মঙ্গলবার, ২৮ জুলাই, ২০০৯

দুই বছরেই ভুলে গেলাম




হাসান জাহিদ
দুই বছর আগেও মানুষটি আমাদের সাথেই কাজ করতো। সংবাদ তৈরী করতো। অনুষ্ঠানস্থলে প্রায় দিনই দেখা হতো আমাদের সাথে। প্রেসক্লাব নিয়ে আলোচনা হতো। কোন সাংবাদিক বিপদে পড়লে প্রশাসনে চাপ প্রয়োগ করতেন। কুষ্টিয়ার সাংবাদিকদের সাথে তার রয়েছে অসংখ্য মধুর স্মৃতি। আর মৃত্যুর দুই বছর পরই ঠিক বেমালুম ভুলে গেলাম সেই রাজ্জাক ভাইকে। রাজ্জাক ভাই আজ অনেক দুরে। তিনি কোন কিছুই দেখতে পাননা। শুনতেও পাননা। কিন্তু তার যদি এই বোধশক্তিটুকু থাকতো তাহলে হয়তো পৃথিবীর সবচেয়ে দুঃখী মানুষটি হতেন তিনিই। সংবাদ kushtianews.blogspot.com-এর।
দীর্ঘ ৮বছর কুষ্টিয়া প্রেসক্লাবের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন তিনি। বিতর্ক থাকতে পারে সে পদ নিয়ে। কিন্তু সেই প্রতিষ্ঠান তার দ্বিতীয় মৃত্যু বার্ষিকীতে স্মরণ সভাতো দুরের কথা একটি মিলাদ মাহফিলেরও আয়োজন করতে পারে নি। ওই ক্লাবের নির্বাহী সদস্য হিসেবে এ ব্যর্থতা আমারও। তবে আমরা কয়েকজন চেষ্ঠা করেছিলাম। কেন যেন হলো না। আমরা কত ছোট খাট দিবস পালন করি। আয়োজন করি কত প্রতিবাদ সভা। অথচ এই ক্লাবের সাবেক নির্বাচিত সভাপতির দ্বিতীয় মৃত্যুবার্ষিকী পালন করতে পারলাম না। সবচেয়ে দুঃখের বিষয় হলো তার মৃত্যুবার্ষিকী পালন না করেই পালন হয়েছে এমন প্রেস বিজ্ঞপ্তি লিখে পত্রিকায় ছাপার উদ্যোগ নেয় ক্লাবের বর্তমান নেতৃত্ব। কয়েকজন সাংবাদিক বাধা দিলে এ থেকে বিরত হন তারা। তবে ধন্যবাদ দিতে হয় সাপ্তাহিক দেশব্রতিকে। তারা পত্রিকা কার্যালয়ে এদিন আলোচনা ও মিলাদ মাহফিলের আয়োজন করে।
কুষ্টিয়ার সাংবাদিকতা জগতে পরিচিত নাম আব্দুর রাজ্জাক। গুণী এ মানুষটি সাংবাদিকতার পিছনে পার করেছেন জীবনের অনেক সময়। জীবনের শেষ সময় পর্যন্ত তিনি এ পেশায় নিয়োজিত ছিলেন। জীবনের শেষ দিনেও তিনি একটি সংবাদ কালেকশনের জন্য বাইরে বের হবার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। কথা ছিল সকাল ১০টায় দুটি মোটর সাইকেলযোগে সহকর্মি লাকী মিজান, জহুরুল ইসলাম ও আমার সাথে করে দুটি মোটর সাইকেলে মহাশুন্য ভ্রমনের সুযোগ পাওয়া কুমারখালীর রামদিয়া গ্রামে রফিকুলের বাড়িতে যাবেন। আমরা সবাই রফিকুলের উপর ফিচার ষ্টোরি করবো। সেদিন ছিল বৃহস্পতিবার। সকালে বাজার সেরে এসে তিনি হঠাৎ অসুস্থ্য বোধ করেন। এ ব্যাপারে তিনি মোবাইল ফোনে কথা বলেন কুষ্টিয়া জেণারেল হাসপাতালের আরএমওর সাথে। আরএমও তাকে হাসপাতালে যেতে বললে তিনি প্যান্ট পরতে গিয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। এরপর হাসপাতালে নিয়ে যাবার পথেই তার মৃত্যু হয়। এম এ রাজ্জাক দৈনিক আমার দেশ পত্রিকা ও একুশে টিভির কুষ্টিয়া প্রতিনিধি ছিলেন। ২০০০ সালে কুষ্টিয়া প্রেসক্লাবের সভাপতি নির্বচিত হয়ে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি ওই দায়িত্ব পালন করেছেন।
প্রথম শ্রেনীর ঠিকাদার হওয়া সত্বেও দেশ ও জাতির কল্যানের কথা চিন্তা করে এই মহান পেশায় নিজেকে নিয়োজিত রেখেছেন। সৎ সাহসী, ও পরিশ্রমী হিসাবে কুষ্টিয়ার সবার কাছে তিনি পরিচিত। তথ্য নিভূল অনেক রিপোর্ট করে সমাজে প্রসংশিত হয়েছেন। পূরস্কারও পেয়েছেন একাধিকবার। ডায়বেটিকস ও চোখের জটিল রোগে ভূগছিলেন তিনি। নিঃসন্তান আব্দুর রাজ্জাক ২৫ বিডি খানলেন কুঠিপাড়ার বাড়িতে স্ত্রী সেলিনা খাতুনকে নিয়ে বসবাস করতেন। পিতা মরহুম আকবর আলী ছিলেন স্বর্ণ ব্যবসায়ী। ১৯৮০ সালে ইংরেজী দৈনিক দি বাংলাদেশ টাইমস’র মাধ্যমে সাংবাদিকতায় রাজ্জাকের হাতে খড়ি। তৎকালিন বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা (বিএসএস) রিপোর্টার মিজানুর রহমান তার শিক্ষাগুরু ছিলেন। সাংবাদিকতায় বিশেষ অবদান রাখার জন্য এম এ রাজ্জাক ১৯৮৫ সালে ইউনিসেফ কতৃক বিশেষ পুরস্কার লাভ করেন। ১৯৭১ সালে দেশ মাতৃকার টানে যোগদেন মহান মুক্তিযুদ্ধে। ৮ নং সেক্টরে ৫ নং উইং এর কমান্ডার হিসাবে অসম সাহসিকতার সাথে লড়েছেন।
এম এ রাজ্জাক বাংলাদেশ সাংবাদিক সমিতির কুষ্টিয়া জেলার সাধারন সম্পাদক, সাংবাদিক সংস্থার জেলার সভাপতি, আর্ন্তজাতিক সংস্থা আই পি এস” এর সদস্য ছিলেন। তিনি বিভিন্ন সাংবাদিক সংস্থার আমন্ত্রনে ভারত, নেপাল,ও পাকিস্তান সফর করেছেন।

২টি মন্তব্য:

নামহীন বলেছেন...

jahid vi, oshadaron akta report porlam.. thnx 4 that... all the best

sabbir বলেছেন...

jahid vi, oshadaron akta report porlam.. thnx 4 that... all the best