রবিবার, ৪ অক্টোবর, ২০০৯

কুষ্টিয়ায় চালের দাম কমেনি

কুষ্টিয়া নিউজ : তদন্ত কমিটির নিকট প্রতিশ্রুতি দিলেও দেশের বৃহত্তম চালের মোকাম কুষ্টিয়ার খাজানগর-আইলচারার ব্যবসায়ীরা চালের দাম একটুও কমায়নি। তবে জেলা ও পুলিশ প্রশাসনের বিভিন্ন পর্যায়ের নজরদারির পর গত ৫দিনে চালের দাম বাড়াতেও সাহস করেনি তারা। ৪০ কেজির এক বস্তা সাধারন মানের মিনিকেট চাল এখনো আগের দাম অর্থাত ১হাজার ২শত ৩০ টাকা থেকে ১হাজার আড়াইশত টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। আর অটোমেটিক রাইস মিলে তৈরি ভাল মানের মিনিকেট রোববার বিক্রি হয়েছে ১হাজার ৩শত ২৫টাকা দরে। খুচরা বাজারেও চালের দাম কমেনি একটুও। রোববার কুষ্টিয়া পৌরবাজারে মিনিকেট বিক্রি হয়েছে ৩২ টাকা কেজি দরে। আর বিভিন্ন রকমের মোটা চাল বিক্রি হয়েছে প্রতিকেজি ২২-২৬ টাকা দরে। পৌর বাজারের শাপলা ট্রেডার্সের বিক্রেতা আশরাফুল কুষ্টিয়া নিউজকে বলেন, চালের দাম কমবে বলে শুনছি। তবে এখনো কমেনি। মুন্নি স্টোরের মানিসুর কুষ্টিয়া নিউজকে জানান, গত ১০দিন ধরে ৩২ টাকা কেজি দরে মিনিকেট বিক্রি করছি। এরমধ্যে দাম কমা-বাড়া করেনি। তবে শুনেছি দাম কমবে। ধানের দাম বৃদ্ধি ও মজুতদার সিন্ডিকেটের ইশারায় ঈদের পরপরই হঠাৎ করে চালের দাম বেড়ে যায়। ঢাকার ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করেন, দেশের সবচেয়ে বৃহত্তম ধান চালের মোকাম কুষ্টিয়ার খাজানগর-আইলচারার কয়েকজন শীর্ষ ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের মাধ্যমে ধান চাল মজুত রেখে কৃত্তিম সংকট সৃষ্টি করে বাড়িয়ে দেয় চালের দাম। দাম বাড়িয়ে দেবার পর তারা বর্ধিত দামে চাল বিক্রি করার জন্য আড়তে আড়তে ফোনও করে। কুষ্টিয়া থেকে চালের দাম বাড়ানো হচ্ছে পত্রিকা ও মিডিয়ায় এ সংক্রান্ত রিপোর্ট প্রকাশের পর ২৯ সেপ্টেম্বর ৫ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে দেন কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসক। ওই কমিটি ২৯ ও ৩০ সেপ্টেম্বর শহরের খুচরা বাজারসহ দেশের বৃহত্তম ধান চালের মোকাম খাজানগর আইলচারার বিভিন্ন রাইস মিল পরিদর্শন করেন। পরিদর্শন শেষে কমিটির প্রধান কুষ্টিয়ার অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট ফজলুর রহমান বলেন, বড় বড় রাইচ মিলে বিপুল পরিমান ধান মজুদ রয়েছে। মিল মালিকরা চালের দাম বৃদ্ধির জন্য ধানের দাম বাড়ার অজুহাত দেখালেও এসব ধান দাম বাড়ার আগেই কেনা। তিনি বলেন, চালের দাম বাড়ার কোন কারনই নেই। অহেতুক দাম বাড়ানোর সাথে যারা জড়িত তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়ার কথাও জানান তিনি। চালকল মালিক ও ব্যবসায়ীরা তদন্ত কমিটির সদস্যদের নিকট চালের দাম কমাবার প্রতিশ্রুতি দেন। তদন্ত কমিটি গত ৩০ সেপ্টেম্বর সরকারের নিকট রিপোর্ট জমা দিয়েছে। কমিটির প্রধান কুষ্টিয়ার অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট ফজলুর রহমান কুষ্টিয়া নিউজকে জানান, রিপোর্ট-এ নিয়মিত চালকলগুলো মনিটরিংএর সুপারিশ করা হয়েছে। নিয়মিত চালকলগুলো চালু থাকছে কি না, কেউ অধিক হারে ধান চাল মজুদ করছে কি না বা চাল কিনতে এসে কেউ ফেরত যাচ্ছে কি না এ বিষয়গুলো তদারকি করলেই চালের দাম নিয়ন্ত্রণের মধ্যে থাকবে। তিনি বলেন, তদন্ত করে আসার পর একজন ম্যাজিষ্ট্রেট এর নেতৃত্বে একটি দল একবার মনিটরিং এ যান। পুলিশের মনিটরিং দলও খাজানগর আইলচারা মোকামে কাজ করছে। এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসক আব্দুল মান্নান কুষ্টিয়া নিউজকে জানান, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) নীতিশ চন্দ্রের নেতৃত্বে সোমবার থেকে মাঠে নামছে জেলা বাজার মনিটরিং টিম। কোন অনিয়ম পেলেই কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। চিকন চাল বিশেষ করে মিনিকেট চালের জন্য বিখ্যাত কুষ্টিয়ার মোকাম। এখানকার পাঁচশতাধিক রাইচমিলে প্রতিদিন ১হাজার ৫শত থেকে ১হাজার ৮শত টন চাল উৎপাদন হয়ে থাকে। এখানকার ফোর স্টার রাইচ মিলের মালিক শরীফুল ইসলাম কুষ্টিয়া নিউজকে বলেন, ধানের দামের সাথে পড়তা করেই চালের দাম নির্ধারন করা হয়। ধানের দাম যে হারে বেড়েছে তাতে চালের দাম এর চেয়ে কমার আশা নেই। এখন চালের দাম স্থিতিশীল থাকলে সেটাই বরং ভাল। রশিদ এগ্রো ফুড প্রডাক্ট এর ম্যানেজার আবু সায়েম কুষ্টিয়া নিউজকে বলেন, আমরা তদন্ত কমিটির নিকট চালের দাম কমাবার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলাম। কিন্তু উৎপাদন খরচ বেশি হবার কারনে কমানো সম্ভব হয়নি। তবে দু-একদিনের মধ্যে দাম কমতে পারে বলে তিনি আশ্বাস দেন।

কোন মন্তব্য নেই: