শনিবার, ১৩ জুন, ২০০৯

বাজেটের প্রভাবে গরম হয়ে উঠেছে কুষ্টিয়ার মোবাইল ফোনের বাজার

বাজেটের প্রভাবে গরম হয়ে উঠেছে কুষ্টিয়ার মোবাইল ফোনের বাজার
গরম হয়ে উঠেছে মোবাইল ফোনের বাজার। হঠাৎ করেই যেন আগুন ধরে গেছে। আবার অনেকেই বলছেন এটা পরিকল্পিত। বাজেটের আগে বাজারে তনতন্ন করে খুজেও মোবাইল সেটের দেখা মেলেনি। বাজেটের পর বাজারে ছেয়ে গেছে মোবাইল ফোনে। কিন্তু দাম বেশি। বাজেটের প্রভাবে মোবাইল ফোন সেটের দাম বেড়ে গেছে। আগামী অর্থবছরের বাজেটে মোবাইল সেটের ওপর নির্ধারিত তিন শ’ টাকার বদলে ২৫ শতাংশ আমদানি শুল্ক আরোপের প্রস্তাব করার পরদিনই গত শুক্রবার থেকে সারাদেশের মত কুষ্টিয়াতেও মোবাইল ফোনের বাজার আগের চেয়ে অনেক চড়া দেখা গেছে।
গতকাল ১০ হাজার টাকা মূল্যের সেট সাড়ে ১২ হাজার থেকে ১৫ হাজার টাকা, দুই হাজার টাকার সেট আড়াই হাজার, পাঁচ হাজার টাকার সেট সাড়ে ছয় হাজার টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে। খুচরা ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করেছেন, মোবাইল ফোন সেট আমদানিকারকরা মালামাল মজুদ করে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করায় দাম বেড়েছে। তবে গত পরশু শুক্রবার থাকায় এয়ারকন্ডিশন, ফ্রিজ, মোটরসাইকেলের দামের ওপর তেমন কোন প্রভাব দেখা যায়নি। এসব পণ্যের দাম যে কোন সময় বাড়তে পারে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। কুষ্টিয়ার বিভিন্ন মার্কেটে দোকানে গতকাল প্রচুর ক্রেতা মোবাইল ফোন সেট কেনার জন্য ভিড় করলেও দাম বেড়ে যাওয়ার কারণে অনেকে তা না কিনেই ফিরে গেছেন। এ শহরের সবচেয়ে বড় মোবাইল ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান রশিদ লেদার’র বিরুদ্ধে বিস্তর অভিযোগ তুলেছে ক্রেতারা। কয়েকজন বলেছেন আগেরদিন যে মোবাইল ৫ হাজার ৩শ’ টাকায় বিক্রি করেছে পরদিন সেই একই প্রতিষ্ঠান রশিদ লেদার ওই মোবাইল সেটের দাম হাকাচ্ছে সাড়ে ৬ হাজার টাকা। আরো ভয়ংকর কথা বললেন টিটু নামের এক মোবাইল সেট ক্রেতা, তিনি বললেন, প্রতিষ্ঠিত কোম্পানীর সেটের দাম তো অনেকেই জানে। কিছু কোম্পানির দাম না জানা মোবাইল সেটের দাম হাকাচ্ছে ইচ্ছে মত। চায়না সেটের তো রমরমা বানিজ্য হচ্ছে।
মোবাইল ফোন ব্যবসায়ী সাজিয়া টেলিকমের মালিক জানান, শুক্রবার’র চেয়ে শনিবার মোবাইল সেটের দাম অনেক বেশি। এর মূল কারণ-আমদানিকারকরা কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে দাম বাড়িয়েছে। এজন্য আমাদেরও বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে। অপর এক ব্যবসায়ী নাম না প্রকাশের শর্তে তিনি বলেন, নোকিয়া এ ৯৬ মোবাইল সেটের দাম বৃহস্পতিবার ছিল ৩২ হাজার টাকা। শুক্রবার আমরা কিনেছি ৩৫ হাজার টাকা করে। এই বেশি টাকাটা ক্রেতার পকেট থেকে যাচ্ছে। ছোট ব্যবসায়ীদের লাভ আগের মতই আছে। তবে ক্রেতা কমে যাওয়ায় ব্যবসায় বড় ধরনের ধাক্কা আসবে বলে জানান তিনি।
কুষ্টিয়া সরকারী কলেজের এক শিক্ষক বলেন, মনে করেছিলাম দাম বাড়ার আগেই একটি সেট কিনবো। তবে বাজেট ঘোষণার পরদিনই এত বেশি দাম বেড়েছে যে সাধারণ ক্রেতাদের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে। তিনি আরও বলেন, ব্যবসায়ীদের এই বেশি মুনাফা লাভের বিষয়টি সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নজর দেয়া উচিত। মোবাইল ফোন সেটের অন্যতম আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান সুরেকা এন্টার প্রাইজ’র এক কর্মকর্তা কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে দাম বাড়ানোর কথা স্বীকার করে বলেন, ব্যবসায়ীরা তো চাইবে বেশি মুনাফা করতে। সেট প্রতি শতকরা ২৫ ভাগ শুল্ক আরোপের কারনে আগামীতে এই ব্যবসার কি অবস্থা হবে তা কেউ বলতে পারে না। তাই আগে থেকেই কিছুটা ব্যবসা করে নিতে চাই। তিনি জানান, দাম বাড়ানোর কারণে বাজারে ক্রেতা নেই। আগামীতে ১০ হাজার টাকার একটি সেট কিনলে তার জন্য শুল্কসহ খরচ পড়বে তিন হাজার টাকা। যে সেটটি ক্রেতা সাড়ে ১০ হাজার টাকায় কিনতে পারত সেটি কিনতে হবে সাড়ে ১৩ হাজার টাকায়। তিনি বলেন, মোবাইল সেটে অধিক পরিমাণ শুল্ক আরোপ করায় এই ব্যবসায় বড় ধরনের ধস নামবে। ক্রেতারা আর দামি মোবাইল সেট ব্যবহার করবে না। উল্লেখ্য, মোবাইল সেটের জন্য সেট প্রতি ৩০০ টাকা হারে সুনির্দিষ্ট হারে শুল্ক দিকে হতো। কিন্তু ২০০৯-২০১০ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে মোবাইল সেট প্রতি শতকারা ২৫ ভাগ হারে শুল্ক আরোপের প্রস্তাব করা হয়েছে। এদিকে এয়ারকন্ডিশন, ফ্রিজ, মোটরসাইকেলের দাম আগের মতোই আছে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।
তাদের মতে, এসব পণ্যের ওপর এখনও প্রভাব পড়েনি। তবে বিদেশ থেকে পরবর্তী চালান আনার পর দাম বাড়বে। ওয়াল্টন এর স্টেডিয়াম মার্কেট শাখার ম্যানেজার মো. রাজু জানান, ওয়াল্টন দেশী কোম্পানি। আগামী দু-এক দিনের মধ্যে মোটরসাইকেল ও ফ্রিজের দাম দুই থেকে সাত হাজার টাকা কমতে পারে।

কোন মন্তব্য নেই: