শনিবার, ১৭ অক্টোবর, ২০০৯

ডুবলে পারে রতন পাবি..

ডুবলে পারে রতন পাবি, ভাসলে পারে পাবিনা...দয়াল চাদ আসিয়া আমায় পার করে নেবে, এমন সৌভাগ্য আমার কবে হবে...বাউল সাঁইজির এসব আধ্যাত্মিক গানের সুরে মজে উঠেছে ছেউড়িয়া আখড়াবাড়ি। তিন পাগলে হলো মেলা নদে এসে...একবার আপনারে চিনতে পারলে যাবে অচেনারে চেনা...মানুষ ভজলে সোনার মানুষ হবি..নিগুড় তত্ত্বের এসব গান রাতভর মন্ত্রমুগ্ধের মতো উপভোগ করছে লক্ষাধিক মানুষ। ফকির লালন সাঁইয়ের ১১৯তম মৃত্যু বার্ষিকী উপলক্ষে আখড়াবাড়িতে শুরু হয়েছে ৩ দিনের স্বরনোতসব। শুক্রবার রাতে উৎসবের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারন সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ। বাউল সম্রাট লালন শাহ তার জীবদ্দশায় ছেউড়িয়ার এ আখড়া বাড়িতে প্রতি বছর চৈত্রের দৌলপূর্নিমা রাতে বাউল ফকিরদের উৎসব বসাতেন। ১৮১৭ বঙ্গাব্দের পহেলা কার্তিক তার মৃত্যুর পর ওই উতসবের পাশাপাশি মৃত্যু দিবসে আখড়া কমিটির উদ্যোগে এ স্বরণোতসব শুরু হয়। উতসবের প্রথম দিন শুক্রবার রাতে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন মাহবুব-উল আলম হানিফ। জেলা প্রশাসক আব্দুল মান্নানের সভাপতিত্বে আরো বক্তব্য রাখেন পুলিশ সুপার শাহাবুদ্দিন খান, কুমারখালী উপজেলা চেয়ারম্যান আব্দুর রউফ, নির্বাহী কর্মকর্তা মানিকহার রহমান, প্রফেসর ড. শাহিনুর রহমান ও একাডেমির কর্মকর্তারা। সকলের দাবির প্রেক্ষিতে প্রধান অতিথি মাহবুব-উল আলম হানিফ লালন একাডেমিকে পূর্নাঙ্গ একাডেমি হিসেবে গড়ে তোলার ঘোষনা দেন। কুষ্টিয়া নিউজকে তিনি বলেন, এখানে এখন সবচেয়ে বেশি দরকার একটি অতিথিশালা ও সংগীত বিদ্যালয়। এ ব্যাপারে বর্তমান সরকার আন্তরিক।উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের পরই শুরু হয় মনমাতানো লালন সংগীতের মুর্চ্ছনা। মুল মঞ্চে প্রথমে লালন একাডেমির শিল্পিরা দলীয় সংগীত পরিবেশন করেন। এরপর একের পর এক নামীদামি লালন সংগীতের শিল্পিদের সংগীত মোহিত করে তোলে দর্শকদের। বাউল গানের সাথে ভাব নৃত্যে একাকার হয়ে যায় উতসুকরাও। মুল মঞ্চের বাইরেও বাউল আঙিনা ও উন্মুক্ত চত্ত্বরে খন্ড-খন্ড পরিসরে চলছে অনবরত গান। খুলনা থেকে আসা ব্যাংকার মাসুদ রানা কুষ্টিয়া নিউজকে বলেন, টিভি ক্যাসেটে তো লালন সংগীত শোনাই যায়। কিন্তু এখানে এসে সরাসরি গান শোনার মজাই আলাদা।বাউলদের অভিমত লালন সংগীত শুধু নিছক বিনোদনের জন্য নয় এতে রয়েছে নিগুড় তত্বকথা। লালন সংগীত মানবতাবাদী ও অহিংসার প্রতীক। তার এ অহিংসার বাণী বিশ্বময় ছড়িয়ে দিতে পারলেই কেবল সার্থক হবে সব আয়োজন। এদিকে এ উপলক্ষে বসেছে লালন মেলা। সেখানে রকমারী পণ্য সামগ্রীর পাশাপাশি বাশ ও কাঠের তৈরি লালনের মূর্তি, একতারা এবং দোতারা বিক্রি হচ্ছে ভাল।সাঁইজীর ভাব-দর্শনের নানা অনুসঙ্গ এবং উতসব ও মেলা চলবে রোববার রাত পর্যন্ত।

কোন মন্তব্য নেই: