শনিবার, ৭ নভেম্বর, ২০০৯

ওভারলুক, টোপ আর সেক্স এই তিন কারনে নারীদের দলে টানছেন চরমপন্থি নেতারা

হাসান জাহিদ, কুষ্টিয়া নিউজ :
প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দেয়া, প্রতিপক্ষকে ফাঁদে ফেলা ও যৌন সংস্পর্শ এই তিন কারনে নারীদের বেশি বেশি দলে টানছেন চরমপন্থি নেতারা। তাদের টার্গেট অসহায়, চালাক-চতুর বখে যাওয়া নারী। বিশেষ করে যাদের চরমপন্থি স্বামী পুলিশের সাথে বন্দুকযুদ্ধে অথবা প্রতিপক্ষের হাতে খুন হয়েছেন তারা। প্রথমে এইসব অসহায় নারীদের প্রতি দায়িত্ববোধ দেখিয়ে অর্থনৈতিক ও অন্যান্য সহযোগিতার হাত বাড়াতে গিয়ে আস্তে আস্তে দলের প্রতি দুর্বল করে ফেলা হয়। এরপর স্বামী বা স্বজন হত্যার প্রতিশোধস্পৃহা জাগিয়ে তুলে এদের সাহসী করে তোলা হয়। তারপরই দেয়া হয় ট্রেনিং। একসময় এরাই হয়ে ওঠে দুর্ধর্ষ কিলার। এরা সহজেই একস্থান থেকে অন্যত্র অস্ত্র, অর্থ ও খবর পৌছে দেয়। প্রেমের ফাঁদ পেতে অপহরন করে ফেলে প্রতিপক্ষকে। চাদাবাজি, টেন্ডারবাজি ও শীর্ষ রাজনীতিবিদদের যোগাযোগের জন্যও এরা হয়ে ওঠে উপযুক্ত। প্রেপ্তারকৃত মহিলা চরমপন্থিদের গতি, প্রকৃতি, চরিত্র বিশ্লেষন করে এবং পুলিশসহ বিভিন্ন পর্যায়ে কথা বলে বের করা হয়েছে এসব তথ্য। প্রশাসনের চোখ ফাকি দেয়া:গত জুন, জুলাই ও আগষ্ট মাসে কুষ্টিয়ার আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হলে আগষ্ট মাসের ২০ তারিখে কুষ্টিয়া সফরে আসেন পুলিশ ও র‌্যাবের প্রধান। তারা পুলিশ ও র‌্যাবকে বিশেষ নির্দেশনা দিয়ে যাবার পরই শুরু হয় বিশেষ আক্রমনাত্বক অপারশেন। কোন কোন ক্ষেত্রে পুলিশ ও র‌্যাব যৌথভাবে অপারেশন শুরু করে। একের পর এক চরমপন্থিদের গোপন বৈঠকস্থল ও আস্তানায় হানা দিতে থাকে তারা। এরপর সেসবস্থানে বন্দুকযুদ্ধে মারা পড়তে থাকে চরমপন্থি সন্ত্রাসীরা। প্রতিনিয়ত এ ধরনের বন্দুকযুদ্ধ চলতে থাকায় কোনঠাসা হয়ে পড়ে দোর্দান্ড প্রতাপশালী একেকটি চরমপন্থি সংগঠন। খুন খারাবি প্রায় বন্ধ হয়ে যায়। মানুষের মন থেকে ভীতি কমে যায়। আর একারনে চাদাবাজি ও টেন্ডারবাজির ঘটনাও কমে যায়। দক্ষিণ পশ্চিমে সত্রিয় অধিকাংশ চরমপন্থি সংগঠন অপহরনের পর মুক্তিপন আদায়, চাদাবাজি ও টেন্ডারবাজির মাধ্যমে সংগ্রহিত অর্থেই চলে। এসব টাকার উৎস বন্ধ হয়ে যাওয়ায় তারা নতুন নতুন ফন্দি আটতে থাকে। এর মধ্যে অন্যতম হলো মহিলাদের দলে ভেড়ানো। কারন আখি গ্রেপ্তারের আগে পর্যন্ত পুলিশ বা র‌্যাব মহিলাদের এভাবে সন্দেহ করতো না। কোন কোন বিচ্ছিন্ন ঘটনায় দু একজন মহিলার নাম আসলেও পুলিশ তা আমলে নেয়নি। আর একারনে চরমপন্থিরা মহিলাদের দলে ভিড়িয়ে তাদের দিয়ে কার্য হাসিল শুরু করে। কোথাও চাঁদা চাওয়া আবার তা নিয়ে আসতে যাওয়া সবই করা হচ্ছিল মহিলাদের দিয়ে। টেন্ডারবাজির জন্য বিভিন্ন তদবির বা অফিস থেকে কাগজপত্র ও তথ্য নিয়ে আসার কাজে তাদের ব্যবহার করে সহজেই প্রশাসনের চোখ ফাকি দেয়া সম্ভব ছিল। এছাড়াও সচারচর মহিলাদের চেক করা হয়না, সেই সুযোগে প্রশাসনের চোখ ফাকি দিয়ে এদেরকে দিয়ে অর্থ, তথ্য ও অস্ত্র একস্থান থেকে অণ্যস্থানে নিয়ে যাওয়া হয়। বেছে বেছে রিক্রুট করে ট্রেনিং দিয়ে সবেমাত্র এদের দিয়ে কাজ শুরু করেছিল দু’টি চরমপন্থি সংগঠন। আখি গ্রেপ্তার হবার পর এ পুরো প্রক্রিয়া পুলিশের কাছে ফাঁস হয়ে গেছে। নতুন করে দু’টি চরমপন্থি সংগঠন মহিলাদের নিয়ে এসব কর্মকান্ড শুরু করলেও পূর্ব বাংলার কমিউনিষ্ট পার্টি এমএল-জনযুদ্ধ এ কাজটি অনেক আগেই শুরু করেছিল। প্রায় ৪বছর আগে তারা মহিলাদের দলে ভিড়িয়ে তাদের একটি আলাদা ইউনিট তৈরী করে। যে ইউনিট সহজেই পুলিশের চোখ ফাকি দিয়ে প্রকাশনার কাজসহ পার্টির পক্ষে নানারকম কাজ করে বেড়াতো। র‌্যাবের সাথে বন্দুকযুদ্ধে এ পার্টির শীর্ষ নেতা আবির হাসান, দাদা তপন, রিক্তা, আকাশ ও টিক্কা কুষ্টিয়ায় র‌্যাবের সাথে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হবার পর এ অঞ্চলে এ পার্টির তৎপরতা কমে এসেছে। এ কারনে ‘নারী চরমপন্থি’ বিষয়টি চাপা পড়ে ছিল। গত চারদিনে কুষ্টিয়া পুলিশ আখিসহ চার নারী চরমপন্থি প্রেপ্তার হওয়ায় বিষয়টি আবার আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে চলে এসেছে। কুষ্টিয়া সহকারি পুলিশ সুপার (সদর দপ্তর) আলমগীর হোসেন বলেন, নারীদের পক্ষে চোঁখ ফাকি দিয়ে অপরাধ করা একটু সহজ। তবে আমরাও এখন বেশ সতর্ক। নারী চরমপন্থিদের গ্রেপ্তারে বিশেষ টিম গঠন করা হয়েছে। প্রতিপক্ষকে ফাঁদে ফেলা:চরমপন্থি দলে নারীদের বেশ কদর। এর আরেকটি কারণ হলো তাদেরকে টোপ হিসেবে ভাল ব্যবহার করা যায়। সুন্দরী নারী হলে তো সোনায় সোহাগা। প্রেমের অভিনয় করে যে কাউকেই ডেকে আনা যায়। তার যেমন প্রয়োজন তেমন ব্যবহার করা যায়। অপহরনের কাজেও তাদের ব্যবহার করা হচ্ছে সচারচর। মোবাইলে প্রেম করে অপহরন করার চেয়ে সহজ আর কোন পদ্ধতি নেই। এভাবে ডেকে এনে হত্যাও করা যায় সহজে। দুই বছর আগে ঢাকার এক সচিবের ছেলে মোবাইলে প্রেমে পড়ে কুষ্টিয়া এসে অপহরন হয়। পরে টাকার বিনিময়ে তাকে ছাড়িয়ে নেয়া হয়। বুধবার পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হওয়া চুমকি স্বীকার করেছে সে বিয়ে করে তার দ্বিতীয় স্বামীকে হত্যা করে। তারপর টার্গেটমতো তৃতীয় স্বামীর সাথে চলছিল। শুধু প্রতিপক্ষকে ফাদে ফেলাই নয়, প্রয়োজনে এদেরকে দিয়ে যে কোন তদবিরের কাজও খুব সহজে কর যায়। টেন্ডারের কাজ পছন্দের ঠিকাদারকে পাইয়ে দেবার জন্য এরা নির্দিধায় সরকারি কর্মকর্তার কাছে তদবিবের জন্য পাঠানো যায়। অনেকসময় কার্য হাসিলের জন্য এরা দৈহিক সম্পর্কও স্থাপন করে। আবার প্রতিপক্ষ কোন ঠিকাদার বা প্রেসার গ্রুপকে হুমকি দিতে তার বাড়িতে পৌছে যায় এরা। মিথ্যা নারী নির্যাতন মামলা দিয়ে হয়রানী করার হুমকি দিয়েও এদের দিয়ে কার্য হাসিলের রেকর্ড রয়েছে। এছাড়াও দলের কোন চরমপন্থির মামলা চালানোর জন্য উকিলের সাথে যোগাযোগের কাজে মেয়েদের জুড়ি নেই। আর কোন হত্যাকান্ডের আগে ঘটনাস্থল ও সিলেক্টেড ব্যাক্তির চলাফেরা রেকি করতে মহিলাদের কাজে লাগানো হয়েছে। সোমবার কুষ্টিয়ায় অস্ত্রসহ গ্রেপ্তার হওয়া আখি ও রানী কুষ্টিয়ার দুটি হত্যাকান্ডের আগে রেকির কাজ করেছে। শুধুমাত্র নারী হবার কারনে এ সকল কাজে তাদের সফলতা আসে শতভাগ। যৌন সংস্পর্শ :চরমপন্থি দলে নারী সদস্য থাকলে বোনাস হিসেবে নেতারা যৌন সংস্পর্শ পায়। তাদের দলে ভেড়ানোর এটিও একটি উল্লেখযোগ্য কারন। চরমপন্থি নেতা ও ক্যাডারদের গ্রেপ্তারের ভয়ে দীর্ঘদিন পরিবার পরিজন ছেড়ে পালিয়ে বেড়াতে হয়। এ কারনে তাদের এ বিষয়ক অতৃপ্তি থেকে যায়। যার ফলে দেখা যায় অনেক চরমপন্থিই অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে অন্যের ঘরে ঢুকে ধর্ষনের মতো ঘটনা ঘটায়। আবার জোরপূর্বক তুলে নিয়ে গিয়ে স্বামী স্ত্রীর মতো একসাথে থাকার নজিরও কম নেই। সম্প্রতি চুয়াডাঙ্গায় পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত চরমপন্থি রশিদ পিয়া নামের এক মেয়েকে এভাবে জোরপূর্বক স্ত্রীর মতো সাথে নিয়ে বেরিয়েছে। এ জন্য সে পিয়ার প্রেমিক জুবায়েরকেও খুন করেছে। মঙ্গলবার কুষ্টিয়ায় গ্রেফ্তার হওয়া চুমকিও দীর্ঘদিন সবুজ নামের এক চরমপন্থির স্ত্রীরূপে ছিল। দাদা তপনের সাথে রিক্তা নামের এক চরমপন্থি র‌্যাবের সাথে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়। রিক্তা দাদা তপনের সার্বুক্ষনিক সহকর্মি ছিল। দলে নারী সহকর্মি থাকলে যৌনকর্ম সম্পাদনের জন্য তাদের ঝুকি নিয়ে অন্যত্র যেতে হয়না। এছাড়াও যেসব চরমপন্থি পুলিশ বা র‌্যাবের সাথে বন্দুকযুদ্ধে অথবা প্রতিপক্ষের অস্ত্রের আঘাতে মারা যাচ্ছে দলের পক্ষ থেকে তাদের স্ত্রী ও পরিজনকে দেখভাল করা হয়। কুষ্টিয়া জেলায় খুনোখুনি ও বন্দুকযুদ্ধে নিহতের সংখ্যা অন্যান্য জেলার তুলনায় অনেক বেশি। এ কারনে এরকম অসহায় বিধবা নারীর সংখ্যাও অনেক। বেশিরভাগ চরমপন্থি সংগঠন দায়বোধ থেকে এসব অসহায় নারীর নিকট অর্থও পৌছে দেয়। এসব অর্থ পৌছাতে গিয়ে তাদের সাথে চরমপন্থিদের সুসম্পর্ক তৈরি হয়। কোন প্রয়োজনে ওইসব মহিলা তাদের সাথে ফোনে যোগাযোগ করে। একসময় দলের হয়ে তথ্য আদান প্রদান শুরু করে। অনেকের সাথে সৃষ্টি হয় দৈহিক সম্পর্কও। সময় বুঝে স্বামী হত্যার প্রতিশোধের বিষয়টি সামনে এনে এইসব স্ত্রীদের মন শক্ত করে দলে ভেড়ানো হয়। আবার চরমপন্থি কানেক্টেড ব্যাক্তিদের বাড়িতে আসা যাওয়া ও রাত্রি যাপনের কারনে ওই বাড়ির স্ত্রী ও মেয়েরা অনেক সময় তাদের সাথে প্রেমে জড়িয়ে পড়ে। একসময় তার চরমপন্থি দলে স্থান পাওয়া ছাড়া কোন গতি থাকেনা। অনেক মেয়ে অপহরন হয়ে চরমপন্থিদের ভোগের পাত্র হয়ে থাকতে থাকতে একসময় তাদের সাথে মানিয়ে নিতে বাধ্য হয়। এছাড়াও মেয়ে সদস্য দলে থাকলে রান্নাসহ মেয়েলি নানারকম কাজে সহযোগিতা পাওয়া যায়।এসব কারনে দিনদিন চরমপন্থি দলে নারী সদস্যর কদর বেড়েছে। বেড়েছে সংখ্যাও। পুলিশের হিসেবে কুষ্টিয়া জেলায় ৩০-৪০ জনের মতো নারী চরমপন্থির কথা বলা হলেও অনেকের ধারণা এ সংখ্যা একশ’র উপরে। আর দলের বাইরে কানেক্টেড নারীর সংখ্যাও আছে দুইশতাধিক। কুষ্টিয়ার পুলিশ সুপার শাহাবুদ্দিন খান বলেছেন, বর্তমানে জেলায় ৩০ থেকে ৪০ জনের মতো নারী চরমপন্থি রয়েছে। তিনি বলেন, নারী হোক পূরুষ হোক অপরাধপ্রবন মানুষের সংখ্যা কম। সমাজের বেশিরভাগ মানুষ আইনমান্যকারি শান্তিপ্রিয়। তিনি বলেন, নারী চরমপন্থিরা একটু বেশি সুবিধা পেয়ে থাকে। এজন্য আমাদেরকেও তীক্ষè দৃষ্টি দিতে হচ্ছে। এ ব্যাপারে থানা পুলিশের পাশাপাশি আমাদের ডিবি পুলিশ বিশেষভাবে কাজ করছে। তিনি জনগনের সহায়তা কামনা করে বলেন, নারী হোক আর পূরুষ হোক অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীর কেউই পুলিশের হাত থেকে পার পাবেনা।

২টি মন্তব্য:

রেজওয়ান বলেছেন...

I want to put this news in amarblog. Have you any problem.

jahiduzzaman@yahoo.com বলেছেন...

রাখতে পারেন আপত্তি নাই তবে সোর্স উল্লেখ করবেন।