শনিবার, ২৭ জুন, ২০০৯

কুষ্টিয়ার উপজেলা চেয়ারম্যানরা হতাশ, অলস বসে সময় কাটে

হাসান জাহিদ
ক্ষমতা, কাজ, ভাল অফিস রুম, গাড়ী বরাদ্দ না পাওয়া ও সরকারের অবহেলা চরম হতাশ উপজেলা চেয়ারম্যানরা। অনেক আশা ও প্রতিশ্র“তি নিয়ে উৎসাহ উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে উপজেলা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল। কিন্তু সরকারের চরম অবহেলায় সে উৎসাহে ভাটা পড়েছে। অনেক চেয়ারম্যান চরম ক্ষোভও প্রকাশ করেন। নির্বাচন করার জন্য যত তড়িঘড়ি করা হয়েছিল নির্বাচন শেষে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি নিয়ে সরকারের ঠিক ততই গা-ঢিলাভাব দেখা যাচ্ছে। সরকারের কোন দিক নির্দেশনা নেই। কেউ কেউ বলেন, কবে এসবের সমাধান হবে তারও কোন আলামত দেখতে পাচ্ছিনা। সরকার শুধু প্রতিশ্র“তিই দিয়ে যাচ্ছে। নির্বাচনের ৫ মাস পেরিয়ে গেল যে সব জনগন অনেক আশা নিয়ে আমাদের ভোট দিয়েছিল তাদের জন্য কিছুই করতে পারছি না।
কুষ্টিয়া জেলায় ৬টি উপজেলা। চরম ঢাক ঢোল পিটিয়ে হৈ হুল্লোড় করে গত ২২ জানুয়ারি এখানে ভোট অনুষ্ঠিত হয়। তিন উপজেলায় জয়লাভ করে আওয়ামী লীগ সমর্থিত চেয়ারম্যান। আর দু’টিতে জয়লাভ করে জামায়াতের প্রার্থী। বাকী একটিতে জয়লাভ করে জাতীয় পাটির প্রার্থী। এরমধ্যে জেলা জাতীয় পার্টির সদস্য সচিব ভেড়ামারা উপজেলা চেয়ারম্যান আব্দুর রাজ্জাক হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে গত ৯ জুন মঙ্গলবার ঢাকার বারডেম হাসপাতালে ইন্তেকাল করেন। আব্দুর রাজ্জাক ভেড়ামারার বাহাদুরপুর ইউনিয়নের একটানা ৬বার চেয়ারম্যান ছিলেন। জনপ্রিয় এ ব্যক্তি গত উপজেলা নির্বাচনের সময় ইউনিয়ন পরিষদ ছেড়ে বৃহত্তর মানুষের সেবা করতে উপজেলা নির্বাচনে অংশ নিয়ে বিপুল ভোটে জয়লাভ করেন। কিন্তু চরম হতাশা নিয়েই তাকে জীবনের শেষ দিনগুলি কাটাতে হয়েছে। বৃহত্তর এলাকার মানুষের জন্য কিছুই করতে পারেননি।
জেলার সবচে বড় উপজেলা দৌলতপুর। এখানকার চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি হারেজ উদ্দিন। এ ব্যাপারে হারেজ উদ্দিনের সাথে কথা হলে তিনি চরম হতাশা ব্যক্ত করেন। তিনি বলেন, এর জন্য কি এত কষ্ট করে নির্বাচন করেছিলাম। কত ষড়যন্ত্র পার করে জয়লাভ করেছিলাম। সরকার আমাদের একবারেই অবমূল্যায়ন করছে। এতে করে সরকারেরই ভবিষ্যত নষ্ট হচ্ছে। তিনি বলেন, একই ভোটারের মধ্যে নির্বাচন করে জনপ্রতিনিধি হয়ে একজন সংসদ সদস্য হয়েছে। সরকারের দিক নির্দেশনা না থাকায় সেইসব এমপি এমনকি ইউএনও কেউই আমাদের কেয়ার করেনা। দীর্ঘদিন আগে উপজেলা চেয়ারম্যান যে রুমে বসতেন সেই রুমে আমাদের বসার স্থান হয়েছে। কিন্তু বসে কি করবো। একটু গল্প গুজব করে চলে যাই। দু-একটি অনুষ্টানে প্রধান অতিথি থাকি। এই হলো কাজ। তিনি আফসোস করে বলেন, উপজেলায় ৯০ টি প্রাথমিক বিদ্যালয় মেরামতের জন্য ২৭ লক্ষ টাকা বারদ্দ এসেছে। ইউএনও তার ইচ্ছামতো এগুলো বন্টন করছেন। জনপ্রতিনিধি তদারক না করায় এসব কাজে অনিয়মের সম্ভাবনাই বেশি। টিআর, কাবিখা ভাগ করেন এমপি সাহেব। উপজেলা চেয়ারম্যান হারেজ উদ্দিন বলেন, আমাদের চেয়ে একজন ইউনিয়ন চেয়ারম্যানেরও বেশি মর্যাদা আছে। ৬ মাস হয়ে যাচ্ছে সরকার আমাদের মর্যাদা দেবার প্রতিশ্রি“তিই দিয়ে যাচ্ছে। এভাবে দিন দিন আমাদের বেইজ্জতি করা হচ্ছে।
কুষ্টিয়া সদরের উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন উপজেলা জামায়াতের আমীর মোশারফ হোসেন। তিনি বসছেন উপজেলা পরিষদে ইউএনওর পাশের রুমে। তিনি বলেন, এখানে বসে মানুষের সাথে গল্প করা ছাড়া কোন কোজ নেই। অনেক আন্দোলনের পর সরকার গত মে মাসে একটি পরিপত্র জারি করেন। সেখানেও স্পষ্ট কোন গাইড লাইন নেই। দিন দিন আমাদের হতাশা বাড়ছে। ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরন ও স্থানীয় সরকারকে শক্তিশালী করতে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের উদ্যোগ এখন একেবারে জলে যেতে বসেছে। তিনি বলেন জানগনের জন্য কিছই করতে পারছি না। এটাই সবচে বড় আফসোস। তবে কবে আামাদের কাজ হবে, ক্ষমতা পাবো তাও অনিশ্চিত।
কুমারখালী উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন প্রভাবশালী আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুর রউফ। তিনি অনেকটা জোর করেই উপজেলা পরিষদের সভাকক্ষ নিজের অফিস বানিয়ে নিয়েছেন। উপজেলা চেয়ারম্যান ক্ষমতা ও মর্যাদা প্রতিষ্ঠার আন্দোলনের তিনি একজন অন্যতম নেতা। যার কারনে বেশিরভাগ সময় তিনি ঢাকা বা অন্য জেলায় সময় কাটান। আব্দুর রউফ বলেন, সরকার উপজেলা পরিষদ গঠন করে, জনপ্রতিনিধি নির্বাচন করে। আমাদের মর্যাদা রক্ষা করা সরকারেরই দায়িত্ব। এরজন্য আজ আমাদের আন্দোলন করতে হচ্ছে এটা খুবই দুখঃজনক।
খোকসা উপজেলা চেয়ারম্যান উপজেলা সদর উদ্দিন খান বলেন, নির্বাচন অনুষ্ঠানের একমাস পরে হয় শপথ অনুষ্ঠান। তাও আবার অনাড়ম্বর। আমরা চরম উৎসাহ নিয়ে গাড়ীর বহর নিয়ে শপথ নিতে যাই। তবে শপথ নিয়ে ফিরে এলে উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যানদের ঠিকমতো রিসিভ করেন নি। অনেকেই অভিযোগ করেছেন, দীর্ঘদিন ধরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাগন একাই উপজেলা শাসন করে আসছেন, সেখানে তারা চেয়ারম্যানদের উটকো ঝামেলা ভাবছেন।

কোন মন্তব্য নেই: