বৃহস্পতিবার, ২৪ সেপ্টেম্বর, ২০০৯

কুষ্টিয়ার খোকসায় নৌকাবাইচ, ঈদ আনন্দে নতুন মাত্রা

ঈদ উৎসবে আনন্দের মাত্রা বাড়িয়ে দিতে কুষ্টিয়ার খোকসায় গড়াই নদীতে হয়ে গেল তিনদিনের নৌকাবাইচ প্রতিযোগিতা। এলাকার ৮টি বাইচ দল বিপুল উৎসাহ উদ্দীপনার সাথে স্বতঃস্ফুর্তভাবে এ প্রতিযোগিতায় অংশ গ্রহন করেছে। বৃহস্পতিবার বিকেলে ফাইনাল বাইচের মাধ্যমে এ প্রতিযোগিতার সমাপ্তি ঘটে। ফাইনালে কোমরভোগের উলকাকে পরাজিত করে চ্যাম্পিয়ান হয়েছে একই গ্রামের বাইচদল উড়ন্তপাখি। বেতবাড়িয়া গ্রামবাসী এ ব্যয়বহুল প্রতিযোগিতার আয়োজন করে। আবহমান গ্রামবাংলার অতিপ্রাচীন ঐতিহ্য এ নৌকাবাইচ দেখতে গড়াই’র দু’পাড়ে প্রতিদিনই হাজার হাজার মানুষের ঢল নামে। প্রখর রোদ্র ও বৃষ্টি উপেক্ষা করে নদীতীরে দাড়িয়ে থাকা দর্শকদের মুহমুহ হাততালি ও হর্ষধ্বণিতে বাইচ লড়াই আরো জোড়দার হয়ে ওঠে।ঈদের পরদিন মঙ্গলবার দুপরে বিচিত্র সাজের নৌকা আর বর্ণিল জার্সি পরা খেলোযার নিয়ে গড়াই নদীর বুকে এসে জড়ো হয় এলাকার ৮টি বাইচ দল। জারী গানের তালে তালে নেচে গেয়ে গা গরম করে নেন খেলোয়াড়রা। সাথে চলে বিভিন্ন ঢঙের নাচ। দুপুরে খোকসা জানিপুর বাজার ঘাটে নদীর মাঝে রণসাজের দু’টি করে বাইচ নৌকা দাড় করিয়ে বাঁশি বাজিয়ে শুরু হয় প্রতিযোগিতা। হেইয়া হো হেইয়া হো চিৎকার আর পানির ছলাৎ ছলাৎ শব্দে ভরা গড়াই’র বুকে দীর্ঘ পানিপথ প্রানপনে পাড়ি দেয় একেকটি বাইচ দল। চরম প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ লড়াই শেষ হয় প্রায় দেড় কিলোমিটার ভাটিতে কমলাপুর শ্বশানঘাটে এসে। দীর্ঘ একযুগ পর অনুষ্ঠিত হওয়া এ বাইচ প্রতিযোগিতা দেখতে আসতে ভুল করেনি কেউ। দুর দুরান্ত থেকেও আসেন আনন্দমোদি দর্শকরা। দীর্ঘ নদীর দু কুলে হাজার হাজার মানুষের ঢল নামে। অনেকেই আবার নদীর বুকে ভেসে ভেসে প্রতিযোগিতা দেখতে ভাড়া করে ছোট-বড় নৌকা। ফাইনালে অংশ নেয়া খোকসা কোমরভোগের উলকা বাইচ দলের নেতা জিন্দার ই-বার্তাকে জানান, যুবক বয়স থেকেই বাইচ খেলছি। তখন প্রতিবছরই বাইচ প্রতিযোগিতা হতো। বাইচ খেলতে খুবই মজা পাই। খুবই আনন্দের। দীর্ঘদিন প্রতিযোগিতা না হওয়ায় অনেক বাইচ দল ভেঙ্গে গেছে। এবছর আবার নতুন করে দল গঠন করা হয়েছে। নতুন করে বাইচ নৌকা বানানো হয়েছে। এখন আবার এলকার যুবক ছেলেদের মনে উদ্্যম এসেছে। নৌকার মাঝি আলিম জানান, নৌকা চালানো একধরনের মজার কাজ। আর বাইচে অংশ নেয়া আরো বেশি মজার। এবারও তিনি একটি দলের হয়ে বাইচে অংশ নিযেছেন। বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র জনি ঈদের ছুটিতে এলাকায় এসেছেন। সারাদিন নদীর ধারে থেকে তাকে বাইচ প্রতিযোগিতা তদারকি করতে দেখা যায়। নরসিংদী জজ কোর্টে চাকরি করেন ডালিম। তার বাড়িও ওই এলাকায়। তাকেও দেখা গেল বন্ধুদের সাথে বাইচ প্রতিযোগিতার তদারকি করতে। ই-বার্তাকে তারা জানান, আগামী প্রজন্মের জন্য এ ঐতিয্যবাহি প্রতিযোগিতা আমাদেরকেই ধরে রাখতে হবে। তা না হলে দু-একটি প্রজন্ম পরেই নৌকাবাইচ হারিয়ে যাবে। কেউ জানতেই পারবেনা এরকম একটি মজার খেলা ছিল। ঈদের ছুটিতে গ্রামে আসা অনেকেরই স্বার্থক হয়েছে যারা এর আগে এ ধরনের নৌকাবাইচ প্রতিযোগিতা সরাসরি দেখেননি। ইভা হাসান নামের এক সুন্দরী গৃহবধূ এই প্রথম দেখার সুযোগ পেয়েছেন। তার কাছে ঈদ আনন্দের চেয়ে এটি বড় আনন্দের। ই-বার্তাকে তিনি বলেন, বিভিন্ন সময় টিভিতে এ প্রতিযোগিতা দেখেছি। বাস্তবে দেখার খুব ইচ্ছা ছিল। এবার সে ইচ্ছা পূরণ হলো।দর্শনার্থী ও খেলোয়ারদের উৎসাহ উদ্দীপনা দেখে আগামী বছর আরো বড় পরিসরে বাইচ প্রতিযোগিতা অব্যাহত রাখার আশ্বাস দিলেন আয়োজকরা। খোকসা উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান সৈয়দ আমজাদ হোসেন এ প্রতিযোগিতায় প্রধান অতিথি ছিলেন। তিনি ই-বার্তাকে বলেন, নতুন করে নৌকা বানিয়ে গ্রামের ছেলেদের যে উদ্যম দেখেছি। তাতে মনে হচ্ছে আগামীতে আরো বড় পরিসরে আয়োজন করতে হবে। সন্ধায় সুর্য্যরে লাল আভা যখন আছড়ে পড়ে ভরা গড়াই’র বুকে, তখন শেষ হয়ে আসে এ আয়োজন। বিদায়ের সুর বাজে, যেন শেষ হয়ে যায় ঈদের আনন্দও। তবে সাথে থাকে আগামী প্রজন্মের জন্য এ ঐতিয্য ধরে রাখার দৃঢ় প্রত্যয়।

কোন মন্তব্য নেই: