শনিবার, ৩১ অক্টোবর, ২০০৯

বিয়ে ভেঙ্গে যাচ্ছে এসিড দগ্ধ শিলার

কুষ্টিয়া নিউজ : এসিড দগ্ধ শিলার বিয়ে ভেঙ্গে যাচ্ছে। বরপক্ষ দফায় দফায় আলোচনা করেও বিয়ের ব্যাপারে কোন সিদ্ধান্তে পৌছাতে পারেনি। সৌদি প্রবাসী বর শিমুল তার পরিবারের সদস্যদের সাফ জানিয়ে দিয়েছেন এ ব্যাপারে আপাতত আর কোন আলোচনা নয়। এ বিয়ের ব্যাপারে কোন কথা শুনতেও রাজি হচ্ছেন না তিনি। গতকাল শুক্রবার তাদের বিয়ে হবার কথা ছিল। গায়ে হলুদের দিন বৃহস্পতিবার ভোররাতে জানালা দিয়ে ঘুমন্ত শিলার উপর এসিড ছুড়ে মারে একদল দুর্বৃত্ত।বর্তমানে সে ঢাকার বনানীতে ব্র্যাকের এসিড সারভাইভরস ফাউন্ডেশন এ চিকিৎসাধীন। শিলার পরিবার সূত্রে জানা গেছে, তাদের শারীরিক অবস্থা আগের চেয়ে বেশ ভাল। তবে শিলা সে একেবারে ভেঙ্গে পড়েছে। চঞ্চল প্রকৃতির শিলা এখন একেবারে নিথর হয়ে পড়ে আছে। মুখে এসিড দগ্ধের যন্ত্রনার চেয়েও সে বেশি মানসিক যন্ত্রনায় আছে।

ঘটনাটি কুষ্টিয়ার খোকসা উপজেলার কমলাপুর গ্রামের। গ্রামের সরকারি চাকরিজীবি ইদ্রিস আলী খাঁ বড় মেয়ে নিলুফার ইয়াসমীন শিমুলী, তার শিশুকন্যা জ্যোতি, মেজ মেয়ে পাংশা বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের বাংলা বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী শিরীন আক্তার শিলা ও তাদের খালাত বোন রোখসানা আক্তার একই বিছানায় ঘুমিয়ে ছিল। বুধবার দিবাগত রাত তিনটার দিকে বাইরে থেকে কৌশলে ধাক্কা দিয়ে জানালা খুলে বাঁশের কঞ্চির মাথায় বাধা বোতলে করে দুই বোন শিলার (২০) মুখের উপর এসিড ঢেলে দেয় পাষন্ডরা। যার কিছুটা পড়ে বড় বোন শিমুলী(২২) গলায়ও। এসিডে দুই বোনের মুখ ও গলা ঝলসে যায়। এ ব্যাপারে শিলার বাবা ইদ্রিস আলী বাদী হয়ে বৃহস্পতিবার খোকসা থানায় একটি মামলা দায়ের করেছে। মামলা নং ৯। এতে প্রতিবেশি মৃত বানাত আলীর ছেলে মিরাজ হোসেন(২৫), আইয়ুব আলী(২৫), ছের আলীর ছেলে মনোয়ার হোসেন (১৮) ও আমজাদ হোসেনের ছেলে রেজাউল (১৮) কে ঘটনার সাথে সন্দিগ্ধ বলে বাদী উল্লেখ করেছেন। তবে গতকাল শুক্রবার দুপুরে এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত আসামীদের কেউ গ্রেফতার হয়নি বলে থানা সুত্রে জানা গেছে। এ ব্যাপারে খোকসা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বেলাল হোসেন কুষ্টিয়া নিউজকে জানান, এডিস নিপেক্ষের ঘটনায় ৪ জনকে সন্দিগ্ধ আসামী করে একটি মামলা হয়েছে। আসলেই তারা জড়িত কি না তদন্ত না করে কিছু বলা যাচ্ছে না। তিনি বলেন, বাদীর দাবি পূর্ব শত্রুতার কারনে এরা এসিড ছুড়ে মারতে পারে। তবে সিরিয়াসলি তদন্ত না করে এ ব্যাপারে কোন ডিসিশন নেয়া যাবে না। তাই কাউকেই গ্রেপ্তার করা হয়নি। জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।শিলা ও তার বোন শিমুলের উপর এসিড নিনেক্ষের ঘটনা নিয়ে এলাকায় নানা গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়েছে। প্রেমের ঘটনাকে কেন্দ্র করেই এসিড নিক্ষেপের ঘটনা ঘটেছে বলে অনেকে দাবি করেছে। এলাকার লোকজনের সাথে কথা বলে জানা গেছে, শিলাকে একই গ্রামের বিদ্যুত নামের একটি ছেলে পছন্দ করত। কলেজে আসা যাওয়ার পথে বিভিন্ন সময় শিলাকে সে নানা ভাবে উতক্ত করত। তবে এ কথা শিলার বাড়ির লোকজন জানত না। বিয়ে পাকাপাকি হওয়ার পর বিদ্যুত তার বন্ধুদের সাথে নিয়ে এ ঘটনা ঘটাতে পারে বলে এলাকার অনেকেই মনে করেন। ঘটনার পর থেকে বিদ্যুতকে এলাকায় দেখা যাচ্ছে না। এতে সবার সন্দেহ আরো ঘনীভুত হচ্ছে।ওদিকে মামলার সন্দিগ্ধ আসামী আইয়ুব আলী কুষ্টিয়া নিউজকে জানান, ঘটনার দিন আমি বাড়িতে ছিলাম না তার পরও আমাকে আসামী করা হয়েছে। তিনি জানান ইদ্রিস আলীর সাথে জমি নিয়ে আমাদের বিরোধ চলে আসছে দীর্ঘদিন থেকে। মেয়ের উপর কারা এসিড মেরেছে এই সুযোগে সে আমাদের ফাসানোর চেষ্টা করছে।শিলার বিয়ে ঠিক হয়েছিল রাজবাড়ী জেলার পাংশা উপজেলার কলিমহর ইউনিয়নের পরাণপুর গ্রামের শিমুলের সাথে। শিমুল সৌদি আরবে থাকেন। বিয়ের উদ্দ্যেশ্যে তিন মাসের ছুটি নিয়ে দেশে এসেছেন। শিমুলের সাথে যোগাযোগ করতে না পেরে ওই ইউনিয়নের চেয়ারম্যানের সাথে মোবাইলে কথা হয়। কলিমহর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আক্কাস আলী কুষ্টিয়া নিউজকে জানান, শিমুলের বিয়েতে আমারও বর যাত্রী যাওয়ার কথা। গতকাল দুপুরে তিনি বলেন, আমি ওই বাড়ির দিকেই যাচ্ছি। এসিড নিক্ষেপের পর বিয়ে হবে কি-না জানতে চাইলে তিনি বলেন এ ঘটনার কথা আমিতো জানিই না। ওই বাড়িতে গিয়ে বলতে পারব। পরে চেয়ারম্যানের মোবাইল ফোনে কথা হয় শিমুলের ছোট চাচা আইয়ুব মোল্লার সাথে। তিনি বলেন, খোদার লিখন না থাকলে বিয়ে কেন কোন কিছুই হয়না। হয়তো এখানে শিমুলের বিয়ে লেখা ছিল না। তিনি বলেন, আত্মীয় স্বজনে বাড়ি ভরে গেছে। সব কেনা কাটা শেষ। মাইক্রোবাসও ঠিক করা ছিল। তারাও এসে গেছে বাড়ির উপর। মেয়ে সুস্থ্য হলে আবার বিয়ে হবে কিনা এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা পারিবারিকভাবে এখনো কোন সিদ্ধান্ত নেইনি। আলোচনা চলছে। তবে ছেলে এ ব্যাপারে আলোচনা করতে রাজি হচ্ছেন না। তার মত ছাড়া তো কিছুই সম্ভব না। চেয়ারম্যান আক্কাসসহ অনেক দাওয়াতী বরের বাড়ি এসে খবর শুনে ফিরে গেছে। চেয়ারম্যান বলেন, এ বিয়ে ফের হবার সম্ভাবনা খুবই কম।

কোন মন্তব্য নেই: