সোমবার, ২০ জুলাই, ২০০৯

শবে মিরাজ-এর শিক্ষা ও গুরুত্ব -মোঃ ইব্রাহিম খলিল




শব অর্থ রাত্রি। মিরাজ এর অর্থ সিঁড়ি, উর্ধগমন, আরোহন। ইসলামী পরিভাষায় আমাদের বিশ্বনবী হযরত মুহম্মদ (সাঃ)-এর পবিত্র মক্কা শরীফ হতে বায়তুল মুকাদ্দাস (জেরুজালেম) পর্যন্ত এবং সেখান থেকে সপ্ত আকাশ ভ্রমন করে মহান আল্লাহ পাকের সাথে একান্ত সান্নিধ্য (বা বৈঠক) লাভ করার ঘটনাকে মিরাজ বলা হয়। নবুয়তের ১০ বছর ও ৫০ বছর বয়সে আরবী রজব মাসের ২৭ তারিখে রাতে পবিত্র মিরাজ শরীফ নামক এই মহা ঘটনা সংঘটিত হয়। ২৪ জন পুরুষ এবং ৪ জন মহিলা সাহাবী উক্ত মিরাজের ঘটনা বর্ণনা করেছেন এবং সাক্ষী প্রদান করেছেন। পবিত্র কুরআনে বর্ণনা করা হয়েছে-পবিত্র ও মহিমাময় তিনি যিনি তাঁর
বান্দাকে (বন্ধুকে) রজনীযোগে ভ্রমন করিয়েছিলেন আল মাসজিদুল হারাম থেকে আল মাসজিদুল আকসা পর্যন্ত, যার পরিবেশ আমি করেছিলাম বরকতময়, তাঁকে আমার নিদর্শন দেখানোর জন্য (সূরা বানী ইসরাঈল আয়াত-১)। বুখারী, মুসলিম ও মিশকাত শরিফসহ অন্যান্য হাদিস গ্রন্থে মিরাজ এর বর্ণনা রয়েছে। সংক্ষেপে ঘটনাটি এ রকম-রাসুল (সাঃ) এর চাচা আবুতালেব এর গিরি সংকটের সময় উম্মে হানি (রাঃ) এর ঘরে ঘুমিয়ে ছিলেন। রজনী দ্বিপ্রহরে জিবরাঈল (আঃ) সহ তিন জন ফেরেশতা তাঁর কাছে আগমন করেন এবং তাঁকে কাবাঘরে নিয়ে যান। এর পর তাঁরা আলোর গতির চেয়ে দ্রুতগতি সম্পন্ন বোরাক নামক যানবাহনে যাত্রা শুরু করেন। প্রথমে তাঁরা বায়তুল মোকাদ্দাস মসজিদে উপস্থিত হন। সেখানে তাঁরা দুই রাকাত নামাজ আদায় করেন। তাঁর পর সেখান থেকে তাঁরা প্রথম আকাশে হযরত আদম (আঃ) এভাবে আরো উপরের আকাশে হযরত ঈসা (আঃ), হযরত ইদ্রিস (আঃ) হযরত মূসা (আঃ) হযরত ইব্রাহীম (আঃ) এর সাথে তাদের সাক্ষাত লাভ হয়। এরপর হযরত জিবরাইল (আঃ) হুজুর (সাঃ) কে ত্যাগ করে চলে যান। রফরফ নামক আর একটি যানবাহনে চড়ে আমাদের বিশ্বনবী মহান আল্লাহ্ তায়ালার একান্ত সান্নিধ্যে পৌছে যান। অনেক বিষয়ে মত বিনিময় হয়। আমাদের বিশ্বনবীকে এই শবেমিরাজ রাত্রিতে অনেক কিছু ঘুরে দেখানো হয়। বিশেষ করে জান্নাত ও জাহান্নাম পরিদর্শন করেন। জাগ্রত অবস্থায় শবেমিরাজ ঘটেছিল। কাফের, মোশরেক, বেঈমানরা স্বশরীরে মেরাজ হয়েছিল এটা বিশ্বাস করতে চায় না। হযরত আবুবকর(রাঃ) যখন শুনলেন যে, আমাদের নবী আল্লাহর সাথে সাক্ষাত করেছেন তখন তিনি এক বাক্যে এটা বিশ্বাস করলেন। এজন্য তাঁকে ছিদ্দিক উপাধি দেয়া হয়। মেরাজে যাবার কারণে আমাদেরকে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ ও এক মাস রোজা রাখা ফরয করা হয়। এটা আল্লাহর পক্ষ থেকে একটা উপহার মুমিন বান্দাদের জন্য। মিরাজ থেকে ফিরে আমাদের নবী ঘোষনা করলেন যে, যে ব্যক্তি দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত নামায আদায় করবে তাঁর সাথে আল্লাহর দিদার হবে। মিরাজের ঘটনা থেকে আমরা যে শিক্ষা পাই তা হচ্ছে আল্লাহ দিদার লাভ করতে হলে অবশ্যই আমাদেরকে প্রত্যেক দিন পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ অবশ্যই আদায় করতে হবে। ইসলাম ধর্ম যে, একটি বিজ্ঞান সম্মত ধর্ম তা প্রমাণিত হয়েছে। যেমন আজকে বিজ্ঞানীরা আকাশে যেয়ে রকেট পাঠাতে পেরেছে তা এই বোরাক ও রফরফ যানবাহন থেকে তারা জ্ঞান অর্জন করে আবিষ্কার করেছেন। শবেমিরাজ যে স্বশরীরে সংঘটিত হয়েছিল আজ তা একে বারে সত্য প্রমানিত হয়েছে। মহানবী হযরত (সাঃ) বেহেশত ও দোজখ পরিদর্শন করে দেখতে পেলেন যে, পূণ্য কাজ করলে পুরুষ্কার পাওয়া যাবে এবং পাপ কাজ করলে শাস্তি পেতে হবে। বাস্তব অবস্থা চোখে দেখে তিনি উম্মতদেরকে হেদায়েতের পথ দেখিয়েছেন। ২৭শে রজব একটি রোজা রাখলে অনেক সওয়াব পাওয়া যাবে। তাই আসুন আমরা পবিত্র শবেমিরাজ থেকে শিক্ষা গ্রহন করে সহজ সরল পথে চলি। আমিন॥

লেখক : ফ্রিল্যান্স সাংবাদিক ।
E-mail - gazzalisus@gmail.com

কোন মন্তব্য নেই: