সোমবার, ১০ আগস্ট, ২০০৯

কুষ্টিয়া সড়ক ও জনপথ অফিসের প্রধান ফটক থেকে তিনটি কাটা মাথা উদ্ধার, দেহ পাওয়া গেছে ১৭ কিলোমিটার দুরে নির্জন মাঠে




কুষ্টিয়া সড়ক ও জনপথ অফিসের প্রধান ফটকের দুই গজ ভেতরে তিনটি কাটা মাথা পাওয়া গেছে। গতকাল সোমবার সকালে পথ চলতি মানুষ বিভৎস এ দৃশ্য দেখে পুলিশকে খবর দেয়। সকাল সাড়ে ৮টার দিকে পুলিশ মাথা তিনটি উদ্ধার করে। পলিথিনে মুড়িয়ে একটি বাজার করা ব্যাগে করে মাথা তিনটি সেখানে এনে রাখা হয়। পরে সেখান থেকে ১৭ কিলোমিটার দুরে সদর উপজেলার উজানগ্রাম ইউনিয়নের সোনাইডাঙ্গা গ্রাম সংলগ্ন প্রত্যন্ত মাঠে পাওয়া যায় ওই তিনজনের খন্ডিত দেহের সন্ধান। সকালে ওহিদ নামের একজন কৃষক ক্ষেতে কাজ করতে গিয়ে খন্ডিত ওই দেহ দেখে অসুস্থ্য হয়ে পড়ে। এরপর খবর ছড়িয়ে পড়লে হাজার হাজার মানুষের ঢল নামে ওই মাঠে। কাটা তিন মাথা ও তিন দেহের প্রত্যেকটির পাশে একটি করে চিরকুট পাওয়া গেছে। প্রত্যেকটিতে লিখা ছিল ‘জাসদ গণবাহিনী (লাল) ভাই’। দেয়া ছিল একটি মোবাইল নাম্বারও। ০১১৯৯১৯১০৮৯ নাম্বারের ওই মোবাইলে ফোন করে তা বন্ধ পাওয়া গেছে।
এ নির্মমতার শিকার নিহত তিনজন হলো-সদর উপজেলার উজানগ্রাম ইউনিয়নের বরইটুপি গ্রামের সবেদ আলীর ছেলে আইয়ুব আলী (৪০), একই ইউনিয়নের বংশীতলা গ্রামের গোলাম রহমানের ছেলে শামসুজ্জামান জোহা(৪২) ও জিয়ারখী ইউনিয়নের ভবানীপুর গ্রামের মৃত আকবর আলী শকাতির ছেলে কাইয়ুম শকাতি(৪১)। এলাকাবাসীর দাবি এদের মধ্যে আইয়ুব ভ্যান চালক। জোহা ধান, পিয়াজের ব্যবসায়ী। পার্শ্ববর্তি দুর্বাচারা গ্রামে তার দোকান রয়েছে। আর কাইয়ুম একজন কৃষক। এলাকার লোকজন এ নির্মমতায় হতবাক হয়ে গেছেন। কথা হয় সোনাইডাঙ্গা গ্রামের খালিদ, জাফর, মানোয়ার, বিত্তিপাড়ার সাইফুল, বংশীতলার রুহুল আমীন, ভবানীপুরের আকমল হোসেন ও হেদায়েতুল ইসলামের সাথে। একযোগে তিনটি মাথা বিচ্ছন্ন করার মতো ঘটনা এর আগে দেখেনি বা শুনেনি বলে তারা জানান। এরা মন্তব্য করেন এরপর আর দেশে আইন-শৃঙ্খলা কি থাকলো। শহরে সরকারি দপ্তরে মানুষের কাটা মাথা রেখে আসা মানে প্রশাসনকে বৃদ্ধাঙ্গলী প্রদর্শন নয় কি? এদিকে পুলিশের দাবি দু’টি চরমপন্থি গ্র“পের বিরোধের জের ধরে এ হত্যাকান্ড ঘটেছে। ঘটনাস্থল পরিদর্শন করা কুষ্টিয়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার এর আর আলিফ বলেন, নিহতরা সবাই বিপ্লবী কমিউনিষ্ট পার্টির সদস্য। এর মধ্যে কাইউম শকাতি এ অঞ্চলের অন্যতম কমিউনিষ্ট নেতা (ক্রসফায়ারে নিহত) মফিজের খালাতো ভাই।
এদিকে সকালে তিনটি কাটা মাথার খবর ছড়িয়ে পড়লে সড়ক ও জনপথ অফিসে মানুষের ঢল নামে। কাটা মাথা তিনটি দেখে মানুষের মধ্যে আতংক ছড়িয়ে পড়ে। পুলিশ মাথা তিনটি কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতাল মর্গে নিয়ে গেলে সেখানেও মানুষের ঢল নামে। পুলিশের ধারণা ঠিকাদারদের মধ্যে আতংক সৃষ্টির জন্য দুরে গ্রামের মাঠে গলা কেটে হত্যার পর মাথা তিনটি সড়ক ও জনপথ অফিসে রেখে যায় চরমপন্থিরা।
কুষ্টিয়ার বিভিন্ন সরকারি অফিসের গেটে কাটা মাথা ফেলে রাখার ঘটনা এটিই প্রথম নয়। ১৯৯৭ সালে প্রথম পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রধান ফটকের সামনে পাওয়া যায় কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার যদুবয়রা গ্রামের লতিফের কাটা মাথা। পরের বছরই একই গেট থেকে উদ্ধার করা হয় রুজদার নামের অপর এক যুবকের ছিন্ন মস্কক। এছাড়াও কুষ্টিয়ার এলজিউডি অফিসের প্রধান ফটকে পাওয়া যায় ইহুদি নামের একজনের কাটা মাথা। গত ২৮জুন সকালে কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে পাওয়া যায় চরমপন্থি ক্যাডার লিটনের কাটা মাথা। প্রথম উদ্ধার হওয়া ছিন্ন মস্তকের সাথে পাওয়া চিরকুটে লেখা ছিল কাজ ট্রাম করার শাস্তি। সেই থেকে টিকাদারি কাজ ট্রাম করতে ভয় পায় এ জেলার নির্মান ব্যবসায়ীরা। যে ভয়কেই আরো বাড়াতে মাঝে মধ্যেই এসব ছিন্ন মস্তক অফিস চত্বরে রাখা হয় বলে অনকের ধারনা।

কোন মন্তব্য নেই: