বৃহস্পতিবার, ৬ আগস্ট, ২০০৯

২২শে শ্রাবন বিশ্বকবির প্রয়ান দিবস, শিলাইদহ কুঠিবাড়িতে নেই কোন অনুষ্ঠান


হাসান জাহিদ : রবীন্দ্র জন্ম জয়ন্তী অর্থাৎ ২৫ বৈশাখ এলে যেখানে পা ফেলার যায়গা থাকেনা সেই শিলাইদহ কুঠিবাড়িতে করিগুরু রবীন্দ্রনাথের মৃত্যুবার্ষিকীতে আজ শুনশান নিরবতা। নেই কোন অনুষ্ঠান, নেই দর্শনার্থীর ভীড়। এমনকি সাংস্কৃতিক রাজধানী বলে পরিচিত কুষ্টিয়া শহরেও ২২শে শ্রাবনে নেই কোন অনুষ্ঠান, কবিগুরুকে তার প্রয়াণ দিবসে শ্রদ্ধা জানাবার সুযোগ পাচ্ছেন না এখানকার সংস্কৃতিপ্রিয় মানুষ। এ নিয়ে চরম ক্ষোভ ও হতাশা প্রকাশ করেছেন কুষ্টিয়ার সংস্কৃতিকর্মিরা।
নিরিবিলি পরিবেশ থাকায় সাহিত্য চর্চার জন্য বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বারবার ফিরে আসতেন কুষ্টিয়ার শিলাইদহ কুঠিবাড়িতে। এখানে বসেই জমিদারী পরিচালনাসহ সাহিত্যচর্চা করতেন তিনি। তার নোবেলজয়ী গীতাঞ্জলীর অধিকাংশ কবিতাসহ জীবনের অনেক মূল্যবান সাহিত্য এখানে রচিত হয়েছে। পদ্মাতীরের এ ছায়াশীতল কুঠিবাড়িতে কবিগুরু তার জীবনের অনেক মূল্যবান সময় কাটিয়েছেন। কিন' বিশ্বকবির প্রয়াণ দিবসে এখানে নেই কোন আয়োজন। এ নিয়ে হতাশা ব্যক্ত করলেন এখানে বেড়াতে আসা দর্শনার্থীরা। গতকাল কথা হয় যশোর থেকে কুঠিবাড়ি দেখতে আসা সেলিমের সাথে। সেলিম জানতেনই না এখানে ২২শে শ্রাবন পালিত হবে না। কোন আয়োজনের চিহ্ন না দেখে তিনি জিজ্ঞাসা করে জানতে পারেন কবিগুরুর প্রয়াণ দিবসে তার স্মৃতিধন্য শিলাইদহে কিছুই হবে না। শুধু এবারই নয় নিকট অতীতে কোন বছরেই ২২শে শ্রাবনে কুঠিবাড়িতে কোন অনুষ্ঠান হয়নি এখানে। বিষয়টি জানতে পেরে চরম ক্ষোভ প্রকাশ করেন সেলিম। তিনি বলেন, এখানে যদি কোন অনুষ্ঠান না হয় তাহলে কোথায় হবে? দর্শনার্থী সামিনা মনে করেন, কুঠিবাড়িতে যদি কবিগুরুর মৃত্যুবার্ষিকী পালিত না হয় তাহলে এ এলাকার মানুষ দিবসটি সম্পর্কে জানতেই পারবে না। এ দিবসে শ্রদ্ধা জানাতে পারবে না তাদের মনের মানুষকে।
কবিগুরুর ব্যবহৃত খাট, চেয়ার টেবিল, পালকী, সপীড বোটসহ নানা আসবাবপত্র ছাড়াও কুঠিবাড়িতে সংরক্ষিত আছে অসংখ্য দূর্লভ সি'রচিত্র। আছে কবিগুরুর নিজ হাতে লাগানো বকুল গাছ। অথচ তার স্মৃতি বিজরিত এই কুঠিবাড়িটিকে পরিপূর্ণ পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলা যায়নি আজো। তারপরও এই কুঠিবাড়ির সবকিছুর সাথে মিশে আছেন কবিগুরু। মিশে আছেন বাঙালীর আপন সত্ত্বায়। সরকারি বা বেসরকারিভাবে উদ্যোগ নিলেই কুঠিবাড়িতে খুব সহজেই কবিগুরুর প্রয়াণ দিবস স্মরণ করা সম্ভব বলে মনে করেন শিলাইদহ কুঠিবাড়ির ইনচার্জ বাকীবিল্লাহ। তিনি বলেন, এখানে সবই আছে আছে দু’টি সুন্দর মঞ্চ, আছে বিশাল মাঠ। যে কোনভাবে উদ্যোগ নিলেই এখানে ২২শে শ্রাবন পালন করা সম্ভব।
আবার শিলাইদহে কবিগুরুর প্রয়াণ দিবসে অনুষ্ঠান করতে না পারা অত্যন্ত লজ্জাস্কর বলে মনে করেন সাংস্কৃতিক রাজধানী হিসেবে খ্যাত কুষ্টিয়ার সংস্কৃতি কর্মিরা। কথা হয় ডালিয়া, দোলন, লিলি, রোমেলসহ অনেকের সাথে। সবাই ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
কুষ্টিয়া জেলা শিল্পকলা একাডেমির সাধারন সম্পাদক আমিরুল ইসলাম বলেন শিলাইদহে ২২শে শ্রাবন পালন না হওয়াটা সত্যিই আমাদের জন্য লজ্জাস্কর। তবে কুষ্টিয়া শহরে বিভিন্ন সংগঠন দিবসটি পালন করে। এবারও করবে। তবে এদি সবে বরাত থাকায় রবীন্দ্র সংগীত সম্মিলন পরিষদ আগামী ৮ তারিখে অনুষ্ঠান করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
শিলাইদহ কুঠিবাড়িকে পূর্ণাঙ্গ পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলার পাশাপাশি কবিগুরুর প্রয়াণ দিবসে এখানে নিয়মিত আয়োজন করা হোক অনুষ্ঠানমালার এ দাবি এখন সকলের।

কোন মন্তব্য নেই: