বৃহস্পতিবার, ৩১ ডিসেম্বর, ২০০৯

খাজানগরের ৪’শতাধিক মিল বন্ধের হুমকি

দফায় দফায় কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসক ও পিডিবি’র নির্বাহী প্রকৌশলীর সাথে বৈঠক। আলোচনা সাপেক্ষ্যে বিদ্যুৎ বিল সংশোধন না হওয়ায় অবশেষে আন্দোলন খাজানগরের মিলমালিকরা। বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশে তারা দিয়েছে ১০ দিনের আল্টিমেটাম। দাবি না মানলে কুষ্টিয়ার খাজানগর চালের মোকামের ৪’শতাধিক মিলের উৎপাদন বন্ধের হুমকি দিয়েছে জেলা চালকল সমিতির নেতৃবৃন্দ। দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম এ চালকল বন্ধ হয়ে গেলে মুহুর্তে দেশের চালের বাজার গরম হয়ে উঠবে।ক্যাপাসিটার স্থাপন করেও চালকল মালিকদের অতিরিক্ত বিদ্যুৎ বিল ধার্য করা হচ্ছে। বিল সংশোধনের দাবি জানিয়ে পিডিবি অফিসের কর্মকর্তাদের কাছে বার বার ধর্ণা দিয়েও কোন ফল না পেয়ে গতকাল বুধবার বিকেলে কুষ্টিয়া জেলা চালকল মালিক সমিতি ও সাধারণ মিল মালিকরা মিছিল ও সমাবেশ করেছে। খাজানগর দইখল মাদ্রাসা চত্বরে আয়োজিত সমাবেশে মালিকরা আগামী ১০ জানুয়ারীর মধ্যে বিদ্যুৎ বিল সংশোধন না করা হলে দেশের বৃহত্তম চালের মোকাম কুষ্টিয়ার খাজানগরের চালকলে অনির্দিষ্টকালের জন্য উৎপাদন বন্ধ রাখার আল্টিমেটাম দিয়েছেন। মিছিল শেষে জেলা চালকল মালিক সমিতির সভাপতি আব্দুল মজিদ বাবলুর সভাপতিত্বে সমাবেশে বক্তব্য রাখেন সাধারণ সম্পাদক হাজী জামশের আলী, সাংগঠনিক সম্পাদক নিজাম উদ্দিন, কোষাধ্যক্ষ আক্কাস আলী, সহ-সভাপতি এফ এম বজলুর রহমান, সহ সাংগঠনিক সম্পাদক মফিজুর রহমান মফিজ, দোস্তপাড়া চালকল মালিক সমিতির সাবেক সভাপতি এম এ মমিন মন্ডল, আবুল হোসেন সরদার প্রমুখ। গত কয়েক দিন ধরে কুষ্টিয়া জেলা চালকল মালিক সমিতি ও সাধারণ মিল মালিকরা তাদের ন্যায় সঙ্গত দাবি উত্থাপন করে পিডিবির নির্বাহী প্রকৌশলীর কাছে। পিডিবি’র নির্বাহী প্রকৌশলী আমজাদ হোসেনের কাছে এ ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি সাফ জানিয়ে দেন এ ব্যাপারে তার কিছুই করার নাই। গত মঙ্গলবার সকালে নির্বাহী প্রকৌশলী এবং দুপুরে কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসকের সাথে আলাপকালে মিল মালিকগণ জানান, তাদের ন্যায় সঙ্গত দাবি মানা না হলে তারা বড় ধরণের আন্দোলনে যেতে বাধ্য হবে। এ ক্ষেত্রে অনির্দিষ্টকালের জন্য কুষ্টিয়ার মোকামে চাল উৎপাদন বন্ধ হয়ে যেতে পারে বলে মিল মালিকগণ জানান। আলোচনায় মিলমালিকগণ বলেন, ২৫ নভেম্বর তাদের কাছে ক্যাপাসিটার ব্যংক স্থাপনের তাগিদ স্বরুপ একটি পত্র প্রেরণ করা হয়। কিন্তু কিভাবে কারা কখন এ ক্যাপাসিটার স্থাপন করে দেবেন বা দাপ্তরিকভাবে পিডিবি এ ব্যাপারে কতটুকু দায়িত্ব পালন করবে এ বিষয়ে কোন ধারনা তাদের প্রদান করা হয় নি। ক্যাপাসিটার ব্যাংক সংযোজন বিষয়ে পাঠানো ওই চুড়ান্ত নোটিশে জানানো হয় বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরী কমিশনে ১৮ জুন অনুষ্ঠিত কমিশনের ৫ম টেকনিক্যাল কনফারেন্সের মর্মানুসারে কমিশনের এ আদেশ প্রদান করা হয়। অথচ ক্যাপাসিটার স্থাপনের সুবিধা অসুবিধা বিষয়ে মিল মালিকদের কোন কিছুই অবগত করানো হয়নি। সময়মতো ক্যাপাসিটার স্থাপনে ব্যর্থ হওয়ায় মিল মালিকদের মাসিক বিদ্যুৎ বিলের সাথে অতিরিক্ত বিল সংযোজন করা হয় যা প্রকৃত বিদ্যুৎ বিলের প্রায় সমান। আবার অনেক মিল মালিক একটু দেরিতে হলেও ক্যাপাসিটার ব্যাংক স্থাপন করে আরো বিড়ম্বনার শিকার হয়েছেন। এতে করে মিলমালিকদের মটর, মিটার পুড়ে যাওয়া সহ নানা রকম বৈদ্যুতিক সমস্যা দেখা দিয়েছে। এ ব্যাপারে মিল মালিকগণ কুষ্টিয়া সদর আসনের মাননীয় এমপি ও জেলা প্রশাসকের কাছে লিখিত পত্র প্রেরণ করেছেন। এদিকে বার বার আবেদনের পরেও মিল মালিকদের সাথে কোন প্রকার আলোচনা ছাড়াই বিল পরিশোধের চুড়ান্ত নোটিশ প্রদান করেছে। বিল পরিশোধ না হলে টেরিফ রুলের সংশ্লিষ্ট ধারা মোতাবেক খেলাপি গ্রাহক হিসেবে ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে বলেও ওই নোটিশে জানানো হয়েছে। মিল মালিকরা বলেন, তাদের সাথে আলোচনা না করে টেরিফ বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা গ্রহন করা হলে বা বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হলে এ ব্যাপারে যে কোন সমস্যার দায়ভার পিডিবিকেই বহন করতে হবে। মিল মালিকগণ বলেন, তাদের দাবি ন্যায় সঙ্গত। তারা বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ করতে প্রস্তুত। তবে দেশের এক এক অঞ্চলের চালকল মালিকদের জন্য ভিন্ন ভিন্ন আইন হতে পারে না। তারা বলেন, বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মকর্তাদের জোগসাজসির কারণেই এ অতিরিক্ত বিল তাদের উপর চাপানো হয়েছে।

কোন মন্তব্য নেই: