সোমবার, ১২ অক্টোবর, ২০০৯

কুষ্টিয়ায় ২দিনে গড়ে একবার বন্দুকযুদ্ধ : ৪৮দিনে নিহত ২৩, গুলিবিদ্ধ ১

আইন প্রয়োগকারি সংস্থার সাথে বন্দুকযুদ্ধের ঘটনায় গত ২২ আগস্ট থেকে ১০ অক্টোবর পর্যন্ত ৪৮দিনে শুধুমাত্র কুষ্টিয়া জেলায় নিহত হয়েছে ২৩জন চরমপন্থি সন্ত্রাসী। গুলিবিদ্ধ হয়েছে আরো একজন ডাকাত। পুলিশ ও র‌্যাব সূত্রে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে এ হিসাব কষা হয়েছে। হিসেবমতে বন্দুকযুদ্ধে গড়ে প্রতি দুই দিনে একজন করে চরমপন্থি-সন্ত্রাসী নিহত হয়েছে। এসময়ে অবশ্য পুলিশ বা র‌্যাবের কোন সদস্য নিহত বা গুলিবিদ্ধ হয়নি। নিহতের অধিকাংশই চিহ্নিত চরমপন্থি সন্ত্রাসী হলেও দু-একজনের পরিবারের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছে, পুলিশ তাদের ধরে নিয়ে গিয়ে হত্যা করে বন্দুকযুদ্ধের গল্প বানিয়েছে। তবে এসময়ে শক্তিশালি চাপ প্রয়োগ বা অন্য কোনভাবে ম্যানেজ হয়ে বন্দুকযুদ্ধের বিশেষ এ পদ্ধতির হাত থেকে রক্ষা পেয়েছে ডাক সাইটের বেশ ক’জন চরমপন্থি সন্ত্রাসী। এ অবস্থা শুরু হবার পর বন্দুকযুদ্ধের ভয়ে চরমপন্থি সন্ত্রাসীরা যে যার মতো আত্মগোপনে চলে যায়। যে কারনে এসময়ের মধ্যে চরমপন্থি সন্ত্রাসীদের হাতে কোন হত্যাকান্ডের ঘটনা ঘটেনি। কুষ্টিয়ার আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতির ভয়ানক অবনতিতে গত ২০ আগষ্ট কুষ্টিয়া সফরে আসেন পুলিশ ও র‌্যাবের প্রধান। তারা পুলিশের বিশেষ তকমা দিয়ে যাবার পরই শুরু হয় বন্দুকযুদ্ধের ঘটনা। উন্নতি হতে থাকে আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতির। গত ২২ আগষ্ট দৌলতপুর উপজেলার জগন্নাথপুরে পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে পূর্ব বাংলার কমিউনিষ্ট পার্টি(এমএল জনযুদ্ধ) ক্যাডার নাহারুল নিহত হয়। ২৫ আগষ্ট কুষ্টিয়া শহর সংলগ্ন মহাশ্বশান এলাকায় পুলিশের সাথে বন্দুকযুদ্ধের সময় জাসদ গণবাহিনী (লাল) এর হরিপুর ইউনিটের কমান্ডার শাহীনুর রহমান ডাবলু নিহত হয়। ২৬ আগষ্ট শহরের মজমপুরে সন্ত্রাসীদের দুইপক্ষ ও পুলিশের ত্রিমুখী বন্দুকযুদ্ধে সুমন ও সোহেল নিহত হয়। এ ঘটনা নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি হয়। চরমপন্থি সংগঠন লালপতাকা দাবি করে তারা ওই দুইজনকে হত্যা করেছে। পুলিশ বলে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়েছে। ২৯ আগষ্ট সদর উপজেলার ঝাউদিয়া বামনগ্রামে পুলিশ ও র‌্যাবের সাথে বন্দুকযুদ্ধে গণবাহিনীর কমান্ডার বাউল মেম্বার নিহত হয়। ০৫ সেপ্টেম্বর কুষ্টিয়ার কয়া এলাকায় পুলিশের সাথে বন্দুকযুদ্ধের সময় জাসদ গণবাহিনী (লাল) এর হরিপুর ইউনিটের অন্যতম ক্যাডার মুরাদ হোসেন ওরফে ভোলা ডাকাত নিহত হয়। ৬ সেপ্টেম্বর মিরপুরের আমবাড়িয়ায় গণবাহিনীর নেতা আব্দুল হান্নান ওরফে হানা পুলিশের সাথে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়। ৭ সেপ্টেম্বর সদর উপজেলার দুর্বাচারায় জাসদ গণবাহিনী (লাল) এর অন্যতম ক্যাডার আশরাফুল ইসলাম ওরফে আশা নিহত হয়। ০৯ সেপ্টেম্বর মিরপুর উপজেলার আমলা-মহদীপুরে র‌্যাবের সাথে বন্দুকযুদ্ধের সময় পূর্ব বাংলার কমিউনিষ্ট পার্টি এমএল-লাল পতাকার শীর্ষ নেতা আনোয়ার হোসেন ওরফে কালো আনোয়ার নিহত নিহত হয়। ১০ সেপ্টেম্বর কুষ্টিয়া দৌলতপুর উপজেলার খলিসাকুন্ডিতে পুলিশ ও র‌্যাবের যৌথ দলের সাথে বন্দুকযুদ্ধে গণমুক্তিফৌজের ক্যাডার সোহেল আহম্মেদ ওরফে টোকন নিহত হয়। ১১ সেপ্টেম্বর সদর উপজেলার আলামপুর ইউনিয়নের বালিয়াপাড়ায় পুলিশ ও র‌্যাবের যৌথদলের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে গণমুক্তি ফৌজের কুষ্টিয়া-ঝিনাইদহ এলাকার দুর্ধর্ষ কিলার জিকো পারভেজ ওরফে সম্রাট নিহত হয়। ১২ সেপ্টেম্বর শহরতলীর বাড়াদিতে পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে গুলিবিদ্ধ হয় ডাকাত রেজাউল। সে মারা যায়নি। ১৩ সেপ্টেম্বর সদর উপজেলার আইলচারায় পুলিশের সাথে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয় গণবাহিনীর আঞ্চলিক নেতা মারফত বিশ্বাস। এদিনই শহরের হাউজিং-এ বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয় গণমুক্তিফৌজের শীর্ষ ক্যাডার বিপ্লব। ১৪ সেপ্টেম্বর ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় থানার বেড়বাড়াদীতে পুলিশের সংগে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয় গণবাহিনীর সামরিক কমান্ডার সমির উদ্দিন ওরফে সমির মন্ডল। ২৩ সেপ্টেম্বর ভোররাতে কুষ্টিয়া শহরতলীর উত্তর লাহিনী মাঠে পুলিশ ও র‌্যাবের যৌথ দলের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয় দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসী বাহিনীর প্রধান কুষ্টিয়ার শীর্ষ মাদক সম্রাট রাশেদুল ইসলাম। সে কুষ্টিয়া শহর যুবলীগের সাংঘঠনিক সম্পাদক ছিলো। তার পরিবারের পক্ষ থেকে বলা হয় রাশেদুল সম্প্রতি কোন সন্ত্রাসী কর্মাকন্ডের সাথে জড়িত ছিলনা। ২৫ সেপ্টেম্বর ভোর রাতে মিরপুর উপজেলার বাঁশবাড়ীয়া বটতলায় ও কুষ্টিয়া শহরতলীর মোল্লাতেঘরিয়া জিকে ক্যানেলের পাশে পুলিশের সং্গে পৃথক বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয় বিপ্লবী কমিউনিস্ট পার্টির আঞ্চলিক নেতা ইদু (৩৮) ও গণমুক্তি ফৌজের ক্যাডার আরজ আলী(৩৩)। ২৬ সেপ্টেম্বর দৌলতপুর লালনগর বাজারের পাশে র‌্যাবের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে পূর্ব বাংলার কমিউনিষ্ট পার্টি এমএল-লাল পতাকার মোহন মালিথা (৪৫) নিহত হয়। তার পরিবারের পক্ষ থেকে দাবি করা হয় এলাকায় তাদের প্রতিপক্ষ একটি মিথ্যা মামলায় অন্তর্ভূক্ত করে পুলিশ দিয়ে হত্যা করে। ৩০ সেপ্টেম্বর ভেড়ামারা উপজেলার জুনিয়াদহ ফয়জুল্লাহ বেড়িবাধে র‌্যাবের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয় পূর্ব বাংলার কমিউনিষ্ট পার্টি এমএল লালপতাকার শীর্ষ ক্যাডার ও দূর্ধর্ষ পান্না বাহিনীর সেকেন্ড ইন কমান্ড আশারাফুল ইসলাম আশা। ০৭ অক্টোবর উজানগ্রাম স্টিল ব্রিজের নিকটে পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে গনবাহিনীর আসলাম গ্রুপের সামরিক কমান্ডার সুন্নত আলী নিহত হয়। ৮ অক্টোবর ভোরে সদর উপজেলার ভাদালিয়া পাড়া জিকে ক্যানেলের কাছে র‌্যাব ও পুলিশের সাথে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয় নিষিদ্ধ ঘোষিত চরমপন্থী সংগঠন গণমুক্তি ফৌজের সামরিক কমান্ডার সাকমল। ৯ অক্টোবর ভোরে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় থানার বিত্তিপাড়া মাধপুর কবরস্থানের কাছে পুলিশের সাথে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয় নিষিদ্ধ ঘোষিত চরমপন্থী সংগঠন গণ বাহিনী লাল গ্র“পের আঞ্চলিক কমান্ডার আমিরুল ইসলাম খা। ১০ অক্টোবর ভোরে মিরপুর উপজেলার সদরপুর ইউনিয়নের বড়বড়িয়া দক্ষিণপাড়া কবরস্থানের কাছে পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়েছে নিষিদ্ধ ঘোষিত চরমপন্থি সংগঠন বিপ্লবী কমিউনিস্ট পার্টির আঞ্চলিক নেতা মজনু মন্ডল ওরফে আব্দুল্লাহ। এরমধ্যে গত ০২ সেপ্টেম্বর কুষ্টিয়া সদরে পাঞ্জের নামের এক চরমপন্থি ও ২২ সেপ্টেম্বর কুমারখালীতে দুর্ধর্ষ টিক্কা বাহিনীর সেকেন্ড ইন কমান্ড ফজু অস্ত্রসহ পুলিশের নিকট ধরা পড়লেও বন্দুকযুদ্ধের বিশেষ ব্যবস্থার আওতায় আসেনি। এ ব্যাপারে কুষ্টিয়া পুলিশ সুপার শাহাবুদ্দিন খান বলেন, সন্ত্রাসীরা পুলিশকে গুলি করলে পুলিশও পাল্টা গুলি চালাবে এটা খুবই স্বাভাবিক। সেখানে কোন সন্ত্রাসী মারা পড়লে আমাদের কিছু করার নেই। আর পুলিশ যে সকল অপরাধীকে গ্রেফতার করতে পেরেছে তাদের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ি ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।

কোন মন্তব্য নেই: