বুধবার, ১২ আগস্ট, ২০০৯

এ বছর খুন হয়েছেন ৫৮ জন : চরমপন্থীদের তান্ডবে থমকে গেছে কুষ্টিয়ার জনপদ

(দৈনিক ডেসটিনি পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদ)
জহুরুল ইসলাম, কুষ্টিয়া
বিভিন্ন নামে-বেনামে গড়ে ওঠা সশস্ত্র ও চরমপন্থী দলের সদস্যদের তান্ডবে থমকে গেছে কুষ্টিয়ার গ্রামাঞ্চলের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা। প্রতিদিনই ঘটছে খুন, গুম, অপহরণ ও চাঁদাবাজির মতো ঘটনা। ফের ভয়াল জনপদে পরিণত হয়েছে কুষ্টিয়া। পূর্ববাংলা কমিউনিস্ট পার্টি (জনযুদ্ধ), জাসদ গণবাহিনী, গণমুক্তিফৌজ, বিপ্লবী কমিউনিস্ট পার্টি, নিউ বিপ্লবী কমিউনিস্ট পার্টির শক্ত ঘাঁটি কুষ্টিয়া। এরা একে অপরের শত্রু। সম্প্রতি জাসদ গণবাহিনী (লাল) পরিচয়ে অপর একটি সংগঠন এ জেলায় তৎপরতা বৃদ্ধি পেয়েছে। ভৌগোলিক অবস্থানগত কারণে এ জেলা চরমপন্থী সন্ত্রাসীদের নিরাপদ অভয়ারণ্যে পরিণত হয়েছে। শান্তি উবে গেছে এলাকার সাধারণ মানুষের। দিন যেমন-তেমন রাত নামলেই দম বন্ধ করা পরিস্থিতি জেঁকে বসে গ্রামাঞ্চলের প্রতিটি পরিবারে। অঘটনের আশঙ্কা চেপেই অপেক্ষা করতে হয় এ জেলার মানুষের আরেকটি সকালের জন্য। সে সকাল আসবে কিনা তারও কোনো নিশ্চয়তা নেই। চলতি বছরে জেলায় ইউপি চেয়ারম্যানসহ খুন হয়েছেন ৫৮ জন। এর মধ্যে জানুয়ারিতে ৬ জন, ফেব্রুয়ারিতে ৭ জন, মার্চে ৬ জন, এপ্রিলে ১৩ জন, মেতে ৬ জন, জুনে ১০ জন, জুলাইয়ে ৪ জন এবং আগস্টে ৬ জন খুন হয়েছেন।
উল্লেখযোগ্য খুনের মধ্যে ৭ জানুয়ারি মিরপুরের শ্রিরামপুর গ্রামের আওয়ামী লীগ নেতা ও ঠিকাদার ইদ্রিস আলীকে সন্ত্রাসীরা চাঁদার দাবিতে জবাই করে হত্যা করে। ২৩ মার্চ কুষ্টিয়ার হরিনারায়ণপুর বাজারে ক্লিনিক ব্যবসায়ী হাসানকে সন্ত্রাসীরা চাঁদার দাবিতে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে। ২ এপ্রিল খোকসার জয়ন্তী হাজরা গ্রামের কলেজছাত্রী শাহিনাকে সন্ত্রাসীরা ধর্ষণের পর গায়ে পেট্রল ঢেলে আগুন লাগিয়ে দেয়। চিকিৎসাধীন অবস্থায় ৭ এপ্রিল তার মৃত্যু হয়, ৮ এপ্রিল কুষ্টিয়ার বটতৈল ভাদালীয়াপাড়ার সাবদুলকে প্রতিপক্ষ সন্ত্রাসীরা জবাই করে হত্যা করে, ১৮ এপ্রিল মিরপুরের কামারডাঙ্গা গ্রামের জিয়াকে প্রতিপক্ষ সন্ত্রাসীরা শ্বাসরোধ করে হত্যা করে। ২জুন সদরপুরের চৌধুরীপাড়ার আকবার চৌধুরীকে সন্ত্রাসীরা গুলি করে হত্যা করে। ১১ জুন কুমারখালীর হাসিমপুর চরে সন্ত্রাসীরা চাঁদার দাবীতে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজার হাফিজুর রহমান বাবুকে গুলি করে হত্যা
করে, ১৫ জুন ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে আব্দুল আওয়াল ও শের আলীকে প্রতিপক্ষ সন্ত্রাসীরা জবাই করে হত্যা করে, ১৮ জুন মিরপুরের সদরপুর বাজারে যুবলীগ কর্মী সবুজকে সন্ত্রাসীরা গুলি করে হত্যা করে, ২৩ জুন কুষ্টিয়ার নান্দিয়া গ্রামের জসিমকে প্রতিপক্ষ সন্ত্রাসীরা গুলি করে হত্যা করে। ২৮ জুন ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে প্রতিপক্ষ সন্ত্রাসীরা লিটনকে জবাই করে হত্যারপর তার মস্তক রেখে যায়। ২৫ জুলাই কুমারখালী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক, কয়া ইউপি চেয়ারম্যান জামিল হোসেন বাচ্চুকে সন্ত্রাসীরা গুলি করে হত্যা করে। ২৮ জুলাই মিরপুরের পুঁটিমারি গ্রামের মাইক্রোবাস মালিক কাজিবুলকে সন্ত্রাসীরা জবাই করে হত্যার পর তার মাইক্রোবাসটি ছিনিয়ে নিয়ে যায়। ১০ আগস্ট পুলিশ কুষ্টিয়া সড়ক ও জনপথ দফতরের গেটের সামনে থেকে আয়ুব আলী, কাইয়ুম, ও সামছুল ইসলাম জোহার খ-িত মস্তক এবং ইবি থানার সোনাইডাঙ্গা গ্রামের মাঠ থেকে তাদের দেহ উদ্ধার করে। উল্লেখ্য কুষ্টিয়ায় ২০০২ সালে ১১৮ জন, ২০০৩ সালে ১১২ জন, ২০০৪ সালে ১৮২ জন, ২০০৫ সালে ১৪৪ জন, ২০০৬ সালে ১২১ জন, ২০০৭ সালে ৭১ জন, ২০০৮ সালে ৬৩ জন খুন হয়েছেন।

কোন মন্তব্য নেই: