রবিবার, ১১ এপ্রিল, ২০১০

শীর্ষ চরমপন্থী শাহিন ভারতে গ্রেফতার...!


কুষ্টিয়া পুলিশের তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসী গণমুক্তিফৌজের শীর্ষস্থানীয় নেতা শাহীন (৩৮)কে ভারতে আটক করা হয়েছে বলে জানা গেছে। পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের উত্তর চব্বিশ পরগনা জেলার বনগাঁ থানার পুলিশ তাঁকে গত শনিবার গভীর রাতে আটক করে। সেখানকার পুলিশ বিষয়টি অনানুষ্ঠানিকভাবে নিশ্চিত করলেও এ ব্যাপারে আনুষ্ঠানিক কোনো বক্তব্য দেয়নি। বিভিন্ন সূত্রে পাওয়া খবরে জানা গেছে, বনগাঁ থানার এসডি শ্যামেন্দ্রনাথের নেতৃত্বে পুলিশের বিশেষ একটি দল নদীয়া জেলার শান্তিপুরের পাঁচপোতা গ্রামের মিকাইল নামের এক ব্যক্তির বাড়ি থেকে তাকে আটক করে। কুষ্টিয়া পুলিশ সুপার শাহাবুদ্দিন খানও শাহিন আটকের বিষয়টি নিশ্চিত হয়েছেন বলে জানিয়েছেন। ভারতের ওই স্থানে সে সোহেল আহম্মেদ মন্ডল ওরফে দিপু পরিচয়ে গত কয়েক মাস ধরে বসবাস করে আসছিলো। আটক করার আগে তিনি ঘুমিয়ে ছিলেন বলে জানা গেছে। এ সময় তাঁর কাছ থেকে দুটি মুঠোফোন ও বেশ কয়েকটি সিম জব্দ করা হয়। শাহীন দীর্ঘকাল যাবত তাঁর পরিচয় গোপন করে ‘সোহেল আহমেদ মন্ডল ওরফে দীপু’ নামে সেখানে বাস করে আসছিলেন। তাঁর বাড়ি বাংলাদেশের কুষ্টিয়া শহরের কালিশংকরপুরে। কুষ্টিয়া জেলা পুলিশের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘ভারতের বনগাঁ থানার পুলিশ সোহেল আহমেদ ওরফে দীপু নামে এক বাংলাদেশিকে আটক করেছে বলে আমরা জেনেছি। তিনি শাহীন বলেই একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে।’ শাহিন দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের শীর্ষ চরমপন্থী সংগঠন গণমুক্তিফৌজের সামরিক শাখা প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছে। সোহেল আহমেদ ওরফে দীপুর নামে বনগ্রাম থানায় দুইটি হত্যাসহ একাধিক মামলা রয়েছে। বাংলাদেশে কুষ্টিয়াঞ্চলের বিভিন্ন থানায় শাহিনের বিরুদ্ধে হত্যাসহ প্রায় দুই ডজন মামলা ও অর্ধশতাধিক জিডি রয়েছে। বাংলাদেশ পুলিশের মোষ্ট ওয়ান্টেড শাহিন কুষ্টিয়ার শহরের কালিশংকরপুরের সুলতান রুমীর পুত্র।
কে এই শাহিন :বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, শাহিনের গ্রামের বাড়ি ঝিনাইদহ জেলার শৈলকুপা থানা কৃত্তিনগর গ্রামে। তার পিতা কুষ্টিয়া পশু হাসপাতালে চাকুরী করতেন। এই সুবাদে কুষ্টিয়ার শহরের কালিশংকরপুর জামতলা মোড়ে নিজেরা বাড়ি তৈরী করে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করে শাহিনের পরিবার। এসএসসি পাশ করার পর শাহিন ভর্তি হয় যশোর পলিটেকনিক্যাল ইন্সটিটিউটে। একবছর পর সেখান থেকে বদলী হয়ে আসে কুষ্টিয়া পলিটেকনিক ইন্সটিটিউটে। পাওয়ার বিভাগের ছাত্র শাহিন ১৯৯৮ সালে কুষ্টিয়া পলিটেকনিক ইন্সটিটিউটের ছাত্র সংসদের নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ভিপি নির্বাচন করেন। অল্প ভোটের ব্যবধানে পারাজিত হন শাহিন। স্থানীয় সামাজিক দ্বন্দ্ব, তার পরিবারের সদস্যদের ওপর এলাকার সন্ত্রাসীদের নির্মম অত্যাচার শুরু হয়, শাহিনের মায়ের ওপর সন্ত্রাসীদের হামলা, তার বাড়ি ঘর লুটপাটের ঘটনার প্রতিশোধ নিতে ছাত্র থেকে রাতারাতি শীর্ষ সন্ত্রাসী হয়ে ওঠে শাহিন। এলাকায় গড়ে তোলে বিশাল এক সন্ত্রাসী বাহিনী। একদিকে নসু-শাহিন বাহিনী অপরদিকে সিরাজ বাহিনী। এই দুই বাহিনীর কোন্দলে একের পর এক খুনের ঘটনা ঘটতে হতে থাকে কালিশংকপুর এলাকায়। অল্প দিনের মধ্যে অপরাধ জগতের মুকুটহীন সম্রাট বনে যায় শাহিন। ১৯৯৯ সালে কুষ্টিয়া ষ্টেডিয়ামে তৎকালীন স্বরাষ্টমন্ত্রী নাসিমের কাছে অস্ত্র জমা দিয়ে আত্মসমর্পন করে শাহিন। এরই মধ্যে খুন হয় নসু। নসু খুনের প্রতিশোধ নিতে আবারও মরিয়া হয়ে ওঠে শাহিন রুমী। তাত্ত্বিক কমিউনিষ্ট নেতা মীর ইলিয়াস হোসেন দিলীপের হাত ধরে শাহিন যোগ দেয় শ্রমজীবী মুক্তি আন্দোলনে। কিছুদিনের মধ্যে সামরিক শাখার প্রধান বনে যায়। কালিশংকরপুরের আক্তার, আড়–য়াপাড়ার আল হেলাল মদন, হরিশংকরপুরের রফিক, ভাটা পাড়ার হেরোইন সম্রাজ্ঞী আলেয়া, ঠিকাদার নান্নু, ফয়েজ, জামু, হাবিব, সন্ত্রাসী মানু, সুলতান ,কালিশংকরপুরের শফি, জাসদ নেতা জামাই বাবুসহ প্রায় অর্ধশতাধিক মানুষ খুন হয়েছে শাহিনের নেতৃত্বাধীন গণমুক্তিফৌজ ক্যাডারদের হাতে। অপরাধের তুলনায় শীর্ষ এই চরমপন্থী নেতা নামে মামলার সংখ্যা অনেক কম বলে পুলিশ জানিয়েছে। জামাত বিএনপি জোট সরকারের মাঝামাঝি সময় থেকে এ পর্যন্ত ক্রসফায়ারে শাহিনের প্রায় আাড়াইশ ক্যাডার নিহত হয়েছে। ক্রসফায়ার চালু হলে শাহিন অবস্থা বেগতিক দেখে ভারতে পাড়ি জমায়। সেখান থেকেই তিনি নিয়ন্ত্রন করতেন দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের আন্ডার্রওয়াল্ড। টেন্ডারবাজিকে তিনি একমাত্র অর্থ উপার্জন মাধ্যম হিসেবে গ্রহন করেন। কুষ্টিয়া ঝিনাইদহ জেলার সকল সরকারী দপ্তরের টেন্ডার গণমুক্তিফৌজের নিয়ন্ত্রনে। সম্প্রতি গণমুক্তিফৌজের প্রধান আমিনুল ইসলাম মুকুল ভারতে গ্রেফতার হন। বর্তমানে তিনি ভারতের কারাগারে রয়েছেন। মুকুল গ্রেফতারের পর থেকে শাহিন নদীয়া জেলার ওই গ্রামে বসবাস করতো বলে জানা গেছে। এর আগেও গত বছর শাহিনকে ভারতে পশ্চিমবঙ্গের বনগ্রাম থানা পুলিশ গ্রেফতার করে। অল্পদিনের মধ্যে তিনি সেখান থেকে জামিনে বেরিয়ে যান।

কোন মন্তব্য নেই: