শুক্রবার, ২৪ জুলাই, ২০০৯

কুষ্টিয়া অঞ্চলে বৃক্ষরোপনে সাড়া ফেলে দিয়েছে বেসরকারি উদ্যোগ



মরুকরণের হাত থেকে রক্ষা পেতে কুষ্টিয়া অঞ্চলে চরম উৎসাহে শুরু হয়েছে বৃক্ষরোপন কর্মসূচী। এ কর্মসূচী বাস্তবায়নে বেসরকারি সংস্থা ও ব্যক্তিগত উদ্যোগ সাড়া ফেলে দিয়েছে। আসছে সফলতাও। অথচ অর্থ বরাদ্দ এবং লোকবল নিয়ে বন বিভাগের উদ্যোগ তেমন কোন সফলতার মুখ দেখেনি।
সরকারি কোন বনভূমি ও পর্যাপ্ত বৃক্ষরাজি না থাকায় দক্ষিণ পশ্চিমের আবহাওয়া দিনদিন উষ্ণ হচ্ছে। এ বাস্তবতা উপলব্ধি করে এ অঞ্চলের মানুষের মধ্যে বৃক্ষরোপনের পক্ষে ব্যাপক সচেতনতা সৃষ্টি হয়েছে। মানুষ নিজ তাগিদেই বৃক্ষরোপন ও সংরক্ষন করছে। বেসরকারি উদ্যোগে সবচেয়ে বেশি সফল হয়েছে ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো বাংলাদেশ (বিএটিবি)| তারা ১৯৮০ সাল থেকে সারা দেশে সবুজ বনায়ন কর্মসূচী শুরু করে। এর আওতায় সারা দেশে এ পর্যন্ত ৬ কোটি চারা বিনামুল্যে বিতরন করেছে। যার তিনভাগের একভাগই বিতরণ হয়েছে কুষ্টিয়া অঞ্চলে। এ বছরেও বিএটিবি যে ৩৫ লাখ চারা বিতরণ শুরু করেছে তার মধ্যে কুষ্টিয়া, মেহেরপুর ও ঝিনাইদহ জেলায় বিতরন হবে ১১ লাখের উপরে। বিএটিবির হেড অব লীফ জহুরুল হক সরকার জানান, বিএটিবি ব্যবসায়ীক প্রতিষ্ঠান হলেও সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকেই বৃক্ষরোপনের মতো কর্মসূচী হাতে নিয়েছে। এ কাজে সফলতাও এসেছে ব্যাপক বলে তিনি দাবি করেন। যার স্বীকৃতিস্বরূপ ৫ বার জাতীয় পুরস্কারও পেয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।
এছাড়াও বিআরবি কেবলস কুষ্টিয়ার বিভিন্ন ইউনিয়ন পরিষদ, স্কুল কলেজ, মাদ্রাসা ও গোরস্থান মাঠে বৃক্ষরোপন করেছে। তারা ব্যাপক হারে বিনামূল্যে গাছের চারাও বিতরন করেছে। এর স্বীকৃতিস্বরূপ প্রতিষ্ঠানটি এবার পরিবেশ রক্ষায় খুলনা বিভাগের শ্রেষ্ঠ প্রতিষ্ঠান হিসেবে পরিবেশ অধিদপ্তরের এওয়ার্ড পেয়েছে।
বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে প্রতিবছর শিক্ষার্থীদের মধ্যে ব্যাক্তিগত উদ্যোগে গাছের চারা বিতরন করেন ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান প্রকৌশলী আলিমুজ্জামান টুটুল। গত ২২ জুলাই কুষ্টিয়া কলকাকলী মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে তিনি এ বছরের চারা বিতরন শুরু করেছেন। টুটুর জানান, এ বছর তিনি ১ লাখ চারা বিতরণ করবেন। অবসরে তিনি ভবনের নকশা তৈরী করে যে টাকা আয় করেন তা দিয়ে প্রতিবছর এ চারা ক্রয় করেন। চারা বিতরনের সময় তিনি ছাত্র-ছাত্রীদের উদ্যেশ্যে বৃক্ষের প্রয়োজনীয়তা ও এর পরিচর্যা নিয়ে আলোচনা করেন। পরিবেশ কর্মি সাংবাদিক আবু বকর সিদ্দীক বলেন, বেসরকারি উদ্যোক্তারা শুধু চারা বিতরন ও রোপন করেই বসে থাকে না, এর বেড়ে ওঠার ব্যাপারটি নিয়মিত ফলোআপ করে থাকে। যে কারনে সরকারি উদ্যোগের তুলনায় বেসরকারি উদ্যোগ সফল হয়।
ওদিকে বারবার আনুষ্টানিকভাবে গাছ লাগিয়েও পরিচর্ষা না করায় বন বিভাগের কোন উদ্যোগ তেমন সফলতার মুখ দেখেনি। মন্ত্রী এসে প্রতিবছর একই স্থানে বৃক্ষরোপন করে থাকেন। কুষ্টিয়ায় বিএটিবির চারা বিতরন উদ্বোধন করতে এসে পরিবেশ ও বন প্রতিমন্ত্রী এডভোকেট মোস্তাফিজুর রহমান এমপি বলেন, বন বিভাগ কাজ করে যাচ্ছে। তারা সফল কি না ব্যর্থ সে বিবেচনার সুযোগ এখনো আসেনি। আমি নতুন, সবেমাত্র এ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব নিয়েছি। কাজও শুরু করেছি। বৃক্ষরোপনে, সবুজ বনায়ন সৃষ্টিতে ব্যর্থতার কিছু নেই। অবশ্যই আমরা সফল হবো। তিনি বলেন, আমাদের অস্তিত্বের জন্য বৃক্ষের বিকল্প নাই। ভয়াবহ পরিবেশ বিপর্যয়ের হাত থেকে রক্ষা পেতে বৃক্ষরোপনে সরকারি ও বেসরকারি উদ্যেগের সমন্বয় প্রয়োজন বলে মনে করেন তিনি।

কোন মন্তব্য নেই: