সোমবার, ১৭ আগস্ট, ২০০৯

প্রতিমন্ত্রী : আগাম সংকেত


সনজয় চাকী : www.sanjoychaki.ucoz.com
তিনি তখন কক্সবাজারের পথে । এরইমধ্যে নতুন এক মন্ত্রী ও পাঁচ প্রতিমন্ত্রীর শপথ হয়ে গেল বঙ্গভবনে।পরপরই দপ্তর বন্টনের সময় জানা গেল, শুধু সম্প্রসারণ নয়...রদবদলও হচ্ছে মন্ত্রী পরিষদে । নতুন বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী হচ্ছেন অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল চাপাইনবাবগঞ্জের এমপি এনামুল হক। তাহলে শামসুল হক টুকু কি বাদ পড়লেন ? সঙ্গে সঙ্গে সম্প্রসারণের পুরো তালিকায় চোখ গেল...না তিনি আছেন। এবার স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্বে। সঙ্গে সঙ্গে যেন ধাক্কা খেলাম। ওহ, কি যে লস হলো। আহরে,গতকাল যদি তার ্ওই বক্তব্য দিয়ে অন্যভাবে নিউজটা করতাম...তাহলে পুরো কেডিট....। আসলে ৩১ ডিসেম্বর দায়িত্ব পাওয়ার একদিন আগেই জেলা প্রশাসক সম্মেলনে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীর মতই ভাষণ দিয়েছিলেন শামসুল হক টুকু । ওই সম্মেলনের শেষদিনে জেলা প্রশাসকদের সঙ্গে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি মন্ত্রণালয়েরও বৈঠক ছিল । বৈঠকে বিদ্যুৎ খাতের বিভিন্ন বিষয়ে নির্দেশনার চেয়ে আইন-শৃংখলার উন্নয়নের ওপর বেশী গুরত্ব দিয়ে বক্তব্য রেখেছিলেন টুকু। সচিবালয়ে মন্ত্রীপরিষদ সভাকক্ষের ভেতরে বৈঠক চলছে। আমরা বাইরে অপেক্ষায় । অন্য একটা অনুষ্ঠান থাকার ব্যস্ততার কথা বলে বৈঠক শেষের আগেই চলে গেলেন জ্বালানি উপদেষ্টা ড. তৌফিক ই ইলাহী চৌধুরী । একঘন্টার বৈঠক শেষে পৌনে দুটোর দিকে বেরিয়ে এলেন বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী । সাংবাদিকরা প্রশ্ন করার আগেই মুখ খুললেন তিনি। ক্যামেরার সামনে বলতে শুরু করলেন....‘‘উন্নয়নের পূর্বশর্ত হচ্ছে সোন্ত্রাস ও দুর্নীতিমুক্ত দেশ। আমি ডিসিদের উনুরোধ করেছি,আপনারা নিজ নিজ এলাকার সোন্ত্রাসী,চাঁদাবাজ,টেন্ডারবাজদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেবেন...দলমত নির্বিশেষে। সোন্ত্রাসীদের কোনো দল নেই........’’ তিনি বলে চললেন । বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রীর অনুরোধের ধরণ শুনে সাংবাদিকরা অবাক। একজন টিভি সাংবাদিক চাপা স্বরে টিপ্পনী কাটলেন,আমরা এখন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্য শুনছি। আমার মতো অন্যদেরও মনে মনে হাসি। কি যে বলে লোকটা ! তার ওই বক্তব্য শুনে জেলা প্রশাসকরাও হয়ত অবাক হয়েছিলেন...বিব্রত বোধ করেছিলেন অন্যসহকর্মি আর উপস্থিত সচিবরা । কারণ বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রীর মুখে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রীর নছিহত বেমানান। অনভিপ্রেতও । তিনি গ্যাস-বিদ্যুৎ-কয়লা নিয়ে কথা বলবেন.... যে আহবান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর করার কথা তিনি কেন সেই বক্তব্য দেবেন ? সাধারণত তেমনই তো রীতি। পরে আমার একটু খটকা লাগলো । তিনি কি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে যাচ্ছেন ? না এই বক্তব্য দিয়ে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর শূন্যপদে কৌশলে দরখাস্ত করছেন ? পরে ভাবলাম ওভাবে নিউজ না করলেও অন্যভাবে তার এই বেমানান বক্তব্য জাতিকে শুনিয়ে দেয়া যায়। আর যদি এমন হয় এই বক্তব্যের পর উনি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে যান তাহলে তো বাজিমাত। মনে হয়েছিল , বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রীর আইন শৃংখলার নির্দেশনা নিয়ে ভিন্ন এ্যাংগেলে নিউজ করি....নিজের দায়িত্ব না হলেও সরকারের একজন প্রতিমন্ত্রী ফিল করছেন...সন্ত্রাস চাঁদাবাজি,টেন্ডারবাজি বন্ধে সরকারের আরো কঠোর হওয়া দরকার। তবে শেষপর্যন্ত নিউজ করলাম...উপজেলা পর্যায়েও সন্ধ্যা ৮টায় দোকান বন্ধের সরকারি সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের নির্দেশনাকে হাইলইট করে । ক্যাসেটেই থাকলো সেই বক্তব্য। কোনো মিডিয়াই তার ওই বক্তব্য প্রচার বা প্রকাশ করেননি। অফিসও ভেবেছে আসলে বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী একটু ওরকমই । আর আইন শৃংখলার জন্য বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রীর আদেশ-অনুরোধকে পাত্তা দেবে কেনো ? কিন্তু পরদিনই তার বক্তব্যের মাজেজা বোঝা গেল । হয়ত তিনি গ্রীন সিগন্যাল পেয়েই ওই বক্তব্য দিয়েছিলেন। কারণ স্বরাষ্ট্র ম্ত্রণালয়ে দায়িত্ব পাওয়ার পর অন্তত একবছরের মধ্যে সারাদেশের জেলা প্রশাসকদের একসঙ্গে পাওয়ার আর সুযোগ থাকছেনা । তাই নতুন দায়িত্ব ঘোষণা না হলেও সুযোগটা হাতছাড়া করতে চাননি শামসুল হক টুকু। আর পরেরদিনই তার সেই বক্তব্যই জেলা প্রশাসকদের কাছে নির্দেশ হয়ে উঠে। একদিন আগেই ২৯ ডিসেম্বর শামসুল হক টুকু প্রধানমন্ত্রীর কাছে বিদ্যুৎখাতের মহাপরিকল্পনা পেশ করেছেন। সেই বিষয়ে একমাত্র আমিই তার ইন্টারভিউ নিয়ে রিপোর্ট করেছি। ইন্টারভিউ-এর অপর অংশ নিয়ে আরো একটা রিপোর্ট করতে চেয়েছিলাম । সে গুড়ে বালি। তিনি তো নতুন প্রতিমন্ত্রী... স্বরাষ্ট্রের । প্রতিক্রিয়া দরকার । ফোন দিলাম । ধরলেন না । পরে তার এক নিকট আত্মীয়ের মাধ্যমে অন্যভাবে ফোনে পেলাম । স্বাগত জানিয়ে বললাম,স্যার কাল তো আপনি ঠিকই বক্তব্য দিয়েছিলেন । আমরাই বুঝতে পারিনি। এখন আপনার ইন্টারভিউ নিতে চাই। হাসলেন, আমি তো ঢাকায় নেই । শিকলবাহা বিদ্যুৎ কেন্দ্র পরিদর্শন করলাম... কক্সবাজার যাব। তারপর ফেরার পথে রাউজান বিদ্যুৎ কেন্দ্র ...আরেকটি গ্যাসফিল্ড পরিদর্শন করে ফিরবো । বললাম,তাহলে ফোনে ইন্টারভিউ নিই। তিনি বললেন, আমি তো এখনো সরকারিভাবে কিছু জানিনা যে আমার দপ্তর বদল হয়েছে। এখন আপনাদের মুখে এইসব শুনছি..টেলিভিশনে দেখছি। আগাম সিগন্যালের বিষয়ও ধরা দিতে চাইলেন না । জোর দিয়ে বললাম,আমার হাতে শেখ হাসিনার সই করা মন্ত্রীসভার সম্প্রসারণসহ রদবদলের চিঠির ফটোকপি। আপনি হাণ্ডেট পারসেন্ট কনফার্ম স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী । সরলসোজা রাজনীতিক। বললেন,তাহলে আমার শপথ কখন? তা তো কিছুই জানিনে। বললাম,না না আপনার তো আর শপথ নিতে হবেনা, প্রতিমন্ত্রী হিসেবে আপনি তো একবার শপথ নিয়েছেনই । এখন শুধু বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয় থেকে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর অফিসে গিয়ে বসবেন। পুরোপুরি বিশ্বাস করলেন কিনা বোঝা গেলনা । বললেন,তাই নাকি। শেষ পর্যন্ত ফোনে নয় ... চট্টগ্রামেও নয়...কক্সবাজার থেকে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী হিসেবে তার প্রথম ভিডিও ইন্টারভিউ নিয়ে প্রচার করে চ্যানেল আই।
তবে বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয় থেকে আরো একজন প্রতিমন্ত্রীর সরে যাওয়ার এই সিগন্যালে আশংকা হয় । কারণ আগের গত ৭ বছরের শামসামলে বিদ্যুৎ এবং জ্বালানি মন্ত্রণালয় থেকে মোট ৮ জন দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিমন্ত্রী-উপদেষ্টা অসময়ে বিদায় নিয়েছেন । অপসারণ,পদত্যাগ বা অসময়ে সরকারের মেয়াদ শেষের কারণেও এই খাতে এই দুঃখজনক পরিণতি ঘটেছে । বার বার মন্ত্রী বদল বা যে কারণেই হোক গ্যাস-বিদ্যুতের দুরাবস্থার মাশুল দিতে হয়, দিতে হচ্ছে সাধারণ নাগরিকদেরও ।

কোন মন্তব্য নেই: