শনিবার, ১৩ জুন, ২০০৯

কুষ্টিয়ায় ব্যাঙের ছাতার মত গড়ে উঠেছে কোচিং সেন্টার

স্কুল-কলেজে শিক্ষা ব্যবস্থায় বেহাল দশা
কুষ্টিয়ায় ব্যাঙের ছাতার মত গড়ে উঠেছে কোচিং সেন্টার
তৌহিদ শেখর
প্রশাসনের চরম উদাসীনতা ও সুষ্ঠ নজরদারী না থাকায় কোন রকম নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করে কুষ্টিয়া শহরের আনাচে-কানাচে ব্যাঙের ছাতার মত গড়ে উঠেছে অসংখ্য কোচিং সেন্টার। ফলে স্কুল-কলেজ গুলোতে শিক্ষা ব্যবস্থায় সৃষ্টি হয়েছে বেহাল দশা। ছাত্র ছাত্রীরা ভাল ফলাফলের আশায় জমকালো প্রচার-প্রচারণার ফাঁেদ পড়ে স্কুল কলেজের ক্লাস বাদ দিয়ে এখন কোচিং সেন্টার গুলোতে ভর্তি হতে বাধ্য হচ্ছে। আর এই সুযোগে একশ্রেণীর সুবিধা ভোগীরা শিক্ষাকে হাতিয়ার হিসাবে ব্যবহার করে লুফে নিচ্ছে লক্ষ লক্ষ টাকা। অথচ এ ব্যাপারে স্থানীয় প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্ট কারোই কোন মাথা ব্যথা নেই। অভিযোগ রয়েছে, প্রশাসনের অনেক কর্মকর্তাদের ছেলে মেয়েরা এসব কোচিং সেন্টার থেকে বিশেষ সুযোগ সুবিধা পায় বলে তারা এ নিয়ে মাথা ঘামান না। এদিকে এতে করে শিক্ষার্থীরা যেমন মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান তথা স্কুল কলেজ থেকে, তেমনই কোচিং সেন্টার গুলো কর্তৃক নিয়মিত ভ্যাট না দেয়ার কারণে সরকার বঞ্চিত হচ্ছে লক্ষ টাকার রাজস্ব আয় থেকে।
সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, শহরে ছোট বড় সব মিলিয়ে প্রায় অর্ধশতাধিক কোচিং কোচিং সেন্টার গড়ে উঠেছে গত কয়েক বছরে। এর মধ্যে মেরিট কোচিং সেন্টার, লরিয়েটস কোচিং সেন্টার, ট্রাডিশন, দর্পণ, উন্মেশ, দিগন্ত, চম্পক, চমক, আলোর দিশারী, ওরাকল, প্রগতি, নাভানা, অর্থনীতি, রেজা, ওমেকা, সাকসেস, বীকন, এডুকেয়ার, ফরইভার , অনুশীলন, চ্যালেঞ্চ, পাঠশালা, সবুজ ছায়া, ব্রিলিয়ান্ড, ট্যালেন্ট, আনন্দ ধ্ববনি,নিউ অর্থনীতিসহ আরও অনেক নামে কোচিং সেন্টার। কিন্তু এর ভিতরে ক্লাস রুম গুলোর অবস্থা খুবই খারাপ । একটা রুমের মধ্যে গাদাগাদি করে বসে প্রায়ই অসুস্ত হয়ে পড়ে কোমলমতি শিক্ষার্থীরা। উল্লেখ্য এর কিছু কোচিংএর রেজিস্ট্রেশন থাকলেও অধিকাংশরই কোন রেজিষ্ট্রেশন নেই। অনুসন্ধানে জানা যায়,এসব কোচিং সেন্টারের প্রত্যেকটিতে প্রায় ৫০০ থেকে ১২০০ ছাত্র ছাত্রী রয়েছে। এসব ছাত্র ছাত্রীদের প্রত্যেকের কাছ থেকে কোচিং সেন্টার কর্তৃপক্ষ প্রতি মাসে ১০০০টাকা (নুন্যতম) থেকে ২০০০ টাকা (সর্বোচ্চ) করে বেতন আদায় করে থাকে। এভাবে প্রতিটি কোচিং সেন্টার প্রতি মাসে প্রায় ৫ থেকে ৭ লাখ টাকা বেতন আদায় করে।কিন্তু, অত্যন্ত দুঃখজনক হলেও সত্য যে, এসব কোচিং সেন্টারের একটিও নিয়মানুযায়ী ভ্যাট প্রদান করে না। অভিযোগ রয়েছে, সংশ্লিষ্ট ভ্যাট কর্মকর্তাদের সাথে যোগ সাজসে তারা নিয়মিত ভ্যাট ফাকিঁ দিয়ে আসছে। ফলে সরকার বঞ্চিত হচ্ছে লক্ষ টাকার রাজস্ব আয় থেকে। ভ্যাট অফিস সূত্র জানায়, মূল্য সংযোজন কর আইনানুযায়ী প্রতি মাসে বেতনের উপর ৪.৫ ভাগ হারে ভ্যাট প্রদান করার নিয়ম রয়েছে। কিন্তু কোচিং সেন্টার গুলো ছাত্র ছাত্রীদের কাছ থেকে ভ্যাটের নাম করে সে অংশ আদায় করলেও প্রকৃত পক্ষে তারা ভ্যাট প্রদান করে না মোটেও।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, ভ্যাট অফিসে মাত্র কয়েকটি কোচিং সেন্টারের নামে ভ্যাটের ফাইল থাকলেও ভ্যাট আদায়ের অবস্থান নগণ্য। সরকার যখন রাজস্ব আদায়ের জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছে,তখন ভ্যাট ফাকি দিয়ে আঙ্গুল ফুলে কলা গাছ বনে গেছে যাচ্ছে কতিপয় কোচিং সেন্টার ।
এ প্রসঙ্গে কুষ্টিয়া কাস্টমস এক্যাইস এন্ড ভ্যাট সার্কেল অফিসের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে এ প্রতিবেদককে জানান,বারবার তাগাদা সত্বেও কোচিং সেন্টার মালিকরা ভ্যাট প্রদান করতে সম্মত হয় না। দুয়েকটি কোচিং সেন্টার সামান্য কয়েক টাকা ভ্যাট দিলে ও বাকিঁরা রীতিমত ভ্যাট ফাকিঁ দিয়ে যাচ্ছে। অথচ স্থানীয় প্রভাবের কারণে এদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয়া সম্ভব হয় না।

কোন মন্তব্য নেই: