বৃহস্পতিবার, ২০ আগস্ট, ২০০৯

২১ আগষ্ট গ্রেনেড হামলায় নিহত মাহবুবকে নিয়ে গর্ব করা ছাড়া কিছুই অবশিষ্ট নেই পরিবারের



ই-বার্তা : ঢাকার বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে সেদিন চলছিল তৎকালীন বিরোধীদল আওয়ামীলীগের সন্ত্রাস বিরোধী জনসভা। আর সেখানেই মুড়ি মুড়কির মতো ফাটতে থাকে বোমা। কয়েক মুহুর্তের মধ্যেই সভাস্থল পরিনত হয় মৃত্যুপুরীতে। চারিদিকে ধোয়াটে অন্ধকার। নিশ্বাস বন্ধ হয়ে যাবার মতো বারুদের গন্ধ। ধুম ধাম বোমার আওয়াজ মিলিয়ে গেলেও হামলাকারীদের শেষ অস্ত্র বন্দুক আর রাইফেলের গর্জন চলছিল তখনও। এর মধ্যেই প্রাণপ্রিয় নেত্রীকে বুলেট থেকে আড়ালে রেখে এগিয়ে গেলেন মাহবুব। নেত্রীকে বুলেটপ্র“ফ মার্সিডিস বেঞ্চের ভেতর ঠেলে দিয়েই লুটিয়ে পড়লেন রাজপথে। যেন সব দায়িত্ব শেষ, তার প্রয়োজনও ফুরিয়ে গেছে। নেত্রীকে টার্গেট করে ছুটে আসা অসংখ্য বুলেটের একটি বিদ্ধ হয়ে তৎক্ষনাত নিভে যায় মাহবুবের জীবন প্রদীপ। যে বুলেটটি তাকে স্পর্শ না করলে কেড়ে নিতে পারতো শেখ হাসিনার জীবন।
পেশার জন্য জীবনবাজি রাখা গর্বিত ওই মাহবুবের বাড়ি কুষ্টিয়া জেলায়। সেখানকার খোকসা উপজেলার ফুলবাড়িয়া গ্রামে। মাহবুব একটি ইতিহাস, দায়িত্ববান, কর্তব্যপরায়ন ও সাহসীদের আদর্শ। মাহবুবের এ জীবনবাজিতে আজো গর্বিত ওই গ্রামবাসী। কিন্তু মাহবুবের এ বেদনাদায়ক অনুপস্থিতি তার পরিবারকে কঠিন বাস্তবতার মুখোমুখি দাড় করিয়েছে। ওই দরীদ্র পরিবারে ৫ বছরেও মাহবুবের অভাব পুরন হয়নি। আর কোনদিন তাদের সংসার থেকে এ অভাব যাবে না এ ব্যাপারে নিশ্চিত মাহবুবের হতভাগা পিতা হারুন অর রশীদ। তার পরিবারে একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি ছিলেন মাহবুব। পাঁচবছর অনেক লম্বা সময় হলেও মা হাসিনা বেগম যেমন আজো এক মুহুর্তের জন্যও মাহবুবকে ভুলতে পারছেন না, তেমনি কোনভাবেই কাটছেনা তাদের আর্থিক অনটন। মাহবুবকে নিয়ে গর্ব করা, অভাব অনটনের সাথে লড়াই করা আর কান্নায় গাল ভাসানো ছাড়া কিছুই অবশিষ্ট নেই তাদের। মাহবুবের মা বার্ধ্যক্যজনিত অসুস্থ। সারা দেহে তার ব্যাথা। গ্যাষ্ট্রিকের সমস্যাও প্রকট। সবসময় বিছানায় পড়ে কেদে সময় কাটান। নেত্রীর সুপারিশে ঢাকা নবীনগরের একটি গার্মেণ্টস্-এ মাহবুবের বড় ভাই শাজাহানের চাকরি হয়েছিল। কিন্তু কপাল পোড়া গার্মেন্টসটি বন্ধ হয়ে গেছে। তিনি এখন এলাকায় ভ্যান চালান। ছোট ভাই জাহাঙ্গীর আলম সংসারের প্রয়োজনে কখনও ভ্যান চালিয়েছেন, কখনও অন্যের দোকানে কাজ করেছেন। বর্তমানে সে অন্যের জমিতে কামলা খাটেন। সবচেয়ে ছোট ভাই ঢাকা গুলশানের একটি ইন্টারন্যাশনাল হোটেলে চাকরি পেয়েছিলেন। ওয়ান ইলেভেনের পর ওই হোটেলের মালিকের সাথে আওয়ামী লীগের দুরুত্ব সৃষ্টি হলে চাকরি চলে যায় তার। তারপর অন্যত্র চেষ্টা তদবির করে এলাকায় চলে আসেন তিনি। এখন তিনিও ভ্যান চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করেন।
মাহবুবের ৫ বোনের মধ্যে তিনজনের বিয়ে হয়ে গেছে। ছোট দুই বোন আবিদা সুলতানা বিউটি ও শিরিন আক্তার স্থানীয় ধোকড়াকোল কলেজ থেকে এইচএসসি পরীক্ষা দিয়ে ফেল করেছেন। তারা এখন ঢাকায় গার্মেন্টেস-এ চাকরির জন্য ঘুরছেন। তাদের লেখাপড়ার খরচের জন্য প্রতিমাসে বঙ্গবন্ধু স্মৃতি ট্রাষ্ট থেকে ১ হাজার করে টাকা দেয়া হতো। ওয়ান ইলেভেনের পর ওই ট্রাষ্টের ফান্ড ক্লোজ করা হলে টাকা দেয়া বন্ধ হয়ে যায়। আর চালু হয়নি তাদের জন্য ওই টাকা। টাকার অভাবে তাদের প্রায়ই কলেজ যাওয়া হতোনা। যে কারনে তাদের এই ফল বিপর্যয় বলে তার মায়ের দাবি। খবর ই-বার্তা’র।

অন্যদিকে মাহবুবের কথা মনে হলেই ফুপিয়ে কেঁদে ওঠেন স্ত্রী শামীমা আক্তার আসমা। আচমকা এক ঝড়ে ভেঙে গেছে তার সাজানো সুখের সংসার। দু’ছেলে আশিক আর রবিনের ভবিষ্যৎ ভাবনা আর চোখের জ্বলে দিন কাটে তার। মাহবুব মারা যাওয়ার পর দু’সন্তানকে নিয়ে আসমাকে ঢাকা ছাড়তে হয়েছে। ফিরে আসেন কুষ্টিয়ায়। শহরের কোর্টপাড়ার গোসালা রোডের ভাড়া করা বাসায় থাকেন। তার বড় ছেলে আশিকুজ্জামান আশিক এবার কুষ্টিয়া জিলা স্কুল থেকে এসএসসি পরীক্ষা দিয়ে ফেল করেছে। ছোট ছেলে আশরাফুল আনাম রবীন ওই স্কুলের সপ্তম শ্রেণীর ছাত্র। আসমা বলেন, ওদের শিক্ষা ব্যয় হিসেবে বঙ্গবন্ধু স্মৃতি ট্রাষ্ট থেকে প্রতিমাসে যে দু’হাজার করে টাকা দেয়া হতো শেখ হাসিনা গ্রেপ্তার হবার পর তা বন্ধ হয়ে যায়। তিনি গত সোমবার ঢাকায় গেছেন। শেখ হাসিনার সাথে দেখা করার ইচ্ছায়। ই বার্তাকে আসমা বলেন, ৯মাস টাকা বন্ধ থাকায় ছেলেদের লেখাপড়ার খরচ ঠিকমতো দিতে পারিনাই। মাসে দুইবার মাত্র মাছ খাওয়াতে পেরেছি বাচ্চাদের। এই সময়ে বোনের কাছ থেকে টাকা নিয়ে সংসার চালিয়েছি। ওই সময় কোন রাজনীতিবিদই খবর নিতে আসেনি। তিনি বলেন, পেনশনের সামন্য টাকা আর শেখ হাসিনার দেয়া ২লাখ টাকার ব্যাংক মুনাফা দিয়ে চলাই দায় হয়েছে।
আসমা চান খোকসা উপজেলা আওয়ামীলীগ মাহবুবের স্মরণে স্মৃতি ভাস্কর্য নির্মাণের যে প্রতিশ্র“তি দিয়েছিল তার বাস্তবায়ন হোক। তার দাবী ফুলবাড়ীয়া গ্রামে কবরস্থানে যেখানে মাহবুবকে দাফন করা হয়েছে সেখানে তার স্মৃতির জন্য কিছু একটা করা হোক। কবরের গায়ে লেখা উঠে গেছে।
এক মাহবুবের মৃত্যু বদলে দিয়েছে ওই পরিবারের ১৩ সদস্য’র জীবনচিত্র। দুমড়ে মুচড়ে গেছে এদের রঙিন স্বপ্ন। মাহবুবের বাবা ই বার্তাকে বলেন, বিভিন্ন হত্যাকান্ডের বিচার করতে এ সরকারের কার্যকরী উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে। এদের নিকট থেকে আমার ছেলে হত্যার বিচারের আশা করেছিলাম। কিন্তু কোন কিছুই তো হলো না। এখন আল্লাহর উপর ছেড়ে দিয়েছি। আর বিচার হয়েই বা আমার কি হবে। আমার যা হবার তা হয়ে গেছে-বলেই কেদে ফেলে অশীতিপর এই বৃদ্ধ। তিনি বলেন, কেউ আজ আমাদের খবর নেয়না। মৃত্যুদিবসে একটি মিলাদের আয়োজন করতেও তাকে অন্যদের দিকে হাত পাততে হচ্ছে। এবার উপজেলা যুবলীগ তার সাথে যৌথভাবে মিলাদ ও আলোচনা সভার আয়োজন করছে। তবে স্থানীয় জয়ন্তী হাজরা ইউনিয়ন পরিষদের উদ্যোগে এ উপলক্ষে নানা কর্মসূচী পালনের আয়োজন করা হয়। সে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি থাকার কথা ছিলো স্থানীয় এমপি সুলতানা তরুনের। কিন্তু সম্প্রতি কুষ্টিয়ার আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির চরম অবনতি ঘটলে নিরাপত্তাজনিত সবুজ সংকেত না পাওয়ায় সে কর্মসূচী বাতিল করা হয়েছে।
মাহবুবের বাবা বলেন, আশাই ছিলাম শেখ হাসিনা ক্ষমতায় বড় ধরনের কোন সহযোগিতা পাবো। এখনো ৮০ হাজার টাকা ঋণের বোঝা নিয়ে চলছে আমার সংসার। ঋনের কথা মনে হলে রাতেও ঘুম হয়না। আর্থিকভাবে অক্ষম হয়ে পড়া এ পরিবারটি হারিয়েছেন জীবিকার বড় সম্বলকে। শুধু তাই নয় এ অসহায় পরিবারের মানুষগুলোর দূর্ভাগ্য পিছু ছাড়েনি।
মাহবুবের বাবা হারুন মোল্লা (৬৮) এখন ছেলে হারানোর শোক আর বয়সের ভারে নেতিয়ে পড়েছেন। একটু এদিক সেদিক হাটাহাটি করেন আর মাহবুবের ঘরে গিয়ে বসে থাকেন। প্রায়ই অসুস্থ্য থাকেন, কিন্তু থাকেনা ঔষধ কেনার অর্থ। মাহবুবের মা হাসিনা বেগম অধিকাংশ সময় বিছানাতেই থাকেন। নিস্পলক চোঁখে চেয়ে থাকেন ঘরে টানানো বঙ্গবন্ধু আর মাহবুবের ফ্রেমে আটা ছবির দিকে। এদের ৫ ছেলে ৫ মেয়ের মধ্যে মাহবুব ছিলো দ্বিতীয়। ছোট বেলা থেকেই সে ছিলো নিরীহ ও শান্ত প্রকৃতির। সৎ ও সঞ্চয়ী ছিলো। মাহবুবের পিতা বলেন, কখনই সিগারেটেও টান দেয়নি ও। সংসারের জন্য সব সময় ভাবতো। তবে পড়াশুনায় খুব মনোযোগী ছিলো সে। গ্রামের স্কুলেই পঞ্চম শ্রেণীর পড়া শেষ করেন মাহবুব। এরপর ভর্তি হন পাশ্ববর্তি বাহাদুরপুর হাইস্কুলে। সেখান থেকে এসএসসি পাশ করার পর মাহবুবের মাথায় আসে দরিদ্র সংসারের চিন্তা। ওই চিন্তাতেই কলেজে পড়া হয়নি তার। মাহবুবের পিতা বলেন, ওর মাথায় একটা কিছু ঢুকলে আর সহজে বের হতো না। যাই করতো খুব মনোযোগ দিয়ে করতো। সংসারের চিন্তায় মাহবুব সে সময় ঝুঁকে পড়েন চাকরির দিকে। ১৯৮৬ সালে তিনি এক সেনা কর্মকর্তার বাড়িতে মাত্র ৬‘শ টাকা বেতনে চাকরি নেন। কয়েক মাস এখানে কাজ করার পর চেষ্টা করেন সেনাবাহিনীর সৈনিক পদে চাকরির জন্য। প্রথমবার ব্যর্থ হলেও দ্বিতীয় বার ১৯৮৭ সালে টিকে যান। চাকরিতে তিনি নিজেকে ড্রাইভার হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেন। সেনাবাহিনীর ৫১ বেঙ্গলে যোগ দিয়ে কৃতিত্বের স্বাক্ষর রাখার পুরস্কার হিসেবে সরকার ২০০০ সালে মাহবুব জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী বাহিনীতে সুযোগ পান। সেখানে ইরাক-কুয়েত অবজারভেশন (ইউনিকম) মিশনেও সে এক বছর নির্ভীক সেনা হিসেবে নিষ্ঠার সাথে দায়িত্ব পালন করেন। ২০০২ সালে ল্যান্স করর্পোরাল থাকা অবস্থায় চাকরী থেকে স্বেচ্ছায় অবসর নেন মাহবুব। চলে আসেন গ্রামে। সেখানে এসে জীর্ণ বাড়ীতে একটি টিনের ঘর তোলেন। উঠানে বসান বিশুদ্ধ খাবার পানির টিউবওয়েল। গ্রামে এসে ব্যবসা শুরু করেন মাহবুব। চেয়েছিলেন পরিবারের জন্য আরো কিছু করতে। কিন্তু নিষ্ঠুর নিয়তি আর কিছুই করতে দেয়নি তাকে। ব্যবসা করার সময় বিভিন্ন পর্যায়ে যোগাযোগ রাখতে থাকেন মাহবুব। বঙ্গবন্ধুভক্ত পরিবারের ছেলে মাহবুব ২০০২ সালেই যোগদেন বিরোধী দলীয় নেত্রী শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত দেহরক্ষী হিসেবে। এরপর থেকেই মাহবুবের ধ্যান-জ্ঞান হয়ে ওঠেন নেত্রী। নেত্রীকে তিনি আপা বলে ডাকতেন। ব্যবহার, আচার, ভদ্রতা আর অসম্ভব দায়িত্বশীলতার কারণে মাহবুব অন্যসব দেহরক্ষীদের চেয়ে আস্থাভাজন হয়ে পড়েন নেত্রীর। দায়িত্বকালে সে নেত্রীর খুব কাছাছাছি থাকতো। এ প্রসঙ্গে মাহবুবের মা হাসিনা বেগম ই বার্তাকে বলেন, একবার আম নিয়ে এসে মাহাবুব বলে, আপা আম দিয়েছে মা খাও। ও যতক্ষন বাড়ীতে থাকতো শুধুমাত্র আপার (শেখ হাসিনা) কথাই বলতো। বলতো নিজের জীবন দিয়ে হলেও দেখো নেত্রীকে রক্ষা করবো। আমার ছেলে জীবন দিয়ে ওর কথা রেখেছে।
স্ত্রী আসমা বলেন, ঢাকার বাসাতেও খুবই কম সময় থাকতো মাহবুব। খাওয়া হলেই ছুটতো সুধা সদনের দিকে। বলতো ওখানে গিয়েই বিশ্রাম করি। হাসিনা আপা ওকে একটি ঘড়ি দিয়েছিলেন। ক’দিন পরেই তা যতন করে তুলে রেখেছিল ও। গ্রেনেড হামলার দিন ঘড়িটি ওর হাতেই ছিল। কিন্তু পরে আর তা পাওয়া যায়নি। আসমা তার দু’পুত্র সন্তানকে নিয়ে এখন কুষ্টিয়া শহরের গোশালা সড়কের একটি ভাড়া বাসায় থাকেন। ২১শে আগষ্টের কথা বলতে গিয়ে তিনি বারবার কান্নায় ভেঙে পড়েন। বলেন, দুপুরে খাবার খেতে এসে ওইদিন খুব তাড়াহুড়ো করছিল ও। বলেছিল, আজ আপার একটা বড় প্রোগ্রাম আছে। এক্ষুনি যেতে হবে। খাবার খেয়ে দুইটার দিকে বাড়ী থেকে বের হয়। এর আগে বড় ছেলের স্কুলের পড়া দেখিয়ে দেয়। বলে রাতে ফিরে ধরবো। কিন্তু রাতে আর ফেরা হয়নি তার। আমি ওইদিন টিভির খবর দেখিনি। বিকেল সাড়ে ৫ টার দিকে জানতে পারলাম আপার অনুষ্ঠানে গ্রেনেড হামলা হয়েছে। অনেকেই মারা গেছে। খবর পেয়ে দু’ছেলেকে বাসায় রেখে রিক্সায় সুধা সদনে যাই। আসমা কাঁদতে কাঁদতে বলেন, এর আগে একদিন সুধা সদনের সামনে গন্ডগোল হয়েছিল। সেদিনও আমি রিক্সায় গিয়েছিলাম। খবর দিতেই একগাল হাসি নিয়ে বেরিয়ে এসে মাহবুব বলেছিল “পাগলী আমার কিছু হবে না আমি ঠিক আছি, তুমি বাসায় যাও”। এদিনও ভেবেছিলাম খবর দিলেই ও বেরিয়ে আসবে। কিন্তু সুধা সদনের সবাই আমার সাথে লুকোচুরি খেলতে থাকে। এদের আচরণ রহস্যময় মনে হয়। আমাকে ভেতরে নিয়ে যায়। শেখ হাসিনার পাশে গিয়ে বসি। উনি বলেন, মাহবুবের গুলি লেগেছে ওকে হাসপাতালের অপারেশন থিয়েটারে রাখা হয়েছে। আমি তখনি হাসপাতালে যেতে চাই। কান্নাকাটি শুরু করি। এরপর রাত ১০টার দিকে যখন জানতে পারলাম মাহবুব ঘটনাস্থলেই মারা গেছে তখন গাড়ীতে করে আমাকে বাসায় দিয়ে আসা হয়। বলতে বলতে আবার অঝোরে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন আসমা। বেশ কিছুক্ষণ পর কান্না থামিয়ে বলেন, ওকে আমি প্রায়ই বলতাম চাকরি ছেড়ে দাও। এটা ঝুঁকির চাকরি। ও তখন বলতো, মানুষ তো এক্সিডেন্ট করেও মারা যায়। আল্লাহ মৃত্যু রাখলে বাঁচাবে কে ? এসব বলে বোঝাতো। এখন এতিম হয়েছে মাহাবুবেব দু’ছেলে আশিক আর রবিন। ওদের নিয়ে আমি কি করবো। আসমা বলেন, শেখ হাসিনা তাকে যথেষ্ঠ সাহায্য-সহযোগিতা করছেন। মাহবুবের মৃত্যুর পর বঙ্গবন্ধু স্মৃতি ট্রাষ্ট থেকে নগদ ২ লাখ টাকা দিয়েছেন। প্রথম তিন মাসে মাহাবুবের বেতন পুরোটাই দিতো। আসমা বলেন, হাসিনা আপা কথা দিয়েছেন দু’ ছেলে লেখাপড়া শিখলে ভাল চাকরি দেবেন।
মাহবুবের বাবা হারুন মোল্লা বারবার রেগে যাচ্ছিলেন। বললেন আপনারা বারবার এসব লিখে কি করেন। এতে আপনাদেরই বা কি লাভ হয় আর আমারই বা কি হয়। তিনি বলেন, এ ছেলে ছিলো আমার গর্ব। মৃত্যুতেও ও আমাকে একদিকে গর্বিত করে গেছে অন্যদিকে ফকির করে গেছে।

কোন মন্তব্য নেই: