নিজের ও ভায়ের নামে গঠিত ‘হা-রা’ (হামিদুল-রাশেদুল) নামের দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসী বাহিনীর প্রধান কুষ্টিয়ার শীর্ষ মাদক সম্রাট রাশেদুল ইসলাম পুলিশ ও র্যাবের যৌথ দলের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়েছে। গতকাল বুধবার ভোররাতে কুষ্টিয়া শহরতলীর উত্তর লাহিনীর হাজী বজলার রহমানের তালতলা মাঠে এ বন্দুকযুদ্ধের ঘটনা ঘটে। নিহত রাশেদুল সম্প্রতি শহর যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক পদ বাগিয়ে নিয়েছেন।পুলিশ জানায়, সোমবার গভীর রাতে ওই তালতলা মাঠে একদল সশস্ত্র সন্ত্রাসী বৈঠক করছিল এমন খবর পেয়ে কুষ্টিয়া সদর থানা পুলিশ ও র্যাব-১২ কুষ্টিয়া ইউনিটের যৌথ টিম সেখানে অভিযানে যায়। পুলিশ ও র্যাবের উপস্থিতি টের পেয়ে বৈঠকে থাকা সন্ত্রাসীরা গুলি ছোড়ে। পুলিশ ও র্যাব পাল্টা গুলি চালালে শুরু হয় গুলিযুদ্ধ। চলে আধাঘন্টা ধরে। একপর্যায়ে সন্ত্রাসীরা পিছু হটলে সেখান থেকে পুলিশ গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত ‘হা-রা’ বাহিনীর প্রধান রাশেদুল ইসলাম-এর লাশ ছাড়াও একটি সাটার গান ও তিন রাউন্ড রাইফেলের গুলি উদ্ধার করে। নিহত রাশেদুলের বিরুদ্ধে কুষ্টিয়া সদর ও কুমারখালী থানায় ৪টি হত্যাসহ ১৮টি মামলা ও ২৬টি জিডি আছে।পুলিশ জানায়, নব্বই’র দশকের গোড়ার দিকে শহরের মিলপাড়া এলাকার রুস্তম আলীর দুই ছেলে হামিদুল ও রাশেদুল রেল কোয়ার্টার, অফিস ওই এলাকার বিভিন্ন সরকারি কলোনী দখল করে মাদক সাম্রাজ্য গড়ে তোলে। এজন্য তারা বেতনভুক্ত শতাধিক সন্ত্রাসী ক্যাডার ও মাদক বিক্রেতা নিয়োগ করে। এই বাহিনীর বিরোধীতা করলেই তাকে হামলা ও হত্যার শিকার হতে হতো। ওই এলাকায় শহরে যে কেউ বাড়ি তুলতে হলেও এদের চাঁদা দিতে হতো। দোর্দান্ড প্রতাপশালী এই বাহিনীর সদস্যরা ফেন্সিডিল ও হেরোইন ওই সময় পুরো শহরে প্রকাশ্যেই বিক্রি করতো। চোখের সামনে নিক্তিতে মেপে বিক্রি হতো হেরোইন। পাইকারি ও খুচরা উভয় লেভেলের বিক্রেতা ছিল। ২০০১ সালে মিলপাড়া পুলিশ ফাড়ি আক্রমন করে এই বাহিনী। পুলিশ সদস্যদের আহত করে অস্ত্র লুট করে তারা। ২০০৪ সালে পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে রাশেদুল পায়ে গুলিবিদ্ধ হয়ে অস্ত্রসহ ধরা পড়ে। এরপর থেকে দীর্ঘ কারাভোগের পর গত ৫ মাস আগে সে জামিনে মুক্ত হয়। বের হয়েই সে সরকারি সরকারি দলের নেতাদের ছত্রছায়ায় আবার বাহিনীর ক্যাডারদের সংগঠিত করতে থাকে। অভিযোগ রয়েছে, জেলা আওযামী লীগের সহ-সভাপতি প্রভাবশালী নেতা হাজী রবিউল ইসলাম আগামী পৌরসভা নির্বাচনে ব্যবহার করার জন্য জেল থেকে বের করে এনেছেন। এ ব্যাপারে বক্তব্য নেবার জন্য মোবাইল ফোনে কল করা হলে হাজী রবিউল ইসলাম ফোন ধরেন নি। আরো অভিযোগ রয়েছে, আওয়ামী লীগের আরেক প্রভাবশালী নেতাও পৌর নির্বাচনের স্বার্থে রাশেদুলকে মদত দিয়ে আসছে। সরকারি দলের এসব নেতার ছত্রছায়ায় সে আবার তার সাম্রাজ্য বিস্তার শুরু করেছিল। রাশেদুলের ব্যাপারে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক আজগর আলী ই-বার্তাকে বলেন, শুনেছি সে যুবলীগের শহর কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক, কিন্তু আমি নিশ্চিত নই। তবে আমাদের দলে কোন সন্ত্রাসীর স্থান নেই। দলের নাম ভাঙ্গিয়ে কোন ব্যক্তির সন্ত্রাসী কর্মকান্ড চালাবার সুযোগ নেই। কারণ সন্ত্রাসী যেই দলেরই হোক আইন-প্রয়োগকারি সংস্থা কাউকে ছাড় দেবে না। করে তাকে কুষ্টিয়া শহর যুবলীগের সংগঠনিক সম্পাদক পদ দিয়েছেন। জেলা যুবলীগের সাধারন সম্পাদক মনিরুজ্জামান লালন ই-বার্তাকে বলেন, আমাদের দলের লোক সন্ত্রাসী হলেও তার বিচার করতে নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। তবে দলের ভেতর থেকে যদি কেউ সন্ত্রাসী কর্মকান্ড করে তার জন্য তিনিই দায়ি থাকবেন দল নয়। তিনি বলেন, আমরা জানতাম রাশেদুল অন্যায়কারি সন্ত্রাসী তারপরও আমাদের কিছুই করার ছিল না। কারণ দলের শীর্ষ নেতাদের ইচ্ছাই তাকে দলে পদ দিতে হয়েছে।এদিকে ‘হা-রা’ বাহিনীর আরেক নেতা রাশেদুলের ভাই হামিদুল তিন মাস আগে এনকাউন্টারের ভয়ে আদালতে আত্মসমর্পন করেছে। সে বর্তমানে কারাগারে।
বুধবার, ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০০৯
এতে সদস্যতা:
মন্তব্যগুলি পোস্ট করুন (Atom)
২টি মন্তব্য:
খবরটি শেয়ার করার জন্য ধন্যবাদ। এই ধরণের সন্ত্রাসীদের হাত থেকে দেশ যত মুক্ত হয়, ততো ভাল।
aR
Bangla Hacks
সুন্দর মন্তব্য পোষ্ট করার জন্য আপনাকেও ধন্যবাদ। কুষ্টিয়ার যে কোন খবর তাতক্ষনিক আপডেট করার ব্যাপারে আমাদের প্রয়ানস অব্যাহত থাকবে।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন