বৃহস্পতিবার, ১৬ জুলাই, ২০০৯

খরায় মরিচের ফল বিপর্যয়, কেজি ১৫০ টাকা



হাসান জাহিদ: হঠাৎ করে কুষ্টিয়া এলাকায় মরিচে চরম ঝাল বেড়েছে। কয়েক লাফে মরিচের কেজি বেড়ে দাড়িয়েছে ১৫০টাকায়। কয়েকদিন আগের প্রচন্ড খরায় মরিচ গাছ থেকে ফুল ও মরিচ ঝরে পড়ার প্রভাবে বাজারে এ আগুন লেগেছে। বারবার সেচ দিয়েও কুষ্টিয়া অঞ্চলের অনেক কৃষকই তাদের মরিচ গাছ ও মরিচ বাঁচাতে পারেনি। মরিচ চাষীদের অভিযোগ কৃষি অফিস থেকে এ ব্যাপারে কোন সহযোগিতাই পাননি তারা। কৃষি কর্মকর্তারা বলছেন, খরার কারনে এক ধরনের ভাইরাসজনিত রোগ ও পোকামাকড়ের আক্রমনে মরিচ গাছের বৃদ্ধি বাধাগ্রস্থ হয়েছে। পাতা কুচকে গেছে। আসেনি পর্যাপ্ত ফুল।
কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তরের হিসেব মতে এবার কুষ্টিয়া জেলায় ৪৪০ হেক্টর জমিতে মরিচ চাষের লক্ষমাত্রা ধরা হয়। কিন্তু গতবার ভাল ফলন ও ভাল দাম পেয়ে এবার জেলার কৃষকরা এ চাষে ঝুকে পড়ে। লক্ষ্যমাত্রা টপকে এবার মরিচের চাষ করা হয় ৬৯০ হেক্টর জমিতে। কিন্তু সময়মত বৃষ্টিপাত না হওয়া এবং আষাঢ় মাসেও প্রচন্ড খরা থাকার কারনে অনেকেরই মরিচ গাছ পুড়ে গেছে। পাতা শুকিয়ে কুচকে গেছে। সেসব গাছে কোন ফুলই ধরেনি। আর যেসব চাষী আগাম মরিচ রোপন করেছিল তারা বারবার সেচ দিয়েও গাছ থেকে ফুল ও মরিচ বাচাতে পারেনি। ঝরে গেছে সব।
মিরপুর উপজেলার আহাম্মদপুর গ্রামের কৃষক আজগর আলী এবার দুই বিঘা জমিতে মরিচ চাষ করেছেন। তার মরিচের গাছ দেখতে ভাল হলেও গত একমাসে গাছের ফুল ধরে রাখতে পারেন নি। তিনি বলেন, প্রচন্ড খরার কারনে মরিচের ফুল আসে আর পড়ে যায়। অনেক সেচ দিয়ে শেষ পর্যন্ত ফুল রাখতে পারলেও মরিচ ধরে রাখতে পারিনি। তিনি বলেন, জৈষ্ঠ মাসের শেষের দিকে ও আষাঢ়ের শুরুতে যে পরিমান খরা হয় তাতে সেচ দেবার পরক্ষণেই জমি শুকিয়ে গেছে। মরিচ পোক্ত হবার আগেই গাছ থেকে ঝরে গেছে। এর কারনে এবার আমাদের মরিচ চাষে ব্যাপক লোকসান গুনতে হবে। আজগর আলীর পাশের জমিতে দেরী করে মরিচ রোপন করা হয়েছে। সে জমিতে মরিচ গাছ আছে বলে মনে হচ্ছে না। দু’একটি গাছ কোন মতে দাড়িয়ে আছে ভগ্ন স্বাস্থ্য নিয়ে। এ জমির মরিচ গাছ রোদে পুড়ে একেবারেই মরে গেছে। তবে যে বৃষ্টিপাত শুরু হয়ে তা যদি ঠিকমতো হয় তাহলে এখন যেসব গাছে ফুল আসছে তা ঠিক থাকলে কিছু পয়সা পাওয়া যাবে বলে কৃষকরা আশা প্রকাশ করেন।
কৃষকদের অভিযোগ এ দুরাবস্থার পরও মরিচ চাষীরা কৃষি কর্মকর্তাদের নিকট থেকে পরামর্শ বা কোনরূপ সহযোগিতা পাননি। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক এস এম শামসুল আনোয়ার বলেন, শুধুমাত্র খরার কারনে এবার মরিচের ফল বিপর্যয় নয়। ভাইরাসজনিত এক ধরনের রোগ হয়েছে খরার কারনে যার মাত্রা বৃদ্ধি পায়। এ ভাইরাসই এবার এ অঞ্চলের কৃষকদের মরিচ গাছ বাড়তে দেয়নি। কৃষকদের অভিযোগের ব্যাপারে তিনি বলেন প্রত্যেক এলাকায় কৃষি অফিসার আছে। কৃষকদের সাথে তাদের যোগাযোগ থাকার কথা। উদ্ভিদ সংরক্ষন বিশেষজ্ঞ ড. গোলাম মর্তুজা বলেন, খরার কারনে পোকামাকড়ের আক্রমনে মরিচ গাছ ঠিকমতো হযনি। যেহেতু কৃষকরা মরিচ চাষে সেচ দেয়না সেহেতু খরায় তারা কি করবে বুঝতে পারেনি। অনেকেই সেচ দিয়েছেন কিন্ত খরার মাত্রা এতো বেশি ছিল যে তাতেও কোন কাজ হয়নি। এবার জেলায় লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি জমিতে মরিচ চাষ হলেও উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হবেনা বলে আশংকা করেছেন কৃষি কর্মকর্তারা। ৪ হাজার ১শ’ ৪০ মেট্রিকটন কাঁচা মরিচ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রার অর্ধেকও পূরন হবেনা বলে তাদের আশংকা।
এদিকে মাঠের এ পরিস্থিতির কারনে আগুন লেগেছে মরিচের বাজারে। দুই সপ্তাহের ব্যবধানে ৩০ টাকা কেজি থেকে মরিচের দাম কয়েক লাফে বেড়ে দাড়িয়েছে ১৫০ টাকায়। কৃষকরা এখন ১০০ টাকা কেজি বিক্রি করলেও দু-তিনটি হাত বদল হয়ে খুচরা বাজারে এসে তা বিক্রি হচ্ছে ১৫০টাকায়। বুধবার সকালে কথা হয় কুষ্টিয়া পৌর বাজারের সবজি ব্যবসায়ী আল-আমীন। তিনি বলেন, আজ পাইকারীদের নিকট থেকে মরিচ কিনেছি ১২১টাকা কেজি দরে। খুচরা বিক্রি করছি ১৫০টাকা। হঠাৎ করে প্রয়োজনীয় এ পন্য মরিচের দাম বাড়ায় চরম অসুবিধায় পড়েছে ভোক্তারা। তারা পরিমানে কম কিনছেন মরিচ। খরা অব্যাহত থাকলে মরিচের ঝাল আরো বৃদ্ধি পাবে বলে আশংকা করা হচ্ছে।

কোন মন্তব্য নেই: