সোমবার, ১৭ আগস্ট, ২০০৯

কলকাতায় বাংলাদেশী চরমপন্থী-সন্ত্রাসীদের আড্ডা নিউমার্কেটের আশপাশে : সন্ধ্যার পর তাদের আনাগোনা কস্তরী ও রাঁধুনি রেস্তোরাঁয়



মুন্সী তরিকুল ইসলাম
ভারতের পশ্চিমবঙ্গের কলকাতা নিউমার্কেটের আশপাশে এখনো পালিয়ে থাকা বাংলাদেশি চরমপন্থী-সন্ত্রাসীরা নিয়মিত আড্ডা জমাচ্ছে। আর সন্ধ্যার পর থেকে মারকুইস ষ্ট্রিটের কস্তরী রেষ্টুরেন্ট এবং ঠিক তার উল্টো দিকে মীর্জ্জা গালিব ষ্ট্রিটের রাঁধুনি রেষ্টুরেন্টে বাংলাদেশি তথা দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমের শীর্ষ চরমপন্থী-সন্ত্রাসীদের দেখা যায়। এই হোটেলগুলোতে বসেই তারা বাংলাদেশে ফোন করে নেটওয়ার্ক ঠিক রাখছে। করছে খুন-খারাবী, চাঁদাবাজি-টেন্ডারবাজি। রাঁধুনি রেষ্টুরেন্টের কর্মচারী রাজেশ দাস তো বলেই ফেললেন, ‘দাদা, তোমাদের দেশের অনেক সন্ত্রাসী আমাদের হোটেলে এসেও মাঝে মধ্যেই ঝামেলা বাধায়। অবশ্য আমরা হোটেলের শাটার বন্ধ করে পিটুনিও দিয়েছি।’ গত বছর বাংলাদেশি কয়েকজন চরমপন্থী-সন্ত্রাসী কলকাতায় গ্রেফতার হওয়ায় এই প্রবণতা বেশ কমেছে বলেও মন্তব্য রাজেশের। তবে কলকাতা পুলিশ এ ধরনের অভিযোগ অস্বীকার করেছে। মারকুইস ষ্ট্রিটের কাশ্মীরি শাল বিতানের স্বত্তাধিকারী মোহাম্মদ শাহ বললেন, এই এলাকাটা তো এক সময় বাংলাদেশি সন্ত্রাসীদের আড্ডাখানায় পরিণত হয়েছিল। এখন কিছুটা কম, তারপরও অনেক সন্ত্রাসী তার দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে আড্ডা দেয়। এরা যে বাংলাদেশি সন্ত্রাসী কীভাবে বুঝলেন, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে ফোনে যেসব কথা বলে তা শুনেই আমরা বুঝতে পারি, এরা বাংলাদেশ থেকে পালিয়ে এসেছে। কথা বলে মাস্তানি ভাষায়। টাকাও চায়। মাঝে মধ্যেই কলকাতা পুলিশ ও সিআইডি এসব এলাকায় অভিযান চালায় বলেও জানালেন মোহাম্মদ শাহ। নিউমার্কেটের দয়ারাম অ্যান্ড কোং নামের কাপড়ের দোকানের কর্মচারী সুরেশ শাহ জানালেন, বাংলাদেশের বেশ কয়েকজন সন্ত্রাসী তাদের দোকানের নিয়মিত কাষ্টমার। দোকানে বসেই তাদের সঙ্গে আলাপচারিতায় তিনি বুঝেছেন এরা বাংলাদেশি অপরাধী। কলকাতা নিউমার্কেটের খুব কাছেই এই মীর্জ্জা গালিব ষ্ট্রিট ও মারকুইস ষ্ট্রিট। বাংলাদেশি মানুষ কলকাতায় এলে সাধারণত এই এলাকায়ই ওঠেন। প্রতিনিয়ত এখানে কমবেশি বাংলাদেশিকে দেখা যায়। তাই এখানকার মানুষ বাংলাদেশিদের খুব ভালোভাবেই বোঝেন, চেনেন। তারা চেহারা দেখলেই বা কথা শুনলেই বুঝতে পারেন কে ভালো মানুষ আর কে বাংলাদেশ থেকে পালিয়ে আসা সন্ত্রাসী। বিভিন্ন সময় কলকাতায় যাওয়া বাংলাদেশ সিআইডিসহ আইন প্রয়োগকারী প্রতিনিধি দলের সদস্যরাও কলকাতা সিআইডি পুলিশকে এ ধরনের তথ্য দিয়েছেন। এমনকি বাংলাদেশের পুরস্কার ঘোষিত শীর্ষ সন্ত্রাসী সুব্রত বাইন (কলকাতার নাম ফতে আলী) এখন বালিগঞ্জে শোবিজের এক নামকরা নায়িকার সঙ্গে চুটিয়ে প্রেম করছে। ওই নায়িকার সঙ্গে তাকে মাঝে মধ্যেই দেখা যায় বলেও কলকাতা সাংবাদিকদের মধ্যে চাউর রয়েছে। এছাড়া ঢাকার মিরপুরের শাহাদত আর খোরশেদ, কুষ্টিয়ার আলোচিত অপরাধীদের অনেকেই তো এ সব এলাকাতেই অবস্থান করছে। কুষ্টিয়ার আলোচিত ভয়ংকর একটি চরমপন্থী সংগঠনের শীর্ষ এক নেতা গত বছর পশ্চিমবঙ্গে পুলিশের হাতে গ্রেফতার হয়। নাম বদল করে সে হয়ে যায় দেবা ঘোষ। সেখানকার রেশন কার্ডেও তার ছদ্মনাম থাকায় সেযাত্রায় গ্রেফতারের পর কিছুদিন হাজতবাস করলেও বাংলাদেশ থেকে বেশ কয়েকবার যোগাযোগ করে র‌্যাব তার হদিস মেলাতে পারেনি। এভাবে এদেশের অনেক শীর্ষ অপরাধী ভারতে আটক হলেও শুধুমাত্র নাম বদল এবং সেদেশের একটি বাম রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতাদের সাথে ঘনিষ্ট সম্পর্ক থাকায় বার বার ছাড়াও পেয়ে যাচ্ছে।
সেখানকার একজন সাংবাদিক এ প্রতিবেদককে জানালেন, তোমাদের দেশের কোনো রাজনৈতিক নেতা বা সন্ত্রাসী এখানে কাদের সঙ্গে আড্ডা দেয় তার খবর আমরা রাখি। ওই সাংবাদিকের মতে, কলকাতা পুলিশ এখন বাংলাদেশি সন্ত্রাসীদের গ্রেফতারে অভিযান চালানোয় কেউ কেউ কলকাতা ছেড়ে একটু দূরে অবস্থান নিয়েছে। কিন্তু তারপরও কলকাতায় তারা নিয়মিত আসা-যাওয়া করে। অবশ্য অনেকেই কলকাতা শহরে ঘাপটি মেরে অবস্থান করছে। গত বছর বাংলাদেশ থেকে যাওয়া প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৈঠকে কলকাতা সিআইডি অবশ্য এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছে। তারা দাবি করেছেন, কলকাতার যেখানেই বাংলাদেশি অপরাধীদের দেখা যায় সেখানেই অভিযান চালানো হচ্ছে। এভাবেই গ্রেফতার করা হয়েছে পুরস্কার ঘোষিত শীর্ষ সন্ত্রাসী খন্দকার তানভিরুল ইসলাম জয়, হারিস আহমেদ ওরফে হারেস এবং সানজিদুল ইসলাম ইমন ও ডাকাত শহীদ ওরফে কিলার শহীদকে। তবে কলকাতায় নয়, সুব্রত বাইন এখন দুবাইয়ে অবস্থান করছে এমন তথ্য রয়েছে কলকাতা পুলিশের কাছে। এখন আর কলকাতায় বাংলাদেশি সন্ত্রাসী খুব একটা নেই বলেও দাবি কলকাতা সিআইডির।
লেখক : সাংবাদিক

২টি মন্তব্য:

Unknown বলেছেন...

তরিকুল শালা তো সন্ত্রাসীদের দালাল। ঐ শালা ওখানে কার বাল ছিড়তে গিয়েছিল। ঐ সন্ত্রাসীদের কাছ থেকে বখরা নিতে গিয়েছিল

Unknown বলেছেন...

nostoder dokhola sobkichu