রবিবার, ১৮ অক্টোবর, ২০০৯

শেষ দিনে লালন আখড়াবাড়িতে বিদায়ের সুর

উতসবের শেষ দিনে কুষ্টিয়ার লালন আখড়াবাড়িতে ছিল বিদায়ের সুর। রোববার বিকেল থেকেই ভবের হাট ছেড়ে যাওয়া শুরু হয় বাউল ভক্তদের। আগামী বছর দৌল পূর্ণিমা উৎসবে মিলনের আকাঙ্খা ও লালন পূণ্যভূমি ছুয়ে যাওয়ার তৃপ্তি নিয়ে আখড়াবাড়ি ছাড়ছেন তারা। বাউল সম্রাট ফকির লালন সাঁইয়ের ১১৯তম মৃত্যু বার্ষিকী উপলক্ষে পহেলা কার্তিক শুক্রবার ৩ দিনের এ স্বরনোৎসব শুরু হয়। এবারও দেশ বিদেশের হাজার হাজার লালন ভক্ত অনুসারির মিলন ঘটে কুষ্টিয়ার ছেউড়িয়ায়। রোববার উৎসবের শেষদিনেও বাধভাঙা স্রোতের মতো ছেউড়িয়ার রাস্তায় রাস্তায় ছিল লাখো মানুষের ঢল। লালন মাজার এর খাদেম ফকির আলাউদ্দিন শাহ কুষ্টিয়া নিউজকে বলেন, লালন ছিলেন ভাববাদী আদর্শের এক মহান পুরুষ। তিনি চেয়েছিলেন জাত-পাত ভুলে মানুষ ভজে সব সোনার মানুষ হবে। তাইতো দেহত্যাগের শতবর্ষ পরেও তার আখড়াবাড়িতে আজ লাখো মানুষের ভীড়। দিন দিন লালনের গানের বানী ছড়িয়ে পড়ছে বিশ্বময়। এবার পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে আসা দর্শনার্থীর সংখ্যাও ছিল অনেক। তারাও নেচে গেছে উৎসবে গা ভাষায়। বাউল সম্রাট জানতেন মিলনের আকাঙ্খা কখনই ফুরাবার নয়। তাইতো তিনি গাইলেন মিলন হবে কতদিনে, আমার মনের মানুষেরও সনে..ভেঙে যাচ্ছে ভবের হাট, এতোবড় মিলন মেলা। বাউলদের মধ্যে সৃষ্টি হচ্ছে জাগতিক দুরুত্ব। তাই মনখারাপ লালন ভক্তদের।উৎসবের শেষ দিনেও লালনের গানে গানে মানুষকে সুপথে ডাকা দেয়া হয়। ফকির রশিদ বলেন, লালনের ডাকে সাড়া দিয়ে একদিন জাত ভুলে সারা পৃথিবীর মানুষ এক কাতারে শামিল হবে।
সব লোকে কয় লালন কি জাত সংসারে
সব লোকে কয় লালন কি জাত সংসারে, ফকির লালন কয় জাতের কি রূপ দেখলাম না এ সংসারে...ডুবলে পারে রতন পাবি, ভাসলে পারে পাবিনা...দয়াল চাদ আসিয়া আমায় পার করে নেবে, এমন সৌভাগ্য আমার কবে হবে...বাউল সাঁইজির এসব আধ্যাত্মিক গানের সুরে গত তিসদিন মজে ছিল ছেউড়িয়া আখড়াবাড়ি। তিন পাগলে হলো মেলা নদে এসে...একবার আপনারে চিনতে পারলে যাবে অচেনারে চেনা...মানুষ ভজলে সোনার মানুষ হবি..নিগুড় তত্ত্বের এসব গান রাতভর মন্ত্রমুগ্ধের মতো উপভোগ করছে লক্ষাধিক মানুষ। উৎসবের এই তিনদিনে সন্ধ্যায় আলোচনা অনুষ্ঠানের পরই শুরু হতো মনমাতানো লালন সংগীতের মুর্চ্ছনা। মুল মঞ্চে প্রথমে লালন একাডেমির শিল্পিরা দলীয় সংগীত পরিবেশন করেন। এরপর একের পর এক নামীদামি লালন সংগীতের শিল্পিদের সংগীত মোহিত করে তোলে দর্শকদের। বাউল গানের সাথে ভাব নৃত্যে একাকার হয়ে যায় উতসুকরাও। মুল মঞ্চের বাইরেও বাউল আঙিনা ও উন্মুক্ত চত্ত্বরে খন্ড-খন্ড পরিসরে চলেছে অনবরত গান।

কোন মন্তব্য নেই: