শনিবার, ১ আগস্ট, ২০০৯

শেখ হাসিনার সবচেয়ে বড় চমক কুষ্টিয়ার হানিফ



আওয়ামী লীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনেও শেখ হাসিনা যে চমক দেখিয়েছেন তার অন্যতম হলেন কুষ্টিয়ার মাহবুব-উল-আলম হানিফ। জেলা কমিটির সহ-সভাপতির পদ থেকে তাকে একটানে তুলে নিয়েছেন কেন্দ্রীয় কমিটির ১নং যুগ্ম সাধারন সম্পাদক পদে। kushtianews.blogspot.com
জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনুকে কুষ্টিয়া-২ (মিরপুর-ভেড়ামারা) আসনে এবার মহাজোটের মনোনয়ন দেয়ায় নিশ্চিত এমপি হবার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হন এলাকায় ব্যাপক জনপ্রিয় হানিফ। এর বদলে প্রতিশ্র“তি অনুযায়ী শেখ হাসিনা নিজের বিশেষ সহকারি হিসেবে হানিফকে নিয়োগ দেন। সেখানে এ দক্ষ রাজনীতিবিদ রাজনৈতিক বিভাগে সাফল্যের সাথে দায়িত্ব করছেন। এ রাজনৈতিক দক্ষতা ও ওয়ান ইলেভেনের সময় তার সক্রিয় ভূমিকার গুনে তিনি এ বড় পুরস্কারটি পেয়েছেন। যে কৃতিত্বের কারনেই এ প্রাপ্তি যোগ হোক না কেন কুষ্টিয়ার মানুষ এ নিয়ে আনন্দে আহলাদিত হয়েছে। আনন্দ উচ্ছাস আর মিছিলে মিছিলে ছেয়ে গেছে তার নিজ এলাকা ভেড়ামারাসহ কুষ্টিয়ার সকল উপজেলা। কারণ নিকট অতীতে কুষ্টিয়া এলাকার কোন রাজনীতিবিদ এতো বড় দলীয় পদ পাননি।
প্রভাবশালী আওয়ামী রাজনীতিবিদ কুষ্টিয়া পৌরসভার মেয়র আনোয়ার আলী বলেন, সেই ষাটের দশকে আওয়ামী লীগ পূর্ণগঠনের সময় কুষ্টিয়ার শাহ আজিজুর রহমান দলের সহ-সভাপতির দায়িত্ব পান। আর প্রায় অর্ধ শতাব্দী পর এসে কুষ্টিয়া এলাকার মানুষের এ প্রাপ্তিযোগ। এতে তো খুশি হবারই কথা। খুশিতে জেলা আওয়ামী লীগের পক্ষেও আনন্দ মিছিল করা হয়েছে। আনোয়ার আলী বলেন, দক্ষতা ও কাজের মূল্যায়ন করেই হানিফকে তার যোগ্য পদে বসানো হয়েছে। এটা আমাদের গর্বের বিষয়।
মাহবুব উল আলম হানিফ কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা উপজেলার বাহিরচর ইউনিয়নের চর দামুকদিয়া গ্রামে ১৯৫৯ সালের ২রা ফেব্র“য়ারি জন্ম গ্রহণ করেন। হানিফের পিতার নাম আলহাজ্ব মরহুম আফসার আলী। পৈতৃক সূত্রে আফসার আলী অনেক জমির মালিক ছিলেন। তিনি চাকরি করতেন রেলওয়ে বিভাগে। বংশীয়ভাবেই হানিফ আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে যুক্ত হন। ৫ ভায়ের মধ্যে তিনি সবার ছোট। বড় ভাই রবিউল আলম কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের নেতা ছিলেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জহুরুল হল শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ছিলেন। ৫ ভায়ের দ্বিতীয়টি রশিদুল আলম ’৭১ সালে কুষ্টিয়া অঞ্চলের মুজিব বাহিনীর প্রধান ছিলেন। তিনি সংস্থাপন মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব ছিলেন। বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে তাকে বাধ্যতামুলক অবসরে পাঠানো হয়। তৃতীয় ভাই শহীদুল আলম যুব পরিষদের পরিচালক ছিলেন। তিনিও রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার হয়ে একইভাবে অবসরে যেতে বাধ্য হন। ৪ নং ভাই রফিকুল আলম গ্রামে থাকেন। সবচেয়ে ছোট হলেন মাহবুব উল আলম হানিফ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ম্যানেজমেন্টে এমকম পাশ করেন তিনি। বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নকালে তিনি ছাত্রলীগের রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন। ৮২ সালে শেখ হাসিনা দেশে ফিরলে তার সাথে সক্রিয়ভাবে দলীয় কার্যক্রম শুরু করেন। আত্মীয়তার সম্পর্কের কারনে তিনি সহজেই শেখ হাসিনার ঘনিষ্ট এবং কর্মগুনে বিশ্বস্থ বিবেচিত হন। মাহবুব উল আলম হানিফ শিক্ষাজীবন শেষ করে খুলনা অঞ্চলে ঘের ব্যবসা শুরু করেন। এরপর তিনি ঢাকায় এক্সপোর্ট ইমপোর্টের ব্যবসাও করেছেন। ১৯৯৬ সালে তিনি কুষ্টিয়া -২ (মিরপুর-ভেড়ামারা) আসন থেকে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়ে নির্বাচন করে পরাজিত হন। ওই বছরেই তিনি জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক পদ পান। হানিফের যোগাযোগ ও সহযোগিতায় ১৯৯৯ সালে কুষ্টিয়া ষ্টেডিয়ামে শত শত চরমপন্থি অস্ত্রসহ তৎকালীন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিমের নিকট আত্মসমর্পন করেছিল। ২০০১ সালেও হানিফ কুষ্টিয়া-২ আসন থেকে নির্বাচন করে পরাজিত হন। ২০০৪ সালে তিনি কুষ্টিযা জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি নির্বাচিত হন। এরপর থেকে তিনি নির্বাচনী এলাকায় দলের অবস্থান মজবুত করেন। তার পক্ষে সৃষ্টি হয় ব্যাপক জনসমর্থন। কিন্তু মহাজোট গঠন হবার পর ২০০৮ সালের নির্বাচনে নৌকার নমিনেশন পান জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু। বিষয়টি হানিফ মেনে নিলেও তার সমর্থকরা মিছিল মিটিং করে প্রতিবাদ জানান। শোনা যায়, এসময় শেখ হাসিনা তাদের প্রতিশ্র“তি দিয়েছিলেন দল ক্ষমতায় গেলে তাদের নেতা হানিফকে মূল্যায়ন করা হবে। এরই বাস্তাবায়ন হলো এই যুগ্ম সাধারন সম্পাদকের পদ।
গুরুত্বপূর্ণ এ পদ পাবার পর মাহবুব উল আলম হানিফ বলেছেন, সারাদেশে দলকে আরো সু সংগঠিত করার কাজে তিনি নিজেকে নিয়োজিত রাখবেন।

কোন মন্তব্য নেই: