বুধবার, ১৮ নভেম্বর, ২০০৯

এ কেমন নির্মমতা ?

জানতাম অনেক কষ্ট হবে, চরের মধ্য দিয়ে কাদা পানির মেখে অনেক পথ হাটতে হবে। তবুও গেলাম মানুষ কত নির্মম হতে পারে নিজ চোখে দেখার জন্য। সহকর্মিদের সাথে করে প্রথমে কুষ্টিয়া শহর থেকে যানবাহনে করে মহিষকুন্ডি গেলাম। সেখান থেকে ভারত সীমান্ত সংলগ্ন পদ্মার তীরে গিয়ে যখন দাড়ালাম তখন ঘড়ির কাটায় একদম ঠিক ঠিক দুটো বাজে। যারা আমাদের খবর দিয়ে নিয়ে গেছে অর্থাত নির্মমতার শিকার যারা তারা দু’জন চরের দিকে হাত দিয়ে দেখাচ্ছে ওই যে ওখানে আমাদের জমি। তাদের বলার স্টাইলে মনে হলো এই তো এখানেই কিন্তু তাকিয়ে দেখি বিস্তৃর্ণ এলাকা। বিশাল পদ্মার চর। যতদুর চোখ যায় শুধু ফাকা মাঠ আর নদীর পানি। দুরে আবছা দেখা যায় একদিকে ভারত অন্যদিকে রাজশাহী। যা হোক চরের ভেতর নেমে হাটা শুরু করলাম। প্রথমেই কাদা আর পানি পেরুতে হলো। কাদার মধ্যে বেছে বেছে পা ফেলতে লাগলাম। হঠাত পায়ে এসে লাগলো শীতল পানি। তখন যেমন মনে হলো তেমনটিই করলাম। পানির মধ্যে পুরোপুরি পা ডুবিয়ে নিলাম। আমার দেখাদেখি সহযাত্রী সাংবাদিক সাজ্জাদ রানাও একই কান্ড ঘটালো। দেখাদেখি জহুরুল ইসলামও। যা হোক আমরা হেটে যাচ্ছিতো যাচ্ছিই। এইতো এখানে..বলা আর শেষ হয়না তাদের। আমরা নরম মাটি, বাদামের ক্ষেত, কালাইএর ক্ষেত ফাকা মাঠ পেরিয়ে এগিয়ে যাচ্ছি। যামেলা করছিল কাধের ব্যাগটি। আড়াই কেজি ওজনের ল্যাপটপের ব্যাগটির ওজন মনে হচ্ছিল আধামন। বারবার কাধ বদল করা দেখে কৃষকদের একজন আমার কাছ থেকে ব্যাগটি চেয়ে নিল। পরে একইভাবে পাতলা হলো সাজ্জাদ রানাও। যা হোক আমরা যখন হেটে হেটে ক্লান্তি নিয়ে স্পটে পৌছালাম তখন চোখ আকাশে উঠলো। মাঠের পর মাঠ ফসল শুন্য। দীর্ষ চরে কোথাও ফসল আছে। কোথাওবা শুন্য। এক প্রভাবশালী ব্যাক্তি মহিষ দিয়ে খাইয়ে দিয়েছে এসব কালাই ও বাদামের ক্ষেত। ভিডিও ক্যামেরায় বিভিন্ন এ্যাঙ্গলে টেক করলাম দৃশ্য। এরপর কৃষকদের সাক্ষাতকার নিলাম। তাদের বক্তব্য হলো-এসব জমি একসময় তাদের জমির ক্ষেত ছিল। পদ্মার ভাঙনে বিলীন হয়ে যায়। পদ্মা আবার দুরে সরে যাওয়ায় চর জেগে উঠেছে। তারা এবার চীনাবাদাম ও মাসকালাই রোপন করেছিল। চরের অদুরে রুবেল মহলদার নামের এক ব্যক্তির মহিষের বাথান আছে। তার অর্ধশতাধিক মহিষও আছে। শোনা যায় কালাই, বাদাম বা কাচা ফসল খাওয়ালে গরু মহিষ তাজা হয়। সে কারনে রুবেল একেকটি চরে গিয়ে গভীর রাতে মহিষ দিয়ে ক্ষেত খাওয়ায়। আমাদের আসার খবর শুনে একে একে আরো কৃষকরা আসতে থাকলো। একেক জনের কারো ২০ বিঘা, কারো ৮ বিঘা, কারো ৪ বিঘা কারো ৩ বিঘা জমির ফসল খেয়ে গেছে তার মহিষ। কেউ কেউ বললো দিনের বেলা চোখের সামনেও মহিষ দিয়ে খাইয়েছে ফসল, কিছুই বলতে পারেনি তারা। সবমিলে ১৫জন কৃষকের ১২০ বিঘা জমির ফসল নষ্ট করেছে মহিষে। যখন সব কৃষক একত্রিত হয়ে ফুসে উঠেছে তখন চর ছেড়ে অন্য চরে চলে গেছে রুবেল মহলদার। থানায় মামলা করতে গিয়েছিল ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকেরা। মান্নান নামের এক আওয়ামী লীগ নেতা রুবেলের পক্ষ নিয়ে তাদের থানা থেকে ফিরিয়ে নিয়ে এসেছে। বলেছে স্থানীয়ভাবে পুলিশিং কমিটিতে বিষয়টির সুরাহা করা হবে। কিন্তু কোন সুরাহাই হয়নি। আমরা যখন দৌলতপুর থানার ওসি সাহেবের নিকট বিষয়টি জানতে চাই, তিনি বলেন এ অপরাধে সরাসরি মামলা নেবার বিধান নেই। কোর্টের অনুমতি প্রয়োজন হয়। নানা আইনের কথা বলে আমাদেরকে হাসি মুখে বিদায় দেন। তার বক্তব্যও আমরা রেকর্ড করেছি। আমরা গিয়েছিলাম গত সোমবার। মঙ্গলবার আমাদের এক সহকর্মির নিকট ফোন করেছে ক্ষতিগ্রস্থরাই। বলেছে, ভাই নিউজ করেন না। তারা আমাদের ক্সতিপূরন দিতে রাজি হয়েছে। আপনারা এখন নিউজ করে দিলে আমরা আর কিছুই পাব না। তারা পাওয়ারফুল তো।
বলুন তো এখন কি করবো?

কোন মন্তব্য নেই: