বৃহস্পতিবার, ২৯ অক্টোবর, ২০০৯

খোকসায় বিয়ের একদিন আগে দুর্বৃত্তদের ছোড়া এসিডে ঝলসে গেলো শিলার মুখ, সাথে বড় বোনও

হাসান জাহিদ, কুষ্টিয়া নিউজ : কলেজ ছাত্রী শিলার বিয়ে শুক্রবার। গতকাল বৃহস্পতিবার ছিল গায়ে হলুদ। কিন্তু বিধি বাম। সূর্য্য উঠার আগেই ভেঙে গেলো তার সব স্বপ্ন। ভোর রাতেই একদল পাষন্ড জানালা দিয়ে এসিড ছোড়ে ঘুমন্ত শিলার মুখে। পুডে যায় তার মুখ, সাথে রঙিন স্বপ্নও। বাদ যায়নি একই বিছানায় শুয়ে থাকা বড় বোন শিমুলীও। তার গলাও পুড়ে গেছে ওই এসিডে। তবে অল্পের জন্য রক্ষা পেয়েছে শিমুলীর দু’বছর বয়সী শিশু কন্যা জ্যোতি ও খালাত বোন রোখসানা। এরাও একই বিছানায় ঘুমিয়ে ছিল। বিয়ের বাড়ি তাই বাড়ি ভর্তি ছিল আত্মীয় স্বজনে। একারনেই এক বিছানায় গাদাগাদি। গভীর রাত পর্যন্ত আনন্দ করেছিল সবাই। কিন্ত কে জানতো সকালেই তাদের বাড়িতে নেমে আসবে বিষাদের ছায়া। এ ঘটনা কুষ্টিয়ার খোকসা উপজেলার কামালপুর গ্রামের। গ্রামের সরকারি চাকরিজীবি ইদ্রিস আলী খাঁ বড় মেয়ে নিলুফার ইয়াসমীন শিমুলী, তার শিশুকন্যা জ্যোতি, মেজ মেয়ে শিরীন আক্তার শিলা ও তাদের খালাত বোন রোখসানা আক্তার একই বিছানায় ঘুমিয়ে ছিল। বাড়ির দেয়াল পাকা হলেও জানালা ছিল অরক্ষিত। বুধবার দিবাগত রাত তিনটার দিকে বাইরে থেকে কৌশলে ধাক্কা দিয়ে জানালা খুলে বাঁশের কঞ্চির মাথায় বাধা বোতলে করে দুই বোন শিলার (২০) মুখের উপর এসিড ঢেলে দেয় পাষন্ডরা। যার কিছুটা পড়ে বড় বোন শিমুলী(২২) গলায়ও। এসিডে দুই বোনের মুখ ও গলা ঝলসে যায়। বিছানার চাদর, বালিশ ও তোষকও পুড়ে গেছে। যন্ত্রনায় চিৎকার করে উঠলে পরিবারের লোকজন তাদেরকে মুমুর্ষ অবস্থায় খোকসা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে। অবস্থার অবনতি হলে বৃহস্পতিবার সকালে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাদের ঢাকায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে। জানা গেছে, এসিড সন্ত্রাসের শিকার শিলা পাংশা বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের বাংলা অনার্সে দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী। স্থানীয় লোকজন ও পুলিশের ধারণা প্রেমঘটিত কোন কারনে এ ঘটনা ঘটেছে। এসিড আক্রান্ত শিমুলী ও শিলার বাবা মেহেরপুর জেলা পরিষদের কর্মচারী ইদ্রিস আলী কুষ্টিয়া নিউজকে জানান, ঘরের জানালাটি ভেতর থেকে শিকল লাগানো থাকলেও বাইরে থেকে ধাক্কা দিলে খুলে যায়। বাড়িতে বিয়ের প্রস্তুতি চলছিল। মেয়েরা অনেক রাত জেগে তারপর ঘুমাতে যায়। তারা গভীর ঘুমে ছিল। বাইরে থেকে ধাক্কা দিয়ে জানালা খুলে হাত দিয়ে মশারী উচু করে লাঠির মাথায় বাধা বোতলের ভেতর থাকা এসিড ঢেলে দেয় দুই মেয়ের মুখে। শিমুলী ও শিলার সাথে ওই বিছানাই শুয়ে থাকা তাদের খালাত বোন রোখসানা কুষ্টিয়া নিউজকে জানান, ঘুমিয়ে ছিলাম কিছুই টের পাইনি। শিমুলী আপা চিৎকার করে উঠে দেখি তার ও শিলা আপার মুখ পুড়ে গেছে। শিলার বৃহস্পতিবার গায়ে হলুদ ছিল। পাংশার পরানপুর গ্রামের শিমুল নামের এক ছেলের সাথে কাল শুক্রবার তার বিয়ে হবার কথা ছিল তিনি জানান, ঘটনার রাতে আপার মোবাইলে অচেনা নাম্বার থেকে একটি মেসেজ আসে। ইংরেজী অক্ষরে বাংলা করে সেখানে লেখা ছিল যে আগুনে আমি পুড়ছি সে আগুনে তোমাকেও পুড়তে হবে। এ বিষয়টি খতিয়ে দেখতে পুলিশ ওই মোবাইল ফোন সিজ করেছে। সকালে কুষ্টিয়ার সহকারি পুলিশ সুপার সি এ হালিম ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। তিনি কুষ্টিয়া নিউজকে বলেন, বিষয়টি সিরিয়াসভাবে তদন্ত করা হচ্ছে। মোবাইল ফোনের সূত্র ধরে আমরা অপরাধীদের সনাক্ত করতে পারবো বলে আশাবাদী। শিলাকে কেউ বিয়ে করতে চেয়ে না পেয়ে গায়ে হলুদের আগের রাতেই এ ঘটনা ঘটায়।

কোন মন্তব্য নেই: