেন। বললেন, অনেকের মুখে আপনার কথা শুনেছি, আপনার বাসায় নাকি এই উপমহাদেশের নাম করা শিল্পীদের সেতার, বাঁশি, সানাই ও ক্ল্যাসিকাল গানের সংগ্রহ আছে? আমি বিনয়ের সাথে জানালাম একজন সংগীত শ্রোতা হতে গেলে যতটুকু সংগ্রহ করা প্রয়োজন তাই করে যাচ্ছি আর কি। উনি নিজেই আমার ক্ল্যাসিকাল সংগ্রহ দেখার আগ্রহ দেখিয়ে বাসায় যাবার নিমন্ত্রণ নিলেন। আমি কড়জোরে তার পদধুলির দিনক্ষণ প্রার্থনা করলাম। বললেন পাঁচ দিন কুষ্টিয়াতে আছি এরই মধ্যে সময় করে নেব। আজ রাত্রি ৮-১০ কীর্ত্তনের আসর আছে শুনতে আসবেন তো? আমি বললাম কোন রাগ গাইবেন? উনি আমার উপর ছেড়ে দিলেন কোনটা শুনতে চান এই প্রহরে সম্ভবত আপনারা জয়জয়ন্তী, খামবাজ, বাঘেশ্রী, সিন্ধু ইত্যাদি রাগ গেয়ে থাকেন। তিনি কবি নজরুলের মত বুক ভাটা হা হা করে হাসি দিয়ে আমাকে জড়িয়ে ধরে বলে উঠলেন অভোলন অভোলন এমন শ্রোতাই তো চাই। আপনারা লালনের দেশের মানুষ সংগীত খুব ভাল বোঝেন আমরা কুষ্টিয়া মহাশ্মশানে খুব সর্তকতার সাথে গান গেয়ে থাকি। আপনাদের মত পাঁচজন শ্রোতা আসরের সামনে থাকলে আমরা প্রাণঢেলে নামের সাথে সুর সুধা দিয়ে কীর্তিবোধ করি। বিদায়ের সময় গুরুর পরিচয় জানতে পারলাম তিনি ভক্ত নরোত্তম সম্প্রদায়ের মালিক ও সারা বাংলাদেশের সংকীর্ত্তনীয়া দলের সমিতির সাধারণ সম্পাদক উত্তম চক্রবর্তী। আর পাশে বসে হরামনিয়াম সংগত করছিল তারই যোগ্য সন্তান তুষার চক্রবর্তী। বিদায় নিয়ে শ্মশানে উপস্থিত হয়ে দেখি মাত্র দশ/বার জন শ্রোতা নিয়ে মুক্তিলতা সম্প্রদায় আনন্দ ভৈরবী পরিবেশন করছিলেন মাষ্টারের কাছে গিয়ে বললাম আশাবরী/বিভাস রাগ শোনানো যাবে কিনা। মাথা ঝুকিয়ে সম্মতি জানালেন। আমরা এই চারজন মূলত সুর শুনতে এসেছি। যে রাগ গাইবেন তার চরিত্র যেন পরিপূর্ণভাবে প্রকাশ পায়। মাষ্টার একটু ভেবে নিয়ে দলের প্রকৃত খোল বাদককে ইশারা করে আসন ঘুরিয়ে আমাদের মুখোমুখি হয়ে বসলেন। এবারে একটানা ত্রিশ মিনিট ত্রিতালের সাথে আশাবরী রাগ গেয়ে বিভাসের মধ্যে ঢুকে পড়লেন আমরা সবাই মোহিত হয়ে তার সংগীত শুনছিলাম। এই দলের বাঁশি বেহালা বাদকের যুগলবন্দি দেখে আশ্চর্য হয়েছিলাম কীর্ত্তন দলের শিল্পীরা যে যুগলবন্দি পরিবেশন করতে পারে তা আমার জানা ছিল না। গত বৎসর ঢাকাতে শাহবাগের ঢাকা ক্লাবের মাঠে ওস্তাদ আমজাদ আলী খাঁর সরোদ বাদনের সাথে তবলার যুগলবন্দি সরাসরি দেখার সৌভাগ্য হয়েছিল, যার টিকিটের মুল্য ছিল পঁচিশশত টাকা। আজ বিনা পয়শায় কুষ্টিয়া মহাশ্মশানে বসে বাঁশি, বেহালা ও খোলের যুগলবন্দি শুনতে পাচ্ছি একি কম পাওয়া। আসর শেষে সবার সাথে কুশল বিনিময় করে প্রস্তুতি নিচ্ছি এমন সময় বংশীবাদক সিলেটে বাড়ী তীর্থ চক্রবর্তী আমাকে নমস্কার করে বললেন আমি আপনাকে চিনি আপনি জাহিদ স্যার। আমি অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকলাম। সে বলল অনেকের কাছে গল্প শুনেছি আপনার কাছে উপমহাদেশের বিখ্যাত শিল্পীদের বাঁশির সিডি সংগ্রহ আছে, আর সংগীত শোনার উপযোগী একটি কক্ষ আছে। আমার খুব ইচ্ছে আপনি যদি ওইগুলি দেখার সুযোগ করে দেন। আমি সহাস্যে তীর্থ এবং তার দলের মাষ্টার বিষ্ণু সরকার ও তুষার চক্রবর্তীকে সংগে নিয়ে আমার বাসায় প্রবেশ করলাম। আমার সংগীত ঘরে ঢুকেই তারা একের পর এক সিডি দেখছে আর কপালের সাথে ঠেকিয়ে প্রণাম জানাচ্ছে তাদের একটি আচরণ আমাকে ইর্শিত করেছিল উস্তাদ বিসমিসল্লাহ খাঁর প্রতি প্রবল ভক্তি ও শ্রদ্ধা। এই এক সপ্তাহে প্রায় ডজন খানিক কীর্ত্তন শিল্পী আমার বাসায় গান শুনতে এসেছে। প্রত্যেকেরই প্রথম ইচ্ছা বিসমিল্লা খাঁর সানাই আগে দেখাতে হবে আমার কাছে বেনারস উৎসবের একটি লাইভ প্রোগ্রামের সিডি সংগ্রহে ছিল। ঐ প্রোগ্রাম দেখার সময় তাদের চোখে মুখে দারুন ভক্তি ও শ্রদ্ধার বহিপ্রকাশ লক্ষ্য করেছি। এরপরে একে একে তারা দেখা শুরু করল ভীমসেন যোশি, পন্ডিত যশোরাজ, বড়ে গোলাম আলী, আমীর খান, রশীদ খান, পারভীন সুলতানা, অজয় চক্রবর্তীসহ অনেক গুনি গায়কের খেয়াল গান। এক পর্যায়ে বিভিন্ন শিল্পীর যন্ত্র সংগীত শুনতে চাইলে পান্না লাল ঘোষ ও হরিপ্রসাদ চৌরাশিয়ার বাঁশি, রবিশংকর নিখিল ব্যানার্জীর সেতার, আলী আকবর খাঁ ও আমজাদ আলী খাঁর সরোদ, সন্তুর, সারেঙ্গী, বেহালা ও তবলার লহরা তারা এক সপ্তাহ ধরে উপভোগ করেছিল। আমার বাড়ির গান শোনার ঘর খানি যেন কীর্ত্তন শিল্পীদের কাছে একটি আকর্ষণের ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছিল।

সন্ধ্যায় উত্তম চক্রবর্তীর আসর দেখার জন্য আমরা সপরিবারে শ্মশানে উপস্থিত হলাম তখনও আসরে গৌরাঙ্গ সম্প্রদায়ের মালিক শ্রীবাস রায় তার বাজানো বেহালায় ইমন রাগের সুর বাজাচ্ছেন। মাষ্টার বাবলু বিশ্বাস, সুমন চক্রবর্তী তাদের সুরের লাতিত্ব প্রদর্শন করে শ্রোতাদের মাতিয়ে তুলেছেন। অতপর উত্তম চক্রবর্তী তার এগার জনের একটি দল নিয়ে খাম্বাজ রাগের সুর আলাপরত অবস্থায় রবীন্দ্রনাথের মত দৃপ্ত পায়ে মঞ্চে প্রবেশ করল। আমরা বেশ কজন সঙ্গীত বোদ্ধা ও শিল্পী একত্রে চেয়ারে বসে আছি। উত্তম বাবু আমাদের দিয়ে দৃষ্টি পড়তেই সকলের উদ্দেশ্যে হাত জোড় করে প্রণাম জানালেন। আমরাও যথারীতি তার প্রতি শ্রদ্ধা বিনিময় করলাম। মঞ্চের একপাশে সকল গায়ক বাদক বসে খাম্বাজ রাগের বন্দনা গাইতে শুরু করলেন। গুরু উত্তম চক্রবর্তী আজ একটু বেশী করে আলাপ ও কন্ঠের চলনশৈলী প্রদর্শন করছেন। সেকারণে দলের সকল সদস্য শিল্পী নিমগ্নচিত্তে গুরুর প্রতি দৃষ্টি মিলে আছে, কখন কার প্রতি কি প্রতিকী নিদের্শনা আসে। বিলম্বিত শুরু করে কখন মধ্যলয় ও জলদে যেতে হবে তার হাতের ইশারায় দুইজন খোল বাদক প্রাণন্ত বাজিয়ে চলেছেন। বেহালা, দোতারা ও হারমনিয়ামে কখন তীব্র পিচ দিতে হবে তাও হাতের অঙ্গুলী নির্দেশনায় পুরা দল পরিচালিত হচ্ছে। এমনিভাবে কিভাবে পয়ত্রিশ মিনিট কেটে গেল আমরা বুঝে উঠতে পারলাম না। তাঁর সুর মূর্ছনার মায়া জ্বালে আমাদেরকে সম্মোহিত করে রেখেছিল। এবার সমস্ত দল উঠে দাঁড়িয়ে খাম্বাজ থেকে সিন্ধু রাগে প্রবেশ করতে করতে মঞ্চে চর্তুরদিকে ঘুলে এল। আসরের সবশেষে মালকৌষ রাগের চলশৈলী দেখিয়ে সমস্ত ভক্ত শ্রোতাদের বিমোহিত করেছিলেন। মালকৌষ রাগের জ্ঞ,দ,ণ কোমল স্বর তিনি চমৎকার ভাবে পুত্র তুষারকে হারমনিয়ামে অঙ্গুলী প্রদর্শন করে দেখিয়ে দিচ্ছিলেন তাও একটি দেখার মত বিষয়। হরে, কৃষ্ণ, রাম এই তিনটি শব্দ ষোলবার উচ্চারিত হবে যে কোন প্রহরের রাগরাগিনী মিশ্রিত সুরের মধ্যে থেকে এটি নামযজ্ঞের প্রধান বিষয়। শব্দগুলির ব্যবহারে সুরের কারুকার্য্য প্রদর্শন করে সামনে বসে থাকা ভক্ত শ্রোতাদের কান্নায় বুক ভাসানোর দৃশ্য না দেখলে বলে বুঝানো মুশকিল। এমনিভাবে দুইঘন্টার আসর শেষে করে উত্তম চক্রবর্তী মঞ্চ থেকে নেমে সরাসরি আমাদের সাথে এসে বুক মেলালেন। প্রায় পাঁচ ছয়শত দর্শকের আমাদেরকে এ ধরনের সম্মান দেওয়াতে আমরাও গর্ব অনুভব করলাম। শ্মশান কমিটির অনেকেই এগিয়ে এলো কোন কোন ভক্ত তার গলায় গাঁদা ফুলের মালা পরিয়ে গড় হয়ে প্রণাম করতে লাগল।
শ্মশানের অদূরেই রবীন্দ্র স্মৃতি বিজড়িত “টেগর লজ” কুষ্টিয়ার কুঠিবাড়ী নামে খ্যাত, আমি এবং উদীচির সম্পাদক সমর রায় সেখানে ছবি আঁকা ও সংগীত প্রশিক্ষণের ক্লাস পরিচালনা করে থাকি। পরদিন সন্ধ্যায় “টেগর লজে” মহাশ্মশানে আগত কীর্ত্তন দলের শিল্পীগণ ও কুষ্টিয়া সাংস্কৃতিক কর্মীদের নিয়ে এক মিলন মেলার আয়োজন করলাম। সেখানে উত্তম চক্রবর্তীকে তার দলবল নিয়ে উপস্থিত হওয়ার জন্য আমন্ত্রণ জানালাম। পরদিন সন্ধ্যার অনুষ্ঠানে পৌর মেয়র আনোয়ার আলী সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখলেন ডাঃ সুকুমার কুন্ডু, ড. অরবিন্দ সাহা, এ্যাডভোকেট সুব্রত চক্রবর্তী, হাফিজুর রহমান, অসিত বাবু, বরুন বাবু, শিশুশিল্পীরা ফুল কীর্ত্তন শিল্পীদের বরণ করে নিল। আমি নিজেই অনুষ্ঠান পরিচালনা করছিলাম। জলাসার শুরুতে শ্রীবাস রায় বেহালায় গঙ্গা আমার মা পদ্মা আমার মা এই গানের সুরে আগত দর্শক শ্রোতাদের অভ্যর্থনা জানালেন। এরপর স্থানীয় শিল্পী অখিল দেবনাথ ও সুব্রত চক্রবর্তী নজরুলের দুইটি বিখ্যাত শ্যামা সংগীত, শ্মশানে জাাগিছে শ্যামা মা ও শ্যামা নামের লাগলো আগুন পরিবেশন করলেন এরপর নিহার মন্ডল অনুপ জালোটার দুইটি ভজন গাইলেন। সুমন চক্রবর্তী পরিবেশন করলেন ঐ মহাসিন্ধুর ওপার থেকে এই গানখানি। মধ্যমনি উত্তম চক্রবর্তী ও সঞ্জয় কুমার গাইন একটু শলা পরামর্শ করে নিয়ে প্রথমে উত্তম বাবু গোলাম আলীর দুইখানা বিখ্যাত গজল ইয়ে দিল ইয়ে পাগল দিল মেরা ও হামকো কিসনে গামনে মারা ইয়েকাহানি ফির সাহে পরিবেশন করলেন। পর সঞ্জয় কুমার গাইন অজয় চক্রবর্তী বিখ্যাত গান ডাগর নয়নে কেন চেয়ে থাক এবং বিভাস রাগে মোহন বাঁশি বাজে দুইটি গান পরিবেশ করেন দর্শকদের বিশেষ অনুরোধে প্রায় পঁচিশ মিনিট ধরে আলাপসহ বর্ষার রাগ, কেদার পরিবেশন করেন তখন চারিদিকে মূষলধারে বৃষ্টি ঝরছে, কখন ঘড়ির কাটা রাত ১১ গিয়ে ঠেকেছে কারোও খেয়াল নেই শ্রোতাদের মধ্যে যেন একটা অতৃপ্ত সুর বাসনা কাজ করছিল। কীর্ত্তনীয়া স্থানীয় শিল্পীদের কন্ঠে লালনের গান শুনতে চাইলেন। শ্রোতাদের মাঝে লালন গানের শিল্পী আব্দুল কুদ্দুস ও আসলাম শাহ দুইখানি লালন সংগীত পরিবেশন করলেন। তাদের সাথে তবলা সংগত করলেন প্রদীব অধিকারী, সংকর চৌধুরী ও দিপু সবশেষ পরিবেশনা কুষ্টিয়ার দুইজন সনামধন্য উচ্চাঙ্গ সংগীত শিল্পী মজেজ বিশ্বাস ও সালাউদ্দিন আহমেদ পরিবেশন করলেন মেঘ রাগ ও মিয়াকি মল্লার রাগ। খেয়ালের তান তারনা ও সুরের মূর্ছনার সাথে বাইরের অঝোর ধারার বর্ষণ যেন প্রকৃতির এক অনবদ্য খেয়ালী খেলা শুরু হয়েছিল। একজীবনে এমন পরিবেশে বর্ষার রাগ উপভোগ করার সুযোগ সবার জীবনে ঘটেনা এই আয়োজনটা মনে হয়েছিল জীবনের একটি সফল ও সার্থক অনুষ্ঠানগুলির মধ্যে একটি।
কীর্ত্তন শিল্পীদের মধ্যে অনেক গুনী গায়ক ও বাদক আছেন তারা শুধুমাত্র জীবিকার প্রয়োজনে বায়নার মাধ্যমে এক জেলা থেকে অন্য জেলায় গান গেয়ে বেড়ান। সরকারী পৃষ্ঠপোষকতা পেলে এদের মধ্য থেকে অনেক খ্যাতিমান শিল্পী ও বাদক বের করে আনা সম্ভব। শিল্পকলা একাডেমীতে নানা ধরনের প্রশিক্ষণ হয়ে থাকে কীর্ত্তন শিল্পীদেরকেও এ ধরনের প্রশিক্ষণের সুযোগ সৃষ্টি করে দিলে এদের মধ্য থেকে অনেক গুনি শিল্পী বেরিয়ে আসতে পারে। তারা দেশের সংস্কৃতি ভান্ডারকে আরো সমৃদ্ধি করে দেশে ও বিদেশে সুনাম বয়ে আনতে সক্ষম হবে বলে বোদ্ধা সঙ্গীতজ্ঞরা মনে করেন।
[লেখক মীর জাহিদ : শিক্ষক, স্থপতি ও চিত্রশিল্পী]