সোমবার, ২২ জুন, ২০০৯

কুষ্টিয়ায় খাদ্য সংগ্রহ অভিযানে অনিয়ম, বাইরের জেলা থেকে আনা নিম্নমানের চাল গুদামে ঢুকছে রাতের আঁধারে


কুষ্টিয়ায় খাদ্য সংগ্রহ অভিযানে অনিয়ম, বাইরের জেলা থেকে আনা নিম্নমানের চাল গুদামে ঢুকছে রাতের আঁধারে
কুষ্টিয়ায় সরকারী নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করে অনিয়মের মধ্য দিয়ে কুষ্টিয়ায় চলছে খাদ্য সংগ্রহ অভিযান। মিলাররা বাইরের জেলা থেকে নিম্নমানের চাল এনে খাদ্য কর্মকর্তাদের যোগসাজসে গুদামে সরবরাহ করছেন। কেজিপ্রতি ৩৫ পয়সা পাবার কারনে গুদাম কর্মকর্তারা রাতের আধারে মান নিয়ন্ত্রণ না করেই ট্রাক ট্রাক চাল গুদামে ভরে নিচ্ছেন। এ নিয়ে শনিবার রাতে কুষ্টিয়া সদর খাদ্য গুদামে ঘটে গেছে তুঘলকি কারবার।
রাতে চাল গ্রহনের সময় কয়েকজন সাংবাদিক খবর পেয়ে সেখানে হাজির হন। এসময় গুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আব্দুল গফুর সব কার্যক্রম বন্ধ করে পেছনের গেট দিয়ে বাসায় চলে যান। সাংবাদিকরা গুদামের ভেতরে অবস্থিত ১১টি ট্রাকে কোথা থেকে কি মানের চাল আনা হয়েছে জানার জন্য পুলিশের সহায়তা কামনা করেন। সদর থানার ওসি বাবুল উদ্দিন সর্দ্দার কয়েকজন কর্মকর্তা ও ফোর্স নিয়ে পৌছান। তিনি রাত ২টা পর্যন্ত খাদ্য কর্মকর্তাদের সাথে দফায় দফায় আলোচনা করেও গুদামের বাউন্ডারীর ভেতরে সাংবাদিকদের প্রবেশ করার সুযোগ করে দিতে ব্যর্থ হন। পরে পুলিশ সুপারের সাথে আলোচনা করে গুদামের বাইরে খাদ্য কর্মকর্তা ও পুলিশের উপস্থিতিতে প্রহরা বসানো হয়। এর মধ্যেই একের পর এক আসতে থাকে চাল বোঝাই ট্রাক। রাত ৩টা পর্যন্ত সদর খাদ্য গুদামের রাস্তা ষ্টেশন রোডে ৭টি ট্রাকের লম্বা লাইন লেগে যায়। এতেই পরিস্কার হয়ে যায় এ গুদামে প্রতি রাতেই ট্রাক ট্রাক চাল আনলোড করা হয়।
রবিবার সকালে সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মল্লিক সাঈদ মাহমুদ, এনডিসি জালাল সাইফুর রহমান, জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক জাহাঙ্গীর আলম, পুলিশের কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে গুদামে প্রবেশ করে অভিযোগের প্রাথমিক প্রমান মেলে। যশোর ট- ১১-০১৮০ নাম্বারের ট্রাকটির কোন মালিক খুজে পাওয়া যায়নি। ট্রাকের হেলপার আবুল কাসেম মল্লিক জানান, পাবনার রুপপুরের জয়নগর থেকে চাল নিয়ে এসেছেন তিনি। কুষ্টিয়ার কোন একজন মিলার তাদের ট্রাক ভাড়া করে ওখান থেকে চাল কিনে এনেছেন। তিনি মিলারের নাম বলতে পারেন নি। এ ঘটনার পর জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক জাহাঙ্গীর আলম পরবর্তি নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত গুদামের কার্যক্রম বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত দেন। এছাড়াও সদর উপজেলার আরেকটি গুদাম জগতিতেও একই কারনে কার্যক্রম বন্ধ রাখা হয়। তড়িঘড়ি করে গতকাল বিকেল ৪টায় জেলা সংগ্রহ ও মনিটরিং কমিটির মিটিং ডাকা হয়। জেলা প্রশাসক আব্দুল মান্নানের সভাপতিত্বে এ সভায় সিদ্ধান্ত হয় জেলার বাইরে থেকে আসা ট্রাকগুলো ফেরত পাঠানো হবে। সূর্যাস্তের সাথে সাথে গুদামের কার্যক্রম বন্ধ করতে হবে। তবে এ কর্মকান্ডের সাথে জড়িত সদর উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক আব্দুল ওয়াহেদ ও সদর গুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আব্দুর গফুরের বিরুদ্ধে শাস্তি মূলক কোন ব্যবস্থা না নেয়ায় অনেকেই ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। কমিটির সদস্যদের বিরুদ্ধেও অনিয়মের মাধ্যমে চাল সংগ্রহে অবৈধ উপার্জনের অর্থ’র ভাগ পাবারও ইঙ্গিত করেছেন অনেকেই।
মিলার, ট্রাক শ্রমিক ও সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে এর ভেতরের রহস্য। সাধারনত মিলারদের চেয়ে রাজনৈতিক মদদপুষ্ট চাল ব্যবসায়ীদেরকেই বেশি বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। কুষ্টিয়া জেলার খাজানগর-আইলচারা-পোড়াদহে রয়েছে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম চালের মোকাম। এখানকার চালের মান সারা দেশে প্রশংসিত। এখানকার কোন মিল থেকে চাল কিনে সরবরাহ করতে কেজিপ্রতি খরচ হয় ১৯ টাকা। আর বাইরের জেলা যেমন পাবনার ঈশ্বরদী, জয়নগর, দাশুরিয়া, ঝিনাইদহের হরিনাকুন্ডু থেকে একটু নিুমানের চাল নিয়ে আসলে ট্রাক ভাড়া বেশি পড়লেও কেজিপ্রতি ১টাকা কমে সরবরাহ করা যায়। তাদের পড়ে ১৮ টাকা করে। যেখানে সরকার নির্ধারিত মূল্য ২২টাকা কেজি। বাইরের এ নিুমানের চাল অনিয়মের মাধ্যমে গুদামে গ্রহন করার বিনিময়ে খাদ্য কর্মকর্তারা পান কেজি প্রতি ৩৫ পয়সা। কোন কোন ক্ষেত্রে টনপ্রতি ২ হাজার টাকা। আর এ কারনে রবাদ্দের দিকেও তাকানো হয়না। যার বরাদ্দ ২০ মেট্রিক টন তার ৪০ মেট্রিকটন চালও গ্রহন করা হযেছে এমন অভিযোগ প্রকৃত মিলারদের।
জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের অফিস সূত্রে জানা যায়, ৩১ আগষ্ট পর্যন্ত জেলায় মোট ১ হাজার ১৭ মেট্রিকটন ধান ও ২৪ হাজার ৪শ ৭ মেট্রিকট্রন চাল সংগ্রহের টার্গেট রয়েছে। এরমধ্যে রবিবার পর্যন্ত সংগ্রহ করা হয়েছে ৯হাজার ৭শ ৩০ চাল ও ৬শ ৫৬ মেট্রিক টন ধান।

কোন মন্তব্য নেই: