বৃহস্পতিবার, ১৩ আগস্ট, ২০০৯

এ রকম খবর আমরা ছাঁপতে চাই না

দেনিক সময়ের কাগজে প্রকাশিত সম্পাদক আবু বকর সিদ্দীক-এর লেখা

পেশাগত কারনে লাশ এখন উপাদেয়। লাশ মানেই পত্রিকার গরম খবর, বেশী কাটতি। অনেক চাঞ্চল্যকর তথ্য। অপরাধী ও অপরাধের সঙ্গে সংবাদের মাখামাখি। লাশের পাশে স্বজনের ছবি। কান্না ও আহাজারী। লাশের বিভৎসতা তুলে আনে খুনীর হিংস্রতা। পাঠকের চোখ, পাঠকের আগ্রহ বাড়াতে সেগুলো চাই। আরো চাই খুটিনাটি। ক্ষেতের মাঠের এবড়ো থেবেড়ো লাশ থেকে লাশ কাটা ঘরের লক্ষনের নিখুঁত হাতের কাজ, সব তথ্য পাঠকের সামনে বিশ্বাসযোগ্য করতে হবে। পত্রিকার ছবির জন্য আগেই চেকলিস্ট দেয়া হয়। ক্যামারাম্যানের হাত সাটারে, ক্লিক ক্লিক শব্দে আলো চমকায়। হাতের এক আঙ্গুল দিয়ে ঘাম মোছে, আবার ছবি তোলে।
লাশ-ঘাম পরিশ্রানত্ম হয়ে অফিসে আসে সাংবাদিক, ফটো সাংবাদিক। ক্যামেরা থেকে ছবি চলে আসে টেবিলের ল্যাপটপে। শুরু হয় সাজানোর কারুকাজ। বার বার দেখতে হয় বিভৎস দৃশ্য। মাথার ভিতর পাক দেয়। মাউসটা হয়ে পড়ে লাশ কাটা ছুরি। লাশের ছবি, দর্শনার্থীর ছবি, স্বজনের আহাজারী সব কেটে কেটে সাজাতে হয়। ল্যাপটপ রাখা টেবিলটা লাশ কাটা ঘরের লক্ষনের টেবিল।
উন্নয়ণ সাংবাদিকতার প্রশিক্ষনে বাংলাদেশের জার্মান এম্বাসীর প্রেস এন্ড পলিটিক্যাল এডভাইজার মোজতবা আহমেদ মোর্শেদ বলেছিলেন, উন্নয়ন ও সৃষ্টিশীল কাজের জন্য সাংবাদিকরা মহান, তবে নৃশংসতা ও বিভৎসতার জন্য তারা নিষ্ঠুর। কিন' মোর্শেদ ভাই জানেন না এ দেশের সম্পাদকরা সবার আগে পাঠকের চাহিদার কথা ভাবে, তাদের জন্যই তৈরী হয় পত্রিকা। প্রতিদিন ইচ্ছে করে একটি উন্নয়ন সংবাদ লিড করি। পারি না। চারদিক থেকে চেঁপে ধরে থাকে লাশ, রক্ত, ধর্ষণ, ভেজাল ঔষুধ, বাস চলাচল বন্ধ ইত্যাদি। মোর্শেদ ভায়ের উন্নয়ন সংবাদ বাতাসে ভেসে বেড়ায়, বাসত্মবে জায়গা দখল করে দেহ থেকে বিচ্ছিন্ন তিনটি মাথা।
সময়ের কাগজের সমসত্ম শরীর জুড়ে লাশের ছড়াছড়ি। এই কাগজের সম্পাদক হিসেবে নিজেকে অপরাধীদের স্বজাত মনে হয়। কষ্ট হয়। ঘুম ভাঙ্গা চোখে, সুন্দর সকালে এই কাগজ খুবই বেমানান। দিনের শুরুটা কাগজ পড়ে হওয়ার কথা । কিন' পাঠক চমকে উঠলে, কষ্ট পেলে সে কাগজ অর্থহীন। অথচ কিছুই করার নেই। মানবিবেকতা বিসর্জন দিয়ে, সকল আলো উপেক্ষা করে আমরাও নেমে পড়ি আদিম প্রতিযোগিতায়।
আমার সম্পাদনায় অন্যতম বাজে সংখ্যা সমপ্রতির তিন হত্যাকান্ড। কিন' সব থেকে বেশী প্রশংসা এসেছে। শহরের হকারগুলো প্রতিদিনের তুলনায় অনেক বেশী কাগজ নিয়েছে। ফোনে এবং দেখা হওয়া পরিচিতরা বাহবা দিয়েছে। অফিসের সংরক্ষিত কাগজেও টান পড়েছে। অথচ এ রকম খবর আমি ছাঁপতে চাইনি। মোবাইলের সকালের রিংটনে প্রতিদিন আঁতকে ওঠি। ওপ্রানত্ম থেকে এখনই কেউ বলবে- শহরের গণপূর্ত অফিসের সামনে তিনটি মাথা পড়ে আছে, ------।
;

প্রকাশিত সংবাদের উপর পাঠকের মন্তব্যঃ
হাসান জাহিদ 13 Aug 2009
অতি বাস্তব। সত্যি কথা। যেহেতু সঙবাদপত্রকে সমাজের দর্পন বলা হয় সেহেতু সমাজের চিত্রইতো সেখানে উঠে আসবে। সমাজে যদি রক্ত ঝরে কাটা মাথা থাকে তাহলে আপনি আমন ধানের সংবাদ, ফুল পাখি নিয়ে কি করে লিখবেন।

কোন মন্তব্য নেই: