বুধবার, ২৮ অক্টোবর, ২০০৯

ন্যায্যমূল্য না পেয়ে আখ ছেড়ে তামাক চাষে উৎসাহী হচ্ছে কৃষক, এবার চিনি কিনতে হবে ১০০ টাকা কেজি


হাসান জাহিদ, কুষ্টিয়া নিউজ : এবার আখ চাষে এমন ধ্বস নেমেছে যে কুষ্টিয়ায় জগতি সুগার মিলের আখ মাড়াই নিয়েই অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। প্রতি বছর নভেম্বরে আখ মাড়ায় শুরু হলেও চলতি মৌসুমের জন্য এবার এখন পর্যন্ত কোন প্রস্তুতি নেই কর্তৃপক্ষের। ন্যায্যমূল্য না পাওয়াসহ নানা জটিলতার কৃষকরা এবার আখ চাসে নিরুৎসাহিত হন। অথচ চিনির জন্য ক’দিন আগে অস্থির হয়ে পড়েছিল সরকার। মনে হচ্ছিল চিনির কারনেই সরকার পড়ে যাবে। যে চিনি এতো প্রয়োজনীয়, এতো স্পর্শকাতর সেই চিনি উৎপাদনের কাচামাল আখ চাষীদের প্রতি কোনরূপ খেয়াল নেই সরকারের। আখ বিক্রি করতে গেলে তারা বরং হয়রানীর শিকার হন। অতি প্রয়োজনীয় খাদ্যদ্রব্য চাষের জন্য যাদের পুরস্কার পাবার কথা, যাদের অর্থনৈতিক স্বচ্ছলতা আসার কথা তারা বরং লোকসানের মুখে পড়ছে। এ কারণে আগামী দিনে চিনির সংকট আরো ঘনীভুত হবে। এতে লাভবান হবে পার্শ্ববতি দেশ ভারত। তাদের চিনি বেশি দামে কিনে খেতে হবে আমাদের। আগামীতে ১০০ টাকা কেজি চিনি কিনতে হবে এমন আশংকাও দেখা দিচ্ছে। তাহলে সরকারের নীতি নির্ধারক পর্যায়ে বসে কর্থা ব্যাক্তিরা কি করেন? কাদের স্বার্থ হাসিল করেন? এ ক্ষেত্রে কৃষকদের যা করার তাই করছে। তাদের তো আর রাজার হালত নেই যে লোকসান দিয়েই আখ চাষ করবে। হয়রানী মেনে নেবে। তারা চলে যাচ্ছেন তামাক চাষে। গত ৩ বছরের মধ্যে এবারই সর্বনিম্ন ৪০ হাজার মেঃটন আখ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে কুষ্টিয়া চিনিকিল কর্তৃপক্ষ। তবে এ পরিমান আখও শেষ পর্যন্ত পাওয়া যাবে না বলে ধারণা করা হচ্ছে। তার উপর চাষীরা এবার একেবারেই বেকে বসেছেন। মিলগেটে প্রতিমণ আখ ১০০টাকা করা না হলে চাষীরা কোন আখ সরবরাহ করবে না বলে তারা সাফ জানিয়ে দিয়েছে। গতবছর এর মূল্য ছিল ৬৬ টাকা। এ অবস্থায় চলতি মৌসুমে আখ মাড়াই কবে নাগাদ বা আদৌ শুরু হবে কিনা তা সঠিক করে বলতে পারছে না কেউই। আখ চাষী ও মিল কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলে জানা গেছে, চলতি বছরে কুষ্টিয়া চিনিকল জোনে সবচেয়ে কম আখ চাষ হয়েছে। যা গত ৩ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন। নথিপত্র ঘেঁটে দেখা গেছে, গত ২০০৭ সালে চিনিকল জোনে আখ উৎপাদন হয় ১ লাখ ৬০ হাজার মেঃটন। ২০০৮ মাড়াই মৌসুমে তা অর্ধেকে নেমে এসে উৎপাদন হয় ৭৯ হাজার মেঃটন। চলতি ২০০৯-১০ মৌসুমে উৎপাদনের হার একেবারে তলানিতে এসে দাড়িয়েছে। এ বছর লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে মাত্র ৪০ হাজার মেঃটন। তবে এ পরিমান আখও এবার চাষ হয়নি বলে চিনিকল কতৃপক্ষ মনে করছেন। কুষ্টিয়া চিনিকলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবিএম আরশেদ হোসেন জানান, আগে যেসব জমিতে আখ চাষ হতো সে সব জমিতে এখন তামাক চাষ হচ্ছে। তামাকের দাম আখের চাইতে বেশি। তাই দিন দিন আখ চাষীরা তামাক চাষের দিকে ঝুকছে। নতুন করে আর কোন আখ চাষী যাতে তামাক চাষের দিকে ঝুকে না পড়ে যে জন্য বেশ কিছু পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে। এরমধ্যে আখের দাম বাড়ানোর চিন্তাভাবনা চলছে। এছাড়া চাষীদের অন্যান্য সুযোগ সুবিধাও বাড়ানো হবে। কুষ্টিয়া পোড়াদহ এলাকার আখ চাষী হাবিবুর জানান, যে ভাবে আখ চাষ কমছে তাতে করে মিল বাঁচানো মুশকিল হয়ে পড়বে। এখন কার্যকর পদক্ষেপ না নেয়া হলে সবারই ক্ষতি হয়ে যাবে। ত্ইা আখের দাম বাড়াতে হবে। চিনিকল কর্তৃপক্ষ ৪০ হাজার মেঃটন আখ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করলেও বাস্তবে চাষ হয়েছে এর চাইতে অনেক কম। মাঠে যে পরিমান আখ আছে তাতে করে ২৫ হাজার মেঃটনের বেশি হবে না। এর মধ্যে আবার অনেকেই ক্রাসিং মেশিনে আখ মাড়াই করেন। চাষীরা চলতি মৌসুম থেকেই আখের দাম বাড়নোর দাবি তুলেছেন। মিলগেটে প্রতিমণ ১০০ টাকা করা না হলে যে আখ রয়েছে তাও মিলে দেয়া হবে না বলে কয়েকজন চাষী জানান। বাংলাদেশ চিনিকল আখচাষী ফেডারশনের সাধারন সম্পাদক আক্কাস আলী জানান, কুষ্টিয়া জোনে আখ চাষে বিপর্যয় নেমে এসেছে। প্রতিবছর উৎপাদনে ধ্বস নামছে। অথচ সরকার চিনিকল রক্ষায় তেমন কোন উদ্যোগ গ্রহণ করছে না। আখের দাম বাড়ানো না হলে আগামী বছর উৎপাদন আরও কমে যাবে। আর উৎপাদম কমে গেলেও মিলের চাকাও বন্ধ হয়ে যাবে। সেই সাথে বন্ধ হয়ে যাবে অনেকের রুটি রুজি। তামাকই এ এলাকার আবাদী জমি গুলো গ্রাস করে নিচ্ছে। তাই তামাক চাষ বন্ধ হওয়া দরকার।

কোন মন্তব্য নেই: