রবিবার, ১৪ জুন, ২০০৯

পশ্চিমের জেলাগুলোতে এবার ভুট্টা চাষে লক্ষ্যমাত্রা অর্জন হয়নি

পশ্চিমের জেলাগুলোতে এবার ভুট্টা চাষে লক্ষ্যমাত্রা অর্জন হয়নি
গত বছর উৎপাদিত ভুট্টার দাম না পেয়ে চলতি রবি মৌসুমে দেশের পশ্চিমের জেলাগুলোতে চাষিরা ভুট্টা চাষ কমিয়ে দিয়েছে। গত বছর রেকর্ড পরিমাণ জমিতে ভুট্টা চাষের পর এবার ভুট্টা চাষ লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়নি। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানায়, চলতি মৌসুমে কুষ্টিয়া জেলায় ভুট্টা চাষের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১৬ হাজার হেক্টর। চাষ হয়েছে ৭ হাজার একশ হেক্টরে। চুয়াডাঙ্গা জেলায় ভুট্টা চাষের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩৩ হাজার একশ হেক্টর। চাষ হয়েছে ১৩ হাজার ৯শ ৫৫ হেক্টরে। মেহেরপুর জেলায় লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৫ হাজার হেক্টরের স্থলে ৮শ ৯৩ হেক্টরে, ঝিনাইদহ জেলায় চাষ লক্ষ্যমাত্রা ১৪ হাজার হেক্টরের স্থলে ৩ হাজার ৭শ ৫ হেক্টরে, যশোর জেলায় লক্ষ্যমাত্রা ৪শ হেক্টরের স্থলে একশ হেক্টরে, মাগুরা জেলায় চাষ লক্ষ্যমাত্রা ২শ হেক্টরের স্থলে ৩৩ হেক্টরে চাষ হয়েছে। নড়াইল একশ হেক্টরে লক্ষ্যমাত্রা ছিল। এ জেলায় এবার ভুট্টা চাষ হয়নি। খুলনা জেলায় মাত্র এক হেক্টরে এবং বাগেরহাট জেলায় ২৪ হেক্টরে ভুট্টা চাষ হয়েছে।
গত রবি মৌসুমে (২০০৭-২০০৮) কুষ্টিয়া জেলায় ১৮ হাজার ৪শ ৯৬ হেক্টরে, চুয়াডাঙ্গা জেলায় ৪৩ হাজার ৪শ হেক্টরে, মেহেরপুর জেলায় ৭ হাজার হেক্টরে, ঝিনাইদহ জেলায় ১৭ হাজার ৫শ৫৫ হেক্টরে, যশোর জেলায় ৪শ৫৫ হেক্টরে, মাগুরা ৩শ৬৪ হেক্টরে এবং নড়াইল জেলায় একশ ২০ হেক্টরে ভুট্টা চাষ হয়েছিল। নতুন ভুট্টা উঠার পর প্রতিমণ (৪০ কেজি) সাড়ে ৫শ টাকা থেকে ৬শ টাকা দরে বিক্রি হয়। অর্থাৎ প্রতি কেজি ১৪-১৫ টাকা দরে বিক্রি হয়। এ সময় চালের দাম অত্যন্ত চড়া থাকায় দরিদ্র মানুষ স্বল্প পরিসরে গমের সাথে ভুট্টা মিশিয়ে আটা তৈরি শুরু করে। ওই আটা দিয়ে তারা রুটি তৈরি করে খেত। কিন্তু চালের এবং আটার দাম কমে গেলে খাদ্য হিসাবে ভুট্টার ব্যবহার বন্ধ হয়ে যায়। দামও কমতে শুরু করে। এক পর্যায়ে ভুট্টার দাম প্রতি কেজি সাড়ে ৮ টাকায় নেমে আসে।
চাষিদের লোকসান হয়। এ কারণে চাষি ভুট্টার বদলে অন্য ফসল চাষে ঝুঁকেছে। অতীতেও এ অঞ্চলে সামান্য পরিমাণ জমিতে চাষিরা ভুট্টার চাষ করতো। বাজারজাতকরণে কোন সমস্যা হয় না। ২০০৭ সালে প্রতিমণ (৪০ কেজি) ভুট্টা ৯শ টাকা পর্যন্ত দরে বিক্রি হয়। লাভ বেশি হওয়ায় গত বছর চাষিরা ভুট্টা চাষে ঝুঁকেছিল। দাম পড়ে যাওয়ায় এবার চাষ কমে গেছে। আগে দেশী জাতের ভুট্টার চাষ হতো। এখন হাইব্রিড জাতগুলো চাষ হচ্ছে। চাষিদের সাথে কথা বলে জানা যায়, একবিঘা জমিতে ভুট্টা চাষে ৬-৭ হাজার টাকা ব্যয় হয়। মাঠ পর্যায়ের কয়েকজন কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা জানান, ভুট্টা চাষে সার বেশি লাগে। হেক্টর প্রতি ৫শ ৬৫ কেজি ইউরিয়া, ২শ ৯০ কেজি টিএসপি, ২শ ২০ কেজি এমপি, ২শ ৮০ কেজি জিপসাম ও ২০ কেজি দস্তা সার লাগে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানায়, বিশ্বের অনেক দরিদ্র দেশে ভুট্টা প্রধান খাদ্যশস্য হিসেবে ব্যবহার হয়ে থাকে। বিশেষ করে দক্ষিণ আমেরিকা ও আফ্রিকার দেশগুলোতে খাদ্যশস্য হিসেবে ভুট্টার ব্যবহার বেশি হয়ে থাকে। ভুট্টা দিয়ে নানাবিধ খাদ্য তৈরি করা যায়।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কুষ্টিয়া অঞ্চলের উপ-পরিচালক এস এম সামসুল আনোয়ার জানান, দাম ভাল পাওয়ায় চাষিরা ধানী জমিতে ভুট্টা চাষ শুরু করেছিল। গত বছর ভুট্টা চাষে ক্ষতি হওয়ায় এবার অন্য ফসল চাষ করছে।

কোন মন্তব্য নেই: