সোমবার, ২৮ সেপ্টেম্বর, ২০০৯

তিন কারনে বাড়ছে চালের দাম

ই-বার্তা : তিন কারনে হঠাৎ বেড়ে গেছে চালের দাম। কারণ তিনটি হলো-ধানের দাম বৃদ্ধি, মজুতদার সিন্ডিকেটের অশুভ ইশারা ও ঈদ-পুজার ছুটি এবং বিরূপ আবহাওয়া। রমজান মাসে ব্যবসায়ীদের প্রতি সরকারের বিশেষ নজরদারি থাকায় তারা ওইসময় না বাড়িয়ে ঈদের পরপরই চালের দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। এতে করে অস্থিতিশীল হয়ে উঠেছে বাজার। দেশের সবচেয়ে বৃহত্তম ধান চালের মোকাম কুষ্টিয়ার খাজানগর-আইলচারা ঘুরে এসব তথ্য জানা গেছে।চিকন চাল বিশেষ করে মিনিকেট চালের জন্য বিখ্যাত কুষ্টিয়ার মোকাম। এখানকার পাঁচশতাধিক রাইচমিলে প্রতিদিন ১হাজার ৫শত থেকে ১হাজার ৮শত টন চাল উৎপাদন হয়ে থাকে। এখানকার চিকন চাল দেশের গন্ডি পেরিয়ে ইউরোপে ভাল বাজার সৃষ্টি করেছে। এই মোকামের চালকল মালিক ও ব্যবসায়ীদের উপর অনেকাংশেই নির্ভর করে সারাদেশের চালের বাজার। ঈদের পর হঠাৎ করে চালের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় সবার দৃষ্টি পড়ে এই মোকামের দিকে। রোববার বিকেলে এই মোকামে গিয়ে প্রত্যেক ধান চাতাল কর্মব্যস্ত দেখা যায়। ঈদ এবং পুজার ছুটিতে গিয়ে অনেক শ্রমিক এখনো ফিরে আসেনি। এছাড়াও গত সপ্তাহে কয়েকবার বৃষ্টি হয়েছে। যে কারেন ধানের খোলায় কোন কাজই হয়নি। এতে চাল উৎপাদন কিছুটা বাধাগ্রস্থ হচ্ছে। মিথিলা ফুড প্রডাক্ট নামের চালকলের মালিক মাহাবুব রহমান ই-বার্তাকে বলেন, দু-এক দিনের মধ্যেই এটা স্বাভাবিক হয়ে যাবে। এবং এ কারনে যে টুকু দাম বেড়েছে তা হয়তো কভার হবে। কিন্তু ধানের দাম এখন বাড়তেই থাকবে। যে কারনে চালের বাজারও উঠতির দিকেই থাকবে। যে কয়েকজন চালকল মালিকের সাথে কথা হয়েছে তাদের সবাই বলেছেন, প্রধানতঃ মৌসুমের শেষের দিকে এসে এ সময় ধানের দাম বৃদ্ধি পায়। সে কারনেই বেড়ে যায় চালের দাম। গত একমাসের মধ্যে ধানের দাম মনপ্রতি ১শ’ টাকার উপরে বেড়েছে। বর্তমানে ধান কিনতে হচ্ছে প্রতিমন (৪০ কেজি) ৭শ’ ৩০ থেকে সাড়ে ৭শ’ টাকায়। এক মাস আগেও ধানের দাম ছিল ৬শ’ থেকে ৬শ’২০ টাকা। রমজান মাসেও মিনিকেট ভাল চাউল প্রতিমন (৪০ কেজি) বিক্রি হয়েছে ১১২০ থেকে ১১৫০ টাকা পাইকারি বিক্রি হয়েছে। ঈদের পর হঠাৎ করে একলাফে এই চালের দাম বাড়িয়ে নেয়া হচ্ছে ১৩২৫ থেকে ১৩৫০ টাকা। মোটা চালের ক্ষেত্রেও একই অনুপাতে দাম বেড়েছে। খুচরা বাজারে যে চাল ২২ টাকা কেজি বিক্রি হয়ে তা ঈদের পর এসে ২৫ থেকে ২৬টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। মিনিকেট চালের সবচেয়ে বড় ব্যবসায়ী কুষ্টিয়ার আইলচারার রশিদ এগ্রো ফুড প্রোডাক্ট লিমিটেড নামের অটোমেটিক রাইট মিলের মালিক আব্দুর রশিদ ই-বার্তাকে বলেন, সম্প্রতি ধানের দাম বেড়েছে খুব বেশি। যে কারনে চালের বাজারে প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। তিনি বলেন বেশ কিছুদিন ধরেই ধানের দামের সাথে চালের দামের সামঞ্জস্য নেই। রোজার মাসে চালের চাহিদা কম ছিল। প্রোডাকশনও কম হয়েছে। রোজার আগেও ধানের দাম বেশি চাউলের দাম কম এম একটা পর্যায় ছিল। এভাবেতো দীর্ঘদিন চলতে পারে না। হয় ধানের দাম কমবে না হয় চাউলের দাম বাড়বে। রোজার শেষে চাউলের ডিমান্ড বাড়ছে। এ কারনে চালের দামও বেড়ে গেছে। তবে সাধারন ব্যবসায়ী বা ছোট মানের রাইচমিলের মালিকরা জানান, সারাদেশে ৫/৬জন বড় ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট করে ধান-চালের বাজার নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। কৃষকের হাতে এখন আর ধান নেই, অধিকাংশই কিনে নিয়েছে ওই সিন্ডিকেট। এখন তারা কি পরিমান চাল বাজারে ছাড়বে, আর কি দাম নির্ধারন করবে তার উপর নিভর করছে চালের বাজার। চালকল মালিক শহীদুল ইসলাম, আনোয়ারুল ও শরীফুল ইসলাম বলেন, আর ৩/৪ সপ্তাহ পর থেকেই ধানের অভাবে বন্ধ হতে থাকবে ছোট আকৃতির চালকলগুলো। তখন একক আধিপত্য সৃষ্টি হবে সিন্ডিকেটভূক্ত ব্যবসায়ীদের। চাল সিন্ডিকেটের অন্যতম নেতা কুষ্টিয়ার রশিদ এগ্রো ফুডের মালিক আব্দুর রশিদ এসব অভিযোগ অস্বীকার করেন। ঈ-বার্তাকে তিনি বলেন, গুদামজাত করে ব্যবসা করার সুযোগ নাই। কারণ সবাই সীমিত পূঁজি নিয়ে ব্যবসা করে। তার মতে কোন ব্যবাসায়ীই মজুদ করে লাভবান হতে পারেনা। কারণ, মজুত করে ব্যবসা করতে হলে যে টাকার মাল আটকা পড়ে থাকে তার ব্যাংক ইন্টারেষ্ট হিসেব করে বাদ দিলে অতিরিক্ত কোন লাভই হয়না। তাছাড়াও মজুদ করে রাখলে মনপ্রতি ৪/৫ কেজি চাল ঘাটতি হয়। সব হিসেব করে দেখা যায়, এভাবে মজুদ করে ধান চালের ব্যবসা করলে লাভের চেয়ে লোকসানই বেশি। তবে, আমরা মিল সার্বুক্ষনিক রানিং রাখার জন্য ১মাসের ধান মজুত রাখি। তিনি বলেন, এরকম মজুত করে রাখার ক্ষমতা সবার নেই। আপনার বিরুদ্ধে মজুদের অভিযোগ কেন? এ প্রশ্নের জবাবে রশিদ বলেন, আমার বড় ব্যবসা, আমার প্রতিদিন ৩শ থেকে ৪শ টন চাল প্রডাকশন হয়। মাঝারি মিলগুলোর প্রডাকশন মাত্র ৫০টন। আমার গুদাম বেশি, আমার মিলের আকার বড়। গাড়ী লোড হয় বেশি একারনে মানুষের এমন ধারণা। তিনি বলেন, বর্তমানে তার মজুদ ভাল নেই। ৫হাজার টন ধান রয়েছে। কিন্তু খোজ নিয়ে দেখা গেছে রশিদ এগ্রোর আইলচারা ছাড়াও দেশের বিভিন্ন স্থানে গুদাম রয়েছে। সব মিলিয়ে তার কাছে দেড় লাখ টন ধান মজুত আছে বলে অভিযোগ রয়েছে। ভবিষ্যতে চালের বাজার কেমন থাকবে এমন প্রশ্নের জবাবে আব্দুর রশিদ বলেন, সস্তা চিন্তা করা আদৌ ঠিক না। চাল সস্তা খেতে গেলেতো ধান প্রডাকশনই হবে না। কৃষকরাতো লোকসান দিয়ে ধান আবাদ করবে না। সবদিকেই আমাদের খেয়াল রাখা উচিত। তবে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন মজুতদার ব্যবসায়ীদের উপর নজরদারি থাকায় রমজান মাসে যেমন চালের দাম কম ছিল সরকার উদ্যোগ নিলে তেমনিভাবে অস্থিতিশীল হয়ে ওঠা চালের বাজারও নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। এর জন্য সবচেয়ে আগে দরকার ধান চাল মজুতদারদের সিন্ডিকেট ভাঙ্গা।

কোন মন্তব্য নেই: