সোমবার, ১৫ জুন, ২০০৯

কুষ্টিয়া ফিরছে শীর্ষ সন্ত্রাসীরা, আবার এলাকা নিয়ন্ত্রণে ততপর

কুষ্টিয়া ফিরছে শীর্ষ সন্ত্রাসীরা, আবার এলাকা নিয়ন্ত্রণে পর
মুন্সী তরিকুল ইসলাম :
দীর্ঘদিন দেশের বিভিন্ন স্থানে ও বিদেশে পালিয়ে থাকা জেলার শীর্ষ সন্ত্রাসীরা একে একে আবার ফিরে আসছে দক্ষিন পশ্চিমাঞ্চলের সবচেয়ে সন্ত্রাস কবলিত এলাকা কুষ্টিয়ায়। এদের অনেকে নিজ নিজ এলাকায় ফিরে এসে ছিনতাই, চাঁদাবাজি, সন্ত্রাস, ডাকাতিসহ নানা অপরাধ কর্মকান্ডে জড়িয়ে পড়েছে। সরকারি দলের নাম ভাঙানোর কারণে আইন-শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা তাদের গ্রেফতার করছে না বলে অভিযোগ উঠেছে। বিগত সংসদ নির্বাচনের আগে ও পরে আসা সন্ত্রাসীরা এখন বহাল তবিয়তেই আছে। নির্বাচন-পরবর্তী সময়ে পুলিশ, র‌্যাবসহ বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা শীর্ষ সন্ত্রাসীদের মধ্যে একজনকেও গ্রেফতার করতে পারেনি। সাম্প্রতিক সময়ে বেশ কয়েকজন বড় মাপের সন্ত্রাসী জামিন নিয়ে জেল থেকে বেরিয়ে গেলেও আইন-শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা তাদের ব্যাপারে কিছু করেনি। গত মাসের শেষে আন্ডারওয়ার্ল্ডের শীর্ষ সন্ত্রাসী বখতিয়ার পুলিশের হাতে ধরা পড়লেও সরকারী দলের নেতা পরিচয়ে দিব্যি কারাগারে চলে গেছে। বখতিয়ার দীর্ঘদিন ধরে পালিয়ে থাকলেও এবারই প্রথম গ্রেপ্তার হয় সে। যৌথ বাহিনীর অভিযান শুরু হওয়ার পর সে আত্মগোপনে চলে যায়। তবে এ বিষয়ে পুলিশ কিছুই জানাতে পারেনি।
আন্ডারওয়ার্ল্ড নিয়ন্ত্রণ করতে থানাপাড়ার ডন বলে পরিচিত এক শীর্ষ সন্ত্রাসী গত কয়েক বছর আত্মগোপনে থাকার পর মাস দুয়েক এলাকায় ফিরে তার সহযোগিদের সঙ্গে বৈঠক করেছে। ২০০৩ সালে এই শীর্ষ সন্ত্রাসীর নিয়ন্ত্রনে বাহিনী গড়ে তুলে কুষ্টিয়া শহরে অবাধে মাদক ব্যবসা হতো। সে সময় তার আনা এক চালানের বিষাক্ত এ্যালকোহল পান করে কুষ্টিয়ার ১৪ জন মানুষ মারা গেলে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি হয়। তখন উচ্চ পর্যায়ের নির্দেশে কুষ্টিয়ার মাদক সম্রাটদের একটি তালিকা তৈরি করে পুলিশ। সে তালিকায় শীর্ষস্থান দখল করে ওই শীর্ষ সন্ত্রাসী। এরপর থেকেই থানাপাড়ার ডন বলে ব্যাপক পরিচিত হয়ে ওঠে সে। সেই মাদক ব্যবসা বখরা তোলার অভিযোগে কুষ্টিয়া সদর থানার তৎকালীন টিএসআই (বর্তমানে খোকসা থানার ওসি) আতিয়ার রহমানকে পাবনা জেলায় ষ্ট্যান্ডরিলিজ করে তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় তদন্তের জন্য এ্যাডিশনাল এসপির নেতৃত্বে তদন্ত টিমও গঠন করেন তৎকালীন পুলিশ সুপার আব্দুস সালাম। এরপরের বছর থেকে ক্রসফায়ার শুরু হলে জীবন বাচাতে কুষ্টিয়া থেকে পালিয়ে আত্মগোপনে চলে যায় থানাপাড়ার এই ডন। দীর্ঘদিন পর এখন এলাকায় ফিরেই রাতারাতি সরকারী দলের নেতা হবার চেষ্টায় দৌড়ঝাপ শুরু করেছে সে।
গত ৫ মাসে বড় ধরনের খুন-খারাবি ও বোমাবাজির ঘটনা ঘটলেও আশংকাজনকহারে বেড়ে গেছে চাঁদাবাজি। সেই সঙ্গে ছিনতাই, ডাকাতির ঘটনাও ঘটছে। হঠাৎ করে সন্ত্রাসীদের দৌরাত্ম্য আবার বেড়ে যাওয়ায় জনমনে উদ্বেগ ও আতংক দেখা দিয়েছে।
তবে কুষ্টিয়ার ভারপ্রাপ্ত পুলিশ সুপার এ আর এম আলিফ বলেন, আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি দেশের অন্য যে কোন শহরের চেয়ে কিছুটা খারাপ। এপ্রিলের তুলনায় মে মাসে অপরাধের ঘটনা তুলনামুলক কম ছিল। এ মাসে এখন পর্যন্ত আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি মোটামুটি। কিছু চুরি-ডাকাতির ঘটনা ঘটলেও থানায় মামলা না করার কারণে রহস্য উদঘাটন করা যাচ্ছে না। শীর্ষ সন্ত্রাসী বিদেশ থেকে কে ফেরত আসছে কে যাচ্ছে সেটা বড় কথা নয়। কথা হচ্ছে অপরাধ বা সন্ত্রাস করলে তাকে ধরা পড়তেই হবে। অপরাধ নিয়ন্ত্রণে তৈরি ক্রিমিনাল ডাটাবেজও কাজে দেবে বলে তিনি জানান।
সহকারী পুলিশ সুপার (হেডকোয়ার্টার) আলমগীর হোসেন বলেন, আগের মাসগুলোর চেয়ে গত এক মাসে জেলার আইন-শৃঙ্খলার উন্নতি হচ্ছে। মাদক ও সন্ত্রাস বিরোধী অভিযান জোরদার করা হয়েছে। বিদেশ থেকে কোন কোন সন্ত্রাসী ফিরছে, এলাকায় সন্ত্রাসী কর্মকান্ড করছে কিনা তা পুলিশ সার্বক্ষণিক মনিটরিং করছে।
অভিযোগ উঠেছে, সন্ত্রাসীরা ফিরে এসে শুধু সন্ত্রাস, চাঁদাবাজিতে লিপ্ত রয়েছে তা নয়, তারা একে অপরকে ঘায়েল করার জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছে। চাঁদাবাজির ভাগবাটোয়ারা, জায়গা দখল, জল মহাল-বালু মহাল দখলসহ ঠিকাদারি নিয়ে তারা বিরোধে জড়িয়ে পড়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, গত কয়েক মাস আগে জামিনে একে একে বেরিয়ে এসেছে দুর্ধর্ষ শীর্ষ সন্ত্রাসী মিলপাড়ার রাশিদুল, আনছু, নাহিদ, পলকসহ অন্তত দু’ডজন। শোনা গেছে রাশিদুল এখন ভাল মানুষ হবার চেষ্টায় আছে। তবে স্থানীয়রা বলছে, বড় ভাই শীর্ষ সন্ত্রাসী মাদক স¤্রাট হামিদুল জেল থেকে বেরুনোর পর কি হয় সেটিই এখন দেখার বিষয়। এছাড়া ক্ষমতাসীন দলীয় পরিচয়ে শীর্ষ সন্ত্রাসীরা এখন এলাকায় বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকান্ড চালিয়ে যাচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে। এদিকে থানাপাড়া, কুঠিপাড়া, কোর্টপাড়া, মিলপাড়া, আমলাপাড়া, আড়–য়াপাড়া, কালিশংকরপুর, হরিশংকরপুর, মজমপুর, হাউজিংসহ মহল্লার সন্ত্রাসীরা এলাকায় আধিপত্য বিস্তারের পাশাপাশি চুরি-ডাকাতি, ছিনতাই, সন্ত্রাস, চাঁদাবাজিতে লিপ্ত রয়েছে। এদিকে, শহরের মিউনিসিপ্যালটি বাজার, এন এস রোড, এবং রেজিষ্ট্রি অফিসে থানাপাড়ার মুখচেনা ১০-১২ জন সন্ত্রাসী চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকান্ড চালাচ্ছে। জেলা পরিষদ, পানি উন্নয়ন বোর্ড (জিকে), রেনউইক, কাষ্টমস, সড়ক ও জনপথ, এলজিইডি, সিভিল সার্জন অফিস, জগতি সুগার মিল, ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো, শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর, পিটিআইসহ শহর এলাকায় অবস্থিত সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন অফিস আলোচিত শীর্ষ চরমপন্থী-সন্ত্রাসীদের পাশাপাশি নিয়ন্ত্রণ করছে কয়েকটি গ্যাং গ্র“প।

কোন মন্তব্য নেই: