শুক্রবার, ১১ ডিসেম্বর, ২০০৯

রাজাকারদের তালিকা প্রকাশ : কুষ্টিয়া বাংলাদেশকে পথ দেখিয়েছে বারবার-শাহরিয়ার কবির

দীর্ঘ ৩৮ বছর পর হলেও কুষ্টিয়ার ১২৯ জন রাজাকারের নামের তালিকা প্রকাশ করে চমক ফেলে দিয়েছে একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি। কুষ্টিয়া মুক্ত দিবসে শুক্রবার শহরের মজমপুরে ঘৃনিত রাজাকার চত্বরে আনুষ্ঠানিকভাবে এ তালিকা উম্মোচন করেন, নির্মূল কমিটির কেন্দ্রীয় সভাপতি লেখক সাংবাদিক শাহরিয়ার কবির। এর আগে সেখানে এক সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি বলেন, অনেক দেরীতে হলেও কুষ্টিয়া মুক্ত দিবসে আজ কুষ্টিয়াবাসী দেশের শত্র“ রাজাকারদের বিরুদ্ধে আরেকটি যুদ্ধ শুরু করতে পেরেছে। তালিকা প্রকাশ করতে পারা মানেই বিচারের কাজ অনেকটা এগিয়ে গেল। তিনি বলেন, কুষ্টিয়া বাংলাদেশকে পথ দেখিয়েছে বারবার। কুষ্টিয়ার মানুষ রাজাকারদের যে তালিকা প্রকাশ করেছে তা ঐতিহাসিক ঘটনা। এ ক্ষেত্রেও কুষ্টিয়া প্রথম। তিনি বলেন, রাজাকাররা সর্বত্র শিকড় গেড়ে বসেছে। যে কারনেই বিচার শুরু করতে এতো বাধা আসছে। নতুন প্রজন্মকে হুশিয়ার করে তিনি বলেন, যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের কাজ শুরু করতে নানা ষড়যন্ত্র, নানা তালবাহানা চলছে। আপনারা সাবধান থাকবেন। তিনি বলেন, দেশকে যারা চাননি তাদের বিচার যদি না করা যায় তাহলে দেশে আইনের শাষন থাকে কোথায়। তিনি বলেন, কোন তালবাহানা নয়, যুদ্ধাপরাধী যে দলেরই হোক না কেন তাদের বিচারের মুখোমূখী দাড় করাতে হবে। আর বিলম্ব নয় এখনই বিচারের কাজ শুরু করতে হবে। নির্মূল কমিটির জেলা সভাপতি এডভোকেট বায়েজিদ আক্কাসের সভাপতিত্বে সমাবেশে আরো বক্তব্য রাখেন, কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ শফিকুল আলম, কেন্দ্রীয় নেত্রী মমতাজ লতিফ, কাজী লুৎফর রহমান, জাতীয় নারী জোটের আহবায়ক আফরোজা হক রীনা, প্রবীণ সাংবাদিক ওয়ালিউল বারী চৌধুরী, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক আজগর আলী, পৌর মেয়র আনোয়ার আলী, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক প্রফেসর ড. শাহীনুর রহমান প্রমুখ। রাজাকারদের তালিকা : স্বাধীনতাযুদ্ধ পরবর্তীকালে কুষ্টিয়া জেলার পিচ কমিটির নেতা ও রাজাকাররা মন্ত্রী, এমপি, চেয়ারম্যান ও ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে সমাজের অনেক শীর্ষ অবস্থানে রয়েছেন। স্বাধীনতা বিরোধী এসব রাজাকাররা স্বাধীন বাংলার মাটিতে জনপ্রতিনিধিও হয়েছেন। একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি কুষ্টিয়া জেলা শাখার বাছাই করা একটি রাজাকারদের তালিকা থেকে এ তথ্য পাওয়া গেছে। শুক্রবার বিকেলে শহরের ব্যস্ততম মজমপুর গেট এলাকায় রাজাকারের নাম সম্বলিত এ তালিকা প্রকাশ করা হয়। এছাড়া প্রতিটি থানা এলাকাতেও তালিকা প্রকাশ করা হবে। প্রাথমিকভাবে ১২৯ জন রাজাকারের তালিকা বোর্ডে লিখে টাঙ্গানো হয়েছে। তালিকা ঘেটে দেখা গেছে, রাজাকারদের অধিকাংশ এখন কুষ্টিয়ার প্রতিষ্ঠিত ব্যক্তি। সমাজের লোকজন এদের দেশপ্রেমিক বলেই জানেন। ভোল পাল্টে অনেকেই স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি সাজার চেষ্টা করছেন। আবার অনেক রাজাকার পুত্ররা আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন দলের শীর্ষ পদে রয়েছেন। একাত্তরের ঘাতকদের মধ্যে বেশ কয়েকজন চেয়ারম্যান, সাবেক এমপি, মন্ত্রী এমনকি প্রধানমন্ত্রী রয়েছেন। তবে এর মধ্যে অনেকেই মারা গেছেন। রাজাকারদের অনেকে স্বাধীনতা পরবর্তীকালে আওয়ামী লীগের শীর্ষ পদে ছিলেন। কুষ্টিয়া জেলা ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির তৈরি করা তালিকায় রয়েছে, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শাহ আজিজুর রহমান (মৃত), এরশাদ সরকারের সাবেক খাদ্য প্রতিমন্ত্রী কুষ্টিয়ার দৌলতপুরের কোরবান আলী, কুমারখালী পৌরসভার মেয়র বিএনপি নেতা নূরুল ইসলাম আনছার প্রামানিক, কুষ্টিয়া জজ কোর্টের প্রভাবশালী আইনজীবী সাদ আহমেদ ও বিএনপির সরকারের সাবেক টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী এবং কুষ্টিয়া দৌলতপুর আসনের প্রয়াত এমপি আহসানুল হক পচা মোল্লা, কুষ্টিয়া ইসলামীয়া কলেজের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ও জামায়াত নেতা ফরহাদ হুসাইন, কুষ্টিয়া লাল মহম্মদ তেল কলের মালিক লাল মহম্মদ ও বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের সাবেক সিবিএ নেতা কুটি খানসহ প্রতিষ্ঠিত কিছু ব্যক্তির নাম রয়েছে। এরাই স্বাধীনতা যুদ্ধ চলাকালে পাক হানাদার বাহিনীর সঙ্গে হাত মিলিয়ে লুন্ঠন, অত্যাচার মানুষ হত্যা নারীদের ইজ্জত হানির ঘটনা ঘটিয়েছে। স্বাধীনতা পরবর্তীকালে কুষ্টিয়া অঞ্চলের এসকল রাজাকাররা বিভিন্ন সরকারের মন্ত্রী এমপি হয়েছেন। হরিনারায়নপুরের ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান রাজাকার আবু তালেবের পুত্র লিয়াকত হোসেন জেলা কৃষকলীগের নেতা। রাজাকার কোরবান আলী ছাত্রজীবনে ছাত্র ইউনিয়ন থেকে শুরু করে এমন কোন রাজনৈতিক দল নেই যাতে তিনি জায়গা করে নেননি। বার বার রাজনৈতিক দলের জার্সি বদলকারী কোরবান আলী বর্তমানে এলডিপির নেতা। ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির কুষ্টিয়া জেলা শাখার সভাপতি এ্যাডভোকেট বায়েজিদ আক্কাসের সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, রাজনৈতিক দ্বন্দ্বের সুযোগ নিয়ে রাজাকাররা বিভিন্ন সময় জনপ্রতিনিধি হয়েছে। তাদের অনেকে নিজেকে মুক্তিযোদ্ধা দাবী করার মতো ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণও করেছে। স্বাধীনতা পরবর্তিকালে মামলার রেকর্ড ও মুক্তিযোদ্ধাদের লেখা বিভিন্ন বইপত্র ঘেটে তালিকা তৈরি করা হয়েছে বলে তিনি জানান। তালিকা প্রকাশের পর নতুন প্রজস্মের তরুণরা এদের সমন্ধে সজাগ থাকবে বলে তিনি মনে করেন। জেলা ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সাধারন সাধারণ সম্পাদক সাবেক ছাত্র নেতা অসিত কুমার সিংহ রায় বলেন, রাজাকাররা ভাল সেজে সমাজের অনেক ক্ষতি করছে।

কোন মন্তব্য নেই: