মঙ্গলবার, ১১ আগস্ট, ২০০৯


কুমারখালীতে আর নিয়মিত থাকা হয়না ১৫ বছর-সাংবাদিকতার বয়সও প্রায় তাই। আর লেখালেখি আরো আগে। বাবু ভাই (সোহেল আমিন বাবু) তখন পালক নামে একটি পত্রিকা বের করতেন-মানে সম্পাদক। আর সঙ্গে দুহাত খুলে লিখতেন ছড়া, কবিতা, গল্প। লিটল ম্যাগাজিনেরও জোয়ার তখন। সারাদেশ থেকে অসংখ্য লিটল ম্যাগাজিন বের হয়। ভারত ও বাংলাদেশের লিটল ম্যাগাজিনে সমান তালে সোহেল ভাইয়ের লেখা ছাপা হয়। ডাকে আসে লেখক কপি। সেইসঙ্গে এক সম্পাদক পত্রিকা পাঠান আরেক সম্পাদকের কাছে। কুমারখালী বাজার বা পোষ্ট অফিস থেকে বেশ একটু দূর... বড়–রিয়ায় সোহেল ভাইদের বাড়ি। রোজ রোজ যেতে চাইতেন না ডাক পিয়ন। তাই বাবু ভাই সহজ করে দিয়েছিলেন পিয়নের কাজ। একারণে বাবু ভাইয়ের সব চিঠি আসতো আমার বাবার ডিসপেন্সারিতে। বাবাও বাবু ভাইকে ভালোবাসতেন..লেখার প্রশংসা করতেন। প্রায় রোজই চিঠি-পত্রিকা আসে। ছোট থেকেই দোকানে আসা অভ্যাস। নতুন নতুন পত্রিকার সেই অন্যরকম গন্ধ এখনো যেন আমার অনুভবে। বাবু ভাই এসে পত্রিকা খুলে দেখার পর আমি হাতে পেতাম। আমি তখন হাইস্কুলের শেষধাপে।পড়তে পড়তে ভালো লাগে সাহিত্য পত্রিকা। কিন্তু তিনি আসতে দেরি করেন। পত্রিকা আগেই এসে পড়ে থাকে। আমার যেন সহ্য হয়না। বিনা অনুমতিতে খুলতে পারিনা। পরে অনুমতি মিললো। লোভও বাড়লো। বাবু ভাইয়ের নামে এতো পত্রিকা আসে,চিঠি আসে ....আমার নামে ত্ োএকটাও আসেনা। বাবু ভাই বললেন, আমার মতো লেখো তাহলে তোমার নামেও আসবে। বাহ বেশ বুদ্ধি। শুর“ হলো আমার ছড়া লেখা...বাবু ভাই সম্পাদনা করে অন্য লিটল ম্যাগাজিনে পাঠিয়ে দেয়ার ব্যবস্থা করে দিতেও শুরু করলেন। না, আশা মেটে না ...লোভ কমেনা। এসএসসি পরীক্ষা দিয়েই সম্পাদক হওয়ার খায়েস হলো। আবদার জানালাম বাবু ভাইকে। লেখা জোগাড় করলেন। ৮৭ সালে আমার সম্পাদনায় কাঙাল হরিনাথের কুণ্ডুপাড়ার এমএনপ্রেস থেকে লেটার প্রেসে বের হলো ‘‘মিঠেকড়া”। এরপর ‘‘হৃদয়ে প্লাবন’’,‘‘মনন’’,‘‘বিমূর্ত কারুকাজ’’ অনেকপথ...লেখালেখি। ৯২ সালের ডিসেম্বরে দৈনিক কুষ্টিয়ায় আমার কবিতা দেখে কুমারখালী থেকে খবর পাঠানোর দাওয়াত পাঠিয়েছিলেন সেই সময়ের সম্পাদক কে এম এন মোতালেব। শুরু সাংবাদিতার... কুমারখালী প্রতিনিধি থেকে স্টাফ রিপোর্টার, সহসম্পাদক, বার্তা সম্পাদক হয়ে ৫ বছর দৈনিক কুষ্টিয়ার সম্পাদকের দায়িত্বেও .....পর্যায়ক্রমে ভোরের কাগজ, ইত্তেফাক, যুগান্তর, এনটিভির জেলা প্রতিনিধি এবং কুষ্টিয়া রিপোর্টার্স ইউনিটির সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করে ২০০৪ সালে ঢাকায়। ভোরের কাগজ থেকে পরের বছর চ্যানেল আইতে। তবে যে লেখালেখি দিয়ে শুরু ৯৪ সাল থেকে গতবছর পর্যন্ত ১৪ বছর... লেখালেখির সেই পাঠ প্রায় বন্ধ ছিল.. বাবু ভাই লিখেছেন, আমি ডুবে ছিলাম শুধু সাংবাদিকতায়। আমার মতই অন্য পেশায় বুদ হয়েছেন অগ্রজপ্রতীম মাহমুদ হাফিজ, মীর মুতোর্জা আলী বাবু, জেড আলমসহ কুমারখালীর অনেকেই। এখনকার আওয়ামী লীগ অফিসের পাশে তখন বাবা ডা. সুধীর চাকীর ডিসপেন্সারি। সামনে সোনালী ব্যাংক, রেজিষ্ট্রি অফিস, ডানদিকে কুমারখালী থিয়েটার, প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির অফিস, স্পোর্টিং ক্লাব, বামদিকে পাবলিক লাইব্রেরী, লাইব্রেরীর সামনে রুপালী সাংস্কৃতিক সংঘ। দিনে ব্যাংক আর রেজিষ্ট্রি অফিসকে ঘিরে পুরো এলাকা জুড়ে জমজমাট অবস্থা, আর বিকেল থেকে লাইব্রেরী আর স্পোর্র্টিং ক্লাবের সাদাকালো টিভির সামনে ভীড়, থিয়েটার আর রুপালীতে নাটক-যাত্রার রিহার্সল, নাচ-গানের প্যাকটিস। বাবা আর মণি কাকার (ডা. সুধীর রঞ্জন বিশ্বাস) দোকানসহ পুরো এলাকা জুড়েই নির্ভেজাল আড্ডা। পাবলিক লাইব্রেরী হলে লেগেই থাকতো নানান সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আর নাটক। টিকিট কেটেই দেখতে হতো নাটক। পরে থিয়েটারের কার্যলায়ে আসে শীলন, দিনরাত জমজমাট। নবীন-প্রবীণ লেখক, কবিদের বেশিরভাগ আড্ডাও ছিল এ সড়ক জুড়েই। দিনে দিনে বদলে যেতে থাকে সবকিছুই। রেজিষ্ট্রি অফিস, সোনালী ব্যাংক চলে যায় অন্যঠিকানায়। নানান কারণে ভাটা পড়ে সাংস্কৃতিক তৎপরতায় । বড় অসময়ে হারিয়ে যায় বাবাও। এখন প্রায় বন্ধ বাবার সেই দোকানও। বাবাও নেই। বাবু ভাইয়ের চিঠিও নেই সেখানে। নেই আগের অনেক কিছুই।

কোন মন্তব্য নেই: