সোমবার, ২৮ সেপ্টেম্বর, ২০০৯

আওয়ামীলীগ-বিএনপির প্রয়োজনেই কুষ্টিয়ায় কথিত চরমপন্থীর সৃষ্টি

আবু বকর সিদ্দীক, সম্পাদক, দৈনিক সময়ের কাগজ
## সঙ্গত কারনেই চরমপন্থী এখন শীর্ষ আলোচিত বিষয়। কুষ্টিয়ার জন্য অপমান, কষ্ট ও ক্ষোভ। ইতিহাস ঐতিহ্যের তীর্থভূমি কুষ্টিয়া মাথা নত করে থাকে, লজ্জায় নীল হয়। হাতে গোনা যায়, মাত্র কয়েকজন বিপথগামীদের জন্য এ বদনাম। সহ্য করতে হয় আপামর কুষ্টিয়াকে। যত্রতত্র কাটা মাথা, প্রতিদিনই ক্রসফায়ার এবং স্বজনদের আহাজারী। কুষ্টিয়ার জন্য এসব খুব পরিচিত দৃশ্য। অথচ এমন হওয়ার কথা নয়। ছিল না। অর্থনৈতিকভাবে কুষ্টিয়ার মাটি উর্বর। সহজে বেশী রোজগার এবং বন্যামুক্ত, শিল্পএলাকা বলে এর সুনাম রয়েছে। যোগাযোগের জন্য দেশের উত্তর-দক্ষিন এবং পূর্ব-পশ্চিমের একটি গুরুত্বপূর্ন সন্তান। স্বাধীনতার পর থেকে এখানে চরমপন্থী দলের কর্মকান্ড চোখে পড়ে। সে সময় বেশ কয়েকটি দল এখানে কর্মকান্ড শুরু করে। মূলতঃ সে সময়ের চরমপনন্থীদলগুলো আদর্শিকভাবে বামধারার রাজনীতি প্রতিষ্ঠিত করতে কাজ করত। আদর্শিক, শিক্ষিত ও সম্ভ্রান- নেতারা নেতৃত্ব দিত। তাদের নামে রাজনীতির বাইরে কোন অভিযোগ ছিল না। টেন্ডার, অপহরণ বা ডাকাতি-ছিনতাই এড়িয়ে যেত। পর্যায়ক্রমে সে দলে ভিড়তে থাকে নানা অসামাজিক লোক। শুরু হয় আঞ্চলিক দ্বন্দ্ব। চলতে থাকে খুন, অপহরণ, টেন্ডারবাজী। শ্রেণী শত্রু খতম এবং সমবন্টন ছিল এসব পার্টির লক্ষ্য। অবস্থানগত কারণে এরা এলাকার পূঁজিবাদীদের আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়। শুরু হয় প্রভাব বিস্তারের কাজ। অঞ্চল ভেদে এক এক পূঁজিবাদীকে ঘিরে গড়ে ওঠে এক একটি পার্টি। বাম আদর্শ বিসর্জন দিয়ে ঐ পার্টি সে পূঁজিবাদীর সম্পদ রক্ষার লাঠিয়াল বাহিনীতে পরিণত হয়। শুরু হয় শ্রেণী ভুলে প্রতিপক্ষ ঘায়েল করার ঘৃণ্য প্রক্রিয়া। পূঁজিবাদী তার প্রতিপক্ষকে দমন করতে বাম আদর্শের শসস্ত্র ক্যাডারদের ইশারা করে। পড়তে থাকে লাশ। ক্যাডারদের জীবনে ঝুঁকি বাড়ে। অস্ত্র আসে, ভারী ভারী, নামী-দামী। বাড়তে থাকে ক্যাডার। অপকর্ম। ব্যক্তি নামে গড়ে ওঠে বাহিনী। লাশ পড়ে, নতুন ক্যাডার আসে, অস্ত্র আসে। পুলিশের বাণিজ্য হয়। ধরা ছোঁয়ার বাইরে থাকে পূঁজিবাদী।বাংলাদেশের সংসদ নির্বাচন এবং গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া এখন সবার কাছে পরিস্কার। বড় জোর হাজার খানেক সম্পদশালী মানুষ টাকা বিনিয়োগ করে কয়েকশ এমপি নির্বাচন করতে। মানুষ প্রভাবে, লোভে এবং বাধ্য হয়ে ভোট দেয়। গণতন্ত্রের মোড়কে নির্বাচিতরা নির্ভয়ে বিনিয়োগকৃত টাকার কয়েকগুন তুলে নেবার ব্যবসা শুরু করে। তাদের পাহারায় থাকে পোশাক পরা শসস্ত্র পুলিশ, আর্মি, র‌্যাব, বিডিআরসহ নানা রাষ্ট্রীয় বাহিনী। বড় বড় গাড়ীতে চড়ে, আশে-পাশে অস্ত্রধারী রাষ্ট্রীয় গার্ড় নিয়ে এমপি ব্যবসা করেন খাজা নগর ধান চালের চাতাল থেকে জাতীয় সংসদের ক্যান্টিন পর্যন্ত নির্বাচনী এলাকায় কারও বাড়ীতে মিলাদ মাহফিল কোন হুজুর পড়াবেন থেকে শুরু করে যাত্রা পালায় কোথাকার মেয়ে নাঁচবেন তার জন্য ওনার অনুমতি লাগবে। প্রতিশ্রুতির তকমা বাতাসে ভেসে যায়, দুদিন আগে কাঁদামাখা কৃষককে ভায়ের মমতায় জড়িয়ে ধরত, এখন চোখ জুড়ে টাকা, পাঁচতারা হোটেলের আলো আধারীর বলরুম, পৃথিলা রমনি। ভোটের বাক্সে লাথি মারো, সমাজতন্ত্র কায়েম কর- এ শ্লোগান বামপন্থী-চরমপন্থীদের নিজস্ব সম্পত্তি। জনমানুষের অর্থনৈতিক মুক্তি, শক্তিশালী সামাজিক বন্ধন গড়ে তোলা এ আদর্শের মূল ভিত্তি। কথিত গণতান্ত্রিক নির্বাচনে কুষ্টিয়ার বামপন্থীরা ব্যবহার হচ্ছে। ঘুরে ফিরে ক্ষমতার মসনদে বিএনপি-আওয়ামীলীগ। ১৯৯৬ থেকে বামপন্থীদের ভোটের রাজনীতিতে প্রবেশ চোখে পড়েছে। ২০০১ এবং ২০০৮ এর নির্বাচনে তা স্পষ্ট। বামপন্থীদের নিয়ন্ত্রিত এলাকায় প্রতিশ্রুত সাংসদ জিতেছে বিপুল ভোটের ব্যবধানে। কৃষকের সঙ্গে বামপন্থীদের দেয়া প্রতিশ্রুতিও রাখেনি বিএনপি-আওয়ামীলীগ। নির্বাচনের পরেই শুরু করেছে নিধনচক্র। চলছে। ক্রসফায়ারে সমপ্রতিকালের হত্যাকান্ডগুলো অবাক করে দেয়। আইলচারার মারফত এবং শহরের রাশিদুল। দুজনেই যুবলীগ নেতা। একজন আইলচারা ইউনিয়নের ৩ নং ওয়ার্ডের সেক্রেটারী এবং অপরজন শহর যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক। চরমপন্থী এবং খুনী হিসেবে দুজনেরই রয়েছে বড় ফিরিস্তি। ক্ষমতাসীন দলের নেতা হওয়ার পরেও ক্রসফায়ার থেকে তারা রক্ষা পায়নি। আওয়ামীলীগ দলীয় পদবী দেয়ার আগে ভালো করেই জানত তারা কারা। হয় বাধ্য হয়ে না হয় চরমপন্থীদের খুশী করতে তাদেরকে আওয়ামী পরিবারের সদস্য করতে হয়েছে। কুষ্টিয়া শহরে এরকম আরো অনেকেই আছেন, যারা ক্রসফায়ারের ভয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন কিন্তু আওয়ামী পরিবারের নেতা। ঠিক একই ভাবে গতবার বিএনপি ক্ষমতায় আসার পরে বেশ কয়েকজন বিএনপি ও যুবদল নেতা ক্রসফায়ারে নিহত হয়েছিল। যাদের সঙ্গে আলোচিত চরমপন্থী দলের ছিল গভীর সখ্যতা। মাঠ পর্যায়ের এসব নেতারাই ভোটের রাজনীতির নিয়ামক হয়ে ওঠে। চরমপন্থী আদর্শ বিচ্যুত হয়ে এখন রক্ত নিয়ে খেলছে। রাজনীতিবিদদের হাতের পুতুল। আওয়ামীলীগ-বিএনপি রাতের আধারে চরমপন্থী এবং দিনের আলোয় রাস্ট্রযন্ত্রের সশস্ত্র বাহিনীকে ব্যবহার করছে। দমন ও শোষন হচ্ছে জনগন। বিগত দিনগুলো এবং সামনের দিনগুলো পরিস্কার। ভোটের নামে দুটি দল দেশকে পাঁচ বছরের জন্য লিজ নেয়। ইচ্ছেমত চাষ করে। কোন বাঁধা নেই। ক্ষমতার দাপটে চালিয়ে যায় লুট। চোখ বন্ধ করে অথবা না দেখার ভান করে। দুদলই নিশ্চিত জানে, চুরি-ডাকাতি করার জন্য নির্দিষ্ট পাঁচ বছর বরাদ্দ। তার পর কিছু দিন আত্মগোপন। আবার রাজপথে। কিন্তু সম্পদের পাহাড় থেকে যে ঝরণা ঝরবে তা দিয়ে আরামে চলে যাবে বাকী জীবন। পরিবারের সুখ-শান্তি।

কোন মন্তব্য নেই: