শুক্রবার, ৩ জুলাই, ২০০৯

কুষ্টিয়ায় বিপুল পরিমান অবৈধ ভর্তি ফরমসহ দু’শিবির কর্মি আটক

স্টাফ রিপোর্টার : কুষ্টিয়া পলিটেকনিক ইন্সটিটিউটে অবৈধ ভর্তি ফরমসহ শিবিরের বহিরাগত দুই কর্মি আটক হয়। গত বুধবার দুপুরে কুষ্টিয়া পলিটেকনিক ইন্সটিটিউট এর ছাত্ররা লালনশাহ ছাত্রবাসের ২১০ নং রুম থেকে ৮০ টি প্রাথমিক আবেদন পত্রসহ শিবির কর্মিদ্বয়কে আটক করে পুলিশে খবর দেয়। পুলিশ তাদেরকে আটক করে থানায় নিয়ে আসে। পরে ফরম রেখে মুসলেকা নিয়ে তাদের ছেড়ে দেয়া হয়।
আটককৃত শিবির কর্মিদ্বয় হলো রাজশাহী বাগমারা উপজেলার দক্ষিণ মাজ গ্রামের আব্দুল লতিফ মোল¬ার পুত্র চঞ্চল ইসলাম ও গোদাগাড়ী উপজেলার নুরুল ইসলামের পুত্র শহীদুল ইসলাম। এরা দুজনই রাজশাহী পলিটেকনিক ইন্সটিটিউট এর ইলেকট্রিক্যাল ৪র্থ বর্ষের ছাত্র ও সেখানকার শিবির সদস্য।
আটককৃত চঞ্চল ইসলাম ও শহীদুল ইসলাম জানান, এত ছাত্রকে একসাথে না নিয়ে এসে আমরা অভিভাবক হয়ে তাদের(৮০টি) ফরম কিনে পুরন করে জমা দিতে আসি।
খোজ নিয়ে জানা গেছে, কুষ্টিয়া পলিটেকনিক ইন্সটিটিউট এর অধ্যক্ষ প্রকৌশলী লুৎফর রহমান জামায়াতের রুকন সদস্য। তার সহযোগিতায় আটক ওই দুই শিবির কর্মি একবারে ৮০ ফরম কিনতে সক্ষম হয়। পরে কুষ্টিয়া পলিটেকনিক ইন্সটিটিউট’র স্থানীয় শিবির কর্মি নাইম এর সহযোগিয় ২১০ নং রুমে বসে ২০০৯/১০ শিক্ষা বর্ষের প্রথম পর্বে প্রথম শিফ্টে ভর্তীর এ ফরম পুরণ করছিল তারা। এসময় কলেজের ছাত্ররা বুঝতে পেরে এতগুলো ফরম একসাথে পুরন করার কারন জিজ্ঞাসা করলে রাজশাহীর দুই শিবির কর্মী সদউত্তর দিতে না পারলে ছাত্ররা তাদের ফরমসহ আটক করে পুলিশে খবর দিলে পুলিশ তাদের গ্রেফতার করে থানায় নিয়ে যায়।
এ ব্যাপারে কুষ্টিয়া সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বাবুল উদ্দিন সরদার বলেন, ইন্সটিটিউট কর্তৃপক্ষ কোন অভিযোগ দায়ের করেননি। যে কারনে আটকদ্বয়কে তাদের কেনা ৮০ টি ফরম রেখে মুসলেকা নিয়ে ছেড়ে দেয়া হয়েছে।
ইন্সটিটিউট এর অধ্যক্ষ প্রকৌশলী লুৎফর রহমান বলেন, তারা কিভাবে একবারে ৮০ টি ফরম তুলে তা পুরন করছিল আমার জানা নাই। বিষয় টি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
ইন্সটিটিউট’র সিভিল বিভাগের প্রধান আব্দুল মান্নান বলেন, ফরম বিতরনে আমাদের কোন নীতিমালা নেই। তবে যার যার ফরম সে নিজে পুরন করে তার ছবি লাগিয়ে জমা দেয়ার বিধান রয়েছে। আটক ওই দুই জনের কাছে কিভাবে এত ছাত্রের ছবি ও কাগজপত্র আসলো তা উচ্চ পর্যায়ে তদন্ত করে দেখা দরকার।
জাসদ ছাত্রলীগ কুষ্টিয়া জেলা কমিটির সভাপতি অসিত সিংহ্ রায় বলেন, এ ধরনের অনিয়মের ঘটনা মেনে নেয়া যায় না। তদন্ত পূর্বক অনিয়মের সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার দাবী তুলে তিনি বলেন, ইন্সটিটিউট’র অধ্যক্ষ কি কারনে থানায় অভিযোগ দেননি তা ক্ষতিয়ে দেখা দরকার।
এদিকে অবৈধভাবে ফরম বিতরন ও এর সাথে বহিরাগত এবং স্থানীয় শিবির ক্যাডারদের জড়িত থাকার অভিযোগ তুলে হঠাৎই ইন্সটিটিউট এর ছাত্ররা কলেজে চরম উত্তেজনা সৃষ্টি করে।
এ ব্যাপারে শিবিরের কুষ্টিয়া শহর কমিটির সেক্রেটারি আল-আমীন জানান, এ ঘটনায় কুষ্টিয়ার কোন শিবির কর্মি জড়িত নয়। আটক যারা হয়েছে তারা রাজশাহী শাখার কর্মি হলেও ঘটনাটি শিবিরের কোন সাংগঠনিক কাজ নয় একান্তই তাদের ব্যক্তিগত কাজ।
এদিকে, উত্তেজনা নিরসনের লক্ষে ইন্সটিটিউট’র অধ্যক্ষ প্রকৌশলী লুৎফর রহমানের সভাপতিত্বে তার অফিস রুমে, কলেজের সার্বিক পরিবেশ শান্ত রাখতে ছাত্র নেতা স্থানীয় নেতৃবৃন্দ ও পুলিশের সাথে শান্তি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন কুষ্টিয়া সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বাবুল উদ্দিন সরদার, এস আই তোফাজ্জেল, কুষ্টিয়া সরকারী কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি নুরুল আমীন রাজন, সাংগঠনিক সম্পাদক মেহেদী হাসান, ছাত্রলীগ নেতা রুমন, কুষ্টিয়া পলিটেকনিক ছাত্রলীগের আহবায়ক শাহীন ও শহর যুবলীগের সাধারন সম্পাদক ্এনাম হান্নান বিশ্বাস ও স্থানীয় কমিশনার আলে¬কসহ জেলা ও কলেজ ছাত্রলীগের নেতৃবৃন্দ। বৈঠকে অধ্যক্ষ তার বক্তব্যে বলেন, নিয়মতান্ত্রিক ভাবে ভর্তি ফরম বিতরণ করা হচ্ছে, এখানে কেউ কোন রকম অনিয়ম করলে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। আটককৃত সকল ফরম তিনি তাৎকণিক্ষ ভাবে বাতিল ঘোষনা করেন।

কোন মন্তব্য নেই: