মঙ্গলবার, ১৫ ডিসেম্বর, ২০০৯

বাদাম বিক্রি করে আর সংসার চলেনা রনাঙ্গনকাঁপানো মুক্তিযোদ্ধা আব্দুলের

কাজল চৌধুরী, ঝিনাইদহঃ যে দিন বাদাম বিক্রি হয় সে দিন দু’মুঠো খাবার জোটে, আর বিক্রি না হলে আনাহারে দিন চলে যায়। আসুখে পঙ্গু করে রেখেছে শরীর। চলাফেরা করতে পারিনে। ছেলেরা ভাত দেয় না। তাই অসুস্থ শরীর নিয়ে বাজারে বসে বাদাম বিক্রি করি- স্বাধীনতা যুদ্ধে রনাঙ্গন কাঁপানো বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল শেখ এ ভাবেই জানালেন তার যাপিত জীবনের কথা।ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুর উপজেলার দোড়া ইউনিয়নের ধোপাবিলা গ্রামের লোকমান শেখের পুত্র মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল শেখ। টগবগে বয়সে জীবন বাজী রেখে যুদ্ধ করেছেন পাক বাহিনীর বিরুদ্ধে। প্রশিক্ষন নিয়েছেন ভারতের মাজদিয়া ট্রেনিং ক্যম্পে। অস্ত্র চালানো প্রশিক্ষন নিয়ে চুয়াডাঙ্গা জেলার শলুয়া গ্রামের কমান্ডার ওয়াজেদ আলীর অধীন যুদ্ধ করেছেন। সর্বশেষ তিনি কোটচাঁদপুরের সুবদিয়া এলাকায় পাকবাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াই করে এলাকা হানাদার মুক্ত করেন। মুক্তিযুদ্ধের সেই ভয়াবহ স্মৃতি অভাব নার্মে দানব আব্দুলকে বিস্মৃতির অন্ধকারে নিয়ে যাচ্ছে বারবার। যুদ্ধ শেষে স্বাধীন মানচিত্র আর লাল সবুজের পতাকা পেয়েছে জাতি; কিন্তু আব্দুল শেখের যুদ্ধ শেষ হয়নি। দরিদ্র ঘরের সন্তান আব্দুল শেখ জানান তিনি দেশ স্বাধীনের পর পরই যোগদেন গ্রাম পুলিশে। দোড়া ইউনিয়নের চৌকিদার হিসেবে সামান্য বেতনে চাকরী করেছেন প্রায় ২৭/২৮ বছর। মাত্র ৯’শ টাকার মুক্তিযোদ্ধা ভাতার টাকা এখন আব্দুলের সম্বল। কোটচাঁদপুর উপজেলার ধোপাবিলা গ্রামের আলী রহম নামে এক ব্যক্তির জায়গায় ঘর বেধে থাকেন আব্দুল। ৭০ বছর বয়সেও প্রতিনিয়ত বেচে থাকার যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি। ধোপাবিলা গ্রামের পাশেই বংকিরা বাজার। ঝিনাইদহ সদর উপজেলার ছোট্র এই বাজারে বসে আব্দুল বাদাম বিক্রি করেন। দুই কেজি বাদাম বিক্রি করে যা সামান্য লাভ হয় তাই দিয়ে কোন রকম সংসার চলে তার। মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল শেখ জানান বেশির ভাগ সময় না খেয়ে দিন কাটে যায়। ছেলেরা পৃথক, ভাত দেয়না। নানা রোগে কাহিল হয়ে পড়েছে শরীর। কাশি হলেই মুখ দিয়ে চাপ চাপ রক্ত ওঠে। টাকার অভাবে ডাক্তারের কাছে যেতে পারেন না আব্দুল। শীর্নকায় শরীরে বাদামের ঝুড়ি বইতে আর ভাল লাগে না আব্দুলের।

কোন মন্তব্য নেই: