সোমবার, ২২ ফেব্রুয়ারী, ২০১০

হাবিবুল বাশারের বিদায় কেমন হবে


হাবিবুল বাশার ক্রিকেট থেকে বিদায় নিচ্ছেন। ৮ ফেব্রুয়ারি খুলনা-চট্টগ্রামের ম্যাচের প্রথম দিন সেঞ্চুরির পর যখন দর্শক অভিনন্দনের জবাব দিতে দিতে বেরিয়ে আসছিল, তখনো হয়তো সিদ্ধান্ত নেননি বিদায়ের। আনুষ্ঠানিকভাবে এখনো জানান নি। জাতীয় লিগের ওই ম্যাচের পর বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) সঙ্গে কথা বলেছেন হাবিবুল। সেখানেই নিজের সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছেন তিনি। বিসিবি পরিচালক এবং মিডিয়া কমিটির চেয়ারম্যান জালাল ইউনুস বলেছেন 'সুমন (হাবিবুল বাশার) আমার সঙ্গে কথা বলেছে। জানিয়েছে, সে আর খেলাটি চালিয়ে যেতে চায় না। সে যেহেতু দীর্ঘদিন জাতীয় দলের অধিনায়ক ছিল, তাকে তাই আমরা মাঠ থেকে বিদায়ের ব্যবস্থা করব। ইংল্যান্ডের সাথে চলতি সিরিজের কোনো একদিন সেই ব্যবস্থা করা হবে।' হাবিবুলও হয়তো অপেক্ষায় আছেন সেই মুহূর্তের। তাই তো এখনই মুখ ফুটে কিছু বলছেন না। তবে আজ থেকে শুরু হওয়া খুলনার ম্যাচটিতে না খেলার কথা ঠিকই জানিয়েছেন তিনি, 'ফিটনেসের কারণে এই ম্যাচটি আমি খেলছি না। আর ক্রিকেটকে বিদায় জানাব কি না, সেই বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিইনি। তবে ধরে নেয়া হচ্ছে চট্টগ্রামের বিপক্ষে ১০৩ রান হয়ে থাকছে তাঁর ক্যারিয়ারের শেষ ইনিংস। এমন শেষটা আসলে প্রাপ্যই হাবিবুলের। ক্রিকেটকে তো আর কম দেননি তিনি। জাতীয় দলের অধিনায়ক এবং ব্যাটসম্যান_দুই ভূমিকায়ই দারুণ সফল। ৫০ টেস্টের ৯৯ ইনিংসে করেছেন ৩০২৬ রান। সর্বোচ্চ ১১৩, গড় ৩০.৮৭। সেঞ্চুরি তিনটির পাশাপাশি আছে ২৪টি হাফ সেঞ্চুরি। ফিফটির এই বহরের কারণে তো একসময় হাবিবুলের নামই হয়ে গিয়েছিল 'মিস্টার ফিফটি'। ওয়ানডেতে ১১১ ম্যাচে ২১৬৮ রান করেছেন ২১.৬৮ গড়ে। কোনো সেঞ্চুরি না থাকলেও আছে ১৪টি হাফ সেঞ্চুরি। আর ফার্স্ট কাস ক্রিকেটে ৯১ ম্যাচে সাত সেঞ্চুরি ও ৪১ হাফ সেঞ্চুরির অলংকারে হাবিবুলের রান ৫৫৭১। পরিসংখ্যানে সফল এক ব্যাটসম্যানেরই প্রতিচ্ছবি। একই রকম সফল তিনি অধিনায়কত্বেও। ২০০৪ সালে জিম্বাবুয়ে সফরের আগে জাতীয় দলের দায়িত্ব নিয়েছিলেন। ২০০৭ সালে ভারতের বিপক্ষে সিরিজ পর্যন্ত হাবিবুলের নেতৃত্বে সাকুল্যে ১৮টি টেস্ট খেলেছে বাংলাদেশ। এর মধ্যে এক জয় ও চার ড্রয়ের বিপরীতে হার ১৩টিতে। ২০০৫ সালে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে বাংলাদেশের প্রথম টেস্ট ও সিরিজ জয় এসেছিল হাবিবুলের অধিনায়কত্বেই। ওয়ানডেতেও বাংলাদেশের সফলতম অধিনায়ক তিনি। নেতৃত্ব দেওয়া ৬৯টি ম্যাচের মধ্যে বাংলাদেশ জিতেছে ২৯টিতে। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের এবড়ো-থেবড়ো পথে চলা একটি দলের জন্য এটি কম তো নয়! শুধু জিম্বাবুয়ে-কেনিয়া নয়, এ সময় ভারত (দুবার), অস্ট্রেলিয়া, শ্রীলঙ্কা, দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষেও জিতেছে বাংলাদেশ। ২০০৭ বিশ্বকাপে তো হাবিবুলের নেতৃত্বে বাংলাদেশ উঠে গিয়েছিল সুপার সিক্স পর্বেই! ওই বিশ্বকাপের পর থেকেই আসলে শুরু হয় ব্যাটসম্যান হাবিবুলের অধোগতি। ভারতের বিপক্ষে সিরিজের পর হারান অধিনায়কত্ব। ২০০৮ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সিরিজের প্রথম টেস্টের পর বাদ পড়েন দল থেকে। একসময় বাংলাদেশের ত্রাণকর্তা ছিলেন যিনি, যাঁর মাঠে নামা মানেই ছিল ফিফটির নিশ্চয়তা, সেই হাবিবুল ৫০ পেরোননি ১৯ ইনিংসে। এসবের সমীকরণে সেই যে বাদ পড়লেন, আর জাতীয় দলে ফিরতে পারেননি।ফিরবেন কী, মাঝে তো নিষিদ্ধ ক্রিকেট লিগ আইসিএলে গিয়ে বনে গিয়েছিলেন খলনায়ক! হয়েছিলেন নিষিদ্ধ। সেই নিষেধাজ্ঞা উঠে গেছে; ঘরোয়া ক্রিকেটে ফিরে প্রিমিয়ার লিগে ভালোই রান করেছেন হাবিবুল। আর জাতীয় লিগে তো রীতিমতো দুর্বার। সাত ইনিংসে মাঠে গিয়ে পাঁচটিতেই খেলেছেন পঞ্চাশোর্ধ্ব ইনিংস। এই রানের মধ্যে থেকেই বিদায় জানালেন ক্রিকেটকে।ছোটবেলায় ক্রিকেটারই হতে চাননি হাবিবুল। কিভাবে কিভাবে যেন তা হয়ে গেলেন! বাংলাদেশের অভিষেক টেস্টের একাদশে তাঁর থাকার কথা ছিল না। অনেক নাটকের পর সুযোগ পেয়ে খেললেন ৭১ রানের সেই অবিস্মরণীয় ইনিংস। আগে কখনো সেভাবে অধিনায়কত্ব করেননি। জাতীয় দলের নেতৃত্ব পেয়ে হয়ে গেলেন সফলতম অধিনায়ক। কে জানে, দারুণ সফল এক ক্যারিয়ার শেষে নতুন কোনো ভূমিকায় এই সাফল্যকেও ছাড়িয়ে যান কি না হাবিবুল বাশার!

কোন মন্তব্য নেই: