রবিবার, ২৮ জুন, ২০০৯

গণবিবাহের নামে বাল্যবিবাহ, আয়োজকদের শাস্তি দাবি



ভেড়ামারা সংবাদদাতা
যৌতুকবিহীন গণবিবাহের নামে নতুন গজিয়ে ওঠা একটি ইসলামী সংগঠন কুষ্টিয়ার ভেড়ামারায় বাল্য বিবাহের আয়োজন করে। তিন মাস ধরে যাচাই বাছাই করে তারা ১০ জোড়া বর-কনের আটজোড়াই বালক-বালিকা নির্ধারন কর। এ তামাশা ও অন্যায়ে বিচার দাবি করেছেন অনেকেই। অনুষ্ঠানে উপস্থিত স্থানীয় এমপিসহ সরকারি কর্মকর্তারা চরম বিব্রত বোধ করে উঠে চলে যান।
ইসলাহুল মুসলিমিন পরিষদ বাংলাদেশের উদ্যোগে গত শুক্রবার বিকাল ৬টায় ভেড়ামারা উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে এই গণ বাল্যবিয়ে সম্পন্ন হয়। বিয়ে অনুষ্ঠানে যৌতুক বিহীন গণবিয়ের নাম করে ঐ সংস্থা ১০ থেকে ১৫ বছরের বালক-বালিকাদের বিয়ে দেয়। বিয়ে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন স্থানীয় সংসদ সদস্য হাসানুল হক ইনু। প্রধান আলোচক ছিলেন ইসলামিক ফাউন্ডেশনের সাবেক পরিচালক শায়খুল হাদীস আল্লামা ফরীদ উদ্দীন মাসউদ। বিশেষ অতিথি ছিলেন ভেড়ামারা উপজেলা পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান শাজাহান আলী, ভেড়ামারা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ রাজিবুল ইসলাম, মিরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ড. মোল্লা মাহমুদ হাসান, ইসলাহুল মুসলিমিন পরিষদের খুলনা বিভাগীয় আমীর মওলানা ইমদাদুল্লাহ কাশেমী এবং প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। ভেড়ামারা উপজেলার বাহিরচর ইউপি’র চেয়ারম্যান আবু বক্কর সিদ্দিক-এর সভাপতিত্বে গণ বাল্যবিয়ে অনুষ্ঠান শুরু হলে বরবেশে আসে দৌলতপুর উপজেলার শরিফুল ইসলাম, রুবেল হোসেন, শাহাবুদ্দিন, হুসাইন, দীন মোহাম্মদ, আরিফুল ইসলাম, ভেড়ামারা উপজেলার রুবেল আহমেদ, রেন্টু, জুয়েল উদ্দিন ও স্বপন আলী। এদের প্রায় সকলের বয়স ১৬ থেকে ২০ বছরের মধ্যে। কনে বেশে আসে রিফাতপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণীর ছাত্রী শাহানারা খাতুন, দৌলতখালী মাদ্রসার অষ্টম শ্রেণীর ছাত্রী চান্দেরা খাতুন, বাহাদুরপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণীর ছাত্রী সাবিতা খাতুন, শ্যামপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ৭ম শ্রেণীর ছাত্রী চামেলী খাতুন, ফিলিপনগর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণীর ছাত্রী পলিয়ারা খাতুন, রায়টা বালিকা বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণীর ছাত্রী কুলসুম খাতুন, দৌলতপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ৭ম শ্রেণীর সাথিয়ারা খাতুন, ডিজিটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ৭ম শ্রেণীর ছাত্রী শাহেনা খাতুন, রায়টা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ৮ম শ্রেণীর ছাত্রী সামিয়ারা খাতুন এবং প্রাগপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ৮ম শ্রেণীর ছাত্রী কাঞ্চন আরা খাতুন। ভেড়ামারা ও দৌলতপুর উপজেলার ১২-১৫ বছরের ২০ জন বর-কনে দেখে অনুষ্ঠানে উপস্থিত অতিথিরা হতবাক হয়ে পড়েন। তারা বিয়ে বন্ধের জন্য দাবি তোলেন। এ সময় শুরু হয় তুমুল হট্টোগোল। এক পর্যায়ে অতিথিদের কাছে কাকুতি মিনতি করেন অনুষ্ঠানের আয়োজকরা। ১০ জোড়া অপ্রাপ্তবয়স্ক বর-কনের মধ্য থেকে প্রাপ্তবয়স্ক ২ জোড়া বর-কনে বেছে নিয়ে অতিথিদের সামনে বিয়ে দেয়া হয়। এই দুই জোড়া বর-কনের বিবাহ শেষে হাসানুল হক ইনুসহ অতিথিরা চলে যান। বাকি ৮ জোড়া বর-কনের বিয়ে সম্পন্ন করা হয় আল্লার দরগা মাদ্রাসায়। বাল্য বিয়ে শেষে প্রতি নব দম্পতিকে ছাগল আকৃতির একটি করে গরুর বাছুর ও একটি সেলাই মেশিন প্রদান করা হয়। হঠাৎ গজিয়ে উঠা ইসলাহুল মুসলিমিন পরিষদের অনুষ্ঠানকে ঘিরে এলাকায় ব্যাপক তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। যৌতুকবিহীন গণবিবাহের নাম করে ঐ সংস্থার সমন্বয়কারী জহীর ইবনে মুসলিম জেলা শহর ছাড়াও ভেড়ামারা, মিরপুর, দৌলতপুর উপজেলার বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, শিল্পপতিদের কাছ থেকে বেপরোয়া চাঁদাবাজি করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। তিনি বলেন, তিনমাস ধরে বাছাই করে আনা হয়েছে। কিন্তু শেসে দেখছি এরা অপ্রাপ্ত বয়স্ক। ভেড়ামারা উপজেলা নির্বাহী অফিসার রাজিবুল ইসলাম জানান, ২টা বিয়ে দিয়ে আমরা উক্ত অনুষ্ঠান থেকে চলে আসি। আমরা আসার পরে বাকি ৮টার বিয়ে সম্পন্ন হয়েছে বলে একটি সূত্রে জানতে পেরেছি। বাল্য বিয়ের সাথে যারা জড়িত তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসক আব্দুল মান্নান জানান, বাল্য বিয়ে যারাই ঘটাক তারা বড় ধরনের অন্যায় করেছে। এই ঘটনায় খোঁজ-খবর নিয়ে দোষীদের বিরুদ্ধে মামলা করা হবে।

কোন মন্তব্য নেই: