মঙ্গলবার, ২৩ জুন, ২০০৯

কুষ্টিয়ার খাদ্য গুদাম থেকে ১৫ টাকা দরে টিআরের চাল কিনে গুদামেই ২২ টাকায় বিক্রি


স্টাফ রিপোর্টার, কুষ্টিয়া ॥ কুষ্টিয়ায় সরকারী খাদ্য সংগ্রহ অভিযানে আরো অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেছে। টিআর হিসেবে বরাদ্দ পাওয়া চাল গুদাম থেকে ১৫ টাকা দরে কিনে আবার খাদ্য সংগ্রহ অভিযানের আওতায় ২২ টাকা দরে ওই গুদামেই বিক্রি করছেন অসাধু ব্যবসায়ীরা। আর এ কাজে সহযোগিতা করে খাদ্য কর্মকর্তারা প্রতি টনে হাতিয়ে নিচ্ছেন কমপক্ষে ২ হাজার ৩শ’ টাকা। এছাড়াও এ ব্যাপারে বিভিন্ন পত্রিকা ও টেলিভিশন চ্যানেলে সংবাদ প্রকাশ হওয়ার পর তদন্তের হাত থেকে বাঁচতে ব্যবসায়ীদের নিকট থেকে টনপ্রতি আরো ৫শ’ টাকা করে গ্রহন করা হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
কুষ্টিয়া সদর উপজেলা প্রকল্প কর্মকর্তা (পিআইও) আবু সোয়েব খান জানান, টিআর বিশেষ বরাদ্দে প্রথম পর্যায়ে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের উন্নয়নকল্পে মোট ২৫০ টন ও সাধারন বরাদ্দের আওতায় ২১৭ টন চাল বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। তিনি বলেন, বরাদ্দের এ চাল প্রতিষ্ঠানের উন্নয়ন প্রকল্প কমিটির সভাপতি (সিপিসি) তুলে নিয়ে বিক্রি করে সে টাকা দিয়ে প্রতিষ্ঠানের উন্নয়ন কাজ করছেন। তিনি বলেন, সরকারিভাবে বরাদ্দে পাওয়া প্রতিটন চালের মূল্য ২৯ হাজার ৪শ’ ২৯ টাকা নির্ধারিত থাকলেও স্থানীয়ভাবে তা ১৫ হাজার টাকার বেশি দরে বিক্রি হচ্ছেনা। তবে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই প্রকল্পের কোন কাজ না করে ডিও’র মাধ্যমে এসব চাল তুলে নেয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ব্যাপারে আবু সোয়েব খান বলেন, এরকম অভিযোগ আমার কাছেও আছে। অনেক স্থানে গোপনে তদন্ত করা হয়েছে। অভিযোগের সত্যতা পাওয়ায় ওইসব সিপিসি বরাবর চিঠি দেয়া হয়েছে। এরপর তাদের অনেকেই নতুন করে কাজ শুরু করেছে।
অভিযোগ রয়েছে, সিপিসিগন নিজেরা চাল উত্তোলন না করে ব্যবসায়ীদের নিকট বিক্রি করে দিচ্ছেন। পিআইও অফিসের বরাদ্দ অনুযায়ী সদর উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক আব্দুল ওয়াহেদ-এর ডিও নিয়ে ব্যবসায়ীরা চলে যাচ্ছেন খাদ্য গুদামে। কুষ্টিয়া সদরে রয়েছে দু’টি খাদ্য গুদাম। প্রথমে জগতি গুদামে চাল দেয়া শুরু হয়। সেখানে চলমান সংগ্রহ অভিযানের সংগৃহিত চাল সরবরাহ করা হয়। প্রকৃত চালকল মালিক, ট্রাক শ্রমিক ও সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, ব্যবসায়ীরা সিপিসিদের নিকট থেকে ১৩ থেকে ১৫টাকা কেজি দরে ওইসব চাল কিনে গুদাম থেকে বাইরে নিয়ে আবার ওই গুদামেই ফেরত নিয়ে এসে খাদ্য সংগ্রহ অভিযানের আওতায় ২২ টাকা দরে বিক্রি করছেন। এখানে খাদ্য কর্মকর্তারা দু’ভাবে অর্থ আদায় করছেন। প্রথমে যখন টিআরের চাল সরবরাহ করছেন তখন ৮৫ কেজির বস্তায় ভরে দিচ্ছেন। সরকারি ওই বস্তা ফ্রি দেয়া হলেও বস্তার ওজনসহ চাল দেয়া হচ্ছে। এতে করে বস্তার ওজন বাবদ ১ কেজি করে চাল কম দিচ্ছেন। এভাবে প্রতি টনে ১৩ কেজি করে চাল বাঁচাচ্ছেন যার মূল্য প্রায় ৩শ’ টাকা। আর ওই চাল যখন সংগ্রহ অভিযানের আওতায় গ্রহন করছেন তখন কমিশন হিসেবে নিচ্ছেন টনে ২ হাজার টাকা। জগতি খাদ্য গুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শাহ নেওয়াজের নিকট জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, টিআর হিসেবে নতুন পুরাতন উভয় চালই সরবরাহ করা হয়েছে। এ বিষয়টি জানাজানি হবার পর ওই গুদামে টিআরের চাল সরবরাহ বন্ধ করে সদর খাদ্য গুদাম থেকে সরবরাহ শুরু হয়। গতকাল দুপুরে সদর খাদ্য গুদামে গিয়ে ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আব্দুর রউবকে পাওয়া যায়নি। সেখানে দেখা যায়, সিপিসিদের উপস্থিতি ছাড়াই টিআরের চাল সরবরাহের উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। সাংবাদিকদের উপস্থিতি টের পেয়ে তড়িঘড়ি করে টিআর চাল সরবরাহ বন্ধ করা হয়।
এদিকে খোজ নিয়ে জানা গেছে, পুরাতন ময়লা ধরা চাল টিআর হিসেবে উত্তোলন করে তা আবার গুদামে সরবরাহ করার জন্য কুষ্টিয়ার চালের মোকাম খাজানগরে ১৪/১৫টি কালার সাটার মিল স্থাপন করা হযেছে। সেখানে ময়লা চাল নিয়ে রি ফাইন করতে কেজিতে খরচ হচ্ছে ৫০ থেকে ৭০ পয়সা। সদর উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক আব্দুল ওয়াহেদ বিষয়টির সত্যতা স্বীকার করেন। তিনি বলেন, রি ফাইন করা চাল অন্য উপজেলায় নিয়ে গুদামে সরবরাহ করছেন ব্যবসায়ীরা।

কোন মন্তব্য নেই: